মদ আর মাদকের মতো অনলাইন গেইমকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া

মদ, মাদক আর জুয়াখেলা। সবই কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার এই নিয়ন্ত্রণের তালিকায় আরো একটি বিষয় যোগ করতে চায়। সেটা হলো অনলাইন গেমিং।

এক মাস আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংসদরা সংসদে একটি বিলের প্রস্তাব করেছেন, যার মাধ্যমে মদ আর মাদকের মতো অনলাইন গেইমও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন বেরিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির স্বাস্থ্য কল্যাণ মন্ত্রণালয় আসক্তির চারটি উপাদানের একটি হিসেবে অনলাইন গেইমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রস্তাবকে নেট ব্যবহারকারীরা সমালোচনা করেছেন। অন্য দিকে গেইম শিল্পের সাথে জড়িতরা মাদক এবং জুয়া খেলার সাথে গেইমকে তুলনা করায় হতবাক হয়ে গেছেন।

New main image of the Korea Internet and Digital Entertainment Association's website

কোরিয়ার ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটের মূল পাতার ছবি এটা। এখানে লেখা আছে “কোরিয়ার গেইম শিল্পের প্রতি সমবেদনা”। সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোরিয়ান গেইম শিল্প ধ্বংস হবে। ছবি ফেয়ার ইউজের আওতায় ব্যবহার করা হয়েছে।

কোরিয়ার ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন তাদের ওয়েবসাইটে একটি অনলাইন পিটিশন দাখিল করেছে। সেখানে তারা যুক্তি দিয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোরিয়ার গেইম শিল্পের মৃত্যু ডেকে আনবে। এই শিল্প দেশের কনটেন্ট মার্কেটের ৬০% যোগান দিয়ে থাকে। পিটিশন পোস্ট করার কয়েকদিনের মধ্যে ৫৫,০০০ মানুষ এতে অংশ নেন।

কোরিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা বিলটির সমালোচনা করে ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন। কিছু ব্যবহারকারী বলেন, তারা অসুস্থতার দোহাই দিয়ে এটার অপব্যবহার করবেন।

গেইম আসক্তিকে অসুখ হিসেবে বিবেচনা করার খবরকে স্বাগত জানাই! আমি অবশ্যই গেইম আসক্তিতে ভোগার বিষয়ে কোম্পানির হাসপাতালে পরীক্ষা করে দেখবো।

গেইম আসক্তি একবার অসুখ হিসেবে স্বীকৃতি পেলে এটার জন্য আমি অসুস্থতার ছুটি পাবো। এমনকি পঙ্গুত্ব হিসেবে বিবেচনা করলেও! এমনকি ডিসকাউন্ট পাবার জন্য প্রথম শ্রেণির পঙ্গু ব্যক্তি হিসেবে আমি আমার গাড়িতে স্টিকারও লাগাতে পারি। গেইমের জন্য আমি সবই করতে পারি!

সংসদ সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তাদের গেইম শিল্প এবং ব্যবহারকারীদের আচার-আচরণ বুঝতে না পারার বিষয় উঠে এসেছে কারো কারো মন্তব্যে:

“ভার্চুয়াল বাস্তবতা” বুঝতে কষ্ট করতে হয় বলে কি তারা অনলাইন গেইম ইস্যুটাকে অনেক বড়ো করে দেখছেন! মানুষজন কোনো কিছু বুঝতে না পারলে তা নিয়ে অহেতুক ভয় পায়। আমি মনে করি, গেইম শিল্প কীভাবে উন্নয়ন করবে, তা নিয়ে কারোই কোনো ধারণা নেই।

কয়েকবছর আগে কর্তৃপক্ষ গেইম আসক্তি নিয়ে কিছু তথ্য পরিবেশন করেছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তারা যাকে গেইম আসক্তি মনে করছেন, তা আসলে অনলাইন আসক্তি'র তথ্য। অনলাইন গেইম আসক্তি'র নিয়ে এই তথ্যগুলোর ব্যবহার মোটেও ঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া এই গবেষণাটাও ছিল ভিত্তিহীন। বর্তমানে তারা কোনো তথ্যই দিচ্ছে না। অন্ধভাবে দাবি করছে, অনলাইন গেইম আসক্তি ছড়াচ্ছে। এভাবে গেইম আসক্তি নিয়ে যৌক্তিক বিতর্ক বেশি দিন চলতে পারে না।

এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় বন্ধ কর্মসূচী হাতে নেয়, যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ওই কর্মসূচীতে বলা হয়েছিল, একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবে যখন ১৬ এবং এর কম বয়সী তরুণরা অনলাইনে গেইম খেলার অনুমতি পাবে। এটা ছিল একটি অজনপ্রিয় আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। তবে নেট ব্যবহারকারীরা এটি না জানালে কার্যকর হতো না:  

বন্ধ কর্মসূচী সমর্থনকারীদের পক্ষে এই সাধারণ বিষয়গুলো ছিল: ১. বন্ধ আইন নিয়ে তাদের বিস্তারিত বোঝাপড়া নেই। ২. শিক্ষার্থীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। ৩. গেইম আসক্তি'র প্রকৃত কারণ তা বুঝতে পারেন না। ৪. গেইম শিল্পের কাঠামো সম্পর্কে তারা কিছই জানেন না। (যদিও তারা শুনেছেন, গেইম কোম্পানিগুলো বিপুল টাকা কামায়। এজন্য তারা এটাকে অনেক বড় কর্পোরেশনের মতো মনে করেন।)

সচেতন বা অসচেতনভাবে কর্তৃপক্ষ আসল চিত্র বুঝতে অক্ষম বলে অনেক নেট ব্যবহারকারী মনে করেন:

@idgmatrix:게임 중독이란 없다. 다만 여가와 놀이 시간의 심각한 부족이 있을 뿐이다. 원인과 결과를 뒤집지 말라. 우리의 연간 근무시간은 세계 1위를 달리고 있고[…]

@idgmatrix: গেইমকে আসক্তি ভাববার কারণ নেই। আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি অবসর আর বিনোদনের সময় আমাদের খুব কম। লক্ষণকে সমস্যা ভেবে দ্বিধা করা ঠিক নয়। জাতি হিসেবে আমাদের বার্ষিক কর্ম ঘণ্টা বিশ্বের মধ্যে সবচে’ উপরে […]

আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনলাইন গেইম আসক্তি নিয়ে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের অনেক আবেগী ইস্যু রয়েছে। তারা ১২ বছর ধরে বাজে শিক্ষা কাঠামোর ভিতরে থাকে। এটা তাদের বোঝা উচিত। এজন্যই তারা গেইমের মাধ্যমে বাস্তবতা থেকে মুক্তি খোঁজে।

@kinophio: 게임중독 여론은 최소한 3개 층위의 크로스다. 학부모의 지지율이 절실한 정치권, 지위의 안전과 돈줄을 확보하고픈 정부부처/민간단체, 그리고 ‘진심으로’ 게임이 미운 학부모들이다.

@kinophio: গেইম আসক্তির বিতর্কে তিনটি স্তর রয়েছে: রাজনৈতিক দলগুলো বাবা-মা'র কাছ থেকে সমর্থন পেতে চাইছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্ট্যাটাস এবং অর্থের উত্স নিরাপদ রাখতে চাইছেন। এবং বাবা-মা যারা সত্যি সত্যি গেইমকে ঘৃণা করেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .