নারীদের পাহারাদারীর ব্যবস্থা করে কি ভারতে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে?

ভারতের মুম্বাইয়ে এবার গণধর্ষণের শিকার হলেন এক ফটোসাংবাদিক। গত ২২ আগস্ট ২০১৩ তারিখে এ ঘটনা ঘটে। ২২ বছর বয়সী ওই ফটোসাংবাদিক একটি সাময়িকীতে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করতেন।

ধর্ষণের শিকার সাংবাদিককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। অভিযুক্ত ৫ ধর্ষণকারীর মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির গণধর্ষণের [গ্লোবাল ভয়েসেস প্রতিবেদন দেখুন] মতো গতকালের ঘটনাও সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সবাই নতুন করে এর সমাধান খুঁজতে থাকে।

কীভাবে এই ধরনের ধর্ষণ রোধ করা যায়, তা নিয়ে মূলধারা এবং সামাজিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হয়।

নেহা সাঁঘভি (@nehasanghvi) ক্ষোভের সাথে বলেছেন:

মুম্বাই শহরে দিনে-দুপুরে একজন নারীর গণধর্ষণের ঘটনা শুনে খুবই দু:খ পেলাম! এ কী লজ্জার কথা!

অবিনাশ আয়ার (@IyerAvin) টুইট করেছেন:

প্রাথমিক প্রতিবেদনে মনে হচ্ছে, মুম্বাই ধর্ষণ দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনার মতোই। মেয়েটি তার বন্ধু থেকে আলাদা হয়ে যায়, বন্ধু ছিল বেশি শক্তিশালী, মেয়েটি ধর্ষিত হয়!

চিত্রনাট্যকার এবং ব্লগার কনস্ট্যান্ট রাম্বলার (@ajitjagtap) মনে করেন, দণ্ড না হওয়ার কারণেই এই ধরনের অপরাধ বেশি করে ঘটছে:

মুম্বাইয়ে গণধর্ষণ। ধর্ষকরা এমন কারো কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, যারা এই ধরনের অপরাধ করেও শাস্তি পায়নি অথবা কৃতকর্মের জন্য গ্রেফতার হয়নি।

রাবিয়া শেখ (@Rabiasheikh7) এ অবস্থা দেখে খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন:

আরো একটি গণধর্ষণ… আরো কিছু প্রতিবাদ, কোনো কিছুতেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না! ভারত নারীদের জন্য নিরাপদ দেশ নয়! #মুম্বাই

কিন্তু এ ধরনের হতাশাকর অবস্থা কেন? ক্যাথলিক অনলাইনের পরিসংখ্যান মতে, আগের বছরের তুলনায় ২০১২ সালে ভারতে নারী ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য মৃত্যু, নিগৃহ, যৌন নিপীড়নসহ অন্যান্য নির্যাতনের হার ৬.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় অপরাধ রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সালে নারীর বিরুদ্ধে ভারতীয় পুলিশের কাছে ২৪৪,২৭০ অপরাধের অভিযোগ এসেছে। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ২২৮,৬৫০টি। দ্য আটলান্টিক সাময়িকী ভারতের ধর্ষণ সমস্যা নিয়ে “ব্যাড এনাফ টু জাম্প আউট অব অ্যা উইন্ডে” শিরোনামে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল এক ব্রিটিশ পর্যটকের কথা যিনি হোটেল মালিকের যৌনকামনার হাত থেকে বাঁচতে জানালা দিয়ে লাফ দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে আগ্রায় এই ঘটনা ঘটেছিল।

বিশাল ভীরু সমস্যার অনুসন্ধান করেছেন:

The main problem is the lack of effective laws to protect women and the sexist comments in parliament is such a shame.

মূল সমস্যা হলো, মেয়েদের সুরক্ষার জন্য কার্যকরী কোনো আইন নেই। সংসদের যৌন সুড়সুড়ি পূর্ণ মন্তব্যও খুবই লজ্জাজনক।

দিল্লির গণধর্ষণের সময়ে বিচারপতি ভার্মার প্রতিবেদন পেশ করা হয় [যদিও এটা সমালোচনামুক্ত ছিল না]। এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি নিয়ে বিল আইনে পরিণত করা হয়। তারপরও নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো হেরফের হয়নি। আগে যা ছিল, এখন তাই আছে। নারী অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, মানবাধিকার সংগঠন এবং অ্যাক্টিভিস্টরা বর্তমান আইনে নারী সুরক্ষায় যেসব বিষয় বাদ পড়েছে তা নিয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল। আর এজন্য তারা এখন যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে গিয়ে পড়তে পারে।
ভারতে নারী ধর্ষণ চলমান থাকার পিছনে এটাই কি সবচে’ যুক্তিযুক্ত কারণ?
আরো অনেক সমস্যার সাথে ধর্ষণ ভারতের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া বিচিত্র ধরনের হয়। এখানে আত্মরক্ষার জন্য মেয়েদের গুঁড়া মরিচ এবং ছুরি রাখা, জেন্ডার সেনসিভিটি ট্রেনিং এবং আইনের পরিবর্তন বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়।

উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌর একটি ছোট্ট গ্রামের দ্য রেড ব্রিজের সদস্যরা যৌন নিপীড়ন রোধ করার সুরাহার বিষয়টি নিজেদের হাতেই তুলে নিয়েছে। ২০১০ সালে ২৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষক উষা বিশ্বকর্মা দ্য রেড ব্রিজ প্রতিষ্ঠা করেন। গুলাবি গ্যাং প্রতিষ্ঠার চার বছর পরে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিজেরাই মাঠে নেমে পড়েছে।

Gulabi Gang. Image from Flickr by Lecerle.

গুলাবি গ্যাং। ছবি নেয়া হয়েছে লেসালে'র ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট থেকে। সিসি বিওয়াই – এনসি – এসএ ২.০

২০১০ সালে গুলাবি গ্যাং নিয়ে পিঙ্ক শাড়ি নামে একটি সিনেমা বানানো হয়েছিল। তবে রেড ব্রিজ তুলনামূলকভাবে কম বয়সী নারীদের একটি সংগঠন। এখানকার সদস্যদের বেশিরভাগের বয়স ১১ থেকে ২৫ বছর। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রেড ব্রিজের সদস্যরা পদক্ষেপ নেয়:

Direct action against their tormentors and now when a local man steps out of line, he can expect a visit from the group.

যারা হয়রানি করবে, তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিবে। আর স্থানীয় পুরুষরা যখন লাইনের বাইরে আসবে, তখন রেড ব্রিজের নারীরা তার কাছে যাবে।

The Red Brigade girls. Screenshot from Red Brigades Blog

রেড ব্রিজের নারীরা। রেড ব্রিজ ব্লগের স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে।

লাল এবং কালো সালোয়ার কামিজ পরা নারীদের বেশিরভাগই অতীতে সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন। তারা এখন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন।

যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীকে হয়রানি করে, তবে তাকে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে তিনি সেটা বন্ধ না করলে, ঘটনা অনেকদূর পর্যন্ত গড়ায়। তাকে জনসম্মুখে এনে বিদ্রুপ করা হয়। কখনো শাস্তিও দেয়া হয়। তারা একবারই শুধু এরকম শাস্তি দেয়।

তাদের এই সাহস কোথা থেকে আসে এমন প্রশ্নের জবাবে দলের নেতা উষা বিশ্বকর্মা বলেন:

When you suffer, you get that courage. When you are victimized, you get that courage.

আপনি যখন ভুক্তভোগী হবেন, তখন আপনার সাহস আসবে। আপনি যখন ঘটনার শিকার হবেন, আপনি সাহস পাবেন।

তারা শুধু নারী নির্যাতন প্রতিরোধে লড়াই করে যাচ্ছেন না, তারা পড়াশুনার মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ারও গড়ে নিচ্ছেন:

এবিপিনিউজের ইতিবাচক খবর। লক্ষ্ণৌর রেড ব্রিজের মেয়েরা নিজেদের আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে।

লক্ষ্ণৌর ভারতীয় রেড ব্রিজের মেয়েদের সাথে দেখা হলো। তারা নারী এবং মেয়েদের ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা করছে!!!

আগস্ট মাসের ২৩ তারিখে অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা দক্ষিণ মুম্বাইয়ের হুতাতামা চকে মৌন প্রতিবাদের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। বিরোধী দল বিষয়টি সংসদে তোলে। বিভিন্ন সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থানে র‌্যালির মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
সর্বশেষ: ২৫ আগস্ট ২০১৩, রবিবারে মুম্বাই পুলিশ ফটোসাংবাদিককে গণধর্ষণের সাথে যুক্ত পাঁচ অভিযুক্ত গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত পাঁচজনের সবচে’ বড়জনের বয়স ২৫ বছর। সবচে’ কম ধর্ষকের বয়স মাত্র ১৬ বছর।

থাম্বনেইল ছবি নেয়া হয়েছে রেড ব্রিজের ফেসবুক পাতার সৌজন্যে। রেজওয়ান বিভিন্ন তথ্য দিয়ে পোস্টটি সমৃদ্ধ করেছেন। .

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .