বাংলাদেশ: তুরস্কের রাষ্ট্রপতির চিঠি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

গত মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে একটি চিঠি দেন। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যেসব ইসলামপন্থী নেতাদের বিচার হচ্ছে, তাদের যেন মৃত্যুদণ্ড না দেয়া হয়। তিনি আরও লিখেছেন যদি এইসব নেতাদের শাস্তি দেয়া হয় তাহলে তা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যহত করবে এবং রক্তপাত ও সংঘর্ষের কারণ হবে।

আবদুল্লাহ গুলের চিঠি এবং তারও কয়েকদিন আগে একটি তুর্কি এনজিও প্রতিনিধিদল যুদ্ধাপরাধের বিচার পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকায় গিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তাদের এনজিও পরিচয় গোপন করে পরিব্রাজকদের জন্যে প্রযোজ্য অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ সফর করে। এই প্রতিনিধিদলের সবাই ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুড দলের অনুগামী। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের বিচার হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগ মুসলিম ব্রাদারহুডের সমমনা রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় ৩০ লক্ষ নিরীহ মানুষ। ধর্ষণের শিকার হন ২ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি নারী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে এসব কাজে সহযোগিতা করে এদেশীয় রাজাকার, আলবদর বাহিনী, যাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা, কর্মী। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সেই সময়কার যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম চলছে।

ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি, বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।

তুর্কি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে সফর এবং তুর্কি প্রেসিডেন্টের অনুরোধ নিয়ে অনলাইন, অফলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের পাঠানো পত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক স্টাডিজ এবং মুসলিমস ফর নেদারল্যান্ডস এই চিঠির নিন্দা করেছে। নেটিজেনরা একে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন।

লন্ডনের তুর্কি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ। ছবি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্যাটেজি ফোরামের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।

গত ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩ লন্ডনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ব্লগার নিঝুম মজুমদার বলেছেন:

একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি আধুনিক বিশ্ব রাজনীতিকেই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা আশা করিনি।

ব্লগার মিজানুর রহমান মিলন সামহোয়ারইনে লিখেছেন:

গত শতকে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা ঘটিয়েছিল তুরস্ক। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তুরস্ক প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করেছে—এখন পর্যন্ত যার বিচার হয়নি। আর্মেনিয়ার মানুষ প্রায় ১০০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিচার দাবি করে আসছে। এখনো তুরস্ক নির্বিচারে কুর্দিদের হত্যা করছে। এহেন গণহত্যাকারী তুরস্ক অন্য দেশের গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির বিরুদ্ধে কথা বলবে—এটাই স্বাভাবিক।

ত্রিমাত্রিক কবি তুরস্কের আর্মেনিয় গণহত্যা অস্বীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে লিখেন:

যে দেশ নিজেই বিশ্বের অন্যতম বড় গণহত্যার সাথে জড়িত, যেই দেশের নিজের ইতিহাস গণহত্যা আর ফ্যাসিবাদের ইতিহাস, যেই দেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি গণহত্যাকে সরাসরি অস্বীকার সেই দেশের কিছু প্রতিনিধি এসে আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা আর মান যাচাই করে প্রতিবেদন করবে, সেই দেশের রাষ্ট্রপতি আমাদের সুবিচার আর শান্তির বাণী শোনাবেন, এটা আমার কাছে খুব নোংরা একটা রসিকতা।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় তুরস্কের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানান ব্লগার, লেখক আরিফ জেবতিক:

আমি বাংলাদেশের একজন জন্মসূত্রের নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, এই ফ্যাসিবাদী তুর্কিদের সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক। ইসরায়েলের সঙ্গে যদি সম্পর্ক বন্ধ করে আমাদের কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে এই যুদ্ধাপরাধী তুর্কিদের সঙ্গে, যারা আমাদের বিষয়ে অনৈতিক ভাবে নাক গলাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে ছাড় দেব কেন?

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .