বাংলাদেশ: ধর্ষণের পর হত্যা করা হলো আদিবাসী নারীকে

বাংলাদেশে আবারো ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হলেন এক আদিবাসী নারী। এই ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটি জেলার কাউখালি উপজেলার বড়ডলু গ্রামে। মেয়েটির নাম খুমাচিং মারমা। তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর! অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। বাড়ি থেকে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ গজ দূরে পাহাড়ের ঢালুতে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। সে পাহাড়ে গিয়েছিল নিজেদের পালিত গরু আনতে।

খুমাচিং মারমার ধর্ষণ ও হত্যার কারণ প্রসঙ্গে রিনা দেওয়ান ফেসবুকে লিখেছেন:

যেখানে থুমাচিং মারমার উলঙ্গ লাশ পাওয়া যায় সেখান থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে নাল্যাছড়ি উত্তর মাথা নামে একটি সেটলার গ্রাম। ১৯৮০র দশকের শুরুর দিকে সরকার সেখান থেকে পাহাড়িদেরকে উৎখাত করে সেটলারদেরকে বসিয়ে দেয়। সেটলাররা বর্তমানে থুমাচিংদের গ্রাম বড়ডলুর অনেকখানি নিজেদের বলে দাবি করে এবং কয়েকদিন আগে ক্ষেতে আদা লাগাতে গেলে সেটলাররা মারমাদের বাধা দেয়। জানা যায়, থুমাচিং-এর মামার সাথেও সেটলারদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এর জের ধরে তাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসী নারীদের ওপর বেড়েছে নির্যাতনের ঘটনা।

সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসী নারীদের ওপর বেড়েছে নির্যাতনের ঘটনা। ছবি এ এম আহাদ। স্বত্ব: ডেমোটিক্স।

সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসী নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। কিছুদিন আগেও পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া আরেক আদিবাসী শিশু ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। সাংবাদিক হরি কিশোর চাকমা প্রথম আলোতে তার লেখায় আদিবাসী নারী ধর্ষণের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন:

শুধু চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২০ জন। সেই সঙ্গে যোগ হলো তুমা চিং মারমার নাম। ২০১১ সালে আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০ জন। এটি কাপেং ফাউন্ডেশন নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাব। সংস্থাটির হিসাবমতে, চলতি বছর আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৫১টি, যা ২০১১ সালে ছিল ৩১টি এবং ২০০৮ সালে চারটি।

আবারো আদিবাসী নারী ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। নেটিজেনরাও সরব হয়েছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আদিবাসী নারী ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি ফিরোজ আহমেদ। স্বত্ব: ডেমোটিক্স।

মিথুন চাকমা জুম্ম ফেসবুকে লিখেছেন:

অসাড় মৃত হয়ে পড়ে থাকে আমাদের বোন, আমরাও কি অসাড় হয়ে থাকি! ইন্ডিয়া জ্বলে উঠে ‘গ্যাঙরেপ'এর প্রতিবাদে, ইম্ফল জ্বলে শ্লীলতাহানির বিচারের দাবিতে। আমাদের প্রতিবাদের ভাষা কী হবে! একটি মিছিল!? তারপর অসাড়তা!

আদিবাসী অধিকার আন্দোলন (CHT) লিখেছে:

খবর দেখছিলাম, দিল্লীতে বাসে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল ভারত। ভাল লাগলো এটা দেখে ওরা একতাবদ্ধ, মিডিয়া ওদের সাথে। সরকার বাধ্য হয়েছে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে।

একটু পেছনে যাই, সম্প্রতি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বড়ডলু গ্রামে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী থোমাচিং মার্মাকে ধর্ষণের পর হত্যার করা হয়েছে।
কই ????? পুলিশ তো এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি!!
এমনি করে আরও শত শত আদিবাসী মা-বোন দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এবং খুন করা হচ্ছে।

ব্লগার অনীক লিখেছেন:

এই অপরাধগুলো বাংলাদেশের একটি ইমেজ দাঁড় করাচ্ছে আমার মনে, তা হলো ধর্ষক ও খুনীর। আমার মনে হচ্ছে, চারপাশে পোটেনশিয়াল ধর্ষক ও খুনী ঘুরে বেড়াচ্ছে! কোনই নিশ্চয়তা নেই, যে এরা হঠাৎ কেউ ক্ষেপে উঠে ধর্ষণ করবে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .