কথোপকথনঃ শীতের প্রকোপে সিরিয় গর্ভবতী শরণার্থীরা

সিরিয়া ডিপলির সাথে সহযোগিতার অংশ হিসেবে আমরা নিবন্ধের একটি সিরিজ ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করে আসছি। এই পোস্টগুলোতে ধারন করা হয়েছে ক্রসফায়ারের জন্য ধরে নিয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষদের কথা। তার সাথে রয়েছে সারা বিশ্বের লেখকদের চিন্তা ধারার দ্বন্দ্ব।   

নিউজ ডিপলি ও আয়েশার মধ্যেকার কথোপকথন নিচে দেওয়া হল। আয়েশা হলেন সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ইদলিব প্রদেশের আতমা শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী ২৯ বছর বয়সী একজন মহিলা। এই শিবিরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত আনুমানিক ৫০ জন গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে তিনি একজন। শিবিরটিতে শিশু দুগ্ধের তীব্র অভাব রয়েছে বলে স্বেচ্ছাসেবকেরা আমাদের জানিয়েছেন ।

আয়েশা তাঁর পরিবারের সাথে গাদাগাদি করে একটি হাল্কা ও কর্দমাক্ত তাবুতে বাস করেন। তাঁর সন্তানের পরিধানে কেবল পাতলা কাপড় রয়েছে । শিবিরের গণ রান্নাঘর থেকে তাঁদের প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ করা হয় । তীব্র ঠান্ডা ও ভেজা শীতের আগমনের বার্তা শুনে তিনি খুবই চিন্তিত। কারণ এই শীত তাঁর দূর্বল সদ্যজাত শিশুর অবস্থা আরও নাজুক করে তুলবে। তিনি একটি কর্দমাক্ত পাহাড়ে তাঁর তাবুর কাছে তাঁর চার বছর বয়সী বাচ্চার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি এই শরণার্থী শিবিরে তাঁর গর্ভাবস্থায় তিনি কি ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

আমার ইতিমধ্যে দশ জন ছেলেমেয়ে আছে। নতুন সন্তানের জন্য আমার কাছে কোন কাপড় নেই। কোন কিছু কেনার মতো টাকাও নেই। কীভাবে আমরা তাকে শীতের কাপড় এবং একটি গরম থাকার জায়গা দিব?

আমি সপ্তাহে একবার এই শিবিরের ক্লিনিকে যেয়ে চেক আপ করাই। তাঁরা আমাকে ব্যাথানাশক ঔষধ দেন। পেটের ব্যাথা কমানোর জন্য আমার ঔষধ দরকার। আমি ইদলিব থেকে এসেছি। এখানে আসার আগে আমি একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে যেতাম।

আমি নবজাতক নিতে ভয় পাচ্ছি। আমরা ঠান্ডায় খুব কষ্ট পাচ্ছি এবং এরই মধ্যে শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে পরেছি। আমার পেটে প্রচন্ড ব্যথা। এর কারণ হচ্ছে প্রচন্ড শীত। পাশাপাশি যেখানে আমরা বাস করছি তার করুণ অবস্থা।

Syrian-Refugees-Zaatari-Camp-Winter

সিরিয় শরণার্থীরা দীর্ঘ শীতের কারণে জাতারি শরণার্থী শিবিরে একসাথে জড়ো হয়ে আছে।

শিবিরটিতে একজন মহিলা আছেন যাকে নিয়োগ করা হয়েছে প্রসবের সময় সাহায্য করার জন্য। আমার প্রসব করানো হবে কারে। এটি খুব কাছের একটি শহর। অথবা হতে পারে আতমা শহরের দানা হাসপাতালে।

আমার স্বামী এখানে আমার সাথে আছেন। কিন্তু তাঁর কোন কাজ নেই। তাঁর সারাদিন কিছুই করার নেই।

আসাদের সব লোকেরা তাঁদের বড় বাড়িতে ফিরে যেতে চায়। তাঁরা কোন কিছুকেই পরোয়া করে না। তাঁরা এই বাচ্চাগুলোর কথাও ভাবে না। অন্যসব দেশগুলো [ যারা আমাদের সাহায্য করে না ] আমাদের ঘৃণা করে।

[আয়েশার চার বছর বয়সী ছেলে শাহেদ একটি কার্ডবোর্ডের বাক্স হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাক্সটিতে ল্যাক্টাসিড নামের একটি পদার্থ রয়েছে। আমি আমাদের পুরুষ অনুবাদককে ডেকে তাকে জিজ্ঞেস করতে বললাম যে, সেটা কি? আয়েশা লজ্জায় লাল হয়ে বিনীতভাবে জানল সেটা হচ্ছে যোনি পরিষ্কারক। আমরা সবাই মনে মনে হেসে ফেললাম। এরপর আয়েশা বিব্রতকর মুহূর্তটি এড়িয়ে গেলো।]

আপনি দেখুন…এখানে বেশ হাস্যরসের একটি মুহূর্ত বিরাজ করছে, যা আমাদের হাসতে বাধ্য করল, এমনকি এতসব দুঃখের মাঝেও।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .