ইরান: ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের সময় তেহরানে অঘোষিত সান্ধ্য আইন

ভারী নিরাপত্তা উপস্থিতির মধ্য দিয়ে তেহরানে ২৬শে আগস্ট, ২০১২ তারিখে ১৬শ জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনটি শুরু হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যেকার স্নায়ুযুদ্ধের টানাটানিকে থামিয়ে দেয়া ১২০-জাতি জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনটিকে (ন্যাম) ইরান এবং অন্যান্যরাও বর্তমান বিশ্বের আলোচনাসমূহের একটি বিকল্প ফোরাম হিসেবেই দেখেছে। ইরান বলছে এটি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্যে একটি শান্তি পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনার পরিকল্পণা করেছে, কিন্তু বাশার আসাদ শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে তেহরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে কোন বিদ্রোহী উপদল এতে অংশ নিবে না।

জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের ১৬শ শীর্ষ সম্মেলনের লোগো। উৎস: ইরনা (ইরানী সংবাদ সংস্থা)। পাবলিক ডোমেইন।

তেহরানের ‘অঘোষিত সান্ধ্য আইন (কারফিউ)’

তেহরানে শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে ২৬শে থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত। ইরানী রাষ্ট্রটি ইরানের রাজধানীটি পাঁচ দিনের জন্যে বন্ধ করে দিয়েছে এবং “ন্যাম নিরাপত্তা নিশ্চিত” করার জন্যে ১লক্ষ ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে।

বোনবাস্ত আখতার লিখেছেন:

কয়েকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী তেহরানে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি এবং একটি ভারী নিরাপত্তা উপস্থিতি রয়েছে। এটা অনেকটা অঘোষিত সান্ধ্য আইনের মতো। ছুটিতে [ইরানী রাষ্ট্রটি ন্যাম শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে] যাওয়ার পথে ক্যালাস সড়কে নিরাপত্তা বাহিনী অনেক গাড়ির ভিতরে পরীক্ষা করছে… ২০০৯ সালে [বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর] বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে অপদস্থ করেছিল আর তাই এখন তারা তাদের কর্তৃত্ব এবং গুরুত্ব প্রমাণ করতে চায়।

ব্লগার সায়েহ আজাদি নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছেন  এবং লিখেছেন ‘ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র [আধাসামরিক স্বেচ্ছাসেবক সেনাদল] বাসিজকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করলে এই শাসকগোষ্ঠীর পশুরা মানুষকে ভয় দেখাতে সাহস করবে না।’

শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ?

ইরানী ব্লগাররা কেবল নিরাপত্তা সমস্যা সম্পর্কে কথা বলছে তা নয়  অনেকে ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনটিকে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে।

সবজারমান লিখেছেন [ফার্সী ভাষায়] হাজার হাজার প্রতিবেদক এবং বিদেশী অতিথিদের উপস্থিতি সবুজ আন্দোলনের জন্যে তাদের কণ্ঠস্বর বিশ্বকে শুনিয়ে দেয়ার একটি বিরল সুযোগ। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ব্লগাররা ইরানীদের সবুজ স্প্রে দিয়ে পোস্টারে এবং সম্মেলন অনুষ্ঠান স্থলের দেয়ালে ইংরেজি স্লোগান লেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

ছাত্র এবং রাজনৈতিক কর্মীদের একটি দল ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আসা জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুনকে আটককৃত বিরোধীদলীয় নেতা মীর হোসেন মুসাভি এবং মেহেদী কারুবিকে পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি ফেসবুক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। তারা এর পৃষ্ঠায় এই খোলাচিঠিটি প্রকাশ করেছে:

জনাব মহাসচিব,

আমি একজন ইরানী নাগরিক এবং একজন সচেতন ইরানী সংশ্লিষ্ট হিসাবে তেহরানে ১৬শ জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম)  শীর্ষ সম্মেলনের জন্যে আপনার থাকাকালীন সময়ে আমি আপনাকে জনাব মীর হুসেন মুসাভির সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণ জানাতে চাই। বিরোধীদলীয় নেতা জনাব মুসাভি ১৫মাস ধরে গৃহবন্দী থাকার পরে হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন… ইরানী জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা এবং ন্যায্য দাবিগুলো জাতিসংঘ এবং মহাসচিবসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের দাবিদার। সার্বজনীন মানবাধিকার রক্ষা এবং প্রচারের জন্যে অর্পিত দায়িত্বের আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ হিসাবে আপনার অবস্থান আপনার একটি বিশেষ ভূমিকা দাবি করে। আমরা আপনার এই ঐতিহাসিক মিশন সম্পন্ন করা সফলতা কামনা করি।

আজাদি এস্তেঘলাল এদালাত ইরানীদের এক কণ্ঠে একাত্ম হওয়ার এবং ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনটিকে শাসকগোষ্ঠীর জন্যে একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত করার য়ে আহবান জানিয়েছেন [ফার্সী ভাষায়]। ব্লগার বলেছেন:

ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনটি শাসকগোষ্ঠীর অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এবং সবুজ আন্দোলনকে সমর্থনের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। আশা করি রাস্তায় মানুষের বন্যা বইবে। কোন প্রতিবাদ কর্মকাণ্ডের জন্যে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

এস্তাদে মর্দান বলেছেন [ফার্সী ভাষায়]:

আমি বুঝি না কেন কাউ কিছু করে না। এই শীর্ষ সম্মেলনটি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখানোর একটি বড় সুযোগ। কেউ আমাদের জন্যে কিছু করার আমরা কতদিন অপেক্ষা করবো। মুসাভি? কারুবি? রেজা পাহলভী [ইরানের শেষ শাহের পুত্র]? বা এখন মোর্সি… সবুজ আন্দোলনের একজন সদস্য হিসেবে আমি – তিন বছর আগে মুসাভি যেমন আমাদের বিক্ষোভ করতে বলেছিলেন তেমনিভাবে – বৃহস্পতিবার ৩০শে আগস্ট, ২০১২ তারিখে ইমাম হোসেন থেকে আজাদি স্কোয়ার একটি বিক্ষোভের আহবান জানাচ্ছি। চলুন আসুন সামাজিক মিডিয়া এবং অন্যান্য সমস্ত উপায়ে আমরা সবাইকে জানাই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .