ভারত: আসামে জাতিগত সংঘর্ষ

ভারতের আসাম রাজ্যে আদিবাসী বোরো উপজাতি ও মুসলিম বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে সংগঠিত সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩২ জন হত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে। গত ২০ জুলাই ২০১২ তারিখ শুক্রবার রাতে বোরো অধ্যুষিত কোঁকড়াঝাড় জেলায় অজ্ঞাত পরিচয় লোক কর্তৃক চার যুবকের খুনের কারনে এ সমস্যার সুত্রপাত ঘটে।

হত্যাকাণ্ডে মুসলমানরা জড়িত এ সন্দেহে এবং এর প্রতিশোধ হিসেবে সশস্ত্র বোরোরা মুসলমানদের আক্রমণ করে ও তাঁদের গ্রামে আগুন লাগায়। সংবাদ সূত্র অনুযায়ী ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী দাঙ্গা্কারীদের উদ্দেশে গুলি চালায় এবং গুলিতে অনেকে নিহত হয়।

সহিংসতা শুরু হলে চিরাং, ধুবড়ি, বনগাইগাও, উদালগুরি এবং সতিপুর গ্রামের প্রায় ৭০,০০০ গ্রামবাসী তাঁদের বাড়ি থেকে পালিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। বোরো ও মুসলিম অধ্যুষিত কোঁকড়াঝাড় ও চিরাং জেলার কমপক্ষে ৬০ টি গ্রামে তাণ্ডব চালানো হয় অথবা আগুন লাগানো হয়।

বিক্ষোভকারীদের ট্রেন লাইন দখল ও ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের কারনে  ২১ টি ট্রেন যাত্রা বাতিল করে এবং আসাম অঞ্চলের প্রায় ২০,০০০ ট্রেনের যাত্রী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

কোঁকড়াঝাড় জেলার বরমনপাড়া গ্রামের এক বাড়িতে আগুন জ্বলছে

 আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে প্রায় ২৩০ কিঃমিঃ দূরে কোঁকড়াঝাড় জেলার বর্মনপাড়া গ্রামের এক বাড়িতে আগুন জ্বলছে, ছবি আমান এর। স্বত্ব ডেমোটিক্স (২৪/৭/২০১২)

সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বোরো হল ৫% আর মুসলিম হল প্রায় ৩৩ %। বোরোরা  স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় দাবি করছে, তাঁদের এ দাবি স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বতন্ত্র রাজ্য এমনকি সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত।

আসামের ২ কোটি জনসংখ্যার  মধ্যে ১৫.৬৪ শতাংশ জনগণ বোরো, মিসিং, রাভা, সনওাল, লালুং (তিওয়া), দিওরি এবং থেনগাল (মেচ) উপজাতিভুক্ত। ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে আসামে তিনটি স্বায়ত্ত্বশাসিত কাউন্সিল রয়েছে, অন্যান্য কিছু গ্রুপ ও একই মর্যাদায় তাঁদের নিজস্ব স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল দাবি করছে

বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি সহিংসতার জন্য “অবৈধ অভিবাসীদের” দায়ী করে এটাকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়েছে যদিও আসাম পুলিশ প্রধান  উল্লেখ করেছেন যে বিষয়টি সাম্প্রদায়িকতার চাইতে অনেক বেশি জাতিগত। তাঁর মতে সংঘর্ষ হয়েছে বোরো উপজাতি ও সংখ্যা গুরু গ্রুপের মধ্যে যারা অধিকাংশই মুসলমান এবং যাদের পূর্ব-পুরুষ এ অঞ্চলে ৪০, ৫০ অথবা ৬০ বছর আগে বসতি স্থাপন করেছিল।

রবি এস লিখেন:

আসাম ও ভারত সরকার উভয়েরই ধারাবাহিকভাবে জানা উচিত যে এ সহিংসতা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে, এর মূলে রয়েছে ভারতের উত্তরাংশের দীর্ঘস্থায়ী অনুন্নয়ন।

আসামে “অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী” যাদেরকে মাঝে মাঝেই যে কোন সংঘাতের জন্য দায়ী করা হয় সেই রূপকথা সম্পর্কে হিসাম বারভুইয়া ইউথ কি আওয়াজ ব্লগে লিখেন:

ব্রিটিশ শাসনামলে আসাম জেলার নিম্নাঞ্চলে জমি চাষের জন্য পূর্ব বাংলার ময়মনসিংহ ও রংপুর জেলা থেকে মুসলিমদের নিয়ে আসা হয়। তাঁরা ‘চর’ এলাকায় অথবা নদী বহুল জেলাসমূহে ধুবরি, বারপেটা, গোয়াল পাড়া ও নাগোআর আশেপাশে বসতি স্থাপন করে। তাঁদের অনেকেই পরে অহমীয়া সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হয়ে “নতুন অহমীয়” সংস্কৃতি গড়ে তোলে।

আসামের চিরাং জেলায় গ্রামবাসীরা বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে।

আসামের চিরাং জেলায় গ্রামবাসীরা বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। ছবি- আমান, স্বত্ব ডেমোটিক্স (২৪/৭/২০১২)

অরুনাংশু লিখেন:

বোরোল্যান্ডের বিক্ষোভ সব সময়ই সহিংস ও জাতিগত প্রতিশোধমূলক যা রক্ত ও আগুনে পুনর্জীবিত হয়। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন যে জনগণ কেন এত সহিংস হয় এবং কেন তাঁরা এত বেশি অনুন্নত। এটা খুবই দুঃখজনক কারন পুরো উত্তরপূর্ব অঞ্চল খুবই সুন্দর।

এখানে কিছু টুইটার প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করা হল:

@অরপিতাদীঃ রক্তস্নান, উভয় দিকেই কষ্ট ও ভয়। কে জিতল এখানে?  নিশ্চিতভাবেই মানবতা নয় 🙁  #রাগ #আসামদাঙ্গা http://t.co/xBUvSURU

@নিতিনচ্যাটারজী: আমি বুঝতে পারছি না যে এটা কেন সংবাদ শিরোনাম হল না। “ @টাইমসঅফইন্ডিয়াঃ  আসাম দাঙ্গায় ৩২ জন হত; প্রায় ৭০,০০০ বাড়ি ছেড়েছে”

@সুপ্রীতা১৫: সকল প্রচার মাধ্যম কর্মীদের অনুসরন করতে বলুন: আসাম কেন নয়??? তাঁদের ট্যাগ করুন, চিহ্নিত করুন। সামাজিক শক্তি তাঁদের দেখিয়ে দিন। @জনকপাল সত্যের জয় হোক।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .