বাংলাদেশ: ঢাকাকে ইসলামি সংস্কৃতির রাজধানী ঘোষণা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে ইসলামি সংস্কৃতির এশীয় অঞ্চলের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এর একটি বিশেষ শাখা- ইসলামিক এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন বা আইএসইএসসিও এই ঘোষণা দেয়। উল্লেখ্য, আইসিসকো ইসলামি সংস্কৃতির প্রসারে সদস্যভূক্ত দেশগুলোতে ইসলামি নীতি, আদর্শ, ঐতিহাসিক সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক গৌরবকে তুলে ধরতে ২০০৪ সাল থেকে ইসলামি সংস্কৃতির রাজধানী উদযাপন কর্মসূচীর আয়োজন করে আসছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা ২০১২ সালের জন্য এশীয় অঞ্চলের রাজধানী নির্বাচিত হয়েছে।

বাংলাদেশে ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থাপত্য কর্মে ইসলামিক স্থাপত্য রীতির প্রভাব দেখা যায়। এর মধ্যে ঢাকার মসজিদগুলো অন্যতম। ঢাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য মসজিদ। এর কোনোটি সুলতানি আমলে। কোনোটি মোগল আমলে। কোনোটি ব্রিটিশ আমলের। কোনোটি আবার বর্তমানকালের। সব মসজিদগুলোতে রয়েছে ইসলামিক স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট প্রভাব।

ঢাকায় মসজিদ নির্মাণের সূচনা ঘটে সুলতানি আমলে ১৪৫৭ সালে। আর এটি হয় বিনত বিবির মসজিদ নির্মাণের মধ্যে দিয়ে। এটাকে ঢাকার মুসলমানদের প্রথম প্রার্থনাঘরও বলা হয়। ব্লগার যুথচারী তার ব্লগে অবশ্য বলেছেন ২০০৬ এটি ভেঙ্গে গেছে। তবে ঢাকায় মসজিদের চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে মূলত মোগলদের শাসনামলে। এ সময় ঢাকাকে সুবে বাংলার রাজধানী করা হয়। একের পর এক নির্মিত হয় ইসলামি স্থাপত্যরীতির আকর্ষণীয় মসজিদ। তাছাড়া সে সময় রাজধানী হিসেবে ঢাকাও বিকাশ লাভ করে।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মসজিদেও মোগল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে পাকিস্তানি আমল থেকে অবস্থা আস্তে আস্তে পাল্টাতে থাকে। মসজিদের স্থাপত্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে স্থানের প্রয়োজনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। বর্তমানে নির্মিত মসজিদগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে, কিন্তু তাতে ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। ঢাকায় যে পুরোনো মসজিদগুলো রয়েছে সেগুলোতে ইসলামি স্থাপত্য রীতির পাশাপাশি স্থানীয় শৈলীরও মিশ্রণ ঘটেছে। যুক্ত হয়ে হয়েছে স্থানীয় শিল্পীদের নান্দনিক দক্ষতা। এদের কোনো কোনোটি তাই পরিচিতি পেয়েছে ‌বাংলারীতি হিসেবে।

ঢাকার কিছু প্রাচীন মসজিদ-

বিনত বিবির মসজিদ। এটি নির্মিত হয় ১৪৫৭ সালে। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।

তারা মসজিদ। এটি নির্মিত হয় আঠারো শতকের প্রথম দিকে। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।

হাজী শাহবাজের মসজিদ। এটি নির্মিত হয় ১৬৭৯ সালে। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।

খান মহম্মদ মৃধার মসজিদ। এটি নির্মিত হয় ১৭০৬ সালে। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।

মুসা খান মসজিদ। এটি প্রাক-মোগল স্থাপত্যের একটি নিদর্শন। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।

মসজিদের শহর বলেও ঢাকার বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।  এই মসজিদগুলোর মাধ্যমে একদিকে যেমন রয়েছে ইসলামিক ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রয়াস, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে সেগুলোর প্রতি অবহেলা। সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে এইসব প্রাচীন মসজিদ-সহ অন্যান্যে ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর কোনো কোনোটির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। সামহোয়ারইনে ব্লগার আহমেদ ফিরোজের একটি সংকলিত পোস্টে উঠে এসেছে বড় কাটরা ও ছোট কাটরার বর্তমান অবস্থা। সেই পোস্টে বলা হয়েছে, ১৬৪৩ থেকে ১৬৪৬ সালে মোগল স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত বড় কাটরার বিভিন্ন অংশের কাঠামো ভেঙে সেখানে নতুন ইমারত নির্মাণ করায় মোগল স্থাপত্যশিল্পের সুনিপুণ কারুকার্যখচিত বড় কাটরার মূল অংশই এখন ধ্বংসের পথে। কাটরার ভেতরে দোকানপাট, সেলুন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন নতুন স্থাপনার সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। কাটরার বেশির ভাগ বড় কক্ষ ভেঙে ছোট কক্ষ করা হয়েছে। আবার শায়েস্তা খাঁ কর্তৃক ১৬৬৪ সালের দিকে নির্মিত ইমারত ছোট কাটরাও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

ব্লগার হমপগ্র ৪০০ বছর পালন উপলক্ষে ঢাকার কয়েকটি প্রাচীন মসজিদ নিয়ে একটি ফটোব্লগ পোস্ট করেছেন। এরমধ্যে একটি মুসা খান মসজিদ। এটি ১৬৭৯ সালে নির্মিত হয়েছিল। আরেকটি হাজী শাহবাজের মসজিদ। এটিরও নির্মাণকাল হলো ১৬৭৯ সালে। আর হাজী বেগ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে ১৬৮৩ সালে। এই মসজিদগুলোর খুবই জীর্ণদশা।

ব্লগার রাগিব উইকিপিডিয়ার জন্য ছবি তুলতে গিয়ে পুরানো ঢাকার শাহী মসজিদ আর বড় কাটরার বর্তমান জীর্ণ অবস্থা দেখে খুবই হতাশ হয়েছিলেন:

সেখানে পৌছাতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সেই প্রাচীন ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ একেবারেই নেই। কাটরার দেয়াল ঢেকে গায়ে জোড়া লাগিয়ে তৈরী হয়েছে ঘরবাড়ি আর দোকানপাট। কাটরার উপরের দিকটা মাদ্রাসার দখলে। আর ঠিক সামনেই পিডিবির বিশাল একটা ট্রান্সফর্মার ও তারের জট থাকায় পুরো ভবনটাই ঢেকে গেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .