মিশর: পুলিশের নির্যাতন, নির্মম কাজের জবাবদিহিতা দাবীর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার

জরুরী আইন নামক এক দুর্ভাগ্যজনক আইন দেশটিতে ব্যক্তিগত অধিকার হরণ করেছে এবং নিরাপত্তারক্ষীদের বেআইনিভাবে গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ এবং অনভিপ্রেত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করার কারণে যে কাউকে বিচারের সম্মুখীন করার মত অসীম ক্ষমতা প্রদান করেছে। পুলিশের দ্বারা সৃষ্টি অনৈতিক নির্মমতা এবং অত্যাচারের ঘটনা প্রায়শই কোন শাস্তি গ্রহণ ছাড়াই পার পেয়ে যায়। কিন্তু মিশরীয় ব্লগার এবং প্রযুক্তিবিদ তরুণরা কিন্ত এর বিরুদ্ধে অলস ভাবে বসে নেই।

ইজিপ্ট ব্লগের সৌজন্যে পাওয়া পুলিশের নির্মমতার ছবি। ক্রিয়েটিভ কমন্স ২.৫ এনসি-এনডি লাইসেন্স এর অধীনে তা ব্যবহার করা হয়েছে

টর্চার ইন ইজিপ্ট ব্লগ মিশরীয় নাগরিকদের জন্য একটি মাধ্যম (হাব) হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি অত্যাচার এবং পুলিশের নির্মমতার মত বিষয়গুলোকে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়। তারা তাজা খবর এবং সংবাদ, ভিডিও, ঘটনার স্বীকার ব্যক্তির স্বাক্ষ্য, কোর্টের রেকর্ড, ঘটনার তথ্য, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি, অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি, এই এই সমস্ত বিষয়ে যে সব বই এবং কাগজপত্র তৈরি হয় সেগুলোর প্রকাশ করে। এছাড়াও তারা যে কোন ধরনের মানবাধিকার গবেষণা এবং কর্মীকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত এবং তাদের তারা সেই সমস্ত উপাত্ত সরবরাহ করে যা তাদের কাজের ক্ষেত্রে তথ্য প্রদান করে।

সম্প্রতি ঘটা এক বেদনাদায়ক ঘটনার পরিসমাপ্তি হয় খালেদ সাইদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। খালেদ এক মিশরীয় নাগরিক। আলেকজান্দ্রিয়ার দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে প্রহারের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে। এই ঘটনায় মিশরীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং অনলাইনে প্রচণ্ড সংগঠিত হয়ে তারা দাবী করে খালেদের খুনীদের এই কাজের দায়ভার নিতে হবে। ব্লগাররা এই বিষয়ে ডজন খানেকের বেশী পোস্ট লিখেছে এবং এই ঘটনার প্রতিবাদে ফেসবুকে একটি পাতা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং টুইটার ব্যবহারকারীরা সচেতনতা তৈরির জন্য সাইদের নাম টুইটারের একটি ধারা হিসেবে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করছে। বেশ কয়েকজন প্রতিবাদকারী সংগঠিত হয়েছে যার মধ্যে ন্যায় বিচার চেয়ে স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে নীরব প্রতিবাদের আয়োজন। এই বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে দলের অবস্থান থেকে বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছে। অনেক ব্লগ এখনো এই ব্যানার বহন করেছে যে, তাদের যে কেউ পরবর্তীতে খালেদ সাইদে পরিণত হতে পারে।

মিশর ডিজিটালের ব্লগার এবং কর্মী ওয়েল আব্বাস। পুলিশ কর্মকর্তারা সাইদের উপর যে অত্যাচার করেছে তার ভিডিও প্রকাশ করে তিনি সুনাম অর্জন করেন। তবে স্বভাবতই এর কয়েকটা বেশ বীভৎস। এছাড়াও আব্বাস কায়রোর রাস্তায় করা সরাসরি প্রতিবাদের দৃশ্য তুলে ধরেছেন। প্রায়শই তিনি তথ্য এবং ছবি প্রকাশ করেন, বিশেষ করে দুর্নীতি এবং প্রতারণার মত অপরাধের। তার কাজ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে এবং তিনি আল জাজিরা এবং বিবিসির টিভিতে উপস্থিতি হয়েছেন। সম্প্রতি আরব বিজনেস ম্যাগাজিন পত্রিকা তাকে আরবের সেরা ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচিত করছে।

ইন্টারঅ্যাকটিভ টর্চার ম্যাপ (নির্যাতনের সক্রিয় মানচিত্র)


অন্য সব উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে ফ্লিকারের ছবির সারি। যার নাম পিগিডেপিয়া موسوعة الجلادين, যেখানে ২৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তার ছবি রয়েছে। তাদের অনেকে আবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত। এই গ্রুপটিকে কয়েকজন মিশরীয় ব্লগার পরিচালনা করছে এবং সকল তথ্য ও ছবি জনতার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
টর্চারম্যাপ.ইনফো মিশরের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত অত্যাচারের মানচিত্র সরবরাহ করে। এছাড়াও এটি ব্যবহারকারীকে নতুন ঘটা কোন অত্যাচারের তৎক্ষনাৎ তোলা দৃশ্য তুলে ধরছে। এটি একই সাথে মিশরের কোন সুর্নিদিষ্ট স্থানে বা শহরে বিভিন্ন অত্যাচার এবং নির্মম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

আন্তর্জাতিক ভাবে মিশরীয় সরকারকে বিব্রত করার জন্য এই সমস্ত ব্লগার, একটিভিস্ট এবং প্রযুক্তিবিদ বিনে পয়সায় পাওয়া সকল টুলস বা উপাদান এবং অনলাইন সেবা ব্যবহার করছে এবং যে সমস্ত ব্যক্তি এই রকম অত্যাচার করে, সেই সমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার জন্য চাপ প্রদান করে। এই সমস্ত কর্মের মাধ্যমে তারা সংগঠন এবং ব্যক্তির কাজের মধ্যপ্রাচ্য এবং আরব অঞ্চলের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .