চীনে নির্মিত ভবনসমূহের স্বল্পমেয়াদী জীবনকাল

গত ২৯ মার্চে বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত নির্মাণ ও শক্তি সংরক্ষণ (কনস্ট্রাকশন এন্ড এনার্জি কনজারভেশন) সম্মেলনে গৃহায়ন ও নির্মাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এই রহস্য উন্মোচন করে দেন যে চীনের বেশিরভাগ ভবনের আয়ু ২৫-৩০ বছর মাত্র। চায়না ডেইলি এই তথ্য জানাচ্ছে।

গুয়াংঝুর এই সমস্ত ভবন যার বেশির ভাগের বয়স ১৫ বছরের বেশি সেগুলো আর কত বছর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? (ছবি/ডন ওয়েইনল্যান্ড)

গুয়াংঝুর এই সমস্ত ভবন যার বেশির ভাগের বয়স ১৫ বছরের বেশি সেগুলো আর কত বছর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? (ছবি/ডন ওয়েইনল্যান্ড)

চাও বোয়াশিং গৃহায়ন ও নির্মাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক। তিনি ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক সবুজ ভবন নির্মাণ ও শক্তি সংরক্ষণ সম্মেলন (গ্রীণ বিল্ডিং এন্ড এনার্জি কনজারভেশন কনফারেন্স)-এ বলেন, যদিও চীনে প্রতি বছর বিলিয়ন বর্গ মিটার নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে, তারপরেও এই সমস্ত ভবনের বেশির ভাগের আয়ু খুব বেশি হলে ৩০ বছর। চীনে ভবন নির্মাণে স্থায়িত্বের অভাব দেশটিকে এক সময় বিলিয়ন টন পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রীর আবর্জনা তৈরির দিকে ঠেলে দেবে, চায়না ইয়োথ এই তথ্য জানাচ্ছে।

পিপলস ডেইলির এক প্রবন্ধে জানা যাচ্ছে যে, শহরগুলোর শতকরা ৩০ -৪০ শতাংশ জঞ্জাল নির্মাণ সামগ্রীর আবর্জনা থেকে তৈরি। এই প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে, চীনে বছরে বিশাল পরিমাণ এই ধরনের আবর্জনা তৈরি হয় এবং এখন এগুলোকে চীনের বিভিন্ন শহরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

ভবন তৈরিতে প্রচন্ড লাভ, চীনের নির্মাণ সামগ্রীর প্রতি যে প্রচণ্ড ক্ষুধা, সেটি এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। বর্তমানে বিশ্বের শতকরা ৪০ শতাংশ সিমেন্ট ও স্টিলের ভোক্তা চীন। তবে চীনে নির্মিত ভবনের আয়ু স্বল্প হবার বহুবিধ ব্যাখ্যা রয়েছে।

সূত্র জানাচ্ছে যে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারীরা, ভবন নির্মাতা বা ডেভেলপারদের প্রায়শই সঠিক জিনিস দেয় না, যার ফলে ডেভেলপাররাও তাদের ক্রেতাদের সঠিক জিনিস প্রদান করে না। সরকার গৃহায়নকে একটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করার আগে ১৯৯৩ সালে ক্রেতা অধিকার সংরক্ষণ আইন (কনজিউমার প্রটেকটেড ল) তৈরি করা হয়। যার ফলে ১৬ বছরের পুরনো ক্রেতা অধিকার আইন গৃহায়ন খাতের জন্য প্রযোজ্য হয়নি।

অর্থনীতিবিদ এবং ব্লগার ঝেং ফেঙ্গটিন একটি পোস্টে নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার সম্বন্ধে ধারণা দিচ্ছেন:

而据专家分析,目前我国建筑质量出现最多的问题是施工质量问题,目前不少建筑物存在钢筋不达标,混凝土保护层不达标等严重问题,偷工减料很普遍。

পেশাদার বিশ্লেষকদের মতে আমার দেশের স্থাপত্যগুলোর বেশিরভাগ সমস্যা নির্মাণের কারণে তৈরি হয়েছে। বর্তমানে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা নির্মাণ সামগ্রীর উপাদানের কারণে, যার মধ্যে রয়েছে নিম্নমানের রিবার (লোহার পাত) ও নিম্নমানের কংক্রিটের নিরাপত্তা স্তর তৈরি করা, অন্য ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে রয়েছে বাজে ভাবে ও সস্তা উপাদান দিয়ে ভবন নির্মাণ করা, যা এখানে খুব সাধারণ ঘটনা।

জুলাই,২০০৯ এ শাংহাই এর মিনহাং জেলার একটি ১৩ তলা ভবন ভেঙ্গে পড়লে একজন নির্মাণ শ্রমিক মারা যায়, দেশটির গৃহায়ন মন্ত্রণালয় ৯০ টি শহরের ১৮০ টি ভিন্ন ভিন্ন নির্মাণ এলাকায় অনুসন্ধান চালায়। চায়না ইয়থ-এর সূত্রানুসারে, ৯৬ শতাংশ নির্মাণ ক্ষেত্র এই তদন্তে উত্তীর্ণ হয়।

বেশ কিছু সূত্র বলছে সমস্যা ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ নিয়ে নয়। একটি ব্লগে ইয়াং তাও লিখেছে, যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা স্বল্প মেয়াদি রাজনৈতিক অর্জনের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন, যার ফলে তারা পরিবেশ অথবা সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর, যা প্রায়শই শক্তিশালী ভবনগুলোকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

对于权力而言,建筑垃圾不是问题,资源浪费不是问题,民众房屋寿命更不是问题,权力追求的高楼之高、广场之大,城市的整齐、划一和一尘不染的美观,以及这背后的政绩。

যতক্ষণ ক্ষমতা একটি বিষয় তখন নির্মাণ সামগ্রীর জঞ্জাল কোন সমস্যা নয়, সম্পদ নষ্ট করা কোন সমস্যা নয়, এমনকি তারচেয়ে বেশি সরকারি ভবনের আয়ু কমিয়ে আনা কোন সমস্যা নয়। ক্ষমতা আকাশ ছোঁয়া ভবন ছুঁতে চায়, বর্গের সমান বিশাল হতে চায়, শহরের মত পরিপূর্ণ হতে চায়, একক ও ছোঁয়া যায় না এমন নন্দনতত্ত্ব-এবং পর্দার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অর্জন।

ইয়াং তাও লিখেছেন যে এমন নিখুঁত শহরগুলোও স্বল্প মেয়াদের ভিত্তিকে কাজ করা কর্মকর্তাদের উচ্চাশায় খুশি নয়।

短暂的任期和异地为官的制度,让官员习惯性地短视,他们需要的是在自己的五年甚至更短的一届任期做出看得见的政绩,所以,别人建的楼和广场,永远都是别人的政绩 … 没有最大只有更大

স্বল্প মেয়াদি এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্মকতারা নিজ জেলার বাইরে কাজ করার জন্য স্বল্প সময় বসত গড়ে। তাদের পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মক্ষেত্রে- অথবা কোন সময় আরো স্বল্প মেয়াদি কাজের এলাকায়- অবস্থান করার কারণে, তাদের এমন কিছু কাজ প্রদর্শন করতে হয় যা তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে কাজে দেয়। কাজেই কারো একটি ভবন বা স্কোয়ার (চারপাশের রাস্তা দ্বারা ঘেরা কিছু ভবন) নির্মাণ সব সময় অন্য কারো অর্জন হয়ে দাঁড়ায়… সবচেয়ে বড় বলে কিছু নেই, কেবল বড় বলে কিছু একটা রয়েছে।

লুসান.কমের একটি পোস্টে বর্ণনা করা হয়েছে, চীনে ভবন ধ্বংস করার হার বর্তমান যে হারে ভবন নির্মাণ তার ৪০ শতাংশের সমান-যখন চীন ১০ টি নতুন ভবন নির্মাণ করে, একই সময় তারা ৪টি ভবন ধ্বংস করে ফেলে। ব্লগার লিখেছে, যে সমস্ত অনেক ভবন ধ্বংসের শিকার হয়েছে, সেগুলো বেশ শক্তিশালী ছিল।

近年来,中国很多属于正常使用年限的建筑被强行拆除,大大缩短了住宅的使用寿命,这也不符合节能与建设节约型社会的要求,是造成资源浪费的又一大原因。

সম্প্রতি অনেক ভবন ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে যে গুলো এখনো ধ্বংস করে ফেলার মত বয়সে উপনীত হয়নি, মূলত বসবাসের জন্য ব্যবহৃত ভবনগুলোর জীবনকালের পরিমাণ কমিয়ে আনা হচ্ছে। শক্তি সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক নির্মাণের প্রতি সমাজের অনুরোধের সাথে বিষয়টি ঘটনাক্রমে মিলে যায়নি। এটা সম্পদ নষ্ট করার আরেকটি অন্যতম বিশাল কারণ।

যখন বাসার দাম আকাশ ছোঁয়া এবং রিয়াল স্টেট বা ভবন নির্মাণ ব্যবসায় বাড়তে থাক বুদবুদ তৈরির মত পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে (ভবন বিক্রিয়ের ক্ষেত্রে বুদবুদ তৈরি/রিয়েল স্টেটস বাবল-যার মানে ভবন বা গৃহের দাম বাড়তে থাকবে এবং সর্বোচ্চ দাম উঠার পরই পরবর্তীতে দ্রুত দাম পড়ে যাবে), তখন উচ্চ হারে ভবন ধ্বংস করা এবং বিপজ্জনক রকমের বাজে ভাবে ভবন নির্মাণ এক রকমের প্রহেলিকা। কেকেডিএসটিটি বলছে, এ রকম পরিস্থিতি চীনের সত্যিকারের চরিত্র।

花最贵的价钱买最短命的建筑,这样的事情只有在和谐中国能够发生。

কম সময় টিকে থাকবে এমন ভবনের জন্য বিশাল পরিমাণে টাকা খরচ করা -এই বিষয়টি কেবল এক ঐকতানে থাকা চীনেই ঘটতে পারে।

এই রকম পরিস্থিতি চীনের জীবনযাপনের উপায়কে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে, কেকেডিএসটিটি লিখেছে:

在 房价一飞冲天的年代,没有人关注建筑质量,没有人关注和百姓联系的民生。大家想的是如何把老百姓从他们栖息了千年的土地上赶走,然后找一帮所谓的专家搞一 些百姓听不懂、看不明白的概念方案 … 只要楼盖起来了,房价涨起来了,GDP增长了,财政收入增加了,即使房子是纸糊的,与我何干。

এমন এক সময় যখন গৃহের দাম ছাদে গিয়ে ঠেকেছে, তখন কেউ তার মান নিয়ে প্রশ্ন করে না; কেউ সাধারণ মানুষের জীবনযাপন নিয়ে চিন্তিত নয়। সকলেই ভাবছে কি ভাবে সাধারণ নাগরিকদের তাদের পূর্বপুরুষদের বাসগৃহ থেকে তাড়িয়ে দিতে পারবে-এমন একটা দল পাওয়া গেছে যারা তথাকথিত পেশাদার নামে পরিচিত, যারা এমন ধারণা তৈরি করে যা জনগণ বুঝে উঠতে পারে না…যতদিন ভবন গুলো উপরের দিকে বাড়তে থাকবে, গৃহের দাম বাড়তে থাকবে, জিডিপি এবং সরকারের আয় বাড়তে থাকবে, তখন সকলের জন্য কেবল কাগজ দিয়ে ঘর তৈরি হবে বলে আমি ধারণা করি।

২০০৬ সালে সরকারি এক কর্মশালায় ভবন নির্মাণের এক নীতি অনুমোদন করা হয়েছে, যাতে সকল প্রধান সব ভবনকে ১০০ বছরের উপযোগী করে এবং সাধারণ ভবনকে অন্তত ৫০-১০০ বছর উপযোগী করে নির্মাণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নীতি চালু করা এবং অন্য সমস্ত যাচাই প্রক্রিয়া সত্ত্বেও, এই শিল্প যে ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে ভবন সমূহ দীর্ঘ সময় টিকে থাকবে না।

সম্ভবত ২০০৮ সালে সিচুয়ানের ভূমিকম্পে ৬৮,০০০ নাগরিকের মৃত্যু নিম্নমানের উপাদান দিয়ে ভবন নির্মাণের মাধ্যমে সৃষ্ট বিপদের এক উদাহরণ। এই ভূমিকম্প ৭,০০০ স্কুলকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়, একসাথে মাটিতে মিশে যাবার কারণে যাদের অনেকগুলোকে টোফুর (সয়া দুধের তৈরি অনেকটা পনিরের মত এক ধরনের খাবার-) সাথে তুলনা করা হয়েছিল।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .