হাইতি: বেদনা এবং ভালোবাসার মাঝে

গত ১২ জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের পর প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার ক্ষেত্রে হাইতির অধিবাসীদের নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং নাগরিকের হৃদয়ে শোকের প্রবাহ চলতে থাকা সত্ত্বে এর ব্লগ জগৎে ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে) উদযাপনের জন্য জায়গা তৈরি করা হয়েছে।

অল্টারপ্রেস এ বছরের ভালোবাসা দিবস পালনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করছে:

Des milliers de personnes ont encore pris part à des activités religieuses ce 14 février, 3e jour spécial de recueillement, dans le cadre d’un mois de deuil qui prend fin le 17 février, pour les centaines de milliers de disparus du terrible séisme du 12 janvier.

হাজার হাজার লোক এ বছরের ১২ই ফেব্রুয়ারির ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়, সেদিন ছিল বিশেষ প্রার্থনা করার তৃতীয় দিন। গত ১২ই জানুয়ারির এই ভূমিকম্প, যা শত শত হাজার হাজার লোকের জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে, তাদের স্মরণে শোক পালন শেষ হয় ১৭ই ফেব্রুয়ারিতে।

যারা এই ঘটনায় তাদের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে এবং পরিস্থিতির সাথে টিকে থাকার চেষ্টা করছে হাইতিপ্রেসনেটওয়ার্ক তাদের কঠিন অবস্থার কথা প্রকাশ করছে। এখানে এক তরুণীর উদাহরণ রয়েছে যে, এই ভূমিকম্পে তার প্রিয়তমকে (পুরুষ বন্ধু) হারিয়েছে এবং এখন এক অস্থায়ী তাঁবু দিয়ে তৈরি উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করছে [ফরাসী ভাষায়]:

Guerdy Louis, une jeune fille de 19 ans vit un moment amer depuis le 12 janvier. Pourtant sa tristesse tant à augmenter ces derniers jours à l’approche de la fête de la Saint-Valentin, car son petit ami a succombé suite à des blessures subies lors du séisme.

গুর্য়েডি লুইস ১৯ বছরের এক তরুণী যে ১২ জানুয়ারির পর থেকে এক কষ্টদায়ক জীবন যাপন করছে। ঘটনাক্রমে ভালোবাসা দিবস এগিয়ে আসার সাথে সাথে তার বেদনা আরো তীব্র হতে থাকে, কারণ ভূমিকম্পের সৃষ্ট আঘাতে তার প্রেমিক মারা গেছে।

একই পোস্টে ২০-৩০ বছর বয়স্কদের উপর চালানো এক জরিপে আমরা জানতে পারি, তাদের ১৫ শতাংশ বলছে যে ভূমিকম্প বা ভূমিকম্প পরবর্তী ঘটনায় তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ জীবন সাথীকে হারিয়েছে।

তবে মাস-ব্যাপী চলা শোক এবং তিনদিনের প্রার্থনা, ভালোবাসা দিবস উদযাপনের বিষয়টিকে আড়াল করতে পারেনি। এসপাস এইসিয়েন প্রমাণ দিচ্ছে [ফরাসী ভাষায়] যে লোকজন এই উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে এবং ব্লগটি ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষে পেটিওন-ভিলের একটি বাসা সুন্দর করে সাজানোর ছবি প্রকাশ করেছে। এই ছবিটি তুলেছে লিলিয়ান পিয়েরে-পল:

En dépit de la situation catastrophique régnant à Port-au-Prince et du grand désarroi de la population après le choc du 12 janvier 2010, les haïtiens toujours aussi magnanimes et altières célèbrent ce dimanche la saint-valentin.

১২ জানুয়ারিতে সংঘটিত ভূমিকম্পের পরে পোর্ট-অ প্রিন্সের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি এবং বিপুল পরিমাণ ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা, হাইতির নাগরিকদের জন্য এক আঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যারা রোববারে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করার মত মহান কর্মটি করতে পারে এবং নিজেদের জন্য গর্ব অনুভব করতে পারে।

অল্টারপ্রেস জনতার মিশ্র অনুভূতির ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে [ফরাসী ভাষায়], কিন্তু একই সাথে তারা এই তথ্যের উপর জোর দিচ্ছে যে, এর আগেও কখনো সকলেই এই দিবসটি উদযাপন করেনি, এমনকি বিপর্যয়ের আগেও না:

La douleur ressentie pour la perte d’êtres chers n’a pas totalement effacé la traditionnelle fête de la Saint Valentin, célébrée par certaines catégories urbaines dans un partage de chocolats et de fleurs entres amoureux et amis.

ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর মত শোকও ঐতিহ্যবাহী ভালোবাসা দিবসটিকে ছায়াচ্ছন্ন করতে পারেনি। শহরের কিছু সামাজিক দল, তাদের ভালোবাসার মানুষ ও বন্ধুদের সাথে চকলেট ও ফুল বিনিময় করেছে।

অন্য সব এলাকার মত এ বছরে হাইতিতে ‘ভালোবাসা দিবস’ রাস্তার কিছু বিক্রেতা এবং অন্য সব দোকানের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বয়ে আনে [ফরাসী ভাষায়]:

Des supermarchés et des magasins spécialisés ont promu des offres spéciales et certains d’entre eux sont restés ouverts au-delà des heures régulières pour satisfaire ou stimuler la demande.

Sur la place Saint Pierre de Pétionville, des vendeurs de fleurs n’ont pas cessé de proposer aux automobilistes et aux passants leurs bouquets de roses parfumées.

বড় দোকান [সুপার মার্কেট] এবং বিশেষ দোকান বিশেষ ভাবে জিনিষ বিক্রির প্রচারণা শুরু করে এবং তাদের অনেকে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশিক্ষণ দোকান খোলা রাখে ক্রেতাদের তৃপ্ত করার জন্য অথবা তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের জন্য।

সেইন্ট পিয়েরিন পেটিওনভিল-এ ফুল বিক্রেতারা গাড়ীর চালক এবং পথিকদের সুগন্ধি গোলাপ বিক্রি করার চেষ্টা করছে।

এই রকম বিপর্যয়ের সময় হাইতির লোকদের ভালোবাসা এবং সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা বেশ কঠিন এবং হাইতিপ্রেসনেটওয়ার্ক একই পোস্টে এক জরিপের মাধ্যমে এই বিষয়ের উপর এক নজর চোখ বুলিয়েছে: [ফরাসী ভাষায়]

Pour ce qui des relations intimes, notre enquête a révélé que certains couples font l’amour malgré la promiscuité qui règne dans les camps. En effet, 25 % des personnes interrogées ont affirmé avoir eu des relations sexuelles avec leur partenaire. Cependant 8, soit 40 % indiquent qu’ils ne peuvent pas y arriver alors que 10 % affirment qu’ils n’ont pu communiquer que par téléphone, sans se voir.

ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের জরিপ বলছে, অনেক দম্পতি শিবিরের উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেও যৌন মিলন লিপ্ত হয়েছিল। সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ বলেছে তারা তাদের সঙ্গীদের সাথে মৌন মিলন লিপ্ত হয়েছে। তবে ৮ জন (৪০ শতাংশ) ব্যক্তি বলেছে তারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়নি। এদের মধ্যে ১০ শতাংশ ব্যক্তি ঘোষণা দিয়েছে, তারা তাদের সঙ্গীদের সাথে কেবল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে, কারণ তারা একে অন্যের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারছিল না।

অল্টারপ্রেস ভালোবাসা দিবসের পোস্টের উপসংহার টেনেছেন এভাবে যে, ভালোবাসার মানুষটির সাথে যোগাযোগ করার ব্যাপারটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ:

Des amis et conjoints ont échangé des messages de Saint-Valentin à travers des SMS sur les cellulaires. « L’événement (du 12 janvier) me rappelle qu’il faut toujours dire aux êtres chers combien nous les aimons », lit-on dans un SMS. « On ne sait jamais ce qui peut arriver demain et il peut être trop tard », ajoute-t-il en soulignant que « ton absence laisserait un vide dans ma vie ».

ভালোবাসা দিবসে বন্ধু এবং স্বামী বা স্ত্রী পরস্পরের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বার্তা (টেক্সট মেসেজ) বিনিময় করেছে। এর মধ্যে একটি বার্তা ছিল এ রকম “এই অনুষ্ঠান (১২ জানুয়ারি) আমাকে এই প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যাদেরকে ভালোবাসি তাদেরকে বলা, তাদের কতটা ভালোবাসি”। “আগামীকাল কি ঘটবে আমরা তা বলতে পারি না এবং হয়তো এই কথাটা বলার ক্ষেত্রে সে সময়টা অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে”। এটা বলার পর সেখানে যুক্ত করা হয়েছে, “তোমার অনুপস্থিতি আমার জীবনকে শুন্য করে ফেলতে পারে”।

অনুগ্রহ করে লিলিয়ান পিয়ের-পলের হাইতির উপর তোলা ফ্লিকার ফটোস্ট্রিম প্রবেশ করুন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .