পাকিস্তান: পিটিএ রাষ্ট্রপতির ‘চুপ-কর’ ভাষণটির ভিডিও ইন্টারনেটে বন্ধ করে দিয়েছে

রোববার সন্ধ্যায় [৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০] পাকিস্তানে ইউটিউব.কম-এ প্রবেশ করতে গিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সমস্যার মুখোমুখি হয়। সারা পাকিস্তানের বিভিন্ন আইএসপির ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটে যে ইউটিউবে প্রবেশ করতে গিয়ে সবাই বাঁধাগ্রস্ত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ইউটিউবে প্রবেশ করতে পারলেও পুরো ইউটিউব ডোমেইনে একটা সাদা পাতা ভেসে আসছিল, যেখানে লেখা ছিল “এই সাইট প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে”। হেরডিক্ট ওয়েবের মাধ্যমে সবজায়গায় এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা জানায় যে এই সাইটে প্রায় এক ঘন্টা সময় পর্যন্ত প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। এরপর সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে।

হুমা ইমতিয়াজ লিখেছে:

প্রায় ৯০ মিনিট আগে হঠাৎ করে পুরো করাচি শহরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা আবিষ্কার করে তাদের ইউটিউবে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে- সে সময় এই সাইটে প্রবেশ করতে গেলেই “এই সাইটটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে” লেখাটি ভেসে আসছিল। পিটিএ এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে বিভিন্ন আইএসপির প্রতিনিধিরা তাদের সেবাবিভাগে অনুসন্ধানের জন্য ফোন করলেই জানায় যে, পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ইউটিউব বন্ধ করে রেখেছে। পাকিস্তানী সময় রাত ৯.৩০ মিনিটে পাকিস্তানে আবার ইউটিউব ফিরে আসে। তবে এবার পাকিস্তানীরা জারদারি একটি ভিডিও দেখতে পারছিল না। এই ভিডিওতে জারদারি জনতার উদ্দেশ্য বলছে “চুপ কর”। সম্প্রতি এই ভিডিওটি নেটে পাওয়া যাচ্ছিল। যেহেতু রোববার পাকিস্তানে সরকারি ছুটির দিন, তাই এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য পিটিসিএলএর কোন প্রতিনিধিকে সেদিন পাওয়া যায়নি।

ইউটিউব ভিডিও- থেকে এই ছবিটি নেওয়া হয়েছে।

ইউটিউব ভিডিও- থেকে এই ছবিটি নেওয়া হয়েছে।

এরপর সংবাদে প্রকাশ পায় যে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের ইন্টারনেট পরিচালনা বিভাগ, যারা পাকিস্তানের ইন্টারনেটের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে, তারা দেশটিতে একটি ইউআরএল স্থাপন করেছে- একটি ভিডিও বন্ধ করার জন্য। এই ভিডিওতে জারদারি জোরের সাথে এবং কাটখোট্টা ভাষায় “চুপ কর” শব্দটি উচ্চারণ করেন যখন তিনি এক সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য ভাষণ দিচ্ছিলেন। এই ঘটনাটি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ঘটেছে।

এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে জনাব জারদারি উর্দুতে এই বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন:

“এই গণতন্ত্রের এই অবস্থা কেন….. চুপ কর”

অনেক পাকিস্তানী হয়ত এটাকে কৌতুককর বিষয় হিসেবে দেখতে পারেন, বিশেষ করে কাকতালীয়ভাবে বিখ্যাত দুর্নীতিবাজ নেতা জারদারি এটি বলছেন যিনি অনেকগুলো দুর্নীতির মামলার আসামী ছিলেন। ২০০৭ সালে তার স্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে খুন করা হয়। এরপর বেনজিরের স্বামী হিসেবে তিনি তার স্ত্রীর দলকে সফলভাবে ছিনতাই করতে সক্ষম হন এবং নিজেকে পাকিস্তানের সর্বময় ক্ষমতা অর্জনের দিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এভাবেই এক সময় তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হন। এই সকল কিছু সম্ভব হয় ভিন্ন এক ঘটনায়, তিনি ক্ষমতায় যাবার আগে পাকিস্তানের যিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সেই জেনারেল পারভেজ মুশরারফের সাথে তার এক সমঝোতার পর তিনি ক্ষমতা লাভ করেন। এর জন্য সাজানো এক অবৈধ সাংবিধানিক আদেশ [এনআরও- ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েটরি অর্ডিনেন্স বা জাতীয় নিষ্পত্তি অধ্যাদেশ] জারি করার মাধ্যমে এই নেতাকে তার সকল দুর্নীতির মামলা থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।

ইউটিউব ব্যবহারকারী সি১ইকমি৩ এখানে ভিডিওটি উঠিয়ে দিয়েছে:

টেকরিডার্স ব্লগের তাসাদ্দুক বসির মন্তব্য করেছে:

এটা বলা সত্ত্বেও আমি বুঝতে পারি না, এই ভিডিওটি বন্ধ করার মধ্যে দিয়ে সরকার কি চিন্তা করছে। বাস্তবিক পক্ষে বলা যায়, যাদের সামান্য ইন্টারনেট সম্বন্ধে ধারণা রয়েছে তারা সহজেই এই ভিডিওটিতে দেখতে পারবে। একই সাথে বলা যায় এই ভিডিওটি কেবল পাকিস্তানে বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং পাকিস্তান সমগ্র বিশ্ব নয়, পাকিস্তান বাদে বিশ্বের সমস্ত জনতা এই ভিডিওটি দেখতে পাচ্ছে।

p2

বর্তমানে এই সেন্সরশীপের চেষ্টার বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র যে সমস্ত বিশ্লেষণ করছে তা হল যে পিটিএ-এর প্রকৌশলীরা এর আগে আরো একবার ইউআরএলের বন্ধ করার তালিকা তৈরির মাধ্যমে কোন কিছু বন্ধ করা ও সেটির নিখুঁত কাজ করার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখছে। কারণ তারা ধীরে ধীরে পাকিস্তানে এই সমস্ত ভিডিওতে সবার প্রবেশের অধিকার বন্ধ করে দিতে চায়। এই ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা এবং তার ত্রুটি তৈরি, সেই একই পিটিএর প্রকৌশলীদের এক বৈশিষ্ট্য, যারা ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুরো ইউটিউব বন্ধ করার পেছনে [দুর্ঘটনা ক্রমে] মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। সে সময় তারা পুরো ইউটিউব.কমকে ইন্টারনেট থেকে অদৃশ্য করে ফেলে। পিটিএ তখন এক বিশেষ ভিডিওর প্রদর্শনী বন্ধ করতে চাইছিল, যে ভিডিওতে পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোট কারচুপির বিষয়টি উঠে আসে। এটি বন্ধ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ইউটিউবের ডিএনএস-এর তালিকা ভুলভাবে সৃষ্টি করা হয়, যার ফলে সারা বিশ্বে কয়েক ঘন্টার জন্য ইউটিউব হারিয়ে যায়, যতক্ষণ না ইউটিউব নিজে এসে এই ত্রুটি দুর করে, তার আগ পর্যন্ত তাকে দেখা যায়নি।।

গুপ্পু ব্লগের ফারহান লিখেছে:

রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির জন্য আমার এক বন্ধুত্বপূর্ণ বাণী রয়েছে। এই বাণীটি হল; যদি আপনি শ্রোতাদের কারো উপর রেগে যান, বিশেষ করে যারা আপনাকে কোন সংবেদনশীল বিষয়ে উত্তেজিত করছে, সেক্ষেত্রে এই রাগের মধ্যে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু আপনি যে কাজটি অন্যায় করেছেন তা হল; নিজের উচ্চারিত কথাকে সেন্সর করা বা কেউ যাতে শুনতে না পারে তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা! যদি আপনি এই ভিডিও নিয়ে এতটা বিব্রত বোধ করেন, তা হলে কেন আপনি সে রকম স্থানে এই কথাটি উচ্চারণ করলেন এবং যখন আপনি সেই কথাটি বলেই ফেলেছেন, তা হলে কি কারণে তা বন্ধ করতে চাইছেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করে, সম্প্রতি এই সেন্সরশীপ আরোপ শাসকদের ক্ষেত্রে হাঁটু-কাঁপার মতো প্রতিক্রিয়ার চেয়ে বেশি, কারণ দেশটির বর্তমান শাসক নানা ক্ষেত্রে থেকে আসা চাপের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে এক পাশে সরিয়ে রাখা দুর্নীতির ঘটনাবলী, যা ২০০৮ সালে এক অবৈধ সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়েছিল, এবং এটি করা হয়েছিল যাতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হতে পারে সেইজন্য। এই সমস্ত বিষয়গুলো, যা করা হয়েছে সংবিধানের বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে পুনরায় চালু করেছে। ফলে এগুলো এখন এই সমস্ত উচ্চ স্তরে থাকা ব্যক্তিদের নিয়োগপ্রাপ্তিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

এই পোস্টের সহ-লেখক ফারহান জানজুয়া

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .