হাইতি: আশ্রয়ের জন্য ঘর তৈরি হচ্ছে খুব ধীরে এবং দ্রুত, উভয় ভাবে

ইতোমধ্যে হাইতির পুনঃনির্মাণের আলোচনা শুরু হয়েছে। আর্কিটেকচার ফর হিউম্যানটি একটি অলাভজনক নকশা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান। এটি দুর্যোগ পরবর্তী পুনঃনির্মাণের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। এ ব্যাপারে তারা কিছু সাধারণ ধারণা প্রকাশ করেছে। ক্যামেরন সিনক্লিয়ার একজন স্থপতি এবং এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে লেখার সময় যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাটরিনা নামক ঘূর্ণিঝড়ের পর সৃষ্টি বিতর্কের কথা উল্লেখ করেন:

আমি বিভিন্ন সংবাদপত্রের কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের কথা স্মরণ করতে পারি যারা ভেঙ্গে পড়া বাড়ির উপর দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের এইসব বাড়ি লোয়ার নাইন্থ নামক এলাকায় অবস্থিত [লোয়ার নাইন্থ যুক্তরাষ্ট্রে নিউ অর্লিয়েন্সের এক এলাকা]। তারা দাবি করছিল, এবার আমরা বলতে পারি, সামনের বছর আমরা আমাদের পরিবারকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারব। কিছু বিখ্যাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যাদের গৃহ নির্মাণের ব্যাপারে সামান্য অভিজ্ঞতা ছিল, তারাই বাড়ি নির্মাণের কাজ করেছে। এখানকার পরিস্থিতি এখন তারচেয়ে খারাপ- যদি আপনারা আজ কোন কিছু দান করেন, তা হলে আমরা ২৫,০০০ হাইতিবাসীকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারব:

• প্রাক-পরিকল্পনা মূল্যায়ন এবং ক্ষতি বিশ্লেষণ (চলছে, একবছর ধরে চলবে)
• সম্প্রদায়গত সম্পদের উৎস তৈরির জন্য এক কেন্দ্র নির্মাণ এবং পুনঃনির্মাণ স্টুডিও বা এলাকা তৈরি (৬সপ্তাহ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে)
• ভূমি এবং জমির মালিকানা নির্ধারণ (৬ মাস থেকে ৫ বছর সময় লাগবে)
• ক্রান্তিকালিন বা বিশেষ সময়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং সম্প্রদায়ের আশ্রয়স্থলের কাঠামো নির্মাণ (৬ মাস থেকে ২ বছর সময় লাগবে)
• স্কুল, হাসপাতাল এবং বিভিন্ন গণ কাঠামো নির্মাণ (৯ মাস থেকে ৩ বছর)
• স্থায়ি বসতি নির্মাণ (১ বছর থেকে ৫ বছর সময় লাগবে)

প্রথমিক যে সংবাদ পাওয়া যায় তাতে বেশিরভাগ ক্ষতির কারণ হাইতিতে ভবন নির্মাণের আদর্শ মানার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন। অর্থ ইনিস্টিটিউটের স্টেট অফ দি প্লানেট ব্লগে খারাপ ভাবে ভবন নির্মাণের উপর মনোযোগ প্রদান করা হয়েছে:

ভাঙ্গা বাড়ির টুকরা এইসব ভয়াবহ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, যে ভিডিওতে আমরা বিভিন্ন ধরনের আহ্বান ধরনের জানাচ্ছি। যেখানে সিমেন্টের জমাট বাধা উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেখানে কেবল সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এটা বাড়ি বানানোর এক পদ্ধতি। বিশ্বের সবচেয়ে গরিব অংশ এই পদ্ধতিতে বাড়ি বানিয়ে থাকে। সঠিক ভাবে বাড়ি বানানোর জন্য কেবল সিমেন্ট দিয়ে বাড়ি বানানো যথেষ্ট নয়; দামি সিমেন্টের সাথে থাম এবং দেওয়াল নির্মাণ জরুরী। এর সাথে সঠিক মাত্রার বালু এবং স্টিলের বিশেষ পাত (যাদের বলা হয় বার ও রিবার) দিয়ে তা জোড়া দেওয়া প্রয়োজন। এসবকিছু বাড়িকে টিকে থাকতে শক্তি জোগায়। পরবর্তী সময়ে যদি আপনি ভিডিও দেখেন, তা হলে স্থির দৃশ্যে খেয়াল করবেন হাইতির ক্ষতিগ্রস্ত কোন বাড়িতেই রিবার বা বিশেষ স্টিলের পাত রয়েছে কিনা। আমি কোথায় রিবার বা স্টিলের পাত দেখিনি।

তবে এখানকার বাসিন্দা এডলফ সেইন্ট লুইস ৪৯ বছর বয়স্কা এক মহিলার কথা শোনা যাক। তিনি এই ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গেছেন। তিনি পোর্ট অ প্রিন্সের নিউ আমেরিকান মিডিয়ার কাছে এক সাক্ষাৎকার দেবার সময় যা বর্ণনা করেন, তাতে বলা নির্মাণের বিষয়টি হালকা ভাবে করার চেয়ে জটিলভাবে করা হয়। তার ঘর নির্মাণে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু বাড়িত উপাদান যোগ করে তৈরি করা হয়েছে-তাতে রিবার বা স্টিলের পাত সংযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি জানান তাদের বড়সড় পরিবারকে এক ছাদের নিচে রাখার জন্য এবং পরিবারের সবাই মিলে বাড়ি বানানোর টাকা ভাগাভাগি করার ফলে বাড়িটিকে বিশাল করে বানানো হয়। এর বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এটি প্রমাণ করে যে এভাবে বাড়ি নির্মাণ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে এবং ভূমিকম্পের সময় বাড়ির কাঠামো বাড়িটিকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।

হয়তো আপনার কন্যা বিয়ে করবে এবং তখন তার ও তার স্বামীর জন্য একটা ঘরের প্রয়োজন হবে। আপনি কেবল একটি ঘর বানাতে পারেন। আপনার ঘরে আরেকটি দেওয়াল তুলে দিতে পারেন এবং তার উপর একগাদা টিন বসিয়ে দিতে পারেন। যখন আপনার অনেক টাকা হবে তখন আপনি আরো কয়েকটি ঘর তৈরি করতে পারেন, অথবা পুরো মেঝের কাজ শেষ করতে পারেন এবং বাড়িটির জন্য একটি পুরো নতুন ছাদ তৈরি করতে পারেন। আমরা আমাদের বাড়ি এভাবেই তৈরি করেছি। আমরা কিছু নতুন ঘর এবং বাড়ির জন্য একটা নতুন ছাদ বানিয়েছিলাম। সামনের ঘরে আমার ভাতিজা থাকত, এবং আমার মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের জন্য পেছনে একটা বড়সড় কক্ষ ছিল। যেভাবে আমরা এটা তৈরি করেছিলাম, তা ছিল এক আনন্দদায়ক ব্যাপার।টবের উপরে আমরা অনেক চারাগাছ ও ফুলগাছ লাগিয়েছিলাম। বাইরের সিঁড়ির পাশে এগুলোকে রাখা হয়েছিল কারণ আমার মেয়ে প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসে। যখন তার জন্য তৈরি করা আমাদের এই বাসা সে দেখত তখন তাকে কত না আনন্দিত দেখাত। কিন্তু যখন ভূমিকম্প এল, আমরা সকল কিছু হারিয়ে ফেললাম..ঘরের মেঝে ভেঙ্গে পড়লো। উপরের মেঝে ভেঙ্গে নিচেরটার উপর পড়ল।

তিনি দাবি করেন যে পুনরায় নির্মাণ বা রি-ইনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে ঘরের আকার বাড়ানো হয়েছে:

হাইতিতে যখন কেউ বাড়িতে বাড়তি ঘর বানাতে চায়, তখন সে প্রথমে ঘরের ছাদ বাড়ায়, যা কনক্রিট বা সিমেন্ট ইত্যাদির তৈরি। মেঝেতে তৈরি করা কোন থাম বা কোন শক্ত দেওয়াল দিয়ে এই ছাদের শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। এক রাজমিস্ত্রী নতুন কনক্রিটের দেওয়াল তৈরি করে একটা নতুন ঘর তৈরি করার জন্য, অথবা সে পুরো এলাকাটি ঘিরে সেই বাড়িতে নতুন ঘরের জন্য একটা নতুন মেঝে তৈরি করে। কিছু ব্লক বা দেওয়ালের গায়ে গর্ত থাকে। যাতে এইসব গর্ত দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। যদি রাজমিস্ত্রীর বুদ্ধি থাকে তা হলে সে এই ব্লক দিয়ে সুন্দর নকশা তৈরি করে অথবা সে এই বিশেষ সজ্জা করা জানালা তৈরি করে। এই সমস্ত ব্লক বা দেওয়ালগুলো ছাদের ওজন সহ্য করতে পারে, এগুলো খাঁটি এবং ধাতুর রিবার বা পাতের তৈরি, যা মাঝ বরাবর লাগানো থাকে, ঘরের কাঠামোকে টিকিয়ে রাখার জন্য। যখন এই অতিরিক্ত ঘর তৈরি করা শেষ হয়, তখন মিস্ত্রী এই রিবারগুলোর খানিকটা অংশ বের করে রাখে, যদি প্রয়োজন হয় তা হলে আবার ঘরের এক নতুন অংশ তৈরি করার জন্য।

কানাডার এক পুষ্টিবীদ হাইতিতে বাস করেন। তার ব্লগ এলেন ইন হাইতি। তিনি তিনি তার এক বন্ধুর ঘর পরীক্ষার বিষয়টি বর্ণনা করছেন- তার বন্ধুকে তিনি এম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন-মি: এম; কিছুদিন আগে কনক্রিটের বদলে পাথর দিয়ে বাড়ি বানান। এই পুরোনো ধাচের বাড়িটিও ভূমিকম্পে টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়েছে:

এই বাসা ছিল পাথরের তৈরি যা কাদামাটি দিয়ে আটকানো হয়েছিল এবং পাথরগুলোকে ঢাকা হয়েছিল সিমেন্ট অথবা চুন-সরকি বা প্লাস্টার দিয়ে। কনক্রিটের ব্লক দিয়ে ভবন নির্মাণের আগে হাইতিতে যেভাবে বাড়ি বানানো হত এটি সেই ভাবে বানানো হয়েছে। ভূমিকম্পে একটি দেওয়ালের সব পাথর ধ্বসে পড়েছে। এর ফলে বাসাটি আর বাসযোগ্য নয়। এই পরিবার এখন রান্নাঘরের এক চাপা গলিতে কোন রকমে বাস করছে, যার চার দেওয়াল তৈরি করার মত বিলাসিতা করে সম্ভব ছিল না। এখন খড়ে ছাওয়া ছাদের নিচে একগাদা লোকজন বাস করছে, যেখানে তারা বৃষ্টি বা খারাপ আবহাওয়ায় সহজেই আক্রান্ত হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .