সৌদি আরব: এইডস রোগীর চিকিৎসা প্রদানে এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়া

সৌদি সরকার জানাচ্ছে ২০০৮ সালে সেদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩,৯২৬ জন, যার মধ্য সৌদি নাগরিক ছিল ৩৫৩৮ জন। এক হিসেবে জানা গেছে সে সময় ৫০৫ জন সৌদি মহিলা এবং ৭৬২ জন বিদেশী নারী এইডস রোগে আক্রান্ত ছিল।

সৌদি সরকার জানাচ্ছে ২০০৮ সালে সে দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩,৯২৬ জন, যার মধ্য সৌদি নাগরিক ছিল ৩৫৩৮ জন। এক হিসেবে জানা গেছে সে সময় ৫০৫ জন সৌদি মহিলা এবং ৭৬২ জন বিদেশী নারী এইডস রোগে আক্রান্ত ছিল।

সৌদি আরবে এইডস/এইচআইভি সংক্রান্ত কোন আলোচনা সব সময় এক নিষিদ্ধ বিষয়। সেখানে এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে চিকিৎসা করা হয়। এটি সব সময় এক বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি সৌদি সরকার ঘোষণা দেয় যে তারা জেদ্দার কিং সৌদ হাসপাতালের বিশেষ স্বেচ্ছাসেবী ক্লিনিক বন্ধ করে দেবার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এই ক্লিনিক বা সেবালয় এইডস রোগাক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা, পরামর্শ, এবং গোপনীয়তার নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে। ব্লগাররা এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে এবং তারা বলছে যে এই কাজটি সময়ের পিছনে ফিরে যাবার নামান্তর।

ওয়াফা এক সৌদী সংগঠনের কর্মশালায় অংশ নিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান এইডস রোগীদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্য তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তিনি লিখেছেন:

আমি জানি যে এখানে অনেক লোক এখনো ভাবে যে, এইডসে রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ রোগী নিজে এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। খুব সামান্য কয়েকজন এইডস ও এইচআইভির পার্থক্য সম্বন্ধে জানে। এখানে প্রচুর এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি লজ্জার মধ্যে বাস করে এবং লোকজন তাদের খারাপ চোখে দেখে। আমাদের উচিত এই রোগ সম্বন্ধে ভালোভাবে সবাইকে জানানো এবং এই রোগে আক্রান্তদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় তাকে থামানো।

ওয়াফা আরো ব্যাখ্যা করেছে কি ভাবে পুরো সমাজ রোগীদের সাহায্য করাকে স্বাগত জানায় না, এমনকি ধর্মীয় নেতার এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলে। কারণ, কি কারণে এই রোগ হয় তা তারা জানার চেষ্টা করে না:

পুরো সমাজের মধ্যে সমস্যা ছড়িয়ে রয়েছে। যখন সৌদি আরবের প্রথম এবং একমাত্র প্রতিষ্ঠান এইডসের ক্ষেত্রে কাজ শুরু করে তখন প্রায় সকলেই তাকে উপেক্ষা করতে শুরু করে। এতে দেখা যায় তার আর্থিক খাত তৈরির কোন উৎস নেই। এ ধরনের ঘটনায় সমাজ শঙ্কিত বোধ করে। তারা মনে করে এই প্রতিষ্ঠানকে জানানো মানেই এই বিষয়টিকে সবার সামনে তুলে ধরা যে সৌদি আরবে এইডসের অস্তিত্ব রয়েছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বিশ্বাস করা হয় যে এই রোগের কারণ যৌন সম্পর্ক।
ধর্মীয় নেতারাও এই প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করছেন। তারা বলছেন যে এই প্রতিষ্ঠান অনেকটা পশ্চিমা ধাঁচে কাজ করছে। তারা অবৈধ যৌন সম্পর্ককে গ্রহণ করছে এবং তার প্রভাবে যে রোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার জন্য তারা টাকা চাইছে।

অন্য আরেক সৌদি ব্লগার সাবরিয়া এস, জওহার। তিনি যুক্তরাজ্যের আইপিএচডির (ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারশীপ ফর হিউম্যান ডেভলাপমেন্টস) একজন ছাত্রী। তিনি উল্লেখ করেন, যদিও সময় বদলে গেছে, কিন্তু এই রোগের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলো একই থেকে গেছে। এই রোগে আক্রান্তরা তাদের বন্ধু, পরিচিত এমনকি পরিবারের সদস্যের কাছে এই রোগের কথা প্রকাশ করে না। ভদ্রমহিলা এর পর ব্যাখ্যা করেন রোগীরা এক নতুন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে জেদ্দার কিং সাউদ হাসপাতালের এই বিশেষ সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়:

এখন এই সেবা বন্ধ করে দেবার সময় নির্ধারিত করে ফেলা হয়েছে এবং এইডস রোগীদের সারা সৌদি আরবে বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যখন মনে হচ্ছিল যে সৌদি আরব এইডস রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাকি বিশ্বের সাথে সমতা এনে ফেলেছে প্রায়, যেমনটা তার অঙ্গ প্রতিস্থাপন নীতি রয়েছে এবং সে জোড়া লাগা জমজ শিশুকে আলাদা করার মত দক্ষতা অর্জন করেছে, কিন্তু এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়ে সে এ ক্ষেত্রে এক ধাপ পিছিয়ে যাচ্ছে।

কিং সৌদ হাসপাতালের এইডস চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়া রোগীদের ব্যক্তিজীবন এবং ধারাবাহিক চিকিৎসা সেবা পাবার ক্ষেত্রে এক হুমকি হয়ে দাঁড়াল। এছাড়াও এটি এই রোগ বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করবে, কারণ এই ট্রাস্ট বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল কিং সৌদ হাসপাতালের ডাক্তার, সেবিকা, এবং হাসপাতালের সাহায্যকারী কর্মীরা। এটাকে এখন নতুন লোকদের দিয়ে নতুন করে তৈরি করতে হবে। এটা সহজ কোন কাজ নয়।

[…]

রোগীদের স্থানান্তরও এক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করবে যে, অন্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র তাদের নিয়ে কি করবে। এই সব রোগীরা কি এইডস নেই এমন রোগীদের সাথে একটি দলে মিশে যাবে, নাকি তাদের বিশেষ কোন ওয়ার্ড বা বিভাগে তাদের চিকিৎসা করা হবে? তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কি রক্ষা করা হবে?

এবং অন্য অনেক সমাজের মত, এইডস রোগীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসার এবং উচ্চমাত্রার এক গোপনীয়তার প্রয়োজন রয়েছে, যেমনটা সাবরিয়া তার এই ধারাবিহক লেখায় ব্যাখ্যা করে চলেছেন:

হাসপাতালের কর্মচারীদের সাথে রোগীদের যে আবেগীয় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা বেশ শক্তিশালী। রোগী এবং কর্মচারীদের মধ্য বিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমা দেশে অনেক রোগী রয়েছে যাদের এই রোগ লুকাতে হয় না। সৌদি হাসপাতাল এই কাজটি করতে উৎসাহ প্রদান করে, কারণ এর মানে এতে তার পরিবার ও বন্ধুদের সম্বন্ধে বিচার করা যায়। রোগী এবং হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে বিশ্বস্ত সম্পর্ক থাকার মানে, রোগীদের গোপনীয়তা নিরাপদে রয়েছে।

কিং সৌদ হাসপাতালের এক এইডস রোগী সম্প্রতি বলেছেন: যখন আমরা সেখানে যাই তখন সেখানে আমাদের সাথে মানুষের মত আচরণ করা হয়: “আমি জানি লোকজন আমার কথা শুনবে, কিন্তু আমি তা আর কাউকে বলবো না।

এই গোপনীয়তা এখন এক হুমকির মুখে পড়ে গেছে, কারণ এই সমস্ত রোগীদের এখন ভিন্ন এক জায়াগায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। সঠিক চিকিৎসা সেবা লাভ এবং এইডস রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য প্রাক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি এখন ঝুঁকির মুখে পড়ে গেল।

ওয়াফার পোস্টে এনজি নাদের একটি মন্তব্য করেছে। এই সমস্ত রোগীদের প্রতি তিনি সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন এবং বলেছেন:

এমনকি, যদিও সারাবিশ্বে এইডস নিয়ে এত কথা হচ্ছে.. কিন্তু এখনো এখানে…মানুষ হিসেবে আমাদের এই রোগ থামানোর জন্য যা করা উচিত আমরা তাই করবো। এবং যারা এই রোগে ভুগছে তাদের.. যন্ত্রণা উপশমের জন্য যা করা দরকার তাই করবো। তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত এবং তাদের মর্যাদার সাথে বাস করতে দেওয়া উচিত।

এনজির সঙ্গে আমার কণ্ঠস্বর যোগ করছি, আমি বিস্মিত হব যদি এই সমস্ত রোগীদের জন্য কোন কিছু করা হয়…।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .