প্রাণঘাতী হামলার পর টোগো আফ্রিকান নেশন্স কাপে খেলার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে

আনুষ্ঠানিক ভাবে টোগোর জাতীয় ফুটবল দলকে ‘আফ্রিকান কাপ অফ নেশনস’ বা আফ্রিকার ফুটবল প্রতিযোগিতায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গত শুক্রবার অ্যান্গোলার কাবিন্ডা এলাকায় টোগোর জাতীয় দলকে বহনকারী গাড়ি বহরের উপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই ঘটনা ঘটল। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে সংঘর্ষের কারণে কাবিন্ডায় দীর্ঘ সময় ধরে এক সমস্যা চলছে।

এক গা গরম করা খেলার আগে বিব্রেচ/রিস-এ টোগোর জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যরা, ২০০৬-এর বিশ্বকাপের কয়েকদিন দিন আগে তোলা ছবি (ছবির উৎস: উইকিপিডিয়া)।

এক গা গরম করা খেলার আগে বিব্রেচ/রিস-এ টোগোর জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যরা, ২০০৬-এর বিশ্বকাপের কয়েকদিন দিন আগে তোলা ছবি (ছবির উৎস: উইকিপিডিয়া)।

এই ঘটনায় দলের সহকারী কোচ এবং প্রচার মাধ্যম কর্মকর্তা নিহত হয়েছে এবং গোলরক্ষক কোডজোভি “ডোডজি” ওবিলালে গুরুতর আহত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি শল্য চিকিৎসার পর ওবিলালের শারীরিক অবস্থা এখন অনেক স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। যদিও তিনি এখনো শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রের সাহায্যে নি:শ্বাস নিচ্ছেন।

যে বিদ্রোহী দল এই হামলা চালিয়েছে তাদের নাম এফএলইসি এবং তারা এই আক্রমণের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। তবে তারা এক বিবৃতিতে বলেছে যে, তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল অ্যান্গোলার পুলিশ বহর, টোগোর খেলোয়াড়রা নয়। অ্যান্গোলার সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা” এবং তারা অন্য সব দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাবিন্ডা প্রদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া খেলাগুলো নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সূত্রানুসারে টোগোর অনেক খেলোয়াড় এই ঘটনার পরও এই প্রতিযোগিতায় খেলতে চেয়েছিল, তবে টোগোর সরকার শনিবার দলটিকে দেশে ফিরিয়ে আনে। আজ (১১ জানুয়ারি) টোগোর সাথে ঘানার খেলার কথা ছিল। এই খেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে কারণ টোগোর জাতীয় ফুটবল দল মাঠে হাজির হতে ব্যর্থ হয়।

এই আক্রমণের পর অনেক টোগোলীজ বা টোগোবাসী এই দু:খজনক ঘটনাকে এড়ানোর ক্ষেত্রে কি কি করা যেত তা নিয়ে বেশ কঠিন কঠিন প্রশ্ন করেছে? কেন জাতীয় দল বাসে করে সেখানে যাচ্ছিল, কেন বিমানে নয়? অ্যান্গোলার সরকার কাবিন্ডায় খেলার আয়োজন করেছিল কি এইজন্য যে, তারা দেখাতে চেয়েছিল, সেখানকার বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়েছে? ফুটবলে কি এই ধরনের বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটা উচিত, যা তাকে অনুসরণ করে যাচ্ছে? এই প্রতিযোগিতা কি বাতিল করা উচিত?

খেলা চালিয়ে যাওয়া?

এই ঘটনার পর এক বড় মাপের বিতর্ক অনলাইনের শুরু হয়, টোগোর জাতীয় দলকে কি প্রতিযোগিতা থেকে প্রত্যাহার করা উচিত। রেভে দ’আফ্রিক টগোবাসী লেখক জেরি টাআমার ব্লগ। তিনি যুক্তি দেখান যে, এই প্রতিযোগিতা চলতে দেয়া উচিত:

A la seule condition que la CAN soit annulée (les autres équipes décidant de boycotter l’évènement), nous devons jouer ce match…Nous devons être à cette CAN, pour occuper notre place, pour honorer nos morts, leur dire combien nous les aimons, et combien nous leur montrons que refusons que leur mort soit vaine. Jouer pour ne pas laisser les terroristes nous vaincre, pour ne pas laisser la barbarie l’emporter sur le droit et nos valeurs. Refuser de jouer, c’est capituler…

যতক্ষণ না কান (সিএএন,আফ্রিকান কাপ অপ নেশন্স বা আফ্রিকা ফুটবল প্রতিযোগিতা) বাতিল বলে ঘোষণা হচ্ছে (অন্য দলগুলো যদি এই প্রতিযোগিতা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়), ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের খেলা উচিত…। এবারের কান-এ অবশ্যই আমাদের খেলা উচিত। আমাদের স্থান অর্জনের জন্য, যারা এই আক্রমণে মারা গেছে তাদের সম্মানের জন্য, তাদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের জন্য, এবং এই বিষয়টি প্রদর্শনের জন্য যে, তাদের মৃত্যু বৃথা যায় নি। এ কারণে টোগোর খেলা উচিত, যাতে সন্ত্রাসবাদের জয় না হয়, যাতে বর্বরতা আমাদের আইন অথবা মূল্যবোধের উপর জয়ী হতে না পারে। খেলতে অস্বীকার করা মানে এসব বিষয়কে প্রবেশ করার সুযোগ প্রদান করা….

ইপকা-অউ ভিলেজ উক্ত লেখকের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন:

Comment est-ce qu’ont espere qu’ils jouent au foot apres avoir echappe belle a la mort en essayant d’aller jouer au foot, et aussi avec deux joueurs et des entraineurs et medecins gravement blesses??

কি ভাবে আমরা আশা করি, মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসার পরও তারা খেলবে, যখন তারা খেলতে গিয়ে প্রায় মারা যাচ্ছিল এবং দলের দুজন খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষক ও ডাক্তার গুরুতর আহত??

কাঙ্গি আলেম নিজে ইপকা-অউ ভিলেজের সাথে একমত এবং এ ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে, ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা বাতিল করা উচিত:

La CAF porte une responsabilité dans le fait d’avoir fait passer les joueurs togolais dans une enclave réputée dangereuse, elle doit maintenant prendre ses responsabilités en annulant la CAN 2010! C’est mon sentiment, antisportif peut-être, mais c’est mon sentiment.

এই বিষয়ে কাফ [সিএএফ, কনফেডারেশন অফ আফ্রিকান ফুটবল বা আফ্রিকান ফুটবল সংস্থা]- এর এক দায়িত্ব রয়েছে। এটি এমন এক এলাকা দিয়ে খেলোয়াড়দের যেতে দিয়েছে যা বিপজ্জনক এলাকা বলে পরিচিত। এখন সে তার দায়িত্ব পালন করবে এবং কান ২০১০!(আফ্রিকান নেশন্স কাপ-২০১০) বাতিল করবে। এটাই আমার মতামত। এটা অনেকটা খেলা বিরোধী, হয়তো, কিন্তু সেটাই আমার মতামত।

কাফ (কনফেডারেশন অফ আফ্রিকা) দাবি করছে যে টোগো ফুটবল দলের ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্বন্ধে তাদের জানা ছিল না। তারা বলছে যে, তারা ফুটবল দলকে বিমানে ভ্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছিল। টোগোর জাতীয় দলের সাথে অ্যান্গোলার এক সামরিক বহর যাচ্ছিল, আলেম এটি বিষয়টি বিচিত্র বলে “উল্লেখ” করেছে।

কেন কাবিন্ডায় খেলবে?

অবশ্যই অত্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, কেন প্রথম পর্বের খেলাগুলো কাবিন্ডায় অনুষ্ঠিত হবে। ইকপা লিখেছে:

Je pense que c’etait une decision politique de l’Etat Angolais cautionne par la CAF d’organiser des matchs dans cette region de la Cabinda pour prouver qu’il y a securite dans cette region riche en petrole afin d’attirer les investisseurs etrangers dans cette region. Alors cette attaque viens de prouver le contraire.

আমি মনে করি অ্যান্গোলার সরকারের এটা ছিল এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্তকে কাফ বা আফ্রিকান কাপ অফ নেশনস টুর্নামেন্ট কমিটি সমর্থন করেছে। কাবিন্ডায় খেলার আয়োজন করার ফলে প্রমাণিত হয় যে তেল সমৃদ্ধ অঞ্চল এখন নিরাপদ। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য এই পরিকল্পনা। তবে এই হামলা তার বিপরীতটাই প্রমাণ করল।

আলেম এর পোস্টে পল আর্চার এক মন্তব্য করেছে, সে লিখেছে:

Il faut jouer, c’est la vie! les rebelles sont chez eux,je ne les approuve pas mais un terrain de guerre est un terrain de guerre.

তারা বিদ্রোহীদের মাঠে ছিল। আমি এর সাথে একমত নই, তবে বিদ্রোহে পূর্ণ এলাকা বিদ্রোহীদের এলাকা বটে।

খেলাধুলা এবং দুর্ঘটনা

আলেমের ব্লগে ডেভিড কেপলি লিখেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, খেলাধুলার ইতিহাসে এ ধরনের দুর্ঘটনা এবারই প্রথম নয়, বিশেষ করে ফুটবলের ক্ষেত্রে সংঘর্ষ যেন অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে আছে। ২০০৭ সালে সিয়েরা লিয়নে এক হেলিকাপ্টার দুর্ঘটনায় ১৩ জন লোক মারা যায়। এর মধ্য ছিল সিয়েরা লিয়নের ফুটবল কর্মকর্তা ও সমর্থক। এমনকি কর্মকর্তাদের মধ্য সিয়েরা লিয়নের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালের আফ্রিকান কাপ বাছাই পর্বের টোগো বনাম মালির খেলার কথা। সে খেলায় বেশ কয়েকজন টোগোবাসী মালির রাজধানী বামাকোতে নিহত হয়। তিনি টোগোর রাজধানী লোমের কেগুয়ে স্টেডিয়ামে ঘটা সেই ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসেন, যে ঘটনায় বেশ কয়েকজন ফুটবল সমর্থক মারা যায়। উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, খুব সম্প্রতি আইভরি কোস্টে ঘটা বেদনাদায় ঘটনার কথা। সে ঘটনায় দ্রুত পালাতে গিয়ে চাপা পড়ে ১৯ জন দর্শক মারা যায়। তিনি উপসংহার টানেন এভাবে:

Sur le plan africain, le foot, toujours lui, ne fait pas moins de victimes…Bon Dieu! le foot fait trop de victimes!

আফ্রিকা, ফুটবল, হ্যাঁ ফুটবল,…. ওহ ঈশ্বর! ফুটবলের কারণে অনেকে নিহত হয়েছে!

একই মেজাজের আরেকজন পাঠক সামি। তিনি বিস্মিত হবেন না, যদি ফুটবলকে ঘিরে যে সংঘর্ষ চলে তাকে এক রুপ দেওয়া যায়। “জনপ্রিয় এই খেলা যা প্রায়শ: আদিম এক জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তা কি ছদ্মবেশী এক যুদ্ধক্ষেত্র নয়” [ফরাসী ভাষায়]।

খেলা চলছেই

রেভে দ’আফ্রিক-এর লেখার উপর ফেলিক্স মাকাইয়াবা মন্তব্য করেছে, এটা এক বেদনাদায়ক অনুভূতি যে আফ্রিকান কাপ অফ নেশনস নামক প্রতিযোগিতা এরপরও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ব, এমনকি টোগোর দর্শকরাও ইতোমধ্যে বেদনাদায়ক এই ঘটনার কথা ভুলে গেছে:

En effet, tant que la CAN continue, il y'aura une ambiance festive partout au Togo. Et ala douleur de la mort des nôtres rique d'être occulté pour laisser la place au football. J'ai pour preuve les cris qde joie qui fusent de tout de Lomé du seul fait de l'égalisation des 4 buts par l'équipe du Mali. Déjà les Loméens se mettent dans la peau de leurs frères Maliens…Déjà nos morts d'Angola, sans avoir encore été inhumés nous occupent de plus en plus moins.

যতদিন কান নামক প্রতিযোগিতা চলবে, সে সময় সমস্ত টোগো এক উৎসবের মেজাজে থাকবে। এবং আমাদের নিজস্ব ঝুঁকির কারণে সৃষ্টি হওয়া কিছু মৃত্যুর ঘটনা, ফুটবলের কারণে হারিয়ে যাবার উপক্রম হবে। আমার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে। টোগোর রাজধানী লোমের সবজায়গায় আনন্দধ্বনি শোনা গেছে, যখন মালির ফুটবল দল অ্যান্গোলার বিপক্ষে চার গোল করে খেলা ড্র করে তখন এই আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে টোগোর জনগণ তাদের মালি নামক ভাইদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে..এদিকে আমরা ক্রমশ অ্যান্গোলায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে চিন্তা করা কমিয়ে দিচ্ছি, এমনকি তাদের দেহ কবর দেবার আগেই।

সম্ভবত এটাই মানব চরিত্র যে, এ রকম ভায়াবহ ক্ষতি সত্বেও জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে। ফাসোকান বর্ণনা করছে, মালি বনাম অ্যান্গোলার খেলার আগে মালির রাজধানী বামাকোতে যে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল তার কথা (এই খেলাটি ৪-৪ গোলো অমিমাংসীত হয়)।

Ce soir, le Mali joue contre l’Angola, C’est un grand évènement aujourd’hui au Mali et on le sent partout à travers le drapeau malien accroché aux motos, aux vélos, aux voitures, sur les hangars et les toits par les supporteurs. C’est le seul grand sujet à la Une partout à Bamako.
On voit des hommes habillés en vert, jaune, rouge et certaines femmes attacher le drapeau malien autour de la tête comme foulards pour dire aux Aigles du Mali que tout le monde est derrière eux.

আজ রাতে, আমরা অ্যান্গোলার বিপক্ষে খেলেছি। এটা ছিল এক চমৎকার খেলা। এখানে, এই মালিতে, আপনি সব জায়গায় তার অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারবেন। মোটর সাইকেল, সাইকেল, গাড়ি, ছাদের কিনারায় এবং ছাদের উপর সমর্থকরা মালির পতাকা উড়াচ্ছিল।

আপনি দেখতে পাবেন পুরুষেরা সবুজ, হলুদ এবং লাল পোশাক পড়েছিল। অনেক মহিলা মালির জাতীয় পতাকা তাদের মাথায় অনেকটা চাদরের মত মুড়ে রেখেছিল। এটা তারা করেছিল মালির জাতীয় দলের খেলোয়াড় যাদের মালির ঈগল বলে ডাকা হয় তাদের জানানোর জন্য যে, মালির সকল জনতা তাদের পেছনে রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .