জাপান: জাপানী সামাজিক মিডিয়ার উপরে সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র

মেডিফেস হচ্ছে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত একটি সম্মিলন যেখানে বেশ কিছু জাপানী সামাজিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা একত্র হন। গ্লোবাল ভয়েসেস এবার কিছু অংশগ্রহণকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং এর মাধ্যমে আপনারা জাপানের মিডিয়ার প্রেক্ষিতে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন যারা, তাদের দৃষ্টিতে আপনারা স্থানীয় পরিস্থিতিকে দেখতে পাবেন।

জাপানে সামাজিক মিডিয়া- প্রথম পর্ব:

জাপানে সামাজিক মিডিয়া- দ্বিতীয় পর্ব:

এখানে ভিডিওদুটির ট্রান্সক্রিপ্ট (ভাষ্য) দেয়া হল:

প্রথম পর্ব:

বিশ্বের ‘ভার্চুয়ালী’ (আন্তর্জালিক) সংযুক্ত ব্যক্তিদের অন্যতম হচ্ছে জাপানীরা, ধারণা করা হয় প্রায় ৭০% জাপানী নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, বিশেষ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। বেশীরভাগ ওয়েবের উপরে তাদের বাজার করা বা দৈনিক সংবাদের জন্য নির্ভর করেন, কিন্তু তার মানে এই না যে ইন্টারনেটের কোন ব্যবহার মানবাধিকার বা আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য, বা রাজনৈতিক ব্যাপারে যেমন হয়ে থাকে তথাকথিত মিডিয়াতে। আমরা আওয়ারপ্লানেট-টিভির পরিচালক (স্বাধীন কোম্পানি) হাজেমি শিরাইশিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে জাপানী সামাজিক মিডিয়ার বৈশিষ্ট্য কি।

প্রায় ১০০% ভিডিও ক্যামেরা জাপানী কোম্পানী তৈরি করে ক্যানন, সনি, প্যানাসনিক… তারা সবাই জাপানী প্রস্তুত কারক আর বিশ্বের প্রায় বেশীরভাগ টিভি চ্যানেল জাপানী যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। তাছাড়া জাপানে ইন্টারনেট বিস্তৃত আর সহজলভ্য। তার মানে এই না যে নাগরিকরা তাদের ভাষ্য শোনান… অবশ্যই, আইনগতভাবে বলতে গেলে, বাক স্বাধীনতার স্তর অনেক উচুঁতে তারা। কিন্তু আমরা বলতে পারিনা যে সমাজের ভেতরে বিস্তৃত জনসমষ্টি তাদের কথা শোনাতে চাচ্ছেন। জাপানীরা খুবই অক্রিয়। বিশ্বের সব থেকে বেশী সময় টিভি দেখাতে গড়ে এখানে ব্যয় করা হয়। আমরা দৈনিক ৪ ঘন্টা টিভি দেখি, আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সময় বাড়ে, হয়তো দিনে ৭-৮ ঘন্টা, যার মানে দিনের এক তৃতীয়াংশ! আমার মনে হয় গণমাধ্যম নিয়ে অক্রিয় থাকা স্বাভাবিক। যতই উন্নত টুলস থাকুক না কেন আর পরিবেশ যত উন্নত হোক না কেন মনে হয় এটা কঠিন সামাজিক প্রতিরোধের সাথে যুক্ত হওয়া বা স্থানীয় বিষয়ের সমাধান করা এইসব টুলস ব্যবহার করে।

অবশ্যই যেসব দেশে কম উন্নত টুলস আছে আর বাধা আরো শক্ত সেখানে পরিস্থিতি আলাদা। হয়তো মানুষকে যত বাধা দেয়া হবে তারা তত প্রতিবাদ জানাবে!

এটা পুরোটাই খারাপ না, কিন্তু জাপানের জন্য এই পরিবেশ হয়তো খুব বেশী ভালো… যদিও অনেক অনেক লোক আছেন যারা ভুগছেন বা সমাজের প্রতি প্রতিবাদ আছে, সেটা সামনে আসে না। আমি বলবো এটা জাপানের একটা বৈশিষ্ট্য

এমক্সি বা গ্রে এর মতো, বা জনপ্রিয় বুলেটিন বোর্ড ২ চ্যানেলের মতো সামাজিক মিডিয়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় এদের সদস্য সংখ্যা কম। অন্যদিকে জাপানে ব্লগিং খুব সাধারণ ব্যাপার এই পর্যন্ত যে জাপানী ভাষার ব্লগের সংখ্যা ইংরেজীর থেকে বেশী, যা জানিয়েছেন জাপানের সামাজিক মিডিয়া নিয়ে লেখা প্রতিবেদক তাদাহিশা হামাদা [জেক্যাফের পরিচালক]।

জাপানীরা আসলেই অনেক ব্লগ করেন আর যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর বিশ্বের সব থেকে বেশী ব্রডব্যান্ন্ড পেনিট্রেশনের (ব্যবহারের) হার জাপানে। সেই অর্থে, যেটা নতুন মিডিয়ার ক্ষেত্রে জাপান সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। আমি আশা করি এই নতুন পরিবেশকে তুলে ধরে এটাকে নতুন কাজে ব্যবহার করা যাবে।

দ্বিতীয় পর্ব:

সব থেকে বেশী তারকাদের ব্লগ অনুসৃত হচ্ছে , রচনা লেখেন যারা তাদের, মন্তব্যকারীদের বা প্রফেসরদের (যাদের এরই মধ্যে পাঠক আছে আর জনপ্রিয়তা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে)। যদিও সাধারণত ব্লগকে এখানে ডায়রির মতো দেখা হয় যেখানে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ঘটনা লেখা হয়, এছাড়া এটি আর একটা উপায় চিন্তা বা শখের কথা জানানোর -একই ধরনের ডায়রির মাধ্যমে।

গ্লোবাল ভয়েসেস জাপান কিছু ছাত্রের সাক্ষাৎকার নেন এই বিষয়ে…

গ্লোবাল ভয়েসেস জাপান: আপনি সাধারণত কি ধরনের ব্লগ পড়েন?

ছাত্র ১: সাধারণত তারকাদের লেখা ব্লগ

জিভিজে: কত বার?

ছাত্র১: যখন মনে পড়ে।

জিভিজে: আপনি কি নিজের ব্লগ লেখেন?

ছাত্র ১: মাঝে মাঝে মিক্সিতে আমি ডায়রি লিখি

ছাত্র২: আমিও তারকাদের ব্লগ পড়ি।

জিভিজে: আপনার কি নিজের ব্লগ আছে বা মিক্সিতে লেখেন?

ছাত্র ২: আমি সাধারনত মিক্সিতে আমার বন্ধুদের ডায়রি পড়ি আর নিজেরটাও লিখি।

ছাত্র৩: সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্লগ আমি পড়ে থাকি।

সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও, তারপরেও, যে সকল কর্মী আর ব্লগার কোন বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করতে চাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে লেখেন যা সাধারণত প্রধান মিডিয়া কাভার করে না বা ভুলে যায় তাদেরও কিন্তু অস্তিত্ব আছে। তাদের একজন হচ্ছে মিনরি ওকুদা যার সব থেকে জনপ্রিয় পোস্ট ছিল প্রায় ভুলে যাওয়া মিনামাতা অসুখ নিয়ে।

আমি ম্যাগাজিনের জন্য লিখি, বেশীরভাগ তথাকথিত ‘ বিকল্প মিডিযার’ জন্য বা স্বাধীন ম্যাগাজিনের জন্য। তাছাড়া, কাজের বাইরে, আমি আমার চিন্তা প্রতিদিন ব্লগে পোস্ট করি। আমি কেন ব্লগিং শুরু করেছি? লেখার চাকরিতে স্থানের অভাব থাকে প্রকাশের কারণ কটি ম্যাগাজিনে নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা থাকে আর একজন সম্পাদক থাকে সব কিছু দেখার জন্য। অনেক গল্প আছে যা আমি বলতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি বা অদ্ভুত একটা ঘটনা শুনেছি যা ওই নির্দিষ্ট প্রতিবেদনের জন্য ঠিক ছিল না। সব ধরনের জিনিষ যা পড়ানোর সুযোগ হয় নি, তা আমার সামনে আছে। আমার মনে হয়েছিল আমার মাথার মধ্যে কেবলমাত্র এগুলো রাখা লজ্জাজনক। আমি এসব সবার সাথে ভাগ করতে চেয়েছিলাম তাই ব্লগিং শুরু করি। তাই এটা শুরু হয় আমার রিপোর্টিং এর বহি:প্রকাশ হিসেবে, কিন্তু আমি এখন যখনি মানুষ বা ধারণা দেখি যা সমাজ বদলাতে পারে আমি ব্লগ করি।

এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো যখন আমি র‌্যাংকিং এ প্রথমদিকে এলাম পরিবেশগত ব্লগের জন্য। সেই সময়ে, আমি জোর দিচ্ছিলাম মিনামাতা রোগের বিশেষ প্রতিরোধক আইন নিয়ে। আইনটা রোগীর স্বস্তির জন্য হওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবে তা মোটেও তা না। আমি পরিস্থিতি দেখে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলাম আর তা নিয়ে আমি লিখেছিলাম। এই লেখাগুলো সব থেকে বেশী সাড়া পেয়েছিল- ইমেইল, বেশী র‌্যাংকিং আর অনেক ট্রাকব্যাক আর লিঙ্ক।

ব্লগিং থেকে অর্থ পাওয়া যায় না, ঠিক? আপনি লিখতে চাচ্ছেন আর এটা তাই! লেখা থেকে আমি যে সন্তোষ পাই আর কোন গল্প বলার লক্ষ্য পুরণের যে বোধ তাই প্রতিদিন লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়। মানুষ যদি এই ব্যাপারে আবেগ প্রবণ হন, আমার মনে হয় তারা ব্লগ করবেন। অনেক গল্প প্রতিবেদন হিসেবে আসে না আর অনেক চলচ্চিত্র বা বই যা আমি পরিচিত করতে চাই। স্বাধীন চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র সমালোচনার ম্যাগাজিনে স্থান পায় না, পায় কি? তাই এমন জিনিষ দেখলে, আমি ব্লগিং করা থেকে বিরত থাকতে পারি না কারণ গল্প জানানোর ব্যাপারে আমি আবেগ প্রবণ।

ওকুদার মতো, ব্লগিং আর নাগরিক মিডিয়া নিয়ে একি আগ্রহ থাকা লোকেরা প্রতি বছর মেডিফেসে একত্র হন। আয়োজকদের একজন কেনিচি শিমোমুরা বলেছেন এটা কি নিয়ে।

প্রতি বছর জাপানের সব স্থান থেকে নাগরিক মিডিয়া দল একত্র হন। আপনার কাছে প্রোগ্রাম থাকলে দেখতে পাবেন জাপানের নাগরিক মিডিয়া দলের লম্বা তালিকা। অনেক আছে! আর এগুলো কেবল তারা যাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। আরো কত আছে। তাই আমরা সবাই একত্র হই মুখোমুখি হয়ে আমাদের পরিকল্পনা আর সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য। মেডিফেস তথ্য হস্তান্তরের স্থান।

যেহেতু খুব কম লোক ইন্টারনেটে তাদের আসল নাম ব্যবহার করেন তারা সমালোচনার সহজ লক্ষ্যে পরিণত হন। কিন্তু যদি বেশী লোক তাদের আসল নাম আর চেহারা ব্যবহার শুরু করেন… যেসব কণ্ঠ কথা বলে তা নির্যাতিত হয়- কিন্তু এটা আসলেই অদ্ভুত, তাই না? এটা বলা হচ্ছে যে আমরা একটা সমাজ হবো যেখানে মানুষ মুখ বন্ধ করে থাকবে। আমার মনে হয় এটা অনেক কমে যাবে যখন ‘লক্ষ্য’ ছড়িয়ে পড়বে। তাই আমি মনে করি অজ্ঞাত থাকা চলমান প্রক্রিয়া। এখনো ওয়েবে কিছু খোলাখুলি বলা স্বাভাবিক না। জাপানেও, হয়তো ভবিষ্যৎে, আমরা পিছনে তাকিয়ে বলব “আগের দিনের কথা মনে আছে?”

বিশেষ ধন্যবাদ আমাদের মহা-মূল্যবান প্রুফরিডার আর সঙ্গী ববকে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .