রাশিয়া: মহাকাশ ব্লগিং এর দুটি গল্প

মহাকাশ থেকে আর মহাকাশ সম্পর্কে ব্লগিং জনপ্রিয়তা আর পরিচিতি পাচ্ছে মহাকাশ অভিযাত্রী আর নিয়মিত ব্লগারদের মধ্যে। রাশিয়া এর ব্যতিক্রম না। যদিও নাসার মহাকাশচারীদের সাম্প্রতিক ফ্যাশন হচ্ছে মহাকাশ থেকে মাউক্রো ব্লগ বা টুইটার বার্তা পাঠানো, এখনও অধিক সংখ্যক মহাকাশ অভিযাত্রীরা পূর্ণ ব্লগ বার্তা পাঠানোতে মনোযোগী। আর কেউ এইসব ব্লগকে খুব ভালো বলতে না চাইলেও এগুলো আসলেই কম উত্তেজনাকর নয়।

প্রথম রাশিয়ান মহাকাশচারী যিনি ব্লগ শুরু করেন তিনি হলেন ম্যাক্সিম সুরেভ। ১৪ই অক্টোবর তার প্রথম পোস্ট প্রকাশিত হয় রাশিয়ার মহাকাশ এজেন্সি (রসকসমোস) এর ওয়েবসাইটে (রুশ ভাষায়)। ম্যাক্সিমের অনলাইন ডায়েরির ইংরেজী ভাষান্তর “দ্যা অর্বিটাল লগ” পরে রাশিয়া টুডে সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় (ইংরেজী ভাষায়) আর খুব তাড়াতাড়ি আন্তর্জাতিক পাঠকদের কাছে তা জনপ্রিয়তা পায়। সুরেভের ব্লগকে দ্যা ওয়াইয়ার্ড ম্যাগাজিন “সর্বসেরা মহাকাশচারী ব্লগ” হিসেবে অভিহিত করেছে আর লক্ষ্য করেছে যে এতে লেখা হয় নাসা প্রেস রিলিজ বা টুইটে প্রকাশিত বিষয়ের থেকে অনেক আলাদা আর বিচিত্র বিষয় নিয়ে।

দ্যা ওয়াইয়ার্ড এর প্রতিবেদক অ্যালেক্সিস ম্যাড্রিগেল লিখেছেন:

আমরা মহাকাশ যাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাই আমেরিকার দৃষ্টি দিয়ে, তাই ওখানে কি হচ্ছে সে সম্পর্কে অন্য পরিপ্রেক্ষিতে জানতে পারলে দারুন হয়। আর সুরেভের সাইট আদতেই কারো ব্লগের মতো মনে হয়।

রাশিয়ার মহাকাশ এজেন্সি অনুসারে, সুরেভ তার ব্লগ পোস্ট নিয়মিতভাবে ইমেইল করে পাঠান ওয়েব সাইট এডমিনিস্ট্রেটরের কাছে আর তারা সাধারণ মানুষের জন্য সেটা প্রকাশ করেন। তারপরে এই ব্লগ ইংরেজীতে ভাষান্তর করা হয়। যদিও সুরেভের পোস্ট বিশদ না আর তথ্যগত ভাবে নিখুঁত না কিন্তু এগুলো ছবি আর মজার বিবরণে ভরা থাকে।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সুরেভ

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সুরেভ

পোস্টগুলো মূলত মহাকাশের রুটিন ব্যাখ্যা করে: মানুষ কিভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকে, কাপড় পরে, রাঁধে, খেলা করে, ময়লা নিয়ে কি করে, স্টেশনে আসা নতুন মহাকাশচারীদের সাথে সাক্ষাৎ করে ইত্যাদি। আসলে কথার থেকে বেশী ছবি থাকে। এই ব্লগে মজা আর মাঝে মাঝে প্রতিবাদী কাজে ভরা থাকে। সুরেভ তার একটা ব্লগ পোস্টে মনে করেছেন কিভাবে তিনি গমের বিজ স্পেস স্টেশনে ‘চুরি’ করে এনেছিলেন আর পরীক্ষা হিসেবে সেগুলো রোপণ করেছিলেন। যখন ভূমিতে থাকা বিজ্ঞানীরা ঘাসকে নষ্ট করতে আদেশ দেন তিনি মানা করেছিলেন

আমার ব্লগের নিয়মিত পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে আমি কিভাবে গম এখানে ‘চুরি’ করে এনেছিলাম (দেখুন পৃষ্ঠা ১৫, ১৬, ২৭, সম্পাদক)।

এর পরে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা আমাকে বলেন এগুলো তুলে ফেলতে। আমি খুবই দু:খিত আমার সহ বিজ্ঞানীরা, কিন্তু আমি এটা করতে পারি নি। এটা খুব ভালোভাবে বাড়ছে।

নিজেরা দেখেন: বৃহৎ শীষ! আমি আশা করি রোমান সালাডের থেকে এগুলোর স্বাদ ভালো হবে!

সুরেভের কিছু ছবি খুব মজার, কিছু আকর্ষণীয়, কিছু অন্য কোথাও থেকে তোলা অসম্ভব। আপনারা কি এমন চাঁদ কোথাও দেখেছেন?

মজার ব্যাপার হলো, ম্যাক্সিমের প্রথম মহাকাশ যাত্রা ছিল গাই লালিবার্তের সাথে- যিনি একজন মহাকাশ পর্যটক, ব্লগার আর সির্কে দু সোলেল এর প্রতিষ্ঠাতা। কে জানে, হয়তো গাই ম্যাক্সিমকে ব্লগ শুরু করার পরামর্শ দেন।

প্রশিক্ষণের আর ফ্লাইটের প্রত্যেকটি দিন নিয়ে গাই এর ব্লগে ২০১টি লেখা আছে যা রুশ, ইংরেজী আর ফরাসী ভাষায় অনুবাদ হয়েছে (দেখুন তার মহাকাশ যাত্রা নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস এর কাভারেজ)। যেহেতু ব্লগের বেশীরভাগ বিষয় গাই এর মূল ভাষ্য, আমরা ব্লগের ব্যাপারে যে একটু নিখুঁত না হওয়া পছন্দ করি তা এতে নেই। তারপরেও, গাই এর কিছু স্বীকারোক্তি শ্বাসরুদ্ধকর:

আমাকে যদি বর্ণনা দিতে হয় মহাকাশযান যখন পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছিল তখনকার অনুভূতি, আমি বলব সেই অনুভূতি অনেক বেশী মানসিক আর আত্মীক, শারীরিকের চেয়ে।

শেষবার পৃথক হওয়ার পর্যায়ে, আমরা পরিষ্কার ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আওয়াজ শুনলাম আর। আর বেশ অপ্রত্যাশিতভাবে, আমাদের ছোট্ট খেলার পুতুলটা উড়তে শুরু করল! আমাদের হাত পা হঠাৎ করে হালকা বোধ হতে লাগল- আমরা ওজন বিহীন হয়ে গেলাম! আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাতে হাত মেলালাম। আমি দ্রুত জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আর একটা বৃহৎ আর খুব গোল বল দেখলাম: বাহ, কি দারুন একটা দৃশ্য! আকাশই আমাদের সীমা না।

কয়েক মিনিট পরে, আমি পৃথিবী আর প্রায় পূর্ণ একটা চাঁদ দেখলাম, আর আমরা আমাদের ঘূর্ণন শুরু করলাম। আমরা আমাদের আসনে আরো কয়েক ঘণ্টা থাকলাম তারপরে আমাদের কেবিনে গেলাম অন্য দিকে। আমরা আমাদের ফ্লাইট স্যুট খুললাম, আর সেই মুহূর্তে, আমি আমার খাপ খাওয়ানোর প্রথম স্তর পার করলাম- তখন পর্যন্ত ছিল তা আমার জন্য সব থেকে কঠিন- আর আমি যা খেয়েছি তা বমি হয়ে গেল। এটা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হল আর তার পরে আমার অন্যরকম লাগল, আর তার পর থেকে সব কিছু ভালো ছিল।

রাশিয়ার অনলাইন কমিউনিটিতে গাই এর মহাকাশে ভ্রমণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল কারণ এই যাত্রা রাশিয়ার মহাকাশ এজেন্সি আয়োজন করেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে গাই সপ্তম মহাকাশ পর্যটক হয়েছেন। এর আগে মহাকাশে গিয়েছিলেন (মার্চ ২৬, ২০০৯) ষষ্ঠ মহাকাশ পর্যটক চার্লস সিমোনি, যিনি মাইক্রোসফ্ট গ্রুপের প্রধান। তার যাত্রা ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন লাইভ জার্নাল প্লাটফর্মের ব্যবহারকারী চ্যাট-দে-মের

গাই লালিবার্তে আর ম্যাক্সিম সুরেভ এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের অন্যান্য সদস্য। ছবি দ্যা লাস্ট ড্রপের সৌজন্যে।

গাই লালিবার্তে আর ম্যাক্সিম সুরেভ এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের অন্যান্য সদস্য। ছবি দ্যা লাস্ট ড্রপের সৌজন্যে।

আরো মহাকাশ ব্লগের তালিকা:

আনুশেহ আনসারি

লিরয় চিয়াও

নিকোল স্কট

নাসা ব্লগারদের তালিকা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .