ডেনমার্ক: দেশত্যাগ করার জন্য অভিবাসীদের অর্থ প্রদান করা হবে

ডেনমার্কে বাস করা পাশ্চাত্যের নয়, এমন দেশের অভিবাসীদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যে যদি তারা সেদেশ ত্যাগ করে নিজ দেশে ফিরে যায়, তা হলে তাদের ১০০,০০০ ড্যানিশ ক্রোনার (২০,০০০ মার্কিন ডলার) প্রদান করা হবে। এটা অভিবাসী বিরোধী ড্যানিশ পিপলস পার্টির অনেকগুলো চমৎকার(!) চিন্তার মধ্যে একটি, যার উদ্দেশ্য বিদেশী নাগরিক-বিশেষ করে মুসলিমরা যেন এই দেশে এসে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে। ইউরোপের এই ছোট্ট দেশে ৫৫ লক্ষ লোকের বাস

ডেনামর্কে যে দু'টি রাজনৈতিক দল যৌথভাবে সরকার পরিচালনা করছে, তার এক অংশীদার ড্যানিশ পিপলস পার্টি যেটি চিন্তায় ডানপন্থী। এই দলটি অভিবাসীদের অর্থ প্রদান করবে যদি অভিবাসীরা এ দেশ ছেড়ে চলে যায়। তারা ভাবছে এর ফলে ডেনমার্কের সমাজ কল্যাণ খাতের টাকা বেঁচে যাবে এবং দেশটি ভবিষ্যৎে লম্বা সময়ের জন্য নানাবিধ সমস্যা থেকে বেঁচে যাবে [ড্যানিশ ভাষায়]। মন্দ অভিবাসীদের ড্যানিশ সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, এই কথাগুলো বলেন দলটির অর্থনৈতিক বিষয়ক মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান থুয়ালসেন ঢাল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রচারণার জন্য ইতোমধ্যে তহবিল তৈরি করা হয়েছে, যারা অভিবাসীদের দেশ ত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করবে। তবে সরকার এখনো হিসেব কষে বের করতে সক্ষম হয় নি, কতজন লোক এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

ডেনমার্কের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ শতাংশ লোক অভিবাসী বা অভিবাসী বংশদ্ভুত নাগরিক। এদের মধ্যে যেমন প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অভিবাসীও রয়েছে, তেমনি সারা বিশ্ব থেকে আসা নানা ধরনের অভিবাসীরাও রয়েছে। অনেক বছর দেশটির রাজনৈতিক ও প্রচার মাধ্যমের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম ও অপাশ্চাত্যের অভিবাসীদের ড্যানিশ সমাজের সাথে সংযুক্ত করা এবং উভয়ের সংস্কৃতির সংঘাত থেকে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তা উপলব্ধি করা। ইউরোপের সকল দেশের মধ্যে ডেনমার্কের রাজনীতিবীদরা অভিবাসন সংক্রান্ত সবচেয়ে কঠিন আইন তৈরি করেছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় এ দেশে আসতে হলে অনেক বেশি নম্বর অর্জন করতে হয়।

দেশ ছেড়ে চলে যাবার জন্য কত টাকা প্রদান করা হবে?
facebook-page-screenshot-300x262এই আইনের প্রতিউত্তরে, বিদ্রূপাত্মক একটি দল ফেসবুকে [ডেনিশ ভাষায়] এর প্রতিবাদ করেছে। তারা ড্যানিশ পিপলস পার্টির প্রধান পিয়া কেয়াসাগার্ডকে প্রদান করার জন্য ১০০,০০০ ক্রোনার সংগ্রহ করছে, যাতে সে এ দেশ ছেড়ে চলে যায়।

এই দলে ১৬,০০০ সদস্য রয়েছে এবং এর ট্যাগলাইন বা মূল মনোভাব প্রকাশের স্থানে লেখা রয়েছে, প্রিয় বন্ধুরা ১০০,০০০ ক্রোনার যোগাড় হলেই এই নেত্রী দেশ ছেড়ে চলে যাবে। এই দলের সৃষ্টিকর্তারা দলে কিছু অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহের অনুরোধ জানিয়েছে। এটি মিনিস্ট্রি অফ ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক মন্ত্রী ব্রিথ রন হর্নবেককে প্রদান করা হবে, যিনি সরকার পরিচালনা করা লিবারেল পার্টির সদস্যা। বাড়তি এই অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্য, চাইলে তিনিও দেশ ত্যাগ করতে পারেন।

ফেসবুকের পাতায় এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। একদল ব্যঙ্গক্তিপূর্ণ মন্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা করছে, দেশ থেকে কাকে লাথি মেরে বের করে দেওয়া হবে, অথবা মন্ত্রীদ্বয়কে নিয়ে এর বাইরে আর কি করা যেতে পারে। অন্যদিকে আরেক দল এর প্রতি উত্তর দিচ্ছে এভাবে যে, ড্যানিশ সরকার ডেনমার্কে বাস করা অসুখী অভিবাসীদের যে ভদ্রোচিত প্রস্তাব দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানানো উচিত এবং তাদের এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। এই নিয়ে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে একজন মন্তব্যকারী একমত নন এবং তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, কয়েক বছর আগে এ রকম একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সে সময় যে অর্থ প্রদান করার কথা বলা হয়েছিল তা এর চেয়ে দশগুণ কম ছিল।

ফেসবুকে ডান করনালি ইয়োরগেনসেন মন্তব্য করেছেন [ড্যানিশ ভাষায়]:

Jeg har måske misforstået konceptet?
Drejer det sig ikke om et lovforslag som giver ikke-integrerbare udlændige mulighed for at sige ja-tak, til en check på 100.000 kr. mod tilsagn om frivilligt at rejse hjem til deres oprindelsesland? Umidelbart virker det storsindet og absolut humanistisk, da vi må formode at 100.000… kr. er en anseelig formue i det pågældende land, og nok til at starte en anstændig tilværelse i det land som de tilsyneladende har så stærk tilknytning til…

আমি কি বিষয়টি উপলব্ধি করতে ভুল করছি?
এটা কি সেই আইন যা, এ দেশের সমাজের সাথে মিশতে অক্ষম বিদেশীকে স্বেচ্ছায় তার নিজের দেশে ফিরে যাবার ক্ষেত্রে হ্যাঁ বলার শর্তে ১০০,০০০ ক্রোনার প্রদান করার কথা বলে, যাতে যে দেশের সাথে অভিবাসীর নাড়ীর বন্ধন সেই দেশে স্বেচ্ছায় ফিরে যায়? এটা মনে হচ্ছে মহানুভব ও মানবিক কাজ, যখন আমরা হিসেব করি ১০০,০০০ ক্রোনারের কথা। এই পরিমাণ টাকা পাওয়া অভিবাসী নাগরিকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সৌভাগ্যের এবং যে দেশের সাথে তার বন্ধন জড়িয়ে রয়েছে সেখানে এই পরিমাণ অর্থ পরিমাণে অনেক……

দু মাসের বেশী সময় ধরে দেশের বাইরে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে অবসরভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা কর্তৃপক্ষকে সে সম্বন্ধে তথ্য জানাবে:

ড্যানিশ পিপলস পার্টি এ মাসে অরেকটি আইন তৈরির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এই আইনে ডেনমার্কের একজন অবসরভাতা প্রাপ্ত ও সময়ের পূর্বে অবসর নেওয়া ব্যক্তি দুই মাসের বেশি সময় ডেনমার্ক ছেড়ে কোথাও যাবার পরিকল্পনা করলে তাকে অবশ্যই বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে [ড্যানিশ ভাষায়]। দৃশ্যত:, এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য, যারা ডেনমার্কের অবসরভাতা গ্রহণ করে এবং একই সময়ে অন্য দেশে টাকা আয় করতে যায়, সেই সমস্ত ব্যক্তিদের আটকানো। বলা যেতে পারে, ডেনমার্কে বাস করা ইরাকীদের এ ধরনের কাজ করা থেকে বিরত রাখার জন্য এই আইন। এর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ সামিয়া আজিজ মোহাম্মদ। তিনি একজন ইরাকী-ড্যানিশ রাজনীতিবীদ। দেখা গেছে যে সময়ে তিনি ডেনমার্ক থেকে অবসরভাতা গ্রহণ করছেন, একই সময়ে তিনি ইরাকী সরকারে সংসদ সদস্যা হিসেবে বেশ ভালো বেতন নিচ্ছেন। এ ঘটনা জানাজানি হবার পর সামিয়া অবশ্য ড্যানিশ সরকারকে তার অবসরভাতা ফেরত দিয়েছেন [ড্যানিশ ভাষায়]। ডেনমার্কের সংবাদপত্র আবিষ্কার করেছে যে এ রকম আরেকজন অবসরভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তি কুর্দী সংসদ থেকে বেশ ভালো টাকা বেতন পান।

ডেনমার্কের সংসদের দু'টি দল লিবারেল ও ড্যানিশ পিপলস পার্টি উভয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেছে যে, নতুন নিয়মে ভ্রমণের ব্যাপারে যে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, তাতে ভুয়া উদ্বাস্তুদের ছুটির সময়ে ভ্রমণ করা বন্ধ হয়ে যাবে। এই সমস্ত উদ্বাস্তুরা ছুটির সময় নিজের দেশে বেড়াতে যায় এবং একই সাথে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হতে যায় । তারা স্বদেশী পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হবার জন্য ডেনমার্কের বাইরে অনেক লম্বা সময় কাটায়।

ঘটনা হচ্ছে ডেনমার্কের সকল অবসরভাতা ভোগীদের উইল বা দলিল এতে সন্দেহের তালিকায় চলে আসবে, যা ডেনমার্কের বয়স্কব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ডেনএজের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তারা এ কারণে তাদের রাগ প্রকাশ করেছে [ড্যানিশ ভাষায়]। অনেকে সংবাদপত্রের নিবন্ধে মন্তব্য করেছে [ড্যানিশ ভাষায়]। মন্তব্যে অনেকে সরকারের প্রতারণা বন্ধ করার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন, অনেকে আবার অতীতে পূর্ব জার্মানীর আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সাথে ডেনমার্কের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টির তুলনা করেছেন।

ডিট্টে অগ হিন্ট ব্লগে এরিক বেন্টজেন নামের এক ব্লগার নামক বলছেন [ড্যানিশ ভাষায়]:

Enhver kan sige sig selv, at meldepligten ikke dæmmer op for noget som helst, da den ikke indebærer nogen form for effektiv kontrol.
Det er ren chikane og tom signalpolitik, som øger kommunernes administrative arbejde til ingen verdens nytte.
Reglen er så amøbeintelligent, at den forhåbentlig giver bagslag, næste gang pensionisterne skal til stemmeurnerne.

যে কেউ উপলব্ধি করতে পারে যে, নতুন নিয়ম কোন ধরনের প্রতারণাকে ঠেকাতে সক্ষম হবে না, কারণ এটি কোন কার্যকর নিয়ন্ত্রণের সাথে যুক্ত নয়।

এই আইন পরিষ্কারভাবে এক হয়রানি মূলক আইন এবং প্রতীকী এক শূন্যগর্ভ রাজনীতি, যা স্থানীয় সরকারের কর্মচারীদের কোন প্রয়োজন ছাড়াই কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে।

এই নীতি এতটাই প্রাচীন এক বুদ্ধিমত্তার বহি:প্রকাশ যে, আশা করা যায় পরবর্তী সময়ে অবসর ভোগীরা তাদের বিপক্ষে ভোট প্রদান করবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .