আলজেরিয়া-মিশর: ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে অনলাইনে উত্তেজনা

গত ১৪ই নভেম্বর কায়রোয়, মিশর বনাম আলজেরিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দু'টি দেশের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এই খেলাটির ফলাফল নির্ধারণ করবে সামনের বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে কোন দেশটি খেলবে। মিশরকে প্লে অফ ম্যাচ বা বাছাই পর্বে সেরা হবার সুযোগ পাবার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে এই খেলায় অন্তত ২-০ গোলে জিততে হবে এবং প্লে অফ ম্যাচটি নিরপেক্ষ কোন দেশে অনুষ্ঠিত হবে (যদি মিশর ২-০ গোলে জেতে, তা হলে মিশর ও আলজেরিয়ার পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে এবং তখন সুদানের মাটিতে উভয়ের মধ্যে আবার খেলা হবে)। অন্যদিকে আলজেরিয়া ১৯৮৬ সালের পর আর কোন ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি তাই তারা বাছাই পর্বে গ্রুপে সেরা দল হিসেবে অবস্থান ধরে রাখার জন্য লড়াই করবে (তা হলে দেশটি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে)। শনিবারের এই খেলাকে মাথায় রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকরা তৈরি হচ্ছে। তারা যেমন বাইরে সাজ সাজ রব করছে, তেমনি এই খেলা নিয়ে অনলাইনেও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে। যার ফলে বিষয়টি এক তিক্ত সাইবার যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে।

আলজেরীয় ব্লগার আদেল [ফরাসী ভাষায়], এই খেলাকে ঘিরে লড়াইটি কিভাবে শুরু হয়েছে, তার সারাংশ তুলে ধরেছে। ব্লগার লিখেছে:

Ce n’est pas sur le carré vert que le match a commencé à se jouer mais sur la toile. En attendant l’entrée des 22 joueurs sur la pelouse du fameux Cairo Stadium, la rencontre a débuté de manière assez peu banale entre les «Facebookeurs» (membres du réseau Facebook) algériens et égyptiens. Tout a commencé par de simples discussions dans les forums avant que cela ne prenne de l’ampleur. Voulant montrer leur savoir-faire dans la retouche d’image, les Egyptiens ont été les premiers à ouvrir les hostilités en publiant des photos «anti-algérien».
Les Egyptiens voulaient expliquer à travers un tel acte que leurs joueurs sont «très forts» et qu’ils sont en mesure d’écraser l’équipe nationale algérienne. Cela donna le top à une guerre d’un genre particulier. La guerre des images et des parodies.

ভাব দেখে মনে হচ্ছে মাঠের বাইরে অনলাইনে ইতোমধ্যে খেলা শুরু হয়ে গেছে। কায়রোর বিখ্যাত স্টেডিয়ামে ২২ জন খেলোয়াড় প্রবেশ করার আগেই যেন অনলাইনে ফুটবল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। খেলা শুরু হবার পূর্বেই ফেসবুকে আলজেরিয় ও মিশরীয়দের মধ্যে তিক্ত লড়াইয়ের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। এটি শুরু হয়েছিল বন্ধুত্বপূর্ণ এক আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে, কিন্তু তা ক্রমশ খারাপ দিকে গড়ায়। ছবি সংশোধন করার ক্ষেত্রে কার দক্ষতা কত তা প্রদর্শন করা থেকে এই লড়াইয়ের শুরু। এ ক্ষেত্রে মিশরীয়রাই প্রথম আক্রমণ শানায়। তারা কিছু আলজেরীয় বিরোধী ছবি প্রকাশ করে। মিশরীয়রা দেখাতে চাইছিল যে তাদের খেলোয়াড়রা শক্তিশালী এবং তারা মাঠে আলজেরিয়ার জাতীয় ফুটবল দলকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করবে। এই ঘটনা বিচিত্র এক লড়াইয়ের সূত্রপাত করে। এ লড়াই, ছবি তৈরি এবং বিদ্রূপ মূলক ভাষা রচনায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাবার লড়াই।

হলিউডের বিখ্যাত সব ব্যবসা সফল ছবির ভাষাকে নিজের ভাষায় তৈরি করে ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে, গ্রীস লেখক হোমারের গল্পের বিরত্বগাঁথায় যেন দেশ দু'টি পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছে।

নীচের ভিডিওটি [আরবী ভাষায়] হাকেমভিওআইপি [ফরাসী ভাষায়] পোস্ট করেছেন। ছবিতে মেল গিবসন রাবাহ ওয়ালেশের (ব্রেভহার্ট) মুভিকায় অভিনয় করেছেন, এখানে তিনি একজন আলজেরীয় যুদ্ধবাজ নেতা যিনি তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উত্তেজিত করছেন:

নিচের ভিডিওটিতে (আরবী ভাষায়), মিশরীয় ইউলিসিস আলজেরীয় সমর্থকদের কি ভাবে স্বাগতম জানাবে তাই দেখাচ্ছে। ইউলিসিসের (মিশরীয়) ভাষায়, কায়রো শহরে আলজেরিয়দের নারকীয় এক অভ্যর্থনা জানানো হবে:

ব্লগার জেমইয়াহুড [আরবী ভাষায়] হাজার হাজার মিশরীয় সমর্থকদের ছবি পোস্ট করেছে। তারা মিশরের বিভিন্ন এলাকায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই আশায় যে, এই খেলার একটা টিকেট যদি পাওয়া যায়। টিকেটের জন্য যে ভীড় তৈরি হয়েছে ব্লগার তার ছবি প্রকাশ করেছে
m1

m2

জেমইয়াহুড কিছু চাক্ষুষ বিষয় পোস্ট করেছে:

انا خدت اجازة اليوم ونزلت من الصبح لنادي الصيد الساعة 8 الصبح وللاسف لقيت موت ناس وزحمة وطابور فيه حوالي 3000 واحد ودفع وشتيمة والناس كل شوية بتزيد ومش عارف اقف من الزق والعرق بجد مهزلة
আমি সেদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সকাল ৮ টায় ক্লাবে উপস্থিত হলাম [টিকেট পাওয়ার আশায়]। দু:খজনক ভাবে আমি আবিষ্কার করলাম ৩০০০ জনের বিশাল এক লম্বা লাইন । এবং এই লাইনে লোকজন পরস্পরকে ধাক্কা দিচ্ছিল এবং শাপশাপান্ত করছিল। আমি লাইনে আটকে রইলাম। আমি বুঝলাম, টিকেট পাবার কোন আশা নেই।

১২ নভেম্বর কায়রোতে আলজেরিয়ার ফুটবলারদের নিয়ে যে বাসটি প্রবেশ করে সেটি স্থানীয় সমর্থকদের হাতে নাজেহাল হয়। বিষয়টি নিচের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি ভিডিওস মৌলডিয়া ক্লাব ডি’ওরান ইউটিউবে উঠিয়ে দিয়েছে। যা মনে হচ্ছে প্রদর্শন যোগ্য:

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা আলজেরীয় ও মিশরীয় ফুটবল সংস্থাকে সতর্ক করে দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। সংস্থাটি উভয়কে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে ২০১০ সালের বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব যে ভাবে শুরু হয়েছিল, সে ভাবে তা শেষ হতে হবে এবং তা যেন শেষ হয় এক সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের মাধ্যমে। এর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে উভয় দেশকে ফিফা নির্দেশ দিয়েছে।
One People, One Language One Goal

আলজেরিয়ার সমর্থকরা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে [আরবী ও ফারসী ভাষায়] যা এই আলজেরিযা-মিশর ফুটবল খেলার সকল সংবাদ ও ঘটনা প্রকাশ করবে।

যেখানে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এক পরিবেশ খেলা অনুষ্ঠিত হতে হচ্ছে সেখানে ফেসবুকে কিছু লোক একটি বিশেষ গ্রুপ তৈরি করেছে যা আরো উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। লামা বউচেমা এই গ্রুপের ওয়াল পোস্টে একটি বার্তা প্রকাশ করেছে:

আলজেরীয় দলটির ক্ষেত্রে কিছু ঘটলে আমি ভীষণ রাগান্বিত হব। কিছু বেকুব যা করেছে তা দিয়ে আমি পুরো জাতিকে বিচার করবেন না! আল্লাহর দোহাই সেখানে কে গেল [ফুটবল বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে ], তাতে কিছু আসে যায় না।

মিশরীয় ব্লগার লাসতো আদ্রি [আরবী ভাষায়]। খেলাকে সহজভাবে নেবার বদলে এ রকম নোংরাভাবে পরস্পরের মুখোমুখি হবার নিন্দা করেছেন। ভদ্রমহিলা লিখেছেন:

مندهشة من التعصب وتدنى مستوى لغة الحوار بين مشجعى منتجب مصر ومنتخب الجزائر والظاهر بوضوح فى التعليقات على المواقع الإخبارية أو الرياضية… ومندهشة أكثر بتغذية هذه المأساه إعلاميا بتعليقات من بعض المذيعين (من كلا الجانبين)…
المشجعون الجزائريون أخطؤوا فى المبارة السابقة.. لكن هل الرد يكون هكذا؟.. هل الرد يكون بطلب البعض تسميم اللعيبة ولا إقلاقهم فى منامهم ولا توليع الإستاد وقت الماتش من التشجيع؟..
ونرفزتنى التعليقات على أغلب المواقع.. وإفتكرت لما الجزائر -بزعامة الرئيس الجزائري هواري بومدين- كانت أكتر دولة ساندت مصر فى حرب 1973، رغم فقرها الشديد..
حزينة ان انتهاء علاقة مابين شعبين تكون بشقاق على كورة…
যে ভাবে মিশরীয় ও আলজেরীয় সমর্থকরা পরস্পরের দল সম্বন্ধে খারাপ ভাষা ব্যবহার করছে তাতে আমি বিস্মিত, বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও ক্রীড়াবিষয়ক ওয়েবের পাতায়ও দেখা যাচ্ছে…. যে ভাবে উভয় দেশের কিছু উপস্থাপক ও সাংবাদিক তাদের ভয়াবহ উস্কানিমূলক মন্তব্য দিয়ে এই খেলায় আগুন ঢালছে তাতে আমি বিভ্রান্ত ।

এর আগে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম পর্বের খেলায় সে দেশের সমর্থকদের কেউ কেউ মিশরীয় ফুটবল দলের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে, কিন্তু তার বদলে মিশরীয়দের প্রতিক্রিয়া কি ঠিক হচ্ছে? এর উত্তর কি এই যে (যেমনটা অনেকে বলছে) আলজেরীয় খেলোয়াড়দের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া? তাদের হয়রানী করা ও ঘুমাতে না দেওয়া? খেলার দিন স্টেডিয়ামে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া? বেশিরভাগ সাইটে যে সমস্ত মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে আমি হতাশ… আমি সেই সময়ের কথা মনে করতে পারি যখন আলজেরিয়া তার দারিদ্র অবস্থা সত্বেও, রাষ্ট্রপতি হুয়ারি বুউমেদিনের নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালে মিশর-ইজরায়েল যুদ্ধের সময় মিশরের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল।

আমি বেদনার্ত, কারণ দু'টি দেশের এ রকম চৎমকার সম্পর্ক কি ভাবে কেবল একটি ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ভেঙ্গে যাচ্ছে…।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .