রাশিয়া: ব্লগাররা বার্লিন প্রাচীর পতনের ২০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা করছে

ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে বার্লিন প্রাচীর-১৯৮৯ সাল, ছবি রমটমটম এর ফ্লিকার পাতা থেকে নেওয়া।

ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে বার্লিন প্রাচীর-১৯৮৯ সাল, ছবি রমটমটম এর ফ্লিকার পাতা থেকে নেওয়া।


বার্লিন প্রাচীরের পতনের ২০ বছর পর রাশিয়ার বেশীরভাগ ব্লগাররাই এই ঘটনাকে স্মরণ বা উদযাপন করেনি এবং এই ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে তারা তেমন একটা আলোচনা করছে না। বার্লিন প্রাচীরের পতন অনেকের কাছে “বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে এক অন্যতম ঘটনা”। তবে বেশীরভাগ রুশ নাগরিকের কাছে এই প্রাচীরের পতন তাদের শৈশব বা কৈশোরের এক স্মৃতি মাত্র, এই ঘটনা তাদের কাছে বাস্তবের বদলে এক গল্পকথার মত ঘটনা।

অনেক ব্লগার এই দিনটিকে ব্যবহার করেছে তাদের পাঠকদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য। এই বিষয়ে অনেকে তাদের নৈরাশ্য প্রকাশ করেছে, কিন্তু বেশীরভাগ ব্লগার নিজেদের প্রশ্ন করছে: “কেন কেউ এই দিনটি নিয়ে কোন কথা বলছে না? কেন সবাই দিনটি উদযাপন করছে না”?

রুশ রাষ্ট্রপতির প্রাক্তন উপদেষ্টা আন্দ্রেই ইলারিওনোভ (লাইভজার্নালে নিক আইলারিওনোভ [রুশ ভাষায়])। তিনি তার ব্লগে লিখেছেন [রুশ ভাষায়]:

আজ, ২০ বছর পর বিশ্ব “তার নিজের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা উদযাপন করছে” যা বিংশ শতাব্দীর শেষে ঘটেছিল- এই ঘটনা ইউরোপে কর্তৃত্ব পরায়ণ কমিউনিস্ট স্বৈরাতন্ত্রের পতন ঘটায়। বিশ্বের অনেক দেশে এই দিবসটি উদযাপিত হয়।

তবে দিবসটি রাশিয়ায় উদযাপিত হয় না। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গিয়ে জন্ম নেওয়া ডজন খানেক স্বাধীন রাষ্ট্রেও এই দিবসটি পালন করা হয় না। এইসব রাষ্ট্রও গভীরভাবে আটকে রয়েছে তাদের কর্তৃত্ব পরায়ণ শাসন ক্ষমতার মধ্যে।

ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনাকে রাশিয়ার উপেক্ষা করার মানে, ধ্বংস করে ফেলা প্রাচীরের জায়গায় এক নতুন দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।

এই দেওয়ালটি অদৃশ্য, কিন্তু তা কার্যকর, এটি আমাদের দেশের নাগরিক ও ভ্রাতাদের বাকী বিশ্বের সাথে আলাদা করে ফেলেছে।

ইলিয়া ফাইবিসোভিচ (লাইভ জার্নাল নিকফাইবিসোভিচ [রুশ ভাষায়]) এই দিবসটি সম্বন্ধে প্রচারণার অভাব দেখে বিস্মিত [রুশ ভাষায়]:

এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য এক বিষয় […] যে, “ইকো অফ মস্কো” [মস্কোর এক উদারনৈতিক রেডিও স্টেশন], “লেন্টা.রু”, “গেজেত্তা.রু” অথবা রাশিয়ার যে কোন উদার কোন সংবাদ পোর্টালে এই বিষয়ে (এমনকি “আরআইএ নোভোস্টি” অথবা “ইন্টারফ্যাক্স” এর মত পোর্টাল) -এমন “কোন সংবাদ” ছিল না, যা সারা বিশ্বের ওয়েবে প্রদর্শন করার যোগ্য। এবং এই রহস্যময় “কোন সংবাদ” রাশিয়ার জন্য অনেক কিছু বয়ে আনতে পারে। এখন দেখা যাচ্ছে এই বিষয়ে সংবাদের কোন দরকার নেই। কিন্তু সংবাদপত্রে প্রচুর সংবাদ রয়েছে (তা নির্ভর করছে আপনার কি ধরনের সংবাদ পড়তে ইচ্ছে করে তার উপর) যেমন, “সোভিয়েত যুগের অভিনেতার মৃত্যু”, “কিম চেন ইর কয়টি ট্রেন রয়েছে”, “কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা যারা ভিডিও ব্লগ কিভাবে করতে হয় তা শিখেছে” [গ্লোবাল ভয়েসেসের ইংরেজী পাতায় এই সংবাদের একটা লিঙ্ক দেওয়া রয়েছে] এবং গিন্সবার্গের [নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানীর] মৃত্যু।

আরেকজন ব্লগার সিন্থথিসিস এই ঘটনাটিকে জয়ের বদলে পরাজয় হিসেবে দেখেন:

সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ কারী হিসেবে আমি এই ঘটনার প্রতি বিশেষ মনোভাব পোষণ করি। আমি মনে করি আমি ছাড়াও এমন অনেকে রয়েছে যারা এই ঘটনার কথা শুনলে থুতু নিক্ষেপ করে।

[…]

এখন যে বিভ্রান্ত তৈরি হয়, তাতে সকলেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, এই সমস্ত নির্মাণ করা সত্য যে কোন কম্পিউটার গেমের চেয়ে ভালো।

কিছু ব্লগার এই ঘটনার স্মরণ করে তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য কিছু ছবি ব্যবহার করেছে। লাইভজার্নাল ব্যবহারকারী এমেলিটো হারিয়ে যাওয়া দেওয়ালের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে [রুশ ভাষায়]। লাইভ ইন্টারনেট প্লাটফর্ম ব্যবহারকারী সটোভারইয়াসিজ মিরি [রুশ ভাষায়] আমাদের ১৭টি ছবি দেখাচ্ছেন। প্রাইভেট ইউজার বা ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী জেরনভ৫১ [রুশ ভাষায়] ১৯৮৯ সালে ঘটা এই ঘটনার ধারাবাহিক সময় সূচি এখানে পোস্ট করেছেন, যা শীতল যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটায় [রুশ ভাষায়]।

কিছু বাড়তি তথ্য:

২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে লেভাডা সেন্টারের করা এক জরিপ অনুসারে [রুশ ভাষায়] শতকরা ৬৩ জন রুশ নাগরিক বার্লিন প্রাচীরের পতনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে, যেখানে শতকরা ১১ জন ঘটনাটিকে নেতিবাচক চোখে দেখে। ১৯৮৯ সালের কোন ঘটনাটিকে বছরের সেরা ঘটনা বলে মনে করেন, এই প্রশ্নের জবাবে, বেশীরভাগ উত্তরদাতা বার্লিন প্রাচীরের পতনকে সে বছরে দ্বিতীয় সেরা ঘটনা হিসেবে বেছে নিয়েছে (২৪ শতাংশ ব্যক্তি), তবে বেশীরভাগের চোখে সে বছরের সেরা ঘটনা ছিল আফগানিস্তান থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া। শতকরা ৫০ জনের চোখে এটি ছিল সে বছরের “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা”।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .