কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা মাতৃত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে

যখন গতবছর বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন মায়েরাও এর শিকার হয়ে পড়ে। এই জটিল অর্থনৈতিক অবস্থায় বেশীর ভাগ লোকের মাথায় আসে নি যে মায়েরাও এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হতে পারে। সম্প্রতি এক তথ্যে জানা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক এই মন্দার সময় মায়েরা শেয়ার বাজারের মত ক্ষতির শিকার হয়েছে।

বিকল্প আয়

এই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত এক লেখার সারমর্ম:

শিশুদের যত্ন নেবার যে সমস্ত উপাদান তার দাম ভীষণ ভাবে বেড়ে যাওয়া এবং একই সাথে চলতে থাকা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে মায়েরা নিয়মিতভাবে তাদের সন্তানের ভরণপোষণ করতে পারছে না। বর্তমানে অনেক নি:সঙ্গ মা নিজের ও সন্তানের ব্যয় নির্বাহের জন্য পতিতায় পরিণত হচ্ছে।

এই তথ্যের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, ইন্টারনেট এইসব মায়েদের জন্য এক নতুন দরজা খুলে দিচ্ছে। “হলি” নামের এক মা, যার বয়স ২৫ বছর, তিনি আমাদের জানাচ্ছেন তার পতিতায় পরিণত হবার কথা:

আমার প্রাক্তণ স্বামী আমার চার বছরের পুত্র সন্তানকে প্রতিপালনের জন্য কোন টাকা দিচ্ছে না, এদিকে টাকার জন্য আমার প্রায় পাগল হয়ে যাবার মত অবস্থা… আমি এক ধনী মানুষের খোঁজে ইয়াহুতে বিজ্ঞাপন দিয়েছি, যে যৌন সম্পর্কের বিনিময়ে (সুগার ড্যাডি) আমাকে এই বিপদ থেকে বের হতে সাহায্য করবে।

এই সমস্যাটি জাপানে ক্রমাগত একটি ধারায় পরিণত হচ্ছে। জাপান টুডে জানাচ্ছে:

জাপানের স্বাস্থ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক তথ্য জানা যায়, জাপানে প্রায় ১.২৩ মিলিয়ন (১২,৩০,০০০) নি:সঙ্গ মা (যারা স্বামীর সাথে থাকে না বা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর সন্তান তার মায়ের সাথে থাকে এমন মহিলা) রয়েছে। সরকারের দেওয়া সুবিধাদি সহ তাদের গড় বাৎসরিক আয় প্রায় ২.১১ মিলিয়ন ইয়েন- যা একটা সংসারের বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ। ২০০২ সালে এক পরিবর্তিত সমাজ কল্যাণ আইনের কারণে তাদের সুবিধাও কমে গেছে। বর্তমান চলমান অর্থনৈতিক মন্দা তাদের বেছে বেছে কাজ করার সুযোগও কমিয়ে এনেছে। ২৮ বছরের সুজুকি এই পরিস্থিতিকে উল্লেখ করেন “রুরিকো কামাতা” বলে, যার মানে পতিতাবৃত্তি তার জন্য বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।

কেবল নি:সঙ্গ মায়েদের ক্ষেত্রে নয়, নি:সঙ্গ মহিলারাও জাপানে পতিতা বা “অতিথি (মনোরঞ্জনের জন্য)” পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। গ্রাউন্ড রিপোর্টের এক সংবাদে জানা যাচ্ছে অনেক তরুণী “ক্লাবের নোংরা পেশায়” জড়িয়ে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়ার নার্সদের ব্লগ নার্সেস ইন অস্ট্রেলিয়া জানাচ্ছে, নার্সরা তাদের পেশা ত্যাগ করে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছে।

এই রকম এক সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের সকল সত্যিকারের নারীদের জন্য উৎসর্গীকৃত ওয়ান্ডফুল ওয়ার্ল্ড ব্লগ বলছে:

নারী, আমরা জানি সময় এখন কতটা কঠিন এবং আমরা ঘর ভাড়া দিতে পারছি না, কিন্তু এই রকম কঠিন সময় চিরদিনের জন্য থাকবে না। কাজেই প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধর। এখন সময় সকলের জন্য কঠিন কিন্তু তারপরেও নারী হিসেবে আমাদের দৃঢ় হয়ে থাকতে হবে এবং অর্থনৈতিক এই দুরবস্থার সময় আমাদের হৃদয়, ঘর এবং শরীরকে ভেঙ্গে পড়তে দেওয়া চলবে না। নারীরা অনেক দৃঢ়, যার জন্য পুরুষেরা তাদের প্রশংসা করে এবং আমি নিশ্চিত যে সত্যিকারে কঠোর পরিশ্রমী নারী এই ধরনের গল্পে বিরক্ত বোধ করবে, যেমনটা আমি করি। এর পরেও (আমি) তাদের জন্য করুণা অনুভব করি, যারা মনে করে এই বিষয়টি (পতিতাবৃত্তি) প্রয়োজনীয়।

মাতৃত্ব ধারণ করার আগে দ্বিতীয় বারের মত ভাবনা

নারীদের উপর মন্দার আরেকটি প্রভাব তৈরি হয়েছে। এটি হল মাতৃত্ব নিয়ে নারীদের ভিন্ন এক ভাবনা। অনেক মহিলা মা হবার আগে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করছে। রয়টার্সের মাধ্যমে বেস্টার নিউজ জানাচ্ছে:

অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক আমেরিকান মহিলা কোন সন্তান নেবার আগে দ্বিতীয় বারের মত চিন্তা করে, বৃহস্পতিবারে প্রকাশিত এক জরীপে এই তথ্য প্রকাশ পায়। জরীপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের মত মহিলা জানিয়েছে এখন তারা দেরীতে সন্তান নিতে চান অথবা যে পরিমাণ সন্তান তারা পূর্বে নিতে চেয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার পরিমাণ কমিয়ে আনতে চান।

ওয়ার্ক ইট, মম এর ব্লগার লেহ, তিনি লিখেছেন:

নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন, ওয়েবমেড, এবং ওয়ার্ক ইট মম -এর, সবাই তাদের পত্রিকায় অর্থনৈতিক দুরবস্থা যে শিশু জন্ম হার ও প্রতিটি ঘরে সন্তান নেবার হারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তা তুলে ধরছে। একটি পরিবার তা পুরোনো মন মানসিকতার অথবা কোন ফার্টিলিটি বা চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান লাভ করা পরিবার, অথবা কাউকে দত্তক নেবার মাধ্যমে সন্তান লাভ, সব ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে- যে কোন ক্ষেত্রেই যতই ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হোক না কেন, তারপরেও সব গুলো পদ্ধতি ব্যয়বহুল। এর সাথে গত শরৎ-এর পর থেকে যে তিনটি প্রধান ব্যয়ের কথা আমি উপলব্ধি করছি- তা হল মাতৃত্ব কালীন ছুটি, সন্তানের যত্ন এবং স্বাস্থ্য বীমা- অন্য সব খরচের সাথে এগুলো যুক্ত হয়েছে। এর বাইরেও ডজন খানেক অর্থনৈতিক উপাদান রয়েছে, যা সন্তান নেওয়া যাবে কি যাবে না তার উপর প্রভাব বিস্তার করে।

এরিকা এই ব্লগ পোস্টে মন্তব্য করেছে:

আমার বয়স প্রায় ২৯ বছর এবং ৩০ বছরের মাথায় আমি দু'টি সন্তান নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই অর্থনৈতিক মন্দায় মনে হচ্ছে না তা সম্ভব হবে। আমি আশা করি সামনের বছর পরিস্থিতি আরো ভালো হবে। আমার স্বামী আমাকে বোঝাচ্ছে, যে একটি সন্তান আমাদের রয়েছে তাকে নিয়ে আমাদের সুখী থাকা উচিত, কারণ সে মনে করে আরেকটি সন্তানের ভরণ পোষন করার ক্ষমতা আমাদের নেই।

সম্প্রতি গাটমাচের ইনস্টিটিউটের করা এক জরিপ এই সমস্ত আবেগের প্রতিধ্বনি করছে। জরীপে বের হয়ে এসেছে “আমেরিকার মাধ্যম- আয়ের নারীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৪%) অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সন্তান জন্মদানের উপযুক্ত সময়েও সন্তান নিতে পারছে না”।

কি ধরণের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত?

গাটমাখার ইনস্টিটিউট একই সাথে আবিষ্কার করেছে যে, অনেক মহিলা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি ছাড়াই গর্ভধারণ রোধ করছে অথবা সস্তা কোন গর্ভনিরোধক উপাদান কিনছে, যাতে তারা এই রকম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় টাকা জমাতে পারে। কেয়ার২.কম-এ ওমেন রাইট ব্লগ জানাচ্ছে:

সমস্যা হচ্ছে, গ্রহণযোগ্য বা যে সমস্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ উপাদান রয়েছে তার ব্যয় এখনো নাগালের বাইরে, কারণ বিষয়টি এখনো দেশটির মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না..। এটা কেবল জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি নাগালের মধ্যে পাওয়ার বিষয় নয়-এটা মেয়েদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় বিষয় যেমন মেরুদণ্ডের নিচের অংশে ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিবেচনা করছে কি ভাবে এই মন্দার সময় নাগরিক, পরিবার পরিকল্পনা ও পুনরুৎপন্ন স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা যায়।

হেলথি লিভিং বাজ ব্লগের ক্যাফে কিম লিখেছেন:

আমি এই জরিপের ফলাফলকে এক বিপজ্জনক সঙ্কেত হিসেবে দেখছি, কারণ যদি এই সমস্ত মেয়েরা জন্মনিয়ন্ত্রণের উপাদান কিনতেই অসমর্থ হয়, তা হলে তারা কিভাবে তাদের সন্তানের ভরণপোষণ করতে সমর্থ হবে? এ ব্যাপারে কি করা যায়?

ক্যাফে কিমের জবাবে অক্টোবর মম লিখেছে:

[একটি] শিশু একটা বাচ্চার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল! যদি কেউ তার শিশুকে পালন করতে না পারে তা হলে দেশের অবশিষ্ট লোক তার সন্তান পালনের জন্য টাকা দেবে, কারণ সে তার প্যান্ট পরতে পারছে না।

ওয়ালেট পপ এর ফ্রান্সিনা হাফ জানাচ্ছে, যে সমস্ত পরিবারগুলো এই সমস্যায় পড়ে গেছে, তারা তাদের সন্তানকে অন্য কোথায় দিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করছে। কারণ তারা তাদের সন্তানকে মানুষ করতে পারছে না। একই সাথে ওয়ালেট পপ জানাচ্ছে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সন্তান দত্তক দেবার ব্যবসা করে, তারা দাবি করছে যে সন্তান দত্তক দিতে চায় এমন মায়েদের এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেবার পরিমাণ বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দা যে মায়েদের উপর কতখানি প্রভাব ফেলেছে এগুলো তার সামান্য কিছু উদাহরণ মাত্র। এই মন্দা কাটিয়ে ওঠার পথে মাতৃত্বকে নিরাপদ করার জন্য সবাইকে আরো অনেক কিছু করতে হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .