জর্জিয়া: একটি আজেরী বিয়ে

জর্জিয়ার কাখেতি অঞ্চলের কারাজালায় আজেরী বিয়ে: ছবি তুলেছেন অনিক ক্রিকোরিয়ান, কপিরাইট ওয়ান ওয়ার্ল্ড মাল্টিমিডিয়া ২০০৯

জর্জিয়ার কাখেতি অঞ্চলের কারাজালায় একটি আজেরী বিয়ে: ছবি তুলেছেন অনিক ক্রিকোরিয়ান, কপিরাইট ওয়ান ওয়ার্ল্ড মাল্টিমিডিয়া ২০০৯

দক্ষিণ ককেশাসে গত সপ্তাহে একটা অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বসবাসরত এক আজারবাইজানী নাগরিক ফ্লাইং কার্পেট এন্ড ব্রোকেন পাইপলাইন্স ব্লগের ব্লগার আরজু গেবুলায়েভা কাজ করেছেন আজারবাইজানের বাকুতে অবস্থিত গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনের ককেশাস সম্পাদক অনিক ক্রিকোরিয়ানের সাথে যিনি আংশিক আর্মেনিয়ার বংশভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিক। আর তারা জর্জিয়ার তেলাভির কাছে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আজেরী গ্রাম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট করেছেন।

যদিও সাংবাদিকদের মধ্যে সীমান্তের বাইরের লেনদেন হয়ে থাকে, এই প্রচেষ্টা ছিল অভূতপূর্ব কারণ এটা যে কেবলমাত্র যৌথ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গৃহিত হয়েছে তাই না, এখানে কোন ‘নিরপেক্ষ’ সম্পাদক বা সংস্থার হস্তক্ষেপ ছিল না। এটা অবশ্যই প্রথমবার যে দক্ষিণ ককেশাসের আর্মেনিয়া আর আজারবাইজান, যারা এখনো নগোর্নো কারাবাখ নিয়ে বিরোধে লিপ্ত, এই দুই দেশের ব্লগার এক সাথে এসে কাজ করেছেন।

আরজু গেবুলায়েভা, জর্জিয়ার কাখেতি অঞ্চলের কারাজালায় আজেরী বিয়ে: ছবি তুলেছেন অনিক ক্রিকোরিয়ান, কপিরাইট ওয়ান ওয়ার্ল্ড মাল্টিমিডিয়া ২০০৯

আরজু গেবুলায়েভা, জর্জিয়ার কাখেতি অঞ্চলের কারাজালায় আজেরী বিয়ে: ছবি তুলেছেন অনিক ক্রিকোরিয়ান, কপিরাইট ওয়ান ওয়ার্ল্ড মাল্টিমিডিয়া ২০০৯

আমার ফ্রন্টলাইন ক্লাব ব্লগে এ নিয়ে বিস্তারিত বলা আছে, এই একত্র হওয়া দরকার ছিল কাজের আর ব্যক্তিগত সব দিক বিবেচনা করে। গেবুলায়েভা, যিনি আজারবাইজানের উপরে একজন বিশ্লেষকও, হয়তো তার দেশের প্রথম ইংরেজী ভাষার ব্লগ শুরু করে একটি আলাদা স্থান করে নিয়েছিলেন।

এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়া ছিল। অনলাইনে একে অপরকে বেশ কয়েক মাস ধরে জানলেও, আঞ্চলিক বিশ্লেষক আর সুপারস্টার ব্লগার আরজু গেবুলায়েভার সাথে সাক্ষাৎের এই সুযোগ অনেক দূরের ব্যাপার আর অসম্ভব মনে হয়েছিল।

কিন্তু দক্ষিণ ককেশাসে অসম্ভবকে সব সময় আশা করবেন, আর জর্জিয়ার তেলাভিতে তরুণ কর্মীদের একটি মিটিং এই অসম্ভবকে সম্ভব হতে দেখেছে।

তেলাভির ১০ মিনিট দূরত্বে কারাজালা অবস্থিত। এটি একটি গ্রাম যেখানে প্রায় ৮০০০ ঐতিহ্যবাহী আজেরী বাস করেন জর্জিয়াতে। যেহেতু আরজু আর আমি প্রায় কথা বলতাম সনাতন আর নতুন মিডিয়া ব্যবহার করে যৌথ প্রকল্প হাতে নিতে যাতে আর্মেনিয়া আর আজারবাইজান নিয়ে ঋনাত্মক ধারণা প্রচার করে অন্য যারা খেলা করছে সেটা মোকাবেলা করা যায়। তাই, এটা আমাদেরকে অনেক কয়েকটি উদ্যোগের মধ্যে প্রথম প্রচেষ্টা ছিল। তবে আমরা যেটা আশা করিনি তা হল একটা ঐতিহ্যবাহী আজেরী বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে পারা।

জর্জিয়ার কাখেতি অঞ্চলের কারাজালায় আজেরী বিয়ে: ছবি তুলেছেন আরজু গেবুলায়েভা, কপিরাইট ফ্লাইং কার্পেট এন্ড ব্রোকেন পাইপলাইন্স ২০০৯

জর্জিয়ার কাখেতি অঞ্চলের কারাজালায় আজেরী বিয়ে: ছবি তুলেছেন আরজু গেবুলায়েভা, কপিরাইট ফ্লাইং কার্পেট এন্ড ব্রোকেন পাইপলাইন্স ২০০৯

তার নিজের ব্লগে লিখে আর নিজের ছবি পোস্ট করে, গেবুলায়েভা কারাজালাতে তার যাওয়া স্মরণ করেছেন বিশেষ করে বিয়েতে পৌঁছানো। তিনি এই গ্রামের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন – জর্জিয়াতে ঐতিহ্যবাহী আজেরীরা বৃহৎ সংখ্যালঘু (২০০২ সালের জরীপ অনুসারে তাদের সংখ্যা ২৮০,০০০)।

স্থানীয়দের মতে এই গ্রামের জনসংখ্যা ৮০০০ (উইকিপিডিয়া বলছে ৮ থেকে ১০০০০ এর মধ্যে)। যারা কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানে বাস করছেন সবাই গোত্রীয়ভাবে আজারবাইজানী। তারা সবাই একটা টান ব্যবহার করে আজারবাইজানিতে কথা বলেন- তারা সবাই আবার জর্জিয়ান ভাষাও বলেন, তাই এটা অনেকটা মিশ্রণ। গ্রামের প্রধানের ১৬ বছরের ছেলে বলেন যে গ্রামে হয়তো ৩ থেকে ৪টা জর্জিয়ান পরিবার থাকতে পারে।

সত্যি বলতে, আমি বেশী কিছু আশা করি নি। আমি ভেবেছি খুব বেশী হলে কিছু ভালো ছবি আর কয়েকটা সাক্ষাৎকার হবে। কিন্তু এটা তার থেকে বেশী ছিল। ৩০ মিনিট পরে একজন নারী যাকে আমরা সাক্ষাৎকার নিতে চেষ্টা করলাম (আমি আর সাংবাদিক অনিক ক্রিকোরিয়ান) আমাদেরকে একটা বিয়ের কথা বললেন যেটা আমরা যেখানে আছি তার ৫ মিনিট দূরত্বে হচ্ছে।

বাড়ির সামনের আঙ্গিনা লোকে ভরা- প্রতিবেশী, আত্মীয় যারা সাহায্য করতে এসেছেন। এটা কেবলমাত্র প্রস্তুতি মাত্র; বিকেলে আরো পরে বিয়ে হবে আর এটা কেবলমাত্র মেয়ের বিয়ে (আজারবাইজানী রীতি অনুসারে দুবার বিয়ে হয়- ছেলের আর মেয়ের, ছেলের বিয়েটি আসল বিয়ে)। সব কিছু পরিকল্পিত দলীয় কাজের মতো লাগছিল- ছেলেরা টেবিল ঠিক করছিলেন, আর মেয়েরা খাবার প্রস্তুতি আর প্লেট ধোয়াতে ব্যস্ত ছিলেন। ৩০০ জন অতিথির আসার কথা।

স্থানীয়দের সাথে বেশ কয়েক ঘণ্টা কথা বলার পরে, আমাদেরকে বিয়েতেই দাওয়াত দেয়া হয়, যেটা চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা ছিল।

একটা সম্মিলিত লেখা আর ছবিসহ গল্প শীঘ্রই প্রকাশিত হবে ওসেরভাতোরিয়ো বাল্কানি এ কোকাসোতে আর আমার নিজের ছবির স্লাইড শো আর অডিও ব্যাখ্যাসহ গেবুলায়েভার উপরের ভিডিওতে দেখা যাবে। এই পর্যন্ত আর্মেনীয় আর আজারবাইজানীদের কাছ থেকে আর অন্যদের কাছ থেকেও সাড়া ভালো এসেছে কিছু মন্তব্যসহ যা আমার ফ্রন্টলাইন ক্লাব পোস্টে পাওয়া যাবে।

দাগেন ভ্যালেন্টাইন – অক্টোবর ১, ২০০৯ রাত ৭:৪৪

অনিক আর আরজু,

দারুন, এই ধরনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার এই অঞ্চলে দরকার। আপনাদের মতো এমন কাজ আজেরী আর আর্মেনীয়দের তাদের পার্থক্য আর মিল চিনতে, মেনে নিতে আর উদযাপন করতে সাহায্য করবে।

[..]

স্কেয়ারি আজেরী – অক্টোবর ১, ২০০৯ রাত ১০:৫৫

আমার এটা খুবই ভালো লেগেছে। ভালো করেছেন। আরজু- আপনি খুব মিষ্টি! আপনার আরো ভিডিও সাক্ষাৎকার করা উচিত।

সত্যি বলছি আমার এটা অদ্ভুত ভালো লেগেছে। আমি জানতাম না যে জর্জিয়াতে একটা আজেরী গ্রাম আছে।

মিডিয়া জর্জিয়া – অক্টোবর ২, ২০০৯ সকাল ৬:২৮

ভালো উদ্যোগ…কেবলমাত্র আর্মেনীয় আর আজেরীদের এক সাথে হওয়া না, বরং জর্জিয়ান দের জন্যও…একত্রিত আর শক্তিশালী দক্ষিণ ককেশাসের জন্য জয়।

নার্মিনা – অক্টোবর ২, ২০০৯ সকাল ৯:৩১

দেখতে খুব ভালো লাগল যে কিছু ভালো মানুষ আছেন যারা দক্ষিণ ককেশাসকে একত্র দেখতে চান। আমি আশা করি যে ককেশাসের দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ আর ঘৃণার দিন শেষ হবে। আমাদেরকে একত্র হয়ে একে অপরকে সমর্থন করতে হবে!

আরজু গেবুলায়েভার সাথে ভিডিও সাক্ষাৎকার যা একটা মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়েছিল তা দেখা যাবে আমার ফ্রন্টলাইন ক্লাব পোস্টে আর নিচে অডিও স্লাইড শোর বড় সংস্করণে। গেবুলায়েভাকে গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন ও সাক্ষাৎকার নিয়েছিল জুলাইতে। আশা করি আগামী মাস আর বছরে আর্মেনিয়ার আর আজারবাইজানী ব্লগারদের মধ্যে আরো এক সাথে কাজ করার পালা এখান থেকে শুরু হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .