যুক্তরাষ্ট্র: ন্যাশনাল ডে ইন এ্যাকশনের দিনে অভিবাসী ছাত্রছাত্রীর কথা

United-We-Dream-300x79২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্টের ন্যাশনাল ব্যাক-টু্-স্কুল ডে অফ এ্যাকশন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচাঞ্চল্যে ফিরে যাবার দিন, যে দিনে দেশটির স্বপ্ন দেখা মানুষেরা এক আওয়াজ তুলে এবং দেশটির আইন প্রণেতাদের ড্রীম অ্যাক্টকে আইন পরিণত করার আহ্বান জানান।

ড্রিম অ্যাক্ট একটা আইনী প্রস্তাবনা যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বছর ধরে অবহেলিত হয়ে রয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে তথ্য প্রমাণ নেই এমন অভিবাসী ছাত্রের সে দেশে বাস করার পথ প্রশস্ত হবে, যে সকল ছাত্র ছোট বেলায় শর্তসাপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে বাস করার অনুমতি লাভ করেছিল। যখন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা ক্রমাগত বিতর্ক করে যাচ্ছে একে আইনে পরিণত করা হবে কি না, তখন হাজার হাজার ছাত্র উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে এটা না জেনেই যে, শিক্ষা শেষে তারা এই দেশে বৈধ ভাবে চাকুরি পাবার সুযোগ পাবে কি না।

গত সপ্তাহে ইউনাইটেড উই ড্রিম কোয়ালিশন বা এক সাথে আমরা স্বপ্ন দেখি নামের প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে দি ন্যাশনাল ড্রিম অ্যাক্ট ডে পালনের উদ্যোগ নেয় এবং তাদের এ কাজে সহযোগিতা করেছে ডজন খানেক প্রতিষ্ঠান। এই দিনটি পালন করার উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, আইন প্রণেতাদের এই আইনটি পাশ করতে দেরি করার কারণে অনেক ছাত্রছাত্রীর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতীয় অভিবাসী ফোরাম বা কেন্দ্র এই বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে; এই প্রচারণা পরিচালনার প্রধান আলি নুরানী বলছেন, কেন একে সমর্থন করা দরকার:

এই বিষয়টিকে আইনে পরিণত করার ক্ষেত্রে আমাদের অবেহলার কারণে, হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, যারা সংস্কৃতিগতভাবে আমেরিকান, তারা এক দুর্দশায় পড়তে যাচ্ছে, এবং তারা পুরোপুরি আমাদের সমাজের অংশ হতে পারছে না, এই ঘটনা আমাদের ড্রিম এ্যাক্টের কথা মনে করিয়ে দেয়। একেকটা বছর পার হয়ে যাচ্ছে এবং সংসদ, অভিবাসীদের আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে ব্যর্থ হচ্ছে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার অনেক মূল্যবান সম্পদ হারাচ্ছে: একদল শিক্ষিত শ্রেণীর অভিবাসী ছাত্র, যারা প্রতিশ্রুতিশীল ও কঠোর পরিশ্রম করতে সক্ষম এবং আমাদের সমাজের সদস্য হিসেবে, যাদের সমাজকে ভালো কিছু উপহার দেবার প্রবল ইচ্ছে রয়েছে রাষ্ট্র তাদের হারাচ্ছে।

মূলধারার প্রচার মাধ্যমে এর উপস্থিতি

যদি আইন প্রণেতার এই বিষয়ে দৃষ্টি প্রদান না করে, তা হলে এই দেশে এই বিষয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া ডজন খানেক অনুষ্ঠান অন্তত মূল ধারার প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে যারা এই প্রচারণাকে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে।

নিউ মেক্সিকোর এক ক্যাম্পাসে “ডজন খানেক ছাত্রছাত্রীর” এক দল একসাথে মিলে এই দরখাস্তের জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করে, এই দরখাস্তে আইন প্রণেতাদের ড্রিম অ্যাক্টকে সমর্থন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোতে ছাত্ররা পোস্টার টাঙ্গায় যেখানে লেখা ছিল, “আমাদের অপরাধ কি?” এবং “এখানে অচেনা কোন ভিনগ্রহ বাসী নেই, কেবল কাগজ ছাড়া কিছু মানুষের বাস রয়েছে” এবং উইসকনসিনে, এই অঙ্গরাজ্যে এক নেতা প্রচার মাধ্যমকে বলেন, সংসদের উচিত এই আইন পাশ করা।

ernestina

আর্নেস্টিনার কাহিনী

চিকানিসীমা ব্লগের লেখক টেরেসা পুয়েন্টে এক তরুণীর কথা লিখেছে, ড্রিম অ্যাক্ট স্থগিত থাকার কারণে তার জীবন আটকে রয়েছে।

যখন ‌আর্নেস্টিনার বয়স তিন বছর সে সময় সে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসে।
তার বাবা মা তাকে এখানে নিয়ে আসে এবং তারা তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় এবং কাগজ ছাড়া এ দেশের অভিবাসী বনে যায়।

এখন তার বয়স ১৯ এবং সে তার সারা জীবন শিকাগোতে কাটিয়েছে। সে তার হাইস্কুলের সেরা ছাত্রী ছিল। সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, তার স্বপ্ন একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হবার।

কিন্তু তার স্বপ্ন হয়তো সত্য হবে না। যদি আমেরিকান কংগ্রেস ড্রিম অ্যাক্ট আইন পাস করে, তবে বৈধ বাসিন্দা হিসেবে এ দেশে বাস করার তার সুযোগ হবে।

jorgealonso

জর্জ-আলোন্সো চেহাদের বর্তমান অবস্থা

পেরুভিয়ান-আমেরিকান আলোন্সো বর্তমানে এই দেশ থেকে বিদায় নেবার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং তাকে হয়তো জোর করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিদায় করে দেওয়া হতে পারে, তবে এই ২২ বছরের যুবকের এখনো আশা রয়েছে, যে কিনা সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছে। গত সপ্তাহে তাকে এই দেশ ছেড়ে যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু ৩৪০০ জন আমেরিকার নাগরিক তার জন্য এক দরখাস্ত প্রদান করে এবং সরকারি কর্মকর্তাদের টেলিফোন করে, তাদের সহায়তায় সে এ দেশে থেকে যেতে সক্ষম হয়-তার বহিষ্কারাদেশ আপাতত কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। সে ড্রিম অ্যাক্টিভিস্টে লিখেছে:

এই কঠিন সময় এবং অসীম প্রচারণার ফলে আমি যে সমর্থন পেয়েছি, সেটাই আমাকে সামনের দিকে পরিচালিত করছে এবং আশাবাদী করে রেখেছে। যারা আমার জন্য ওই সমস্ত দরখাস্ত লিখেছে এবং এর সমর্থনে স্বাক্ষর জোগাড় করেছে এবং এর জন্য ফোন করেছে, আমি জানি না কি ভাবে তাদের ধন্যবাদ দেব। তাদের কারণে এবং তারা আমরা জন্য কিছু করেছে বলেই আমি এখনো এই দেশটিতে রয়েছি।

কিন্তু চেদাদে এবং তার সমর্থকদের কাজ এখনো শেষ হয়ে যায় নি। তিনি ড্রিমারসদের আহ্বান জানান, যেন তারা সিনেটরদের উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং এই দেশে তাকে থাকার সুযোগ করে দেয়, যে দেশটিতে সে তার জীবনের বেশীরভাগ সময় কাটিয়েছে।

আমি খুব বিনীত ভাবে আপনাদের বলছি ওই সমস্ত ফোন করার জন্য। সিনেটর প্যাটি মারে ও মারিয়া কান্টওয়েলকে অনুরোধ জানাচ্ছি, যেন তারা এক ব্যক্তিগত আইন উপস্থাপন করে, যাতে আমার ক্ষেত্রে অনেক দিনের জন্য এই দেশ ছেড়ে চলে যাবার বিষয়টি স্থগিত থাকে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .