পাকিস্তান: ঘরে ফেরা এবং নতুন করে জীবন শুরু করা

উদ্বাস্তু শিবিরে ময়দা সরবরাহ ও বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি ওলাফ কেলারহফের তোলা, ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহার করা,

উদ্বাস্তু শিবিরে ময়দা সরবরাহ ও বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি ওলাফ কেলারহফের তোলা, ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহার করা,


প্রায় দুই মাস এক আবর্জনাময় উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করার পর পাকিস্তানের সোয়াত এলাকার ইন্টারনাল ডিসপ্লেসড পিপল বা আভ্যন্তরীণ ভাবে অপসারিত জনতা (আইডিপি) অবশেষে জুলাইয়ের ১৩ তারিখে ঘরে ফেরার অনুমতি লাভ করেছে। অভিযোগ রয়েছে যে ফিরে আসার পথে তাদের যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা মিলে নি এবং পরিবহন সুবিধা প্রদানের উপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। এখন পুরো দেশটি এই আশায় বুক বেধেছে যে, যখন এই সমস্ত ঘরহারা লোকেরা আবার তাদের এলাকায় ফিরে আসছে তখন তাদের দুর্ভোগ দুর হয়ে যাবে। বেশ কিছু আইডিপি বা গৃহহীন পরিবার এখনো এই উদ্বাস্তু অবস্থান মেনে নিতে অনিচ্ছুক, যখন তাদের ঘরে ফেরার বিষয় ঝুঁকি পূর্ণ সব সমস্যায় ভর্তি এবং এখানকার নিরাপত্তার অবস্থা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।

টিথ মায়েস্ত্রোর আওয়াব আলভি মারদানের প্রশাসনের এক কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সেখানকার পরিস্থিতি সম্বন্ধে। সাক্ষাৎকারে উক্ত কর্মচারী নিজের নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।

এই সমস্ত বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি বুনেরের নায়েব নাজিম বা প্রধানের সাথে দুইদিন আগে কথা বলেছিলেন, তিনি জানান যে এই সমস্ত এলাকার পরিবেশ কারো বাস করার উপযোগী নয়। পুরো জেলা এক ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়ে রয়েছে। তবে লোকজন যত দ্রুত সম্ভব এই এলাকা ত্যাগ করতে চায়। তারা বলছে, যদি এখানে তাজমহল গড়ে দেওয়া হয় তাহলে তারা এখানে থাকবে না।

পাক ফ্যাক্টর ভক্তমালের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যাকে সোয়াত এলাকা থেকে সরে যেতে হয়েছিল। সেই একই রকমের এক গল্প:

যদি আমরা সেখানে ফিরে যাই, তাহলে সেখানে আমাদের অন্ধকারে বাস করতে হবে, কারণ পুরো এলাকার কাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে কোন বিদ্যুৎ নেই, নেই যোগাযোগের ব্যবস্থা। তিনি বলেন, আমার ক্ষেত ও জীবিকা অর্জনের উপায় ধ্বংস হয়ে গেছে, কাজেই সেখানে ফিরে যাবার পর আমার জীবন চালানোর মতো কোন উপায় থাকবে না। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “এর মানে আমাকে বাইরের সাহায্যের উপর নির্ভর করে চলতে হবে এবং সম্ভবত আমাকে কোন তাবুতে বাস করতে হবে, কারণ আমাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সে গুলো এখন আর বাস যোগ্য নয়”।

পাকিস্তান পলিটিক্স এই সব গৃহহীনদের ঘরে ফেরার সাম্প্রতিক যাত্রা বর্ণনা করে ঘটনার মূল্যায়ন করছে।

মালাকান্ড অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই সমস্ত বাস্তচ্যুত লোকদের ঘরে ফেরা। এক হিসেবে জানা গেছে প্রায় ১৮ লক্ষ উদ্বাস্তু ঘরে ফিরেছে। শতকরা ৮০ জন লোক উক্ত জেলায় এবং ৯০ জন সোয়াত এলাকায় ফিরে এসেছে, অনেক বিদেশী পর্যবেক্ষকের মতে, অবস্থা শেষ বিচারের দিনে যে ধ্বংসলীলা হবে তার মতো হয়ে রয়েছে। স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন যে বিদ্রোহীদের এখান থেকে রাতারাতি বিতাড়িত করা সম্ভব হবে না, কিন্তু বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ভারী সংখ্যায় ফিরে আসা প্রমাণ করছে যে সেখানকার পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তাদের এই এলাকায় আগমন এবং বাসভূমিতে ফিরে আসার এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।

জাজবা ব্লগ সোয়াতের লোকজনদের জন্য এক আনন্দদায়ক সংবাদ বয়ে আনছেন, সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে:

এনডাব্লিএফপি সরকার শুত্রুবারে সোয়াত যাদুঘর আবার খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি সমাপ্ত হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রাহে-এ রাস্ত অভিযানের সময় সোয়াত যাদুঘর এক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল এবং যাদুঘরের সকল পুরাতাত্ত্বিক জিনিসপত্র নিরাপত্তার খাতিরে পেশোয়ারে স্থানান্তর করা হয়। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর এক পূর্ণাঙ্গ/ সফল অভিযানের পর এবং উদ্বাস্তু সকল লোকদের নিরাপদে ফিরে আসার পর, এখানকার সকল অফিস পুনরায় খোলা হয়েছে। যখন সোয়াতের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে, তখন এনডাব্লিএফপি সরকার সোয়াত যাদুঘর আবার খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকার দাবি করছে যে তারা দেশের মধ্যে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া এই সব ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য মোট ৫.৭৫ বিলিয়ন পাকিস্তানী রুপী বরাদ্দ করেছে।
তবে ঘটনা যাই হোক, এই এলাকার লোকদের স্থানচ্যুতি ও পুনর্বাসনের পুরো বিষয়টি পাকিস্তানের ইতিহাসের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ও মহান ঘটনা। এই সকল বিষয় থেকে একটি শিক্ষা লাভ করা গেছে, পুনর্বাসন যে কোন সরকারের জন্য সহজ বিষয় নয়, বিশেষ করে পাকিস্তানে তা যে ভাবে সামলানো হয়ে থাকে। তবে ভালো সংবাদ হল, যদিও সামনে অনেক বাঁধা এবং কঠিন সময় রয়েছে কিন্তু এই সকল উদ্বাস্তু পরিবারের অনেকে নতুন এক জীবন শুরু করতে যাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .