চায়না: ইয়ুনানের নগ্ন মেয়ে ন্যায়বিচার চাইছে

সম্প্রতি চীনের ইন্টারনেট জগৎে “ইয়ুনানের নগ্ন মেয়ে” এক উত্তপ্ত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একুশ বছর বয়সী পেং চুনপিং সিদ্ধান্ত নেয়, সে তার নগ্ন ছবি অনলাইনে প্রকাশ করবে। সমাজের সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য সে এই কাজটি করে। ইএসডাব্লিউএন এই মেয়েটির অতীতের কাহিনীর পুরোটাই সাউদার্ন উইকএন্ড পত্রিকা থেকে অনুবাদ করেছে, যা প্রকাশ করে তার বেদনাদায়ক যাত্রা এবং তার নগ্ন প্রতিবাদের উদ্দেশ্য কি।

সাউদার্ন উইকএন্ডের বর্ণনা মোতাবেক, পেং এক এতিম মেয়ে। ২০০০ সালে খুনের দায়ে তার বাবাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং একই বছরে কাজের সন্ধানে তার মা গ্রাম ত্যাগ করে। ২০০৩ সালে পেং যখন ১৫ বছরের কিশোরী, তখন সে তার মাকে খুঁজতে বের হয়। দুই বছর পর সে আবার গ্রামে ফিরে আসে এবং আবিষ্কার করে, তাদের জমির নিবন্ধন এবং বাড়ি উভয়ই নিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারে এই বিপর্যয়ের জন্য সে স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করে এবং এ ভাবেই তার দরখাস্ত দেওয়ার যাত্রা শুরু হয়।

সে ব্লগ লিখতে শুরু করে, প্রধান সব প্রচার মাধ্যমে যোগাযোগ করে, স্থানীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রণালয়ের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে এবং অবশেষে বেইজিং-এ এসে পৌঁছায়। সেখানে সে ফুরংজিজি বা সিস্টার লোটাসের কথা শুনতে পায়, জানতে পারে কি ভাবে সিস্টার লোটাস অনলাইনে তার ছবি পোস্ট করে বিখ্যাত হয়েছে। এরপর সে আলাদা তিন ধরনের নগ্ন ছবি প্রকাশ করে এবং কিছু প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, মনোযোগ আকর্ষণ হয় বটে, তবে সেটি তার অবিচারের প্রতি নয়। বেশ কিছু সাংবাদিক সরাসরি অথবা বিচ্ছিন্ন ভাবে নির্দেশ করেছে, তার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। এতে সে রাগান্বিত হয় এবং সাংবাদিকদের প্রতি অভিযোগ ছুড়ে দেয়। সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, ইয়ুনানের এক সাংবাদিকের সাথে তার যৌন সম্পর্কের কথা, যে সাংবাদিকের সংবাদ মেয়েটিকে হতাশ করেছে।

পেং এর গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে। যেমন, তার নিজস্ব ব্লগে অনেকে মন্তব্য করেছে:

如果是一件客观真实的事情,逻辑上是不会出现这么多可笑甚至荒谬的结构的。你说的东西可能是真的,但是那成分少得可怜。

যদি ঘটনা সত্য হত, তা হলে গল্পে অনেক মজার, এমনকি বিচিত্র সব ত্রুটি থাকত না। আপনি যা বলছেন তা হয়তো সত্য, কিন্তু তাতে সত্যের আভাস সামান্যই।

নেটইজের একজন নেট নাগরিক এমনকি তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে:

彭春平就是想骗钱……她在我们这里就是做小姐的,到处骗男人的钱!

পেং চুনপিং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল লোকজনদের বোকা বানানো… সে স্থানীয় এক পতিতা এবং সে সব জায়গায় তার খদ্দেরদের ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়!

তবে অনেকে পেং এর ঘটনাকে গুরুত্ব ও সহানুভূতির দৃষ্টিতে নিয়েছে, যে গল্প আমাদের মাঠ পর্যায়ের চীনা সমাজ সম্বন্ধে অনেক ধারণা দেয়। এই ঘটনা বিশেষ করে চীনের মাঠ পর্যায়ে সমাজ কল্যাণের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে। ইঘরেন যুক্তি তুলে ধরেছেন, এমনকি যদি তার মানসিক সমস্যা থেকে থাকে, তবে সমাজের উচিত তাকে সাহায্য করা:

假如她确实是无理取闹,假如她确实有神经病,我们、我们的政府、我们的妇联就看着她自生自灭吗?

ধরা যাক সে নিজেকে নিয়ে এক নাটকীয় দৃশ্য তৈরি করতে চাচ্ছে এবং সে এক মানসিক রোগী, সে ক্ষেত্রে কি আমাদের সরকার এবং মহিলা মন্ত্রণালয়ের কি কিছুই করার নেই এবং মেয়েটির এভাবে নিজেকে নষ্ট করা ঠেকানোর জন্য কি তারা কিছুই করতে পারে না?

লিউ শু নামে তার নিজস্ব ব্লগের মন্তব্য বিভাগে সিচুয়ানের ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া এক নেটিজন তাকে আশীর্বাদ করেছে।

祝福你像四川人承受地震灾害一样坚强不屈,与坏人斗争到底!!!相信胜利一定属于正义的,也是属于你的!!!!!!!!

দয়া করে, অনড় এবং অদম্য থাক, সিচুয়ানের লোকেরা ওয়েনচুয়ানের ভূমিকম্পে যেমন ছিল। আমরা বিশ্বাস করি জয় ন্যায়ের হয়, যেমন তোমার জয় হবে!

প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা ও নৈতিকতা আরো একবার মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়াল। 静夜思(কাম নাইট থটস) নামের ব্লগার, সাউদার্ন উইকএন্ডের ছাপানো আলোচনা কেন মেয়েটি অনলাইনে নগ্ন ছবি ছাপাল এবং বার বার খারাপ লোকদের শিকারে পরিণত হল, এর প্রতিক্রিয়ায় তার ভাবনা লিখেছেন।

那 什么是彭少女想要获取的东西呢?答案只有一个:就是记者掌握的话语权、媒体具备的社会影响力!彭少女一年前贴出裸照上演“裸女寻母”时就说的很清楚:为了 制造轰动效应,为了引起更多的人们的关注! 一年之后,彭少女之所以愿意献身记者,可能是因为其渐渐明白:自己打打闹闹固然可以声名大噪,但这又能如何?想要真正地吸引眼球、让社会各界知晓自己,还 得借助记者、媒体。因为记者掌握着自己不具备的话语权、媒体具备着自己永远无法企及的社会影响力。

মেয়েটি আসলে কি চায়? এর একমাত্র উত্তর হচ্ছে: বলার অধিকার চায়, যা সাংবাদিকরা উপভোগ করে এবং সামাজিক প্রভাব চায়, যা প্রচার মাধ্যম তৈরি করে। যখন পেং প্রথম তার নগ্ন ছবি প্রদর্শন করে এবং তার গল্প “নগ্ন মেয়ে তার মা কে খুঁজছে” বলা শুরু করে, তখনই সে পরিষ্কার করে দেয়, তার উদ্দেশ্য সামাজিক চাঞ্চল্য তৈরি করা! এর এক বছর পর, যখন পেং স্বেচ্ছায় সাংবাদিকের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করে, তাতে বোঝা যায়, সে হয়তো বুঝেছিল যে নগ্ন ছবি প্রকাশের মাধ্যমে সে বিখ্যাত হয়ে উঠবে, তারপর? কেবল সাংবাদিক এবং প্রচার মাধ্যমের সহায়তায় সে কি সমাজে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছে (একই সাথে তার পরিবার যে অন্যায়ের শিকার হয়েছে, তার কথা), সাংবাদিকরা যেমন তাদের বলার অধিকার অনুশীলন করে, তার সে সুযোগ নেই এবং প্রচার মাধ্যমের মতো প্রভাব সৃষ্টি করার ক্ষমতাও তার নেই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .