পাকিস্তান: চিনির ঘাটতি রমজানকে তিতা করে ফেলেছে

প্রতি বছর রমজানে পাকিস্তানে খাবারজাত পণ্য সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয়। এর কারণ, রমজানের সময় খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। এই বছর রমজান মাসে মারাত্বক সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে চিনির বাজারে এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই বিষয়টিকে মোকাবিলা করার জন্য সরকার ইউটিলিটি স্টোরের (খোলা বাজারে বিক্রির জন্য সরকারি দোকান) মাধ্যমে ৪০,০০০ থেকে ১০০,০০০ টন চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে অতীতের হিসেবে বলা যায় যে, কেউ বিশ্বাস করবে না যে এই ধরনের দোকানে চিনি বিক্রির পরেও বাজার পর্যাপ্ত চিনি সরবরাহ হবে।

করাচির চিনি সরবরাহের অবস্থা নিয়ে দি ডন পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে, দোকানগুলোতে চাহিদার তুলনায় কম চিনি সরবরাহ করা হয়েছে এবং তারা ক্রেতাদের বাড়তে থাকা চাহিদা পূরণে অক্ষম। বাজারে চিনির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজিতে ৫৫-৫৮ রুপী (বাজারে যদি পাওয়া যায়)। সরকারি দর অনুযায়ী চিনি বিক্রি হবার কথা প্রতি কেজি ৩৮ রুপীতে।

হাসান খান রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যা নিয়ে তার ব্লগে মন্তব্য করেছেন:

পাকিস্তানে প্রায় ৮০ টি চিনির মিল রয়েছে। এর বেশীর ভাগের মালিক বিনিয়োগকারী ও রাজনীতিবিদরা। রমজানের আগে তাদের ভণ্ডামি বেড়ে যায় এবং চিনির দাম রাতারাতি ৩৮ রুপী থেকে ৫৪ রুপীতে গিয়ে ঠেকে। এটা খুবই খারাপ দেখায় যখন আপনি পাকিস্তানের সংবাদ প্রচার করা টিভি চ্যানেলে তাকান, কিন্তু তার চেয়ে খারাপ যখন এই সমস্যা সবচেয়ে জটিল আকার ধারণ করে, তখন দেশটির মন্ত্রী পত্রিকায় বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় পাকিস্তানে চিনির দাম বেড়েছে।

 পাকিস্তানে আখ চাষ।ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ওমের ওয়াজিরের

পাকিস্তানে আখ চাষ। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ওমের ওয়াজিরের


সানা সালিম বলেছেন এ বছর চিনি সরবরাহের কারণ দেশটিতে কম চিনি উৎপাদন হয়েছে:

কৃষকরা বার বার অভিযোগ করেছে চিনি কলের মালিকরা তাদের ঠিকমতো আখ বিক্রির টাকা দেয় না। হিসেব ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে আখচাষীদের টাকা দিতে মিল মালিকরা অনেক সময় আট থেকে দশ মাস দেরি করে। এতে কৃষকরা আখ চাষে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। তার বদলে তারা গম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কারণ গম চাষে কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা প্রদান করা হয়। এখন সময় এসেছে মিল মালিকদের অবৈধ সুবিধা নেবার বিষয়টির হিসেব কষার। মিল মালিকদের দেরি করে টাকা দেয়ার কারনে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আখ চাষ কমে গেছে। এ ছাড়াও তারা বিশাল পরিমাণ চিনি মজুত করে ফেলে। সরবরাহ করা পণ্য মজুত করার (ইচ্ছাকৃত ভাবে) কারণ বাজারে কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করা।

লাহোরের একজন উপদেষ্টা বিলকিস, তিনি চুপ ব্লগে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেছেন:

এই বছর দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক ভাবে চিনির উৎপাদন কমে এসেছে। সাধারণভাবে বলা যায় অন্যদের মতো কৃষকরা যে সমস্ত শস্য উৎপাদনে লাভ বেশি সেসব শস্য ফলিয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সালে বর্তমান সরকার গমের (ক্রয় মূল্য) দাম বাড়িয়ে ৯৫০ রুপী (সর্ব নিম্ন দাম) ধরে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য যারা গম জন্মায় না তারাও যেন গম চাষ করে (কারণ গম চাষে লাভ বেশি)। এর ফলে আখ চাষীরা এখন গমের বদলে আখ চাষে মনোযোগ দিয়েছে যার ফলে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ কমে এসেছে।

তা ছাড়া গত কয়েক দশকে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ কমে এসেছে। এ চিনির বাজারে যে সমস্যা/ নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে তার ফলে স্বাভাবিক ভাবে চিনি উৎপাদন ক্রমশ: হ্রাস পাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন যে, কৃষকরা চিনি চাষের জমির পরিমাণ কমিয়ে এনেছেন কারন সেচের অভাব, মিল মালিকদের আচরণ, দেরি করে টাকা দেওয়া, আখ চাষের খরচ বেড়ে যাওয়া, আখে পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণ। বিশ্লেষকরা বিশেষ করে এর জন্য মিল মালিকদের টাকা দেরিতে টাকা দেওয়া বা আদৌ টাকা না দেওয়া ও তার সাথে পর্যাপ্ত সেচের অভাবকে বেশি দায়ী করেছেন। যথাযথ সেচ জমিতে ভালোভাবে আখ জন্মাতে সাহায্য করে। এই দুটি কারণে গত বছরের তুলনায় স্বাভাবিকভাবে দেশটিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ চিনি কম উৎপাদন হয়েছে।

এই মুহূর্তে সরকার চিন্তা করেছে চিনির এই বাড়তি চাহিদা মোকাবিলা করার জন্য তারা বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করবে। তবে যে সমস্ত বিদেশী রাষ্ট্র চিনি রপ্তানী করে, যেমন ব্রাজিল ও ভারত এখন চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কাজেই খুব শীঘ্রই চিনির দাম কমবে না। সামনের কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে কারণ লোকজন এই সমস্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতে যাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .