আর্মেনিয়া: সমকামীতা ভীতি মারাত্বক আকার ধারণ করেছে

যদিও আর্মেনিয়ায় ২০০২ সালে সমকামীতাকে নিরপরাধ বিষয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, তবু আর্মেনিয় সমাজের বড় অংশ বিষয়টিকে সহ্য করে না এবং তার ঐতিহ্যবাহী মুল্যবোধের ভেতরে রয়ে গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই, আর্মেনিয়া এমন এক দেশ, যে দেশে জাতীয়তাবাদী আদর্শ ব্যাপক ভাবে প্রচলিত, সেখানে এই ভয় থেকে যায় সমকামীতা ভীতি আরো ভয়াবহ রুপে বাস্তবে পরিণত হতে পারে। এক মাধ্যমে সমকামী কর্মীরা তাদের ব্লগে, চিন্তা প্রকাশ করেছে, এ ধরনের ভীতি আগের চেয়ে অনেক খোলামেলা ভাবে মনোযোগের কেন্দ্র হতে পারে।

এটা বিশেষত সত্য যখন অনেক ঘটনায় স্থানীয় প্রচার মাধ্যম এবং এমন কি কিছু সিভিল সোসাইটি গ্রুপ বা নাগরিক সমাজের দল সমকামীতা ভীতি প্রচার করতে সাহায্য করছে। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে মূল ধারার প্রচার মাধ্যমে সমকামীতার মতো বিষয়কে সহ্য না করার বিষয় অনেককে শংকিত করে তুলেছে, এর মধ্যে একটি সংবাদপত্র এত দুর পর্যন্ত গেছে যে, তারা দেশটির সমকামী সদস্যদের ঘৃণা করার মতো অপরাধ করতে উৎসাহ প্রদান করেছে।

পিংক আর্মেনিয়াধরণের ঘৃণা উদ্‌গিরণ বাড়তে থাকার বিষয়ে মন্তব্য করেছে

এটা এক পরিতাপের বিষয় কিন্তু এরপরেও আমি সমকামীতা নিয়ে সম্প্রতি আর্মেনিয়ার এক সংবাদপত্রে ছাপা এক প্রবন্ধ পড়েছি।
[…]
আমি জানি না কেন, কিন্তু প্রায় সকল সাংবাদিক প্রধান, সমকামীতা নিয়ে আলোচনা করছে। আমি জানি না কেন তারা এ কাজ করছে, কিন্তু তারা কখনই স্মরণ করে না যে, এদের মধ্যেও অনেক অসাধারণ লোক রয়েছে। সমকামী বিরোধীরা উৎসাহ দিয়ে জানাচ্ছে যে এটা অনৈতিক। বিষয়টি সমাজকে একটা ভুল তথ্য দেওয়ার এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
[…]
আমি উল্লেখ করতে ভুলবো না এ ব্যাপারে শেষ যে প্রবন্ধটি আমি পড়েছি তার কথা। সেখানে সমকামীদের গালি দিতে বলা হয়েছে, এমনকি তাদের খুন করার কথা পর্যন্ত সেখানে বলা হয়েছে।

আনজিপ:গে আর্মেনিয়া দেশ থেকে সমকামীদের খতম কর এই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে মন্তব্য করেছে ,- আক্ষরিক অর্থেই খতম করতে বলা হয়েছে।

যখন কেউ একজন সমকামী বিরোধী, নি:সন্দেহে তা খারাপ, কিন্তু যখন একজন সমকামী বিরোধী ব্যক্তি সমকামীদের হত্যার জন্য ওকালতি করে, সে সকল সীমা পার করে ফেলে।

আমি স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি ইরাভুন্ক নামের ট্যাবলয়েড বা চটুল পত্রিকা পড়ি না। যদি তা আমাদের বন্ধুদের জন্য না হত, তা হলে আমি ওই সব প্রবন্ধ নিয়ে মাথা ঘামাতাম না, যা গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে অথবা যারা সমকামীদের প্রতি এতটা নিবেদিত।

[…]

ইরাভুন্কের সাংবাদিক এরপর এক নোটে জানান যে “এই প্রবন্ধটিকে আমরা কাউকে খুন করার আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্য লিখিনি, আমরা কেবল ঘটনাটিকে উপস্থাপন করেছি মাত্র”। অবশ্যই তারা কার্যকর ভাবে যা করেছে, তা হল সমকামীদের খুন করতে উৎসাহ প্রদান করা।

[…]

[…] গালাডিয়ান এবং তার ট্যাবলয়েডের বিরুদ্ধে খুণ ও ঘৃণা ছড়ানোর সুনির্দিষ্টভাবে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

যেন নিয়ম অনুসারে একটি ঘৃণা হতে আরেকটি ঘৃণার উৎপত্তি হয়েছে। যদি আপনি ইরাভুন্কের প্রবন্ধ পাঠ করেন তা হলে আবিষ্কার করবেন তারা কেবল সমকামীদের প্রতি ঘৃণা বর্ষণ করছে না, তারা একই সাথে বর্ণবাদী। যারা একটু ভিন্ন প্রকৃতির, এই পত্রিকাটি তাদের সবার প্রতি পুরোমাত্রায় ঘৃণা বর্ষণ করছে।[…]

এক সপ্তাহ পরে এই ধরনের উদ্বেগ কারো বিবেচনায় বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, একই ব্লগ রিপোর্ট করেছে তারা আসলে খুবই বাস্তববাদী

আর্মেনিয়ার একদল উগ্র জাতীয়তাবাদী যারা রাশিয়া ও অন্য দেশের নব্য নাৎসীদের হুবহু অনুকরণ করে, তারা নিজেরা একটি প্রতিষ্ঠানের নিচে একত্রিত হয়েছে, যার নাম হাইরেনিক মুভমেন্ট (মাতৃভূমি আন্দোলন)। তারা তাদের ওয়েবসাইটে এক লেখা পোস্ট করেছে, যেখানে তারা আর্মেনিয়ার লেখক, যিনি ডোরি এন নামে লেখেন, তাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়েছে। ডোরি এন দেশটির রাজধানী ইয়ারভেনে বাস করা এক পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক, যিনি পুরুষ সমকামীতার উপর ভিত্তি করে ছোট গল্প লিখেছিলেন। […]

তারা আর্মেনিয় সরকারকে এক চরমপত্র দিয়েছে এক মেসেজের মাধ্যমে: হয় ডোরি এনকে বৈধ ভাবে চুপ করাও, নতুবা আমরা আমাদের নিজস্ব উপায় ও পদ্ধতিতে তাকে চুপ করাব। এই মেসেজের সঙ্গে সন্ত্রাসী গ্রুপ আল কায়দার মতো একটা ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে অথবা দুর্বল ভাবে তাদের হুবহু নকল করেছে।

[…]

দেশের বাইরের শত্রুদের সাথে লড়াইয়ে কোন ‘ফলাফল” আনতে না পেরে এবং সকল ফ্রন্টে ব্যর্থ হয়ে, এই উগ্র জাতীয়তাবাদীরা দেশের ভেতরে শত্রু সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকে থাকে।

এটা ব্যক্তির জীবন ও বাক স্বাধীনতার উপর সরাসরি হুমকি। আর্মেনিয়ার সংবিধান মৌলিক মানবাধিকারের রক্ষক। আর্মেনিয় সরকার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদান করা এই ধরনের চরমপত্র এক সন্ত্রাসবাদী কাজ এবং আর্মেনিয় সরকারে অবশ্যই সামনে এই ঘটনার আরো তদন্ত করতে হবে।

দেখে মনে হচ্ছে এই ধরনের ব্লগারদের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ আদৌ শুনেছে কিনা। তবে, সমকামীতা ভীতি আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যেন দেরি না হয়ে যায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .