প্যালেস্টাইন: গাজা’য় প্রতিরোধ সংস্কৃতি

গত পহেলা আগস্ট গাজায় হামাস প্রযোজিত প্রথম পুর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রথম প্রদর্শনী (প্রিমিয়ার শো) অনুষ্ঠিত হল। সাংস্কৃতিক উদ্যোগের মাধ্যমে সমর্থন লাভ করা ও আন্দোলনকে বেগবান করার চেষ্টা থেকেই হামাসের এই সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা, এক “প্রতিরোধের সংস্কৃতি” তৈরি করা। একই সপ্তাহে চলচ্চিত্র তৈরির উপর এক নাটক শু্রু হয় গাজায়, উভয় অনুষ্ঠানে ব্লগাররা অংশ গ্রহণ করেছিল এবং এই বিষয়ে তাদের মতামত আমাদের জানাচ্ছে।

লিনা আল শরিফ ৩৬০ কিমি২ অফ কেওয়াস এ ব্লগ করে। তিনি ইমাদ আকিল ছবির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন।

গুলি, একটা গাড়ির পিছনে ধাওয়া করা এবং এক বীরের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র “ইমাদ আকিল”, যা গাজার প্রথম চলচ্চিত্র। গত পহেলা আগস্ট গাজা শহরের রাশাদ আল শাওয়া সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে দুই ঘন্টার এই ছবির উদ্বোধন হয়। এই চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখেছেন মাহমোদ আল-জাহার, তিনি গাজায় হামাসের এক অন্যতম নেতা। ছবি পরিচালনা করেছেন মাজিদ জিনদিয়া এবং এই ছবি প্রযোজনা করেছে আল আকসা মিডিয়া নেটওয়ার্ক। হামাসের দৈনিক আল রেসালার মতে এই চলচ্চিত্র তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১২০,০০০ ডলার। এই চলচ্চিত্রের মূল শুটিং হয়েছে আল আসদা মিডিয়া প্রোডাকশন শহরে যা মূলতঃ: প্রাক্তন ইজরায়েলিদের বসতি। তারা এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর এখানে এই প্রোডাকশন সিটি গড়ে উঠে। সাম্প্রতিক যুদ্ধে এই শহর আক্রান্ত হয়েছিল।

এই চলচ্চিত্রের উদ্বোধন হবার আগে তার প্রচারণার জন্য যে পোস্টার তৈরি করা হয়েছিল তা আমি দেখেছি। আমি এ রকম ঘরে তৈরি এক চলচ্চিত্র যা গাজার কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরছে দেখে বিস্মিত। গতকাল আমি ও আমার দুই বন্ধু ১০ শেকেলের দুই টিকিট কিনে আনি এবং এই বিস্ময়কর ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে দেখার জন্য চলচ্চিত্র দেখতে যাই।

লিনা আমাদের চলচ্চিত্রের কাহিনী বর্ণনা করছেন।

এই ছবি স্বাধীনতা যোদ্ধা ইমাদ আকিলের জীবনী। এই চলচ্চিত্রের প্রথম দৃশ্য শুরু হয় এক ধাত্রী ও তার স্বামীর আকিলের বাসায় প্রবেশের মধ্যে দিয়ে। ভবিষ্যৎের এই নায়ক সেদিন জন্ম নিচ্ছেন। ১৯৭১ সালের ১৯ই জুন তার জন্ম হয় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে। এরপর দর্শকরা তার ছেলেবেলা ও কিশোর বয়সে প্রবেশ করে, তার এই সময়টা কাটে সেই শরণার্থী শিবিরে। এই শিবিরের ফিলিস্তিনিরা ধারাবাহিক ভাবে ইজরায়েলি ভ্রাম্যমাণ প্রহরীদের হাতে মারধর ও গ্রেফতারের শিকার হত। ১৯৮৮ সালে প্রথম ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইন্তিফাদা আন্দোলন শুরু হয় এবং যথারীতি হামাস এক ইসলামী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। একই বছর ইমাদ আকিল হামাস ও ইন্তিফাদা আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে গ্রেফতার হয়। সে ১৮ মাস জেলে কাটায়। মুক্তির পর ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজায় এক সশস্ত্র সংগ্রামে সে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করে। ইজরায়েলি বাহিনী তাকে “সাতটি আত্মার মানুষ উপাধি দেয়”। কাশাম বিগ্রেডের যোদ্ধাদের জীবন তার গুপ্ত হত্যার মধ্যে দিয়েই শেষ হয় যা ঘটে ১৯৯৩ সালে। এই কাজটি করে ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী। এ কাজে তাদের সাহায্য করে একজন ফিলিস্তিনি বিশ্বাসঘাতক।

এই চলচ্চিত্র সম্বন্ধে লিনার মতামত?

এটা আমার দেখা অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র। কিন্তু এটা গাজার এক চলচ্চিত্র। সকল বাস্তবতা যদি বিবেচনা করেন, এর জন্য যা কিছু প্রযুক্তি এবং সুবিধা দরকার যা এ ধরনের ছবি তৈরির জন্য প্রয়োজন। সে হিসেবে এর নির্মাণ অনেক ভালো, যা তার অবস্থাকে তুলে ধরে এবং অবরোধের সময় এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। প্রায় আড়াই বছর ধরে এই অবরোধ চলে। গাজার প্রথিতযশা অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা এই ছবিতে অভিনয় করেছে। দু:খজনক ভাবে একই রেসালা পত্রিকা মন্তব্য করেছে যে সম্প্রতি গাজায় যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেই যুদ্ধে এই চলচ্চিত্রের চারজন অভিনেতা মারা গেছেন। শব্দ গ্রহণে বেশ সমস্যা হয়েছে। শব্দ সমস্যার কারণে বেশ কিছু কথা শোনা যায় না। আর অভিনেতাদের অভিনয় ততটা মান সম্পন্ন হয় নি। তারপরেও পুরো প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতে হয়, যখন তা গাজার এক কঠিন সময়ের মধ্যে এটি তৈরি করা হয়েছে।

ইন গাজা নামের ব্লগে (এটি ইলেকট্রনিক ইন্তিফাদাতেও পোস্ট করা হয়েছে), কানাডিয়ান এভা বার্টলেট একটা নাটক সম্বন্ধে রিপোর্ট করছে যে নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে:

“উৎসাহী চলচ্চিত্রকার হোসাম আবদেল লাতিফ জিজ্ঞাসা করেছেন, অন্য এলাকার লোকদের চেয়ে গাজার লোকেরা কি চলচ্চিত্র পছন্দ করে না”? লতিফের স্ত্রী অনেক বাস্তববাদী। তিনি উত্তর করেন, যার খাবার পয়সা নেই, সে যাবে সিনেমা দেখতে যাবে?

অবরোধ ও দখলদারিত্বের সময় শিল্প গাজা থিয়েটারের নতুন নাটক, “ফিল্ম সিনেমা”, জুলাইয়ের চার তারিখে শুরু হয়। ফিল্মের নেগেটিভ দিয়ে ঢাকা এক স্টেজ, এক নি:সঙ্গ টেডি ভল্লুক সেখান সৌন্দর্য বর্ধন করছে, তিনজন অভিনয় করে এমন এক নাটকের জন্য এই দৃশ্য।

“আমি হোসাম আবদেল লতিফ এবং আমি এক চলচ্চিত্র বানাতে চাই”। এই চলচ্চিত্র পরিচালক বারবার একই কথা বলে যায়, তার চলন্ত ক্যামেরার মুখোমুখি হয় এবং বারবার তার ছবি বানানো বাধাগ্রস্ত হয়।

এভা, নাটকের কাহিনী বর্ণনা করছেন:

এর কাহিনী খুব সাধারণ-একজন চলচ্চিত্রকার ও সে যে সমস্ত বাধার মুখোমুখি হয়- কিন্তু প্যালেস্টাইনের যে জীবন, তার কারনে সে দ্বিধান্বিত। এক আনন্দ তৈরি করা, যা একই সময় এক ভিন্ন বাস্তবতার নাটক, এই নাটকের জন্য এক ঘণ্টা থিয়েটারে কাটানো যায়। ফিল্ম সিনেমা অবশ্যই গাজার সর্ব শেষ ইজরায়েলি গণহত্যা সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেয়-কিন্তু বিশেষ সময়ের কথা উল্লেখ না করলে এ সকল বিষয় গাজার যে কোন ইজরায়েলি অগ্রাসনের কথা মনে করিয়ে দিতে থাকে- এবং এই নাটক, গাজার এই ধরনের অবরোধ ও চাপের মাঝেও ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই নাটক আমাদের সাথে সার্বজনীন বৈশ্বিক বৈবাহিক ঝগড়া ও স্বতন্ত্র আকাঙ্ক্ষা শেয়ার করে।

ভদ্রমহিলা লিখে চলেছেন:

ফিল্ম সিনেমা এই গরমে গাজার থিয়েটারের দ্বিতীয় অনুষ্ঠান, এবং আরো নাটক তৈরি হতে যাচ্ছে।

যারা নাটক দেখতে যায়, তারা শিল্পের মাধ্যমে ত্রাণ খুঁজে ফেরে, অথবা গাজায় আধা ভারসাম্য পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার মধ্যে দিয়ে মানব জীবনে স্বস্তি খুঁজে পায়। ঠাসা দর্শকে পূর্ণ থিয়েটার এবং তাদের উৎসাহ পূর্ণ অংশগ্রহণ, প্রমাণ করে যে গাজার ফিলিস্তিনিরা কতটা তৃষ্ণার্ত শিল্পের জন্য, এক নি:শ্বাস নেবার স্থানের জন্য।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .