আজারবাইযান: ইউরোভিশন ভোট কেলেংকারি

যদিও ইউরোভিশন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত মে মাসে, আজারবাইযানের কিছু প্রচার মাধ্যম গত সপ্তাহে রিপোর্ট করে যে ৪৩ জন আজারবাইযানী যারা এই প্রতিযোগীতায় আর্মেনিয়ার প্রবেশের পক্ষে ভোট দিয়েছিল তাদেরকে পুলিশ চিহ্নিত করতে পেরেছে এবং এদের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডাকা হয়েছে। বিতর্কিত ভূখণ্ড (নগর্নো কারাবাখ) নিয়ে এই দু'টি রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে এবং এই সংবাদ উভয় দেশের মধ্য অনেকগুলো কেলেংকারির মধ্যে এটি সাম্প্রতিকতম ঘটনা, যা এক আন্তর্জাতিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ঘটল।

দি স্লো উল্ফ ব্লগ বলেছে এই খবরটি সর্তকতা তৈরি করে নাকি বিনোদন সৃষ্টি করে তা তিনি নিশ্চিত নন । পোস্টের শেষে ব্লগার পূর্বের অবস্থায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

[…] গোল্লায় যাক, সে এক বাজে গানের জন্য ভোট দিয়েছে। এটা আমরা নই, যারা পাহারা দেওয়ার বাঁশি বাজিয়ে কোন অজুহাতে কাউকে কঠিন সময়ে ফেলার চেষ্টা করি না, তারপর।

[…]

শেষে চূড়ান্ত প্রশ্ন; কর্তৃপক্ষ কি ভাবে জানল এই মানুষটি আর্মেনিয়ার জন্য ভোট প্রদান করেছে? আমি এর জন্য বাজি ধরতে বলতে পারি যে এর কারণে সকল টেলিফোন কল ও টেক্সট মেসেজ উদ্ধার করতে হয়েছে, এক কেন্দ্রীয় তথ্য কেন্দ্র থেকে।

ব্রেট নিলি এই সোভিয়েত যুগের কৌশলের উপর প্রশ্ন করেছেন যা আজারবাইযানী কর্তৃপক্ষ প্রয়োগ করেছে:

দারুণ জমজমাট ইউরোভিশন বার্ষিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতা (যা মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়) গত কয়েক বছরে তার রাজনৈতিক অংশীদারিত্বের কথা নীচু স্বরে বলে যাচ্ছে (জর্জিয়া রাশিয়া, ইত্যাদি)। কিন্তু সম্প্রতি এই অনুষ্ঠানে এই রাজনৈতিক হামাগুড়ি, সরাসরি স্ট্যালিনের অভিনয় চলছে (এর সাথে সাইবেরিয়ান গুলাগ {সোভিয়েত সময়ে বিচার করত যে প্রধান বিচারপতি তাকে গুলাগ বলে ডাকা হত} বাদ দাও)।

[…]

যদিও এই প্রতিযোগিতায় আজারবাইযানের প্রবেশ খুবই সম্মানিত ভাবে হয়েছে, সে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে, কিন্তু এখানে চিন্তাটা হচ্ছে আজারবাইযানের প্রধান শত্রু আর্মেনিয়াকে সমর্থন করা, কোন আজেরির জন্য এই ভাবনা অনেক বেশি। মনে করার কিছু নেই, এখানে আজেরিদের প্রবেশ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইরানী-সুইডিশ বংশদ্ভূত গায়ক, যে এক আজেরি পপ গায়ক হিসেবে যোগ দিয়েছে। এই ঘটনা যা উৎসাহিত করেছে নাসিরালিকে। সে এর প্রতিবাদে আর্মেনিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এমনকি সবচেয়ে ভীতিজনক ব্যাপারটি হচ্ছে কি ভাবে আজারবাইযান আবিষ্কার করল নাসিরালির বিশ্বাসঘাতকতা পূর্ণ ভোটটি?

[…]

কয়েক পয়েন্ট অর্জনে এর কোন হেরফের ঘটে না। প্রথমতঃ আজারবাইযান রাষ্ট্রটি অবশ্যই উন্মাদের মতো নিজেকে নিরাপত্তাহীন ভাবে, যদি নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ অনুভব করে যে এসএমএস রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা দরকার, কে আজারবাইযান দলের জন্য ভোট দেয় নি, বিশ্বের অন্যতম এক জঘন্য টেলিভিশন অনুষ্ঠানের জন্য। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশটির ভিন্নমতাবলম্বীদের চুপ করে দেবার প্রচেষ্টাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

অন্যরা ততটা বিস্মিত নয়, বিশেষ করে ইউরোভিশনের যাত্রাই শুরু হয়েছে খারাপ ভাবে, যখন ফেব্রুয়ারি মাসে জর্জিয়া প্রতিযোগীতায় তার প্রবেশাধিকার অর্জন করতে ব্যর্থ হয়ইউরোভিশন সেন্ট্রাল এ বিষয়ে আরো জানাচ্ছে:

[…]তার কাজ বিশাল ভাবে আজারবাইযানের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, এখন তার মাথা ইউরোভিশনে ঢোকাচ্ছে? কে এমনটা ভেবেছিল?!

এখানে আর্মেনিয়ার প্রবেশ যা ভোটারদের বিপদে ফেলে দিয়েছে- আমি বিস্মিত যদি তারা মনে করে যে এটি তার যোগ্য?

এ ফিস্টফুল অফ ইউরো বলছে এই সংবাদ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রকৃতি নির্দেশ করছে, অথবা তার অভাব- উভয় রাষ্ট্রেই।

এটা আসলে তুলনামূলক ভাবে স্বাধীনতার ক্ষেত্রে উভয় রাষ্ট্রের একটা ভালো সূচক। আর্মেনিয়ায় রয়েছে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, এখানে বিরোধী দলকে অনেকটা দন্তহীন করে রাখা হয়। গতবছর একটা নির্বাচনে কারচুপির বিষয়ে প্রতিবাদকারীদের উপর সরকার চড়াও হয়। রাস্তার উপর তারা একদল প্রতিবাদকারীর উপর গুলি ছোড়ে, তাদের ভূপাতিত করে (বলাই বাহুল্য এবং তারপর এর জন্য তারা বিরোধী দলকেই দায়ী করে)।

বলা যায়, আর্মেনিয়ায় কেবল নামে এক বিরোধী দল রয়েছে। আর্মেনিয়ার প্রেস স্বাধীন যেন (ঠিক আছে খবরের কাগজ অনেক স্বাধীন, টিভি ও রেডিও ততটা নয়) সরকারের খোলাখুলি সমালোচনা সহ্য করা হয়।[…] এবং অনেক বড় জায়গা রয়েছে… আমি জানি না ঠিক কিভাবে এটা বলা যায়…ঠিক নিরীহ নয়। মতামত যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতীয়তাবাদ এর ধারণা থেকে ভিন্ন? আর্মেনিয়ায় এমন এক দেওয়াল রয়েছে যা অতিক্রম করা যায় না, কিন্তু তারা অনেক বিস্তৃত। এখানে কে আজেরিকে ভোট দিল তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।

অন্যদিকে আজারবাইযানে পরিষ্কার ভাবে এক দমন মূলক স্বৈর তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চলছে। এর বেশি বলার কিছু নেই। রাজনৈতিক ভাবে এটা অনেকটা মধ্য এশিয়ার প্রাক্তন সোভিয়েট প্রজাতন্ত্রের মতো এবং তা দক্ষিণ ককেশাসের অন্য দুই দেশের মতো। আজেরি সমাজে জনগণের মাঝে ভিন্নমতাবলম্বিদের জন্য খুব সামান্য জায়গা রয়েছে।

[…]

যাই হোক আজারবাইযান এক পুলিশি রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে। নগর্নো কারাবাখ নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে। যদিও আসলে খবর নয়, কিন্তু আরো একবার আমরা ইউরোভিশনের শক্তি দেখলাম এবং তা যে সব সময় খবর হওয়ার যোগ্য তা।

নোট ফ্রম দা বার্টেন্ডার বলছে যে, এই ঘটনা সম্বন্ধে ধারণা করা যায় (লেখক জর্জ অরওয়েল যে ভাবে ধারণা করেছিল), কিন্তু তিনি এর সাথে যোগ করেন, গানটি প্রথম স্থানে আসার মতো ভোট পাওয়ার যোগ্য নয়

যদি বিনোদনপূর্ণভাবে, এই সমস্ত গল্প সব সময় আমাকে বিস্মিত করে মানুষে চিন্তাভাবনা যে ক্ষমতার মাঝে অবস্থান করে। তাদের ক্ষমতার মুঠি এতটাই ভঙ্গুর যে, তাদের কোন নাগরিক এক গানের প্রতিযোগিতায় কোথায় ভোট দিচ্ছে তা তাদের দেখা দরকার? সরকার কি তার সকল শক্তি বা সম্পদ নাগরিকদের ফোনের টেক্সট মেসেজ পড়ার কাজে ব্যয় করছে? তাদের দেশ প্রেমের ধারণা কতটা বিকৃত হয়েছে?
[…]
[…] লম্বা সময় ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা মনে হচ্ছে এই প্রতিযোগিতাকে, এক ধরনের রসিকতা হিসেব বিবেচনা করছে, দেখে মনে হচ্ছে কে এই সবচেয়ে বিচিত্র ভাবে এই প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করতে পারে। বিস্তৃত ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন প্রবেশ, যাই হোক, বিষয় গুলোকে খানিকটা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। জয় কে এক জাতীয় অগ্রগতি হিসেবেই ধারণ করতে হবে।

আমি বুঝতে পারি এটা ছিল রাষ্ট্রের পুলিশের এক ভ্রমণ […]

লাইফ আফটার হেলসিংকি ২০০৭ এই কঠোর কৌশলকে অবাস্তব বলে উল্লেখ করেছেন, যেখানে দি আমেরিকান অবজার্ভার সাধারণ ভাবে উপসংহার টেনেছে যে যদি কেবল ৪৩ জন আজেরি নাগরিক আর্মেনিয়ার জন্য এ বছর প্রতিযোগিতায় ভোট দেয় এবং জানা যাচ্ছে তা তারা করতে পেরেছে টেলিফোন নম্বর কাউকে না দেখিয়েই, তা হলে ২০১০ সালে যে কেউ এই কাজ করতে পারে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .