এইচআইভি আক্রান্তদের ব্লগিং: “ভালোবাসা এখনো সম্ভব”

বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা সংখ্যক এইচআইভি পজিটিভ ব্লগাররা কিভাবে তারা এই ভাইরাস নিয়ে বেঁচে আছেন তা প্রকাশ করতে নাগরিক মিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।

এইচআইভি/এইডস নিয়ে খোলাখুলি ভাবে কথা বলা অনেক সমাজেই কঠিন হতে পারে। কোটি কোটি লোক এই ভাইরাসের শিকার হয়েছে, কিন্তু এই বাস্তবতা যে এটাকে সবাই খুব ভয় পায় আর এটা যৌন সংসর্গে ছড়াতে পারে, তার মানে হল এইচআইভি নিয়ে বসবাসকারীরা প্রায় ধিক্কৃত হন। তারপরেও ডজন ডজন সাহসী মানুষ তাদের গল্প লিপিবদ্ধ করেন, আর মাঝে মাঝে তাদের অধিকার বা ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য প্রচারণাও করেন ব্লগ বা ইন্টারনেট ফোরামে, যেখানে সবাই পড়তে পারে।


ব্লগিং পজিটিভলি ম্যাপ বড় করে দেখতে ক্লিক করুন

দক্ষিণ আফ্রিকা:

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বুসি নামে একজন কবি আর ব্লগার ধর্ষিত হওয়ার ছয় মাস পরে ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে জানতে পারেন যে তার দেহে এইচআইভি ভাইরাস ঢুকেছে।

এখানে রয়েছে তার দু:খের কাহিনী, যা তিনি তার ব্লগ মাই রিয়ালিটিজ এ লিখেছেন:

বেশী দিন হয়নি জানতে পারলাম যে আমি এইচআইভি তে আক্রান্ত। আমি অনেক বেশীবার আক্রান্ত আর ধর্ষিত হয়েছি যার ফলে এই ভাইরাসে আমি আক্রান্ত হয়েছি। কারণ হল যে আমি একজন নারী যে নিজেকে সমকামী বলি একজন মহিলার সাথে আমার সম্পর্কের কারনে। আমাকে আক্রমণকারী আর বিভিন্ন ধর্ষক পুরুষরা এমন করেছে আমাকে বোঝানোর জন্য যে নারী হওয়ার আসল মানে কি।

বুসি এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে পারেন নি যেহেতু তিনি ২০০৭ সালের মার্চ মাসে রোগে ভুগে মারা যান। কিন্তু তার ব্লগ আর কবিতা তার জীবনের শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে, যেমন আছে তার মত আরও অনেকের ব্লগ যতদিন পর্যন্ত না এর উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া যায়।

চীন:

চীনের এইচআইভি পজিটিভ ব্লগার লি জিয়ান এইচআইভিতে আক্রান্ত হন কিশোর অবস্থায়, উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকা কালে রক্ত দানের সময়। ২০০৫ সাল থেকে ব্লগিং শুরু করেন যখন তার বয়স বিশের ঘরে ছিল। এই বছরের শুরুর দিকে একটা ব্লগ পোস্টে ( চীনা ভাষায়) তিনি এইডসকে প্রতি ভয় কমানোর চেষ্টা করেছেন এই বলে যে অন্যান্য জীবনঘাতী অসুখের চাইতে বেশী এইডসকে ভয় করা উচিত না, আর তিনি নিজে ভীত না চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে।

ফিলিপাইন্স:

কিকস হচ্ছে হংকং এর কাউলুন এ বসবাস রত একজন ফিলিপিনো ব্লগার । ২০০৭ সালে তিনি আবিষ্কার করেন যে তার এইচআইভি আছে আর এটা নিয়ে কিভাবে আছেন সেটা লিখেছেন:

এইচআইভি পজিটিভ হওয়া একেবারেই গুরুতর কিছু না।

এটা যেন সারা জীবনের জন্য হার্টের অসুখ হওয়া যদিও আমার ডাক্তাররা বলেছেন যে এটা ডায়বেটিস হওয়ার থেকে ভালো। আজকাল এত ভালোভাবে ঔষধ পাওয়া যায়, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনি ক্যান্সারের রোগী, রক্ত শূন্য বা বয়স্ক যারা ম্যানিলার মতো দূষিত শহরে থাকেন তাদের থেকে বেশী দিন বাঁচবেন।

যুক্তরাজ্য:

ফ্রিরেঞ্জলাইফ নামের ব্লগার যুক্তরাজ্যের একজন সমকামী পুরুষ যিনি এইচআইভি নিয়ে ২০ বছরের বেশী বেঁচে আছেন। তিনি সাম্প্রতিক একটা পোস্টে সাবধানতা অবলম্বনের ব্যাপারে গাফিলতি করার বিপদের কথা লিখেছেন:

আমরা প্রায় ২০ বছরের বেশী এইচআইভি সম্পর্কে জানি, মানুষ এর বিপদের কথা জানে। তাহলে এটা তবুও কেন হয়? এর কারণ আমরা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি আর ভাবি ‘এটা আমার সাথে কখনো হবে না।“

কঙ্গো প্রজাতন্ত্র:

এইডস রাইট কঙ্গো ব্লগের ডেভি হারমান মালান্ডা গত বছর লিখেছিলেন নিজের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার খবর অন্যদের জানানোর বিপদ সম্পর্কে। তিনি বেরনাডেটা (নকল নাম) নাম্নী এক মহিলার গল্প বলেছেন, যিনি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পোয়াঁ নোয়ারে টি-টি বাজারে পুরানো কাপড় বিক্রি করেন:

বেরনাডেটার জীবন পাল্টিয়ে গিয়েছিল যখন তার কাছের বন্ধু তার এইচআইভি হওয়ার কথা সবাইকে জানিয়ে দেন। তার সহকর্মী আর গ্রাহকেরা জেনে যায় যে সে এইচআইভি পজিটিভ। ফলে বাজারে তার টেবিলে খুব কম গ্রাহক কাপড় কিনতে আসত। তার জীবন কষ্টের হয়ে যায়, আর সংসার চালানোর জন্যে রোজকার করা তার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ব্রাজাভিল থেকে অরেলি লিখেছেন তার নিজের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পারার আঘাতের কথা:

প্রাথমিকভাবে এটা আমাকে এক টন ইটের মতো এসে আঘাত করেছিল। আমি সাথে সাথে আমার জীবন পাল্টাতে দেখেছি আর দু:শ্চিন্তা আমার মাথায় চেপে বসেছিল।

তিনি আরো লিখেছেন যে তার পরিবারের সহায়তায় আর একটা অলাভ জনক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় এখন তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন।

যুক্তরাষ্ট্র:

আন্তর্জাতিক পজ ব্লগ নেটওয়ার্কের একটা ব্লগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মিশেল লিখেছেন যে এইচআইভি নিয়েও ‘ভালোবাসা এখনো সম্ভব’ আর জানিয়েছেন কিভাবে তিনি তার নতুন জীবন সঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছেন। তিনি এই পরামর্শও দিয়েছেন:

যারা নতুন আক্রান্ত বা যারা একা থাকতে থাকতে ক্লান্ত, আশাহত হবেন না। ভালোবাসাতে হার মানবেন না। আপনার সব থেকে যখন প্রয়োজন আর আপনি যখন একেবারেই আশা করছেন না তখন এটা আপনিই আসবে।

কেনিয়া:

এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার মানে এই না যে বৈষম্যের কারনে আপনি সব ধরনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন। মি: আর মিস রেড রিবন একটা চ্যারিটির অনুষ্ঠান আর ফ্যাশন শো যা কেনিয়ার নাকুরুর তরুণ সংঘ প্রতি বছর আয়োজন করেন। রাইজিং ভয়েসেস এর কেনিয়ার ব্লগিং প্রকল্প রিপ্যাক্টেড এর সদস্য এইচআইভি পজিটিভ ব্লগার মরিন এর একজন প্রতিযোগী ছিলেন আর তার অভিজ্ঞতা ব্লগে লিখেছেন:

আমি ২০০৬ সাল থেকে এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে আসছি আর এর প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি একটা কারনে, ঘৃণা আর বৈষম্যকে এটি ঘুচিয়ে দেয়। মি: আর মিস রেড রিবন আক্রান্ত আর ক্ষতিগ্রস্তদের এক মঞ্চে আনে সৌন্দর্যকে বিশেষ ভাবে উদযাপনের জন্য। অনুষ্ঠানের সময়ে দর্শক সৌন্দর্যকে উপভোগ করেন মডেলদের দেখে, আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্তদের দেখে না।

উপরের গ্লোবাল ভয়েসেস এর তৈরি এইচআইভি পজিটিভ ব্লগারদের গুগল ম্যাপ এইচআইভি পজিটিভ ব্লগার আর তাদের সাহায্য কারীদের কণ্ঠকে তুলে ধরে, আর এইচআইভি/এইডস এর সাথে জড়িত অন্যান্য নাগরিক মিডিয়াকেও। ম্যাপের লিঙ্কে ক্লিক করে আপনারা এ ধরনের আরো বিস্ময়কর গল্প পড়তে পারেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .