আজারবাইযান: তরুণ অ্যাকটিভিস্ট ও বিশিষ্ট ব্লগারকে এক রুদ্ধদ্বার বিচারের পর জেলে দেওয়া হয়েছে

দক্ষিণ ককেশাসে এটাই প্রথম ঘটনা যে একজন বিশিষ্ট ব্লগারকে প্রহার করা হয় এবং আটক করা হয়। দুইজন তরুণ কর্মীকে গত ১১ই জুলাই বিচারের পুর্বে তদন্তের জন্যে দু মাসের আটকাদেশ প্রদান করা হয় অনেকে এক প্রহসন মনে করেন।

রুদ্ধদ্বার বিচারের সময় আদালতে প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পর একজন ফেসবুক এই সংক্রান্ত সংবাদ উঠাতে থাকে। এটি করা হয় এক সংবাদ দিয়ে। জার্মান মানবাধিকার ন্যায়পাল ঘটনাক্রমে সে সময় বাকুতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি একে আজারবাইযান সরকারের আর্ন্তজাতিক প্রতিশ্রুতির নীতি ভঙ্গ করা বলে বিবেচিত করেন।

facebook

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এমিন মিলি এবং আদনান হাজিজাদে অপমানিত হন। পরে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনে আজারবাইযানের লেখক আলি এস নুভরাজভ পাঠকদের এই ঘটনা সমন্ধে অবহিত করেনরেডিও ফ্রি ইউরোপ ও রেডিও লিবার্টি (আরএফই/আরএল)ও যথারীতি এই ঘটনা সমন্ধে তথ্য পরিবেশন করে

এমিন মিলি সরকারের একজন সমালোচক হিসিবে পরিচিত। তিনি সোশাল নেটওয়ার্ক যেমন ফেসবুক এ খুবই সক্রিয়। হাজিজাদে নিজে ওএল ইয়থ গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এই গ্রুপ তরুণ জনগোষ্ঠীর সমস্যা তুলে ধরে। তারা জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ার ইউটিউব ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই কাজটি করে আসছিল।

মানবাধিকার কর্মী লেইলা ইউনুস বলেন যে ভাবে এই দুই কর্মীর উপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাতে এই ঘটনা ধারণ দিচ্ছে যে পুরো ঘটনাই ছিল রাষ্ট্রের বিশেষ বিভাগ ও পুলিশের পরিকল্পিত। তিনি কোয়ানিমাত জাহিদ যিনি আজাদিল পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন তার উদ্ধৃতি দেন। এক অজানা ব্যাক্তিকে আক্রমণের নামে জাহিদকে গুন্ডামির অভিযোগে চার বছরের জেল দেওয়া হয়।

আমেরিকা, জার্মান এবং নরওয়ের দুতাবাস এই ব্যাপারে তাদের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে। তারা আশা করেছে সরকার তাদের শাস্তি দেবে যারা এই তরুন কর্মীদের উপর আক্রমন চালিয়েছে এবং সরকার মিলি ও হাজিজাদেকে ছেড়ে দেবেন।

অনেকের বিবেচনায় এই দুজন আজারবাইযানের সবচেয়ে বিশিষ্ট কর্মী। উভয়েই ওএল! এবং এএন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে প্রচুর কাজ করেছেন। তারা নতুন হাতিয়ার যেমন ব্লগ সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট এবং ইউটিউব ব্যবহার করে উত্তেজনা পুর্ন নয় এমন আধুনিকতা, সহনশীলতা এবং আজাবাইযানের গণতন্ত্র নিয়ে তারা প্রচুর ভিডিও প্রকাশ করে থাকে

আমরা বিশ্বাস করি আজারবাইযানের এক সুন্দর উজ্জল ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য, স্বাধীন ভাবে চিন্তা করা, ভালভাবে শিক্ষা ও গ্রহনযোগ্য কাজ করতে সক্ষম এমন তারুণ্য প্রয়োজন। তরুণদের অবশ্যই ভবিষ্যতে দেশ ও দেশের কার্যক্রম চালনোর মতো দায়িত্বশীল হতে হবে।[…] ওএল! আন্দোলন,তরুণদের আন্দোলন যার মধ্য দিয়ে তারা আজারবাইযানের জাতীয়তা, ভাষা, ধর্ম এবং লিঙ্গ এসবের মধ্যে দিয় এক গ্রহণযোগ্য এবং তুলনামুলক উন্নয়ন ঘটাবে।

এই তরুণ কর্মী এবং তাদের বন্ধুরা ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছেন মে মাসের এক প্রতিবাদ প্রদর্শনের সময়। পুলিশ এই আন্দোলন নিয়ে অসোন্তোষ প্রকাশ করে। সে সময়ও অন্যকয়েকজনের সাথে মিলিকেও গ্রেফতার করা হয়অআরএফই/অআরএল চিন্তা করছে এই বিচারের সময়ে নিশ্চয়ই যদি তার কিছু কাজে কর্তৃপক্ষ আকৃষ্ট ছিল।

গতকাল আমরা দুজন তরুণ আজারবাইযানী কর্মীর গ্রেফতার হবার খবর লিখেছিলাম। উপরের ভিডিও যা তৈরী এবং বিতরণ করেছে ওএল এবং এএন ইয়থ মুভমেন্ট। এগুলো এমন জিনিষ যা তাদের গরম পানিতে হাত দেওয়া মতো মানে যা বিপদে ফেলে দিতে পারে।

ওএল-এর প্রধান আদনান হাজিজাদে। গ্রেফতার হওয়া দুজনের মধ্যে সেও অন্যতম ।

এই সব ভিডিওর মধ্যে ওএলের সদস্যরা সরকারের তেল থেকে পাওয়া টাকা অপব্যবহারের উপর রসিকতা করছে। স্থানীয় প্রচার মাধ্যম জানায় যে আজারবাইযান সরকার বিদেশে থেকে দুটি গাধা কিনেছে ৪১,০০০ ডলার দিয়ে যার মধ্যে একটি গাধা সংবাদ সম্মেলন করে।

প্রতিক্রিয়া দ্রুতই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক আর টুইটার ব্যবহার করে তাদের গ্রেফতার এবং বিচারের তাজা সংবাদ পরে ইন্টারনেটে তুলে দেওয়া হয়।

az_tweet

এই ঘটনার ব্যক্তিগত প্রতিফলন ব্লগে দেখা যাচ্ছে, ফাইটিং উইন্ডমিল? এর একটি অংশ তুলে ধরেছেনবিশেষত: তিনি হতাশ:

দুইদিন আগে আমি ছাদের উপর এক পার্টিতে ছিলাম যার আয়োজন করেছিল আমার বন্ধুরা। মদ্যপান করা, বন্ধুদের সাথে কথা বলা, আবহাওয়া ও সাধারণভাবে জীবন উপভোগ করা, আমি বলেছিলাম, গরমের সময় আমি বাকুকে ভালোবাসি। এবং এই শহরে বাস করার কারনে এক লম্বা সময় ধরে আমি সুখী।

আজ সবকিছু মনে হচ্ছে আলাদা। আবহাওয়া যেন উদ্বেগজনক , গাছগুলো যেন অতিরিক্ত সবুজ , লোকজন যেন অর্থহীন এবং আমার দুই ঘনিষ্ট বন্ধুকে প্রহার করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এমন অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে যা আগে থেকেই তৈরী করা ছিল।
পুলিশ স্টেশনের সামনে সাত ঘন্টা, তিনঘন্টা ল্যাপটপ জড়িয়ে থাকা এবং রাগান্বিত হওয়া, আমার ভেতরে এক চিৎকার জেগে উঠেছে।
[…]

চার বছর আগে আমি আমার এক বন্ধুর মুখে একই ধরনের একটা ঘটনা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যা ছিল তুর্কমেনেস্তানের এক অবিচারের ঘটনা। আজ আমি সবেচেয়ে বিশ্রী দু:স্বপ্নের মধ্য বাস করছি, আজারবাইযানে আমার সেরা দুই বন্ধুর স্বাধীনতার জন্য লড়ছি। তাদের সাথে বন্ধুত্বের কারনে আজ আমি গর্বিত।

আমি ক্লান্ত,শংকিত এবং রাগান্বিত। এখন আমাকে জিজ্ঞেস করুন আমি গরমের সময় বাকুকে ভালোবাসি কিনা।

ফ্লাইং কার্পেটস এবং ব্রোকেন পাইপলাইন একই রকম হতাশ এবং বিশেষত: যখন রায় শোনানো হয়। ব্লগাররা এই বিচারের প্রভাব অনেক তরুণ আজারবাইযানীদের উপর যে পড়বে তা লিখেন:

এই পোস্টের কোন শিরোনাম নেই। এই পোস্টের কোন ঘটনা নেই। এই পোস্ট খুব সাধারণভাবে আমার হতাশা এবং নিরাশা নিয়ে লেখা। এই পোস্ট বাম দিকে এবং সকল কিছু যা নেতিবাচক যা আমি শব্দ দিয়ে ব্যাখা করতে পারি না। কারন অনেক সময় শব্দ যথেস্ট নয়! এবং চুড়ান্তভাবে বলা যায় এই পোস্ট ক্রোধ এবং রাগের, যা আজ ঘটেছে তার কারনে।
[…]

আমাদের দেশে কি ঘটছে? কেন আজারবাইযান আজ এমন স্থান যেখানে লোকজন মিথ্যা বলে, যেখানে কোন বিশ্বাস নেই, যেখানে এত দুর্নীতি, যখন আপনি কোন লাইনে থাকবেন তখন আপনি স্বাভাবিক ভাবেই ভাবতে শুরু করবেন এই লাইনকে চালু করার জন্য বাড়তি টাকা দিতে হবে?! কেন আজ দেশটিতে কোন বিচার নেই?!
[…]
এখন আমি তাজা সংবাদের ফেসবুক দেখছি। এই কয়ঘন্টা আমি মিস করেছি কারন এই সময়টায় আমার ইন্টারনেট ছিল না। আমি বেদনা দেখেছি, ক্রোধ দেখেছি কিন্ত সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমি কোন আশা দেখছি না! এর মধ্যে অনেক পোস্ট রয়েছে, যারা রাগান্বিত। অন্যদের রয়েছে ঘৃণা। এমিন এবং আদনানকে সমর্থনের জন্য আবার কারো রয়েছে শুধু শব্দ।

ফেসবুকেএমিন মিলি এবং আদনান হাজিজাদের সমর্থনের জন্য এক বিশেষ পাতা তৈরী করা হয়েছে। অনলাইনে এক দরখাস্ত রয়েছে এখানে সই করা যাবে। ওএল! এর একটি ইউটিউব চ্যানেল এখানে রয়েছে। এই বিচার্য বিষয়ে তাজা সংবাদ ওএল! ব্লগে পাওয়া যাবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .