গত ২রা জুলাই, বৃহস্পতিবার দিল্লীর উচ্চ আদালত আদেশ জারী করে যে পুরুষ সমকামী সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে দেখা এক ধরনের বৈষম্য। এ কারনেই তা ভারতীয় সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত মৌলিক অধিকারের লংঘন। আদালতের এই আদেশের উপর ভারতীয় বেশ কিছু ব্লগার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ইনডিয়া আনকাট এর অমিত ভার্মা বলেছেন:
জুলাই ২, ২০০৯- এই দিনটিকে চিহ্নিত করে রাখুন। এই দিনটি স্বাধীন ভারতের জন্য এক বিশাল বড় দিন। কারন, আজ দিল্লীর উচ্চ আদালত কার্যকর ভাবে সমকামীতাকে নিরাপরাধ ঘোষণা করেছে। এখন ভারতে পুরুষ সমকামীতা আর অবৈধ নয়। আমি প্রায়শ:ই লিখি, কি ভাবে ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন করলো, কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয়রা স্বাধীন ছিল না। একজনের ব্যাক্তি স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা.[..], অবশ্যই আমি মনে করছি না যে আমরা হঠাৎ করে একটি আলোকিত সমাজে পরিণত হয়ে গেলাম। এখনও যৌনতার প্রতি ভীতি রয়েছে যে, সাধারণ সংস্কৃতিতে পুরুষ সমকামীতা ছড়িয়ে পড়বে […]। কিন্তু এখন পুরুষদের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক আর অবৈধ নয়, এটা কত বড় একটা বিষয়?
আদালতের আদেশ থেকে উদ্ধৃত করছে দ্যা র্যাশনাল ফুল:
এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের বিজয়। এক ঐতিহাসিক বিচারের মাধ্যমে দিল্লী উচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতি অজিত প্রকাশ শাহ ও বিচারপতি ড: এস. মুরালিধর আবেদনকারী পক্ষে আদেশ জারী করে। নাজ ফাউন্ডেশন এর আবেদনের পরিপেক্ষিতে তারা ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা স্থগিত করে যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১, ১৪, ১৫-র লংঘন। এতদিন পর্যন্ত যখন দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ যৌন কারনে শারিরীক ভাবে মিলিত হওয়াকে অপরাধ হিসেবে দেখা হত। এই আদেশ কেবল সমকামী সম্প্রদায় এর জন্যই আনন্দ বয়ে আনেনি এর সাথে তাদের জন্য আনন্দ বয়ে এনেছে যারা বিশ্বাস করে স্বাধীনতা এবং সাম্যতায়। আইন অযৌক্তিক বিশ্বাস ও মুল্যবোধের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকারী হতে পারে না।
ব্লগভারতীতে মন্তব্য রেখে গেছেন সুর্য সুব্রামানিয়াম। তিনি বলেছেন:
আমি এই আদেশের কিছু অংশের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করছি, যাকে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অংশ মনে করছি। আদালত কেবল সমকামীতাকে নিরাপরাধ ঘোষণা করেনি তার সাথে যৌন পরিচয়ের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তৈরী করা হত তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান করে অনেক দুর এগিয়ে গেছে।
পিওভি (পয়েন্ট অফ ভিউ) এর হরিনী কালামুর বলেছেন:
এটির দরকার ছিল। আমাদের বিছানায় উঁকি মারার কোন ইচ্ছা রাষ্ট্রের নেই। এটা সমকামীতাকে কেবল নিরাপরাধ বলে ঘোষণা দেওয়া নয়- একই সাথে এটি সবার গোপনীয়তা নিশ্চিত করার অধিকার।
ব্লগার??! দিস ইজ এ টাইটেল (এটি একটি শিরোনাম) জিজ্ঞেস করছে:
আপনারা কি তা শুনেছেন? এমনই আওয়াজ বোকা আইন করে পুরোপুরি পাল্টে ফেলার পরে। […] অসহায় পুলিশ, সহজেই টাকা বানানোর এক উপায় তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হল।
ব্লগার??! আমাদের স্মরন করিয়ে দেন সকল ব্লগারের এই বিষয়ের প্রতি ইতিবাচক সাড়া ছিল না। তিনি পাঠকদের বলেছেন রেডিফ কমেন্ট বোর্ড-এর দিকে তাকাতে। পুনিত গেরা নামে একজন সেখানে একটি মন্তব্য করেছেন:
ভারতীয় হওয়া সত্বেও জীবনে এই প্রথম আমি স্বীকার করে নিচ্ছি পাকিস্তান ভারতের চেয়ে ভালো। অন্তত সে দেশ পুরুষ সমকামীতা আইনগতভাবে বৈধ নয়। তারা তাদের সাংস্কৃতিক মুল্যবোধ বজায় রাখে। পাকিস্তানকে তার সুন্দর মুল্যবোধের জন্য আমি সালাম জানাই।
সেজারলেম উত্তেজিত:
আমার বান্ধবী আমাকে এই বিষয়টি সর্ম্পকে জানিয়েছে। এই বিষয় সমন্ধে সে শুনেছে তার আইনজীবি ভাইয়ের কাছ থেকে। যে রায় দিল্লী উচ্চ আদালত জারী করেছে তা সারা দেশের জন্য প্রয়োজ্য যদিও তা এখন বিশেষ রাজ্যে বিশেষ নিয়মে চলছে। এটি (প্রথমত:) রায়কে আরো বিচিত্র করে তুলবে এবং (দ্বিতীয়ত) আমি চিন্তা করছি যদি/কখনো/কোথাও এই রায় পাল্টে ফেলা হয়। যদিও আশাবাদী যে তা আদৌও ঘটবে না, কারন এই রায় অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এলো। তবে মোল্লা, ডানপন্থী হিন্দু টিভি ধরনের প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মুর্খরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সভা জনপ্রিয় করছে এবং উচ্চস্বরে এর নিন্দা করছে।
যাইহোক, আল্ট্রা ভায়োলেট এর দিলনাওয়াজ বামবোট বিশ্বাস করেন আরো অনেকে কিছুর জন্য লড়াই করতে হবে:
সমকামী পুরুষের পরস্পরের মিলনকে অপরাধ নয় বলে ঘোষণা দেওয়া সাম্যবাদের জন্য একটা বিজয় তারপরেও যারা সাম্যতার আগমনকে উপড়ে ফেলতে চায়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পছন্দের তালিকার মাধ্যমে সব চাপাতে চায় এমনকি সামাজিক যে পোশাক রয়েছে তার ক্ষেত্রেও হুমকি প্রদান করতে চায়। তার একটা ঘটনা ডেনিম জিনস দিয়ে শুরু হতে পারে.. আমি ঠাট্টা করছি না…জিনস উত্তর প্রদেশের প্রিন্সিপাল এসোসিয়েশনের হিসেবে নিষিদ্ধ পোশাক। তারা কিশোরদের নষ্টামিপুর্ন আচরণের জন্য এই পোশাককেই দায়ী করেছেন। এই নীল পোশাক বাতিল করা ভালো, আমরা আদর্শ নাগরিক পাচ্ছি। এই দুটি বিষয় হয়তো পরস্পরের সাথে সর্ম্পকিত নয়, কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে আমাদের ক্রমাগত নিজেদের আত্মপ্রকাশ ও মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করে যেতে হয়। এবং এই ধরনের বিষয় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতা এখনও অনেক দুরের বিষয়। আত্ম-নির্ধারন শব্দটি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এখনও অভিধানের পেছনের অংশে বসে আছে।