নেপাল-ভারত সীমান্ত সমস্যা: অনলাইনে নেপালিদের প্রতিক্রিয়া

গত মে মাসের এক রিপোর্টে জানা গেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নেপাল-ভারত সীমান্ত পেরিয়ে অগ্রসর হয়ে নেপালের ভূমি দখল করেছে যা নেপালের সংবাদপত্রে এক ঝড় তুলেছে। নেপাল-ভারতের সীমান্তের ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে নেপাল ডেমোক্রেসী এক বিস্তারিত রিপোর্ট করছে।

রিপাবলিকা অনুসারে:

“প্রায় ২০০০ নেপালীকে নেপাল- ভারত সীমান্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যাদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী অন্যায়ভাবে হয়রানী করছিল। তাদের সামান্য খাবারও ফুরিয়ে আসছে যা তারা এলাকা ত্যাগ করার সময় তাদের সাথে নিয়ে এসেছিল।[..]

এদের এলাকা থেকে সরে যেতে হয় কারন তাদের ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী- সশস্ত্র সুরক্ষা বল (এসএসবি) এর হয়রানী- যা ক্রমাগত বাড়ছে তার কারনে। এমনকি বৃহস্পতিবারে প্রায় ২৫০ জনের মত নেপালী সাতবারিয়াতে চলে আসে। অনেকে রাস্তার পাশে আশ্রয় নেয়। তারা জানে না তারা কোথায় যাবে”।

নেপাল সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা এই বিষয়টি দেখবে। কিন্তু জনতার ক্রোধ স্পষ্ট। এ ব্যাপারে সারা দেশে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। মাওবাদী দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো এর নেতৃত্ব দিয়েছে। নেপালনিউজ অনুসারে ছাত্র সংগঠনগুলো সীমান্তে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তারা পরিস্থিতির মুল্যায়ন করতে পারে।

অনলাইনে এই সংঘাত নিয়ে প্রতিক্রিয়াগুলো হতাশার এবং অনেকেই আহ্বান জানিয়েছে যে উন্মুক্ত ইন্দো-নেপাল সীমান্ত পরিমাপ করা এবং মাঠ পর্যায়ে নাগরিকদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই বিষয়টিকে জনতার মাঝে তুলে আনা এবং একটা ন্যায়সঙ্গত সমাধান পেতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা উচিৎ।

ব্লগার বিভাস মাওবাদীদের প্রতি সহানুভুতিশীল। তিনি নির্দেশ করেন ভারত ও নেপালের মধ্যে উন্মুক্ত সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য এক সমস্যা এবং নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত এই উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হবে।

এই উন্মুক্ত সীমান্ত ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য পরিচালিত হয়। এখন ভারতের সময় এবং আবার তারা খোলা সীমান্ত নেপালকে হুমকি দেবার জন্য ব্যবহার করে যখন তারা অনুভব করে নেপাল তাদের স্বার্থে সাড়া দিচ্ছে না। এমন ঘটনা রয়েছে নেপালের সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই প্রধান ট্রানজিট বা সীমান্ত পারাপার অঞ্চল ভারত বন্ধ করে দিয়েছে। এটি তারা করে লম্বা সময়ের জন্য, যা তারা করে এক শাস্তি হিসেবে। যদি নেপাল ভারত কে না জানিয়েই এবং তার পরামর্শ না নিয়ে অন্য দেশের সাথে আলোচনা করে তখন তারা শাস্তি স্বরুপ এই কাজ করে থাকে।

যা হোক, বিশেষ করে গত কয়েক বছরে নেপালে মাওবাদীদের সশস্ত্র বিদ্রোহী শুরু হলে, ভারত এর নেতিবাচক উত্তাপ টের পেয়েছে বাম শাখা এবং ভারত বিরোধী সমন্বয়ে যা উভয় দেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে। ভারতের নিজের দেশের নিরাপত্তা এখন সচেতনতার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। কাজেই এখন কেবল নেপাল নয়, ভারতের সময় এসেছে উন্মুক্ত সীমান্ত নিয়ে এই পরিকল্পনা নতুন করে করার। বদলে যাওয়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে যথারীতি তার সাথে উভয় সীমান্তের নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমের ভার গ্রহণ করার। একটা ছোট দেশ হিসেব নেপাল ভারতের চেয়ে বেশী খারাপ দিকগুলো নিয়ে ভুগছে। উভয় দেশের অনিয়ন্ত্রিত সীমান্ত দিয়ে জনতার চলাচলের ক্ষেত্রে এই সমস্যা গুলো তৈরী হয়”।

কিছু হতাশ নাগরিক এই বিষয়টিকে আদালতে নিয়ে গেছে। আইনজীবি সন্তোষ বাসনেত এবং সাংবাদিক পুষ্প থাপলিয়া নেপালের সর্বোচ্চ আদলতকে হস্তক্ষেপ করতে বলছেন:

“ইতিমধ্যে আইনজীবি সন্তোষ বাসনেত এবং সাংবাদিক পুষ্প থাপালিয়া জনাস্বার্থে নেপালের সর্বোচ্চ আদলতে এক মামলা দায়ের করে এই অভিযোগে যে, সরকার দেশটির সীমান্ত এলাকার নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করতে ব্যার্থ হয়েছে।

দরখাস্তকারীরা সবোর্চ্চ আদালতে আবেদন জানিয়েছে যেন ভারতের হাত থেকে নেপালী গ্রামবাসীদের বিতাড়নের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিচারালয় সরকারকে আদেশ করে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করে।

প্রধানমন্ত্রীর অফিস, মন্ত্রীপরিষদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং ভুমি সংস্কার ও ব্যবাস্থাপনা মন্ত্রণালয় এই নামের তালিকায় রয়েছে যারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে”।

নেপালি ভাষার ব্লগ মাই সাংসার এই বিষয়ে প্রচন্ড প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যাতে অনলাইনে নেপালী জনগণ এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হয়। তারা সারা বিশ্বে ১৫ জুনকে এক বিশেষ কার্যকর দিন ঘোষণা করার আহবান জানাচ্ছে। এই বিষয়ে ব্যানার ও পোস্টার তৈরী করছে এই অবৈধ অগ্রসারতার প্রতিবাদের জন্য।

ফেসবুকে বেশ কিছু দল দেখা যাচ্ছে যারা ভারতের এই অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করার জন্য গ্রুপ বা দল তৈরী করছে, এখানে এই বিষয়ে ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এখানে একটা ভিডিও রয়েছে যা সীমান্তের সমস্যা দেখাচ্ছে, এটি নেপালী দৃষ্টিকোন থেকে তুলে ধরা হয়েছে:

যেকানে বেশীর ভাগ নেপালীদের এই প্রচেষ্টা সততার সাথে বিষয়টি উপস্থাপন করা এবং এর শান্তিপূর্ণ সমাধান, সেখানে ফেসবুকে বেশ কিছু গ্রুপ রয়েছে যারা বিপদজনক ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও জাতিবিদ্বেষ ছাড়াচ্ছে। এটি মাইসাংসারেও ঘটছে, বেশ কিছু প্রতিবাদী পোষ্টার গ্লোবাল ডে অফ এ্যাকশনে এসেছে যা বর্ণবাদী এবং পক্ষপাৎপূর্ণ। সেখানকার এ্যাডমিনিস্ট্রেটর সেগুলো সরিয়ে ফেলেনি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .