গুর্খা: বৈষম্যের দীর্ঘ ইতিহাস

রিমেমব্রেন্স ডে প্যারেডে গুর্খা সৈন্যরা। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী রডার্জের সৌজন্যে।

রিমেমব্রেন্স ডে প্যারেডে গুর্খা সৈন্যরা। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী রডার্জের সৌজন্যে।

গুর্খা হচ্ছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কাজ করা নেপালী তরুণ যারা রানী আর যুক্তরাজ্যকে প্রায় দুই দশক ধরে সেবা দিয়েছে। দূর্ভাগ্যবশত: ব্রিটিশ সরকার তাদের কাজ আর আত্মদানের স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করেছে।

গত সপ্তাহে, ব্রিটিশ প্রেস আর ব্লগের জগৎ মুখর ছিল নতুন এক সরকারী প্রস্তাবনার ব্যাপারে যা গুর্খা ব্রিগেডের যোদ্ধাদের প্রতি বিরুপ। আনা রেকুন প্রস্তাবনার কথা লিখেছেন:

“৫ জন এমপি, যারা আইআরএর রাজনৈতিক শাখার প্রতিনিধিত্ব করেন; যারা তাদের সংসদের আসন এখনও গ্রহন করেননি কিন্তু দ্বিতীয় বাড়ির জন্য ৫ লাখ পাউন্ড দাবী করেছেন। এটা কষ্টকর যে একই সাথে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে আমাদের ‘সামর্থ নেই’ প্রায় ১৫০০ জন গুর্খাকে, যারা ব্রিটিশ সেনার পক্ষে প্রায় সকল মূল যুদ্ধে লড়েছেন; প্রথম আফগান যুদ্ধ থেকে বসনিয়া, ফল্কল্যান্ড আর সাম্প্রতিক ইরাক, তাদের ‌আমরা যুক্তরাজ্যে থাকতে দিতে পারব না। কিন্তু আমরা আইআরএর প্রাক্তন যোদ্ধাদের লন্ডনে একটি একটি বাড়ী দিয়ে ‘পুনর্বাসিত’ করতে পারি, একেবারে ‘স্যামসন’ ২৮ ইঞ্চি ওয়াইডস্ক্রীন টেলিভিশন, আর সনি ডিভিডি সারাউন্ড সিস্টেম সিনেমা সহ মাসে ৫৪০০ পাউন্ড দিয়ে!

সত্যি, গুর্খারা আজ সকালে ভাবতে পারেন যে তারা কি ভুল সেনাদের দিকে তাদের বন্দুক তাক করেছিলেন? গর্ডন ব্রাউন ‘মিথ্যা আর কল্পনার চাদর’ ব্যবহার করেছেন এই দাবি করতে যে ব্রিটেনে গুর্খাদের থাকতে দিতে করদাতাদের অতিরিক্ত ১.৪ বিলিয়ন মূল্য দিতে হবে।”

সাংহাই থেকে পল ফ্রেঞ্চ গুর্খাদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের আচরনে বিরক্ত। তিনি অভিনেত্রী জোয়ানা লুমলের গুর্খাদের জন্য প্রচার কাজের প্রতি সমর্থন জানান:

“বর্তমানে গুর্খাদের সমর্থনে একটি প্রচারাভিযান চলছে যা গুর্খাদের আরো সাহায্য আর সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে। একে গুর্খা ন্যায় বলা হচ্ছে যা মানুষের কল্পনাকে জাগাতে পেরেছে আর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল লিবারেল ডেমোক্রাটরা হাউস অফ কমন্সে একটা মোশন ‌উত্থাপন করায় যে সকল গুর্খা যুক্তরাজ্যে থাকার সমান অধিকার পাবে। এর ফলে সরকার ২৬৭ আর ২৪৬ ভোটে হেরে যায়। এটি সরকারের জন্য ১৯৭৮ সালের পরে প্রথম মোশন পরাজয়। কমন্সের ভোট বাধ্যতামুলক না, কিন্তু এটা সরকারের জন্য একটা লজ্জা। তবুও ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ফিল উলাস (আর আমার অভিজ্ঞতায় একজন খারাপ ব্যক্তিকেন্দ্রিক পেশাজীবি – আমার কলেজের সময়ে সে জাতীয় ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান ছিল- একজন খুবই খাপ পিচ্ছিল লোক যে অবশ্যই এক বিন্দু পাল্টায়নি) অসত্য আর মিথ্যা তর্ক করে যাচ্ছেন।”

যেমন গুর্খাদের ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়া আর সঠিক পেনশন পাওয়ার ব্যাপারটা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, জাতি আর জাতিগত ব্যাপারটাও উত্থাপিত হচ্ছে। স্পাইকডব্রেন্ডান ও'নিল লিখেছেন:

গুর্খাদেরকে সব সময়ে দ্বিতীয় শ্রেণী হিসাবে গন্য করা হয়েছে, বিশ্বস্ত কিন্তু অদ্ভুত, আলাদা একটা জাতি, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাদা নেতাদের থেকে কম বুদ্ধিমান কিন্তু নেপাল, ভারত আর বার্মার প্রতিদিনের লোকের থেকে বেশী বিশ্বাসী। আসলে, দীর্ঘদিন ধরে গুর্খারা অসামঞ্জস্যের প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশ হিসাবে আছে: তাদেরকে তৈরি আর লালন করা হয়েছিল, ব্রিটিশ শিষ্টতা দ্বারা না বরং ব্রিটিশ জাতিগত চিন্তা দ্বারা।

কিন্তু সবাই গুর্খাদের সমর্থন করছে না। নিউ স্টেটসম্যানে পিটার উইলবি বলেছেন যে “গুর্খারা ভাড়াটে সৈনিক” আর:

“ তারা ‘ব্রিটেন আর মহামান্য রাণীর প্রতি ভালোবাসার’ জন্য লড়ে না (এই শব্দ ব্যবহার তাদের সমর্থকরা পছন্দ করে), যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের ভাড়াটেরা খেলে, ধরুন লিশেস্টারশায়ার এর জন্যে, দেশের স্থায়ী শিয়াল-শিকারিদের জন্য আর গ্রামাঞ্চলের জন্য ভালোবাসার কারনে। দুই শতাব্দী আগে যখন ব্রিটিশ সেনা নেপাল আক্রমন করেছিল তখন গুর্খা রেজিমেন্ট গঠন করা হয়। এই সৈনিকদের নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা দেখায় তাদেরকে অর্থ দেয়া হয় ব্রিটিশ সেনাতে যোগ দেয়ার জন্য। ১৯৪৭ সালের একটি চুক্তি বলেছে যে একজন গুর্খা সৈনিক যদি ব্রিটিশ সেনাতে যোগ দেন (অনেকে নতুন তৈরি ভারতের সেনাতে এর পরিবর্তে যোগদান করেন), “তাহলে তাকে অবশ্যই নেপালি নাগরিক হিসাবে চাকরিতে নেয়া হবে… নেপালি নাগরিক হিসাবে চাকরি করতে হবে আর নেপালি নাগরিক হিসাবে পুনর্বাসিত হবেন।” তাদেরকে যুক্তরাজ্যে জন্মানো সেনাদের থেকে কম বেতন দেয়া হতো- প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়ের একটা স্পষ্ট আকর্ষণ তাদের প্রতি- কিন্তু নেপালের স্থানীয় মান অনুসারে সেই টাকা যথেষ্ট ছিল।”

কয়েকজন ব্রিটিশ নাগরিক গুর্খা বিষয়ে তাদের মতামত ইউটিউবের মাধ্যমে জানাচ্ছেন। এখানে কয়েকজন গুর্খাদের সমর্থন করছেন:

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .