মিশর: এইচ১এন১ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শুকর হত্যা

এখন সারা বিশ্ব চেষ্টা করছে সোয়াইন ফু অথবা এইচ১এন১ নির্মুলে পুর্ব থেকে সর্তকতামুলক ব্যবস্থা নিতে, যাতে শোয়াইন ফ্লু বা এইচ১এন১ সব জায়গায় ছড়িয়ে না পড়ে। মিশরীয় সরকার এ ব্যাপারে একটি অতিরিক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এই রোগের কারনে সে দেশের সকল শুকর মেরে ফেলতে চায়। এরপর থেকেই ব্লগার এবং মুলধারার মিডিয়া এক লম্বা বির্তকে জড়িয়ে পড়েছে- এই সিদ্ধান্ত, সঠিক সিদ্ধান্ত কিনা? অথবা এই সমস্যাটিকে আরো ভালো কোন উপায়ে সমাধান করা যায় কিনা? অনেকে এই যুক্তিটিকে সঠিক বলে মনে করেন এবং তারা চায় মিশর যতটা পারে ততটা শুকর খতম করুক, এবং বিষয়টি বার্ড ফ্লুর মতো অভিজ্ঞতা না ছড়াক। অন্যরা ভাবছে কি ভাবে মিশর সরকার শুকর খামারীদের এর ক্ষতিপুরণ দিবে।

মারিয়ান মিশরে বাস করা একজন আমেরিকাবাসী। এক স্বল্প দৈর্ঘ্য পোষ্টে এই ব্যাপারে সে তার প্রতিক্রিয়া লিখছে। তার এই প্রতিক্রিয়া শুকর জবাই উপলক্ষে:

আর্ন্তজাতিক এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক সংবাদে ঘোষণা দেওয়া হয় যে মিশরীয় সরকার কৃষকদের জোর করে সকল শুকর হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছে যাতে শোয়াইন ফ্লু ছড়াতে না পারে। এটা এমন এক বুদ্ধিমত্তা, যেন প্যারিস হিলটন লোকদের বলছে, সে এটা নিয়ে চিন্তিত নয় কারন সে শুকরের মাংস খায় না। এই মুহুর্তে শুকর গুরুত্বপুর্ন নয়। এই ফ্লু বা জ্বর মানুষের সংস্পর্শের মাধ্যমেই ছড়ায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হুর কিছু কর্মকর্তার মতে এটি ততটা হুমকি নয় যতটা বার্ড ফ্লু। এটি বার্ড ফ্লুর মতো বিপদজনক নয়। আমি সন্দেহ করছি এর পেছনে শোয়াইন শব্দ থাকা ও এখানকার সংস্কৃতিতে শুকরের মাংস নিষিদ্ধ হওয়া এবং সারাবিশ্বের আমলারা বলেছে যে ভাবে রোগ ছাড়ায় তাকে প্রতিরোধ করা যায় না তা দায়ী। মিশরে এখন বেশ কয়েকটি আধুনিক ও যথাযথভাবে পরিচালিত শুকরের খামার আছে।…যেমন আমাদের এখানে খুব কমই যথাযথ ভাবে পরিচালিত উদাহারণ রয়েছে যা প্রায় সবখানেই পাওয়া যায়— ব্যতিক্রম হয়ত বা সরকারী কর্মকর্তারা।

মোফতাসা একজন মিশরীয় ডাক্তার। সে মারিয়ানের মতোই উত্তেজিত। সে দুটি পোস্ট লিখেছে, তার মধ্যে একটিতে সে জিজ্ঞেস করেছে, সত্যিই কি লোকেরা ভাবে যে শুকর মেরে ফেললে শোয়াইন ফ্লু নামক রোগটির এয়ারপোর্ট দিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যাবে?

শোয়াইন ফ্লু যদি মিশরে প্রবেশ করে তাহলে তা সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করবে, শুকর থেকে নয়। এর ক্ষতিপুরণ হিসেবে কৃষকদের শুকরের খামারের ভয়ানক পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য টাকাটা দেওয়া উচিত। স্থানীয় একটা প্রজাতি (শুকরকে) পুরোপুরি ধ্বংসের জন্য টাকা খরচ করা উচিত নয়।

টুইটারের মাধ্যমে আলা উত্তর দিচ্ছে সে বিশ্বাস করে এই সিদ্ধান্তের পিছনে দল বা কোন বিশেষ মতের অনুসারীদের উদ্দীপনা কাজ করেছে।

বেন্ট মাসরিয়া একজন মহিলা ব্লগার লিখছেন, তিনি স্বীকার করেন তিনি শুকরদের ঘৃণা করেন। তা সত্বেও তিনি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।

انا مش مضطرة أوضح اني مسلمة وعارفة ان اكل الخنازير حرام، بس كمان عارفة ان قتل/صيد الحيوانات
من غير سبب حرام. والخنزير رغم اني مش بحبه “عشان شكله وحش”، ومش بحب ابص له حتى، لكن كراهيتي الطفولية دي ليه ماينفعش تعميني عن ادراك حقهم في الحياة.. طول ما هم مش مصابين ولا نيلة

আমি যে মুসলিম আমি মনে করি না সেটা আলাদা ভাবে বোঝানোর দরকার আছে। মুসলিমরা জানে শুকরের মাংস তাদের জন্য হারাম (নিষিদ্ধ)। কিন্তু আমি এটাও জানি কোন কারন ছাড়া হত্যাও হারাম। আমি শুকর পছন্দ করি না কারন তারা দেখতে কুৎসিত। আমরা ছেলেমানুষি ঘৃণা আমাকে অবশ্য তাদের প্রতি অন্ধ করেনি। আমি বুঝতে পারি যতক্ষন না তারা শোয়াইন ফ্লু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে ততক্ষণ তাদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

মোফতাসার সাথে একমত হয়ে বেন্ট মাসরায়া তার ভয়ের কারনটি তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন যে ফ্লু হয়তো বা সীমান্ত দিয়ে মিশরে আঘাত হানতে পারে । বিশেষ করে ইজরায়েলে দুজন আক্রান্ত হবার ঘটনা আবিস্কার হবার পর এই ফ্লু যে কোন সময় মিশরে প্রবেশ করতে পারে বিশেষ করে ইজরায়েলে দুজন ব্যাক্তির এই রোগে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়ার পর:

اسرائيل اللي هي جارتنا لزم عندها حالتين اصابة، ومعروف طبعا ان المواطنين الاسرائيليين بيقدروا يدخلوا سينا من غير تأشيرات -بموجب معاهدة السلام- يا ترى هنعمل ايه وهنواجه موقف العدوى ازاي.. وخصوصا ان انفلونزا الخنازير بتتنقل من انسان لإنسان

দেশটি সারাসরি আমাদের প্রতিবেশী এবং এটা তো সবার জানা যে ইজরায়েলি নাগরিকরা সিনাই অঞ্চলে বিনা পাসপোর্টে প্রবেশ করতে পারে। এটি সম্ভব হয়েছে মিশর এবং ইজরায়েলে মধ্যে শান্তি চুক্তির কারনে। কাজেই এখন আমি বিস্মিত যে আমরা শোয়াইন ফ্লুর ঘটনাকে কিভাবে মোকাবেলা করবো, যখন সেটি মানুষের মাধ্যমে ছাড়াবে।

আবদেল রাহমান আইয়াশ মোটেও বেন্ট মাসরায়ার মতের সাথে একমত নন। তিনি লেখিকার পোস্টে মন্তব্য করেছেন:

القرار و لو كان في ظاهره ان في ظلم للخنازير في مصر ، فاحنا عندنا ادارة الازمات .. لو حصل و الانفلونزا اتنقلت لمصر ، هتبقى مجزرة ، هيبقى وباء حقيقي .. انتي متخيلة معنى ان المرض يتنقل من انسان لانسان في بلد زي مصر سكانها كلهم متركزين في اقل من 4% من مساحتها .. متخيلة هيبقى الوباء عامل ازاي؟
[…].
و على فكرة ان اتمنعت تربية الدواجن في البيوت وقت انفلونزا الطيور ، و لو حصل ده للخرفان او لأي ماشية تانية .. الموضوع اعتقد هيبقى خلصان
الحكومة مش بتكره الخنازير يعني فعشان كده خدت القرار ده

এমনকি যদিও মিশরে এই সিদ্ধান্ত অবিচার বলে মনে হচ্ছে তারপরে বলতে হয় আমরা এক সমস্যা সংঙ্কুল বা বিপদজনক অবস্থায় রয়েছি। যদি ফ্লু মিশরে প্রবেশ করে তাহলে সারাদেশে তা ছড়িয়ে পড়বে যা হয়তো মানব মাহমারির সৃষ্টি করতে পারে। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন এই রোগ মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়ার ফলে মিশরের মতো দেশের কি অবস্থা হবে- যেখানে সকল নাগরিক অনেক কেন্দ্রভুতি বা কাছাকাছি বাস করে। তারা দেশটির চারশতাংশ এলাকার মধ্যে বাস করে? আপনি কি কল্পনা করতে পারেন তখন দেশটির কি অবস্থা হবে?
[….]
ওহ হ্যাঁ, বার্ড ফ্লুর সময় যদি বাড়ীতে মুরগীর খামার তৈরী করা নিষিদ্ধ করা হয় এবং যদি তা অন্য কোন গৃহপালিত পশু বা ভেড়ার ক্ষেত্রেও একই কাজ করা হয়, অমি মনে করি তাতে কোন সমস্যা নেই। সরকার এই ধরনের কাজ করার মানে এই নয় তারা শুকর ঘৃণা করে।
@Fustat asking why "Swine flu" has been named to H1N1 just after Egypt decided to kill all "swines" in the country.

@ফুসটাত জিজ্ঞেস করেছেন মিশর সরকার তার দেশের সকল শুকর হত্যার নির্দেশ দেবার পর কেন সোয়াইন ফ্লুকে এইচ১এন১ নাম দেওয়া হয়েছে।

ইজিপশিয়ান ওয়াচম্যান একজন ব্লগার এবং মানবাধিকার কর্মী। সরকার ৩০০,০০০ শুকর হত্যা করতে যাচ্ছে শুনে তিনি তার বিরুদ্ধে তিনি এক ভয়াবহ যুদ্ধের ষোষণা দিয়েছেন। তিনি তার বদলে অন্য সব গুরুত্বপুর্ন সর্তকতার কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মানুষ ব্যাক্তিগত পর্যায়ে অনুসরণ করবে। তার ফলে সে আক্রান্ত হবার হাত থেকে বাঁচবে ।

একইভাবে গাওয়েশ একটি পোস্ট করছেন। সেখানে তিনি শিরোনাম দিয়েছেন কুমারী শুকরীকে বাঁচাও। এখানে তিনি বেশ কিছু সুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন যে শুকরকে জীবত রাখলে কিভাবে তারা পরিবেশে ভারসাম্য বাজায় রাখে। এর সাথে তিনি উল্লেখ করেছেন ফ্লুর থেকে বাঁচার জন্য অন্য গুরুত্বপুর্ন পুর্ব -সর্তকতা ব্যবস্থার নেওয়া কথা। এর ফলে রোগটির বিরুদ্ধে এখন থেকে সর্তকতামুলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

অন্যদিকে জেইনোবিয়া যিনি কিনা শুকর হত্যার সমর্থন করেছেন, মিশরে শুকরের নোংরা অবস্থার কথা আলোচনা করছেন। মিশরের শুকর যে পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে তা নিয়ে তার উদ্বিগ্নতার কথা তিনি আলোচনা করছেন। এ ধরনের পরিবেশ বার্ড ফ্লু ছাড়ানোর অন্যতম কারন বলে তার কাছে মনে হয়েছে। যারা দাবী করে শুকর হত্যা কোন মত বা দলের মধ্যে বিভাজন তৈরী করবে তিনি তাদের এই মতেরও সমালোচনা করেছেন।

যত দ্রুত সম্ভব ওই সমস্ত নোংরা শুকর হত্যা করতে হবে। আমরা লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন জটিল করতে পারি না। এদের বাঁচিয়ে রাখার কোন ভালো কারন নেই। আপনাদের কেউ কল্পনা করতে পারবে না সেই সমস্ত শুকরের জীবন কেমন এবং তারা কোথায় বাস করে। তারা এখনও এইচ১এন১ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু এটা নিশ্চিত তারা যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে, তাতে অন্য রোগেও তারা আক্রান্ত হতে পারে।
{….}
এই সমস্ত শুকর ময়লা খেয়ে বড় হয় যাদের কোন চিকিৎসা দেওয়া হয় না। কেবল কৃষি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এখন তাদের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে!! দয়া করে আমাকে বলবেন না যে এটা কোন ধর্মীয় বিভাজন । এ যেন একটা সবচেয়ে অদ্ভুত আলোচনা। আমি এ ধরনের মন্তব্য শুনেছি। আমরা বছরের পর বছর ধরে এই সমস্ত শুকর যে মিশরের জন্য কতটা বিপদজনক তা জেনেছি কিন্তু, স্পষ্ট হয়েছি এইচ৫এন১ এর সময়!! আমি জানি না কেন, তিন বছর আগে যখন মুরগীর খামার ধ্বংস করে ফেলা হয় তখন কেউ কোন আপত্তি জানায়নি!!

ভদ্রমহিলা এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ধারনা করেন কিভাবে রোগটি ছড়াতে পারে। শুকর মালিকদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সচেতনার অভাব এবং ময়লা সংগ্রহের কারনেই এই রোগ ছাড়াবে।

এখন যদি শুকর এ রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তা শুকর পালক এবং তাদের সন্তানদের আক্রান্ত করবে, যা পালাক্রমে অন্য লোকদের কাছেও ছাড়াবে। যারা সরাসরি ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে, যারা সরাসরি মেশে, যার মধ্যে রয়েছে ময়লা সংগ্রাহক এবং ময়লা সংগ্রহকদের সাথে শত শত নাগরিকদের সারাসরি যোগাযোগ হয় বা তারা তাদের র্স্পশে আসে!!! আমরা একটি অনিয়ন্ত্রিত শিল্পের কথা আলোচনা করছি।

অন্যদিকে মোহাম্মদ হানি তার পাঠকদের একটি নতুন টুইটার একাউন্ট সমন্ধে জানাচ্ছে। এই একাউন্টে বিশ্ব জুড়ে সোয়াইন ফ্লুর বর্তমান কি অবস্থা তা জানা যাবে। হোসাম শুকরদের পক্ষে নয়, কিন্তু শুকর হত্যার বিপেক্ষ, তিনি যারা জীবিত রাখার পক্ষে তাদের সাথে ঐক্য স্থাপনা করেছেন এবং হত্যাকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

ছবি পের বির্য়কলুন্ড এর সৌজেন্যে, সরকার মিশরের সকল শুকর মারা সিদ্ধান্ত নেবার পর লোকজন এজবেত-এল- - নেকহাল নামক স্থানে জড়ো হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।

ছবি পের বির্য়কলুন্ড এর সৌজেন্যে, সরকার মিশরের সকল শুকর মারা সিদ্ধান্ত নেবার পর লোকজন এজবেত-এল- – নেকহাল নামক স্থানে জড়ো হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।

যে কেউ চাইলে বির্য়কলুন্ড- একসাথে তোলা ছবির সেট ফ্লিকারে দেখতে পারে, যেগুলো এজবেত-এল- – নেকহাল থেকে তোলা হয়েছে, সেখানে সরকারের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে শুকর খামারী এবং ময়লা সংগ্রহকরা প্রতিবাদ করছে। কারন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকল শূকর হত্যা করবে। তা না হলে শুকরের দ্বারা সৃষ্ট ফ্লু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং তার চিন্তাও; সরকার সকল শুকর মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত দেখুন তার ফলে মিশরীয় ফেসবুক গ্রুপ-এ সরকারের পক্ষে এবং বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের: শুকর ছাড়া মিশর এবং সকল মিশরীয় শুকরকে মেরে ফেল এবং আমরা একসাথে শুকরের হাত থেকে মুক্তি চাই

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .