নেপাল: প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড পদত্যাগ করেছেন

ছবি উইকিপিডায়ার সৌজন্যে

ছবি উইকিপিডায়ার সৌজন্যে

আজ (মঙ্গলবার, ৪মে ,২০০৯) স্থানীয় সময় ৩ টায় নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল (প্রচন্ড) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন। এতে ইতিমধ্যে নানাবিধ বিপদে থাকা দেশটি আরো সম্যসার দিকে এগিয়ে গেল। তার পদত্যাগের ঘোষণা তখনই আসে যখন রাষ্ট্রপতি রাম বরন যাদব সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হয়ে যাওয়া রুকমানগাদ কাতোয়ালকে সামরিক বাহিনীর প্রধান পদে আবার ফিরিয়ে আনেন।

প্রায় দশদিন (৪মে থেকে) আগে অভিযোগ ওঠে যে নেপালের জেনারেলরা সেনা প্রধানকে অপসারণের মাওবাদীদের পরিকল্পনা ঠেকাতে একটি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছেন।

হাফিংটন পোস্টে বিনাজ গুরুবাচারিয়া ঘটনার পেছনের কারন তুলে ধরেছেন:

“দাহাল প্রাক্তন মাওবাদী বিদ্রোহী নেতা। তিনি সামরিক বাহিনী প্রধান রুকমানগাদ কাতোয়ালকে রোববার বরখাস্ত করেন। প্রাক্তন বিদ্রোহীদের সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক বাহিনী প্রধান এক বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। প্রেসিডেন্ট রাম বরন যাদব, যিনি নেপালের সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেন, দাহালের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করেন এবং গভীর রাতে এক নোটিশের মাধ্যমে কাতোয়ালকে আবার কাজে ফিরে যেতে বলেন।

২০০৬ সালে মুলধারার রাজনীতিতে যোগদানের আগে নেপালে মাওবাদীরা সরকারের বিরুদ্ধে ১০ বছর ধরে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালায় এবং গতবছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিজয় অর্জন করে। গত বছরই হিমালয়ের এই দেশটি শতাব্দী প্রাচীন রাজতন্ত্র প্রথা বাতিল করার ঘোষণা করে। তবে এক শান্তিচুক্তি মোতাবেক প্রাক্তন অনেক মাওবাদী গেরিলাকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যারাকে থাকতে হয়, তারা সেখান থেকে বের হতে পারে না।

দাহাল প্রাক্তন গেরিলাদের এই সীমাবদ্ধতা দুর করতে চান এবং তাদের সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত করে দিতে চান, যা জাতি সংঘের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তির সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাতোয়াল এ সমস্ত প্রচেষ্টাকে বাঁধা দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে ক্রমাগত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আলাদা অবস্থান নিয়েছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মিলনের (নেপালী ভাষায়) ভিডিও এখানে দেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি তার পদত্যাগ-এর ঘোষণা দেন এবং অভিযোগ করেন রাষ্ট্রপতি বরখাস্ত করা সামরিক বাহিনী প্রধানকে পুনর্বহাল করে নিজে সাংবিধানিক অভ্যুর্থান ঘটিয়েছেন।

প্রচন্ড বলেন রাষ্ট্রপতির এই কাজ অসাংবিধানিক এবং তিনি অভিযোগ করেন বিদেশী শক্তি ও বিরোধী রাজনৈতিক দল মিলে নেপালের নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতিকে (যিনি প্রধান হলেও ক্ষমতাহীন) দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নীল’স নেপাল রাষ্ট্রপতির লেখা চিঠির মধ্যে উল্লেখিত সাংবিধানিক বিষয়কে ব্যাখা করছেন:

“এখানে একটি বিষয় পরিস্কার যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সামরিক বাহিনীকে যে কারনে বরখাস্ত করেছে তা মোটেও অসাংবিধানিক ছিল না। উল্টোদিকে এর মধ্যে মোটেও সাংবিধানিক কিছু নেই যে কেবল অনুষ্ঠানিক একজন রাষ্ট্রপতি-এর বিরুদ্ধে বীপরিত আদেশ দিচ্ছে। এই চিঠি আসলে একটা সামরিক অভ্যুত্থানের সমান। আমরা অপেক্ষায় আছি কি ভাবে মাওবাদীরা ঘটনার মোকাবেলা করে।

ইউনাইটেড উই ব্লগ এ মনে হচ্ছে প্রচন্ডর পদত্যাগের সিদ্ধান্তে পাঠকের দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে কথা রাখার জন্য প্রচন্ডের প্রশংসা করছে, কিন্তু অনেকে তার এই সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে মন্তব্য করছে।

আহিমসা মন্তব্য করছেন:

(রাজকীয়) সামরিক বাহিনী সব দখলে নিয়ে নিয়েছে! তারা পিএলএকে সামরিক বাহিনীর সাথে সংযুক্ত করতে দেয়নি। (রাজকীয়) সামরিক বাহিনী সাফল্যের সাথে নেপালের শান্তিচুক্তি অকার্যকর করতে সমর্থ হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে তারা চেষ্টা করবে দলটিকে ক্ষেপিয়ে তুলতে এবং অমুল পরিবর্তন ঘটাতে, যাতে জনগণ সামরিক শাসন জারীর পক্ষে চলে যায়। বিদায় গণপ্রজাতন্ত্রী নেপাল।”

নেপালীর দৃষ্টিভিঙ্গী আহিমসার থেকে অনেক আলাদা:

“যখন প্রধানমন্ত্রী এ রকম মাথা গরম করা এবং অর্থহীন সিদ্ধান্ত নেবার সাহস করছে তখন একজন সাধারন নেপালী তার কাছ থেকে আর কি আশা করতে পারে…. পদত্যাগ ছাড়া।”

নেপালী ভাষার ব্লগ মাইসানসার ও বর্তমানে নেপালে চলাতে থাকা রাজনৈতিক সংকট এর উপর লিখছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের উপর লেখা একটি পোস্টে দাবী করা হয়, এখন প্রধান বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউনাইটেড মার্ক্সিস্ট এন্ড লেলিনিস্ট) (ইউএমএল) নতুন সরকার বানানোর দৌড়ে এগিয়ে আছে। দলটির প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক মাধব কুমার নেপালের নেতৃত্বে তারা সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।

লাক্স, একজন নেতা, মাইসানসার এ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন জনগণের সুন্দর ভবিষ্যতের যে চাওয়া রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে তার সমাপ্তি ঘটছে।”

“আবার সেই পুরোন ঘটনা ঘটছে, যা আমরা বার বার নেপালের রাজনীতিতে ঘটে আসতে দেখছি। সাধারণ জনগণের নামে স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতার ক্ষুধা নিয়ে সমস্যা তৈরী করা। এটি একটি দু:খজনক ঘটনা, সেই পুরোন জনগণ, পুরোন ক্রীড়ানক হয়েই আছে এবং আন্দোলিত হচ্ছে বারবার, সেই পুরোন তথাকথিত দূনীর্তিবাজ রাজনীতিবিদ -এর হাতে, যারা ইতিমধ্যে সীদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে এবং তাদের আসল চেহারা অতীতে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে। নেপালের জনতা কখনই শিক্ষা নেয় না। যতদিন এই নেতারা জীবিত থাকবে আসলে নেপালের কোন পরিবর্তনই হবে না। জনতা তোমরা নিজেকে কারো হাতে ব্যবহার হতে দিও না। অজ্ঞতা থেকে বের হয়ে আসো এবং নিজের ভাগ্য নিজে গড়”।

পরবর্তীতে মাই রিপাবলিকা কাঠমুন্ড থেকে পাওয়া সর্বশেষ খবর প্রকাশ করছে। যে মাওবাদীরা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন করবে:

“মাওবাদীদের দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সভায় ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী) সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা একই সাথে সংসদে ও রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাবে যতক্ষন না রাষ্ট্রপতি রাম বরন তার অসাংবিধানিক চাল উঠিয়ে নেয়।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .