থাইল্যান্ড: প্রতিবাদকারীর বাধার মুখে আসিয়ান সম্মেলন পন্ড

হাজার হাজার লাল শার্ট পরা বিরোধী দলের অনুসারী ঝড়ের বেগে সম্মেলনের একটি প্রধান কক্ষে প্রবেশ করলো। ফলে সরকার বাধ্য হলো (এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য) আসিয়ান সম্মেলন বাতিল ঘোষণা করতে। দক্ষিণ পুর্ব-এশিয়া ও চায়না, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড-এর নেতারা আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এবারের সম্মিলন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল থাইল্যান্ডের রয়েল ক্লিফ হোটেল এবং পাতায়া রিসোর্টে বা অবকাশ যাপন কন্দ্রে।

বেশীর ভাগ রেড শার্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রার অনুগত। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী অভিশিত ভেজ্জাজিভার পদত্যাগ চায়। বর্তমান শাসকদের বৈধতা নিয়ে তারা প্রশ্ন করেছে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে কোর্টের আদেশে বর্তমান শাসকদল ক্ষমতা অর্জন করে। কোর্টের আদেশের মাধ্যমে থাকসিনের সহযোগীদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

আসিয়ান সম্মেলন বাতিল ঘোষনা বর্তমান সরকারের জন্য একটি বড় আঘাত। অনেকে ভাবছে এই ঘটনা অভিশিত সরকারের পতনের দিকে নিয়ে যাবে।

থানঙ্গ বিশ্বাস করে এই সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে অভিশিত-এর সরকারের যে ক্ষতি হলো তা আর পুরণ করা যাবে না। সে প্রশ্ন করেছে, কি কারনে পুলিশ প্রতিবাদকারীদের থামাতে ব্যর্থ হলো?

কিভাবে এটি সম্ভব হলো যে আমরা আসিয়ান প্লাস থ্রি সামিট অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি? সারা বিশ্বের লোকজন লন্ডনে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের মতোই আসিয়ান সম্মেলনের উপর নজর রাখতো। কিন্তু এই সম্মেলন ভেস্তে গেছে কারন থাইল্যান্ড এই অনুষ্ঠানে নেতাদের নিরাপত্তা প্রদান করতে ব্যর্থ হত।

পারসোনাল থাইল্যান্ড এই ঘটনার জন্য পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। পুলিশ রেড শার্টদের প্রতিরোধ করার কাজে নিয়োজিত ছিল।

কেন আমি রেড শার্টদের দোষারোপ করতে পারি না? কেবল কয়েকজন লাল জামা পরা প্রতিবাদকারীর প্রতিবাদের কারনে কেউ জরুরী আইন জারী করতে পারে না। সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে অবশ্যই প্রতিবাদকারীদের পাতায়ায় আসার আগেই থামিয়ে দিতে হতো। সেখানে গাড়ী থামিয়ে অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশী চালাতে হতো (গাড়ীর মধ্যে সেগুলো ছিল)। যদি কোন প্রতিবাদকারী লড়াই করতো, তাহলে তাকে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। পুলিশের, সেখান স্রেফ দাড়িয়ে থাকা উচিত হয়নি। পুলিশের কিছুই না করার কারন, তারা ভীত ছিল, যদি কেউ কিছু করে, তাহলে তাকে বদলি করে দেওয়া হবে তাদের মধ্যে এই ভয় কাজ করছিল।

যখন প্রতিবাদকারীরা তাদের এই দু:সাহসিক অভিযান এর কথা ঘোষণা করে, তখন আগামস গেকো টিভি দেখছিল,

আমি দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে ঘটা এই ঘটনার দৃশ্য সারাসরি দেখছিলাম। এই দৃশ্যে যা উঠে এসেছে তা হলো, রয়েল ক্লিফ বিচ রিসোর্টের একদল বিচ্ছিন্ন লোক, যাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা পালাচ্ছিল। তারা একটা নীচু বড় সিড়ি দিয়ে নীচের তলায় নামছিল। এক মিনিটের মধ্যে, শত শত রেড শার্ট প্রতিবাদকারী একটা লাল নদীর মতো ভেসে একই সিড়ির দিকে গেল। তারা উন্মত্তের মতো লবিতে ছড়িয়ে পড়লো, মুষ্টিবদ্ধ করে পতাকা দোলালো এবং তারপরে তাদের মনে হলো, এখন আমরা কি করতে পারি?

নিউ মান্দালায়ের নিকোলাস ফেরেলই প্রতিবাদকারীদের প্রতিবাদের কৌশলের মধ্যে একটা বিশেষত্ব দেখতে পাচ্ছেন।

প্রতিবাদের কৌশল হিসেবে এই ঝড় তোলা, পুর্ব এশিয়ার সম্মেলন কেন্দ্র দখল, অবশ্যই তা একইভাবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সপ্তাহব্যাপি সুবর্ণ ভুমি বিমানবন্দর দখল করে রাখার দু:সাহসের সাথে তুলনীয়। থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে উভয় ঘটনা দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে জনগণের সংখ্যা ও তাদের দৃঢ়তা নিরাপত্তা রক্ষীদের পিছু ঠেলে দেয়। পাতায়ার সম্মুখ সারির দৃশ্য দেখে মনে হবে পুলিশ সেখানে অনেক চেষ্টার পর রাস্তা থেকে সরে গেছে।

তিনি ব্যাংকক বিমান বন্দর দখলের উদাহরণ টেনেছেন, গতবছর ডিসেম্বরের এই বিমানবন্দর কয়েকবার বিভিন্ন প্রতিবাদকারী দখল করে নেয়। এইসব প্রতিবাদ ছিল হলুদ জামা বা ইয়োলো শার্টদের প্রতিবাদ। ইয়োল শার্ট থাকসিনের বিপক্ষে। যখন থাকসিন সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারন করা হয় তারপর থেকে ইয়োল শার্টদের প্রতিবাদ বন্ধ হলো। এরপর শুরু হলো রাস্তায় রেড শার্টের প্রতিবাদ। রেড শার্ট থাকসিনের সমর্থক । তারা লাল জামা পরে সংগঠিতভাবে রাস্তায় সমাবেশ করতে লাগলো।

থাইল্যান্ড জাঙ্কি, থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অবস্থার ক্রমবনতির কথা তুলে ধরে লিখছেন:

হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছি না। কয়েক ঘন্ট আগে শুনলাম পাতায়াতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসিয়ান সম্মেলন বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে, যা আরেকটি গভীর সংকট নির্দেশ করে। এখন এ ধরনের সংকটের মধ্যেই থাইল্যান্ডে নিজেকে আবিস্কার করছে।

আমি মনে করতে পারি না কখনও এ রকম উচ্চ পর্যায়ের কোন সম্মেলন কেবল প্রতিবাদের মুখে বাতিল হয়েছে। সম্মেলন হবার আগে ঝড়ের বেগে কেন্দ্রে প্রতিবাদকারীদের ঢুকে যাওয়া, এই প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। এটি সত্যিই বিস্ময়কর — যদিও তাদের উপর কঠোর নির্দেশ দেওয়া ছিল যেন তারা সংঘর্ষের দিকে না যায়। কিন্তু কেউ ভাবতে পারে না তারা অন্তত, তাদের কাজ ঠিকমতো পালন করতে পারবে না। থাইল্যান্ডে এখন এক অবিশ্বাস্য জগাখিচুরী অবস্থা চলছে

Red Shirts assemble at Victory Monument. Photo courtesy of Flickr user Y-Not

রেড শার্ট ভিক্টরি মনুমেন্ট-এ জমায়েত হয়েছে। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ওয়াই-নট এর সৌজন্যে

টুইটারের মাধ্যমে ব্যাংকক এবং পাতায়াতে বাস করা ব্যাক্তিদের থাইল্যান্ডে চলতে থাকা বর্তমান বিশৃংখলার উপর প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে ।

কুইকপেল: আজ পাতায়াতে হালকা ভিড় ছিল (বিকেলে রাস্তারও একই অবস্থা ছিল) এর ব্যতিক্রম ছিল সে সমস্ত এলাকা যেখানে প্রতিবন্ধক তৈরী করা হয়েছিল। রাস্তায় সমান্য কিছু পর্যটক ছিল, প্রায় কোন রাস্তায় কোন ব্যাংককবাসী ছিল না।
কুইকপেল:পাতায়া থেকে আমি কেবল ফিরলাম। সেখান থেকে ফিরে আমি নির্বাক হয়ে গেছি। সকাল থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত জনতা রয়েল কিফ হোটেলের সামনে দাড়িয়ে ছিল। নেতারা নৌকা অথবা হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছে ।

দিফ্রাঞ্জ: দক্ষিণ পাতায়ায় এখন সবকিছু স্বাভাবিক। কোন ট্যাক্সি নেই অথবা লাল —, কেবল ব্লাকশার্ট রাস্তায়। ব্যবসাও আগের মতো।

অভিচরতাক: আমি লাল শার্ট প্রতিবাদকারীদের উপর হতাশ। পুরো পরিকল্পনার পিছনে ছিল থাকসিন, সে আসলে এক বিষ্ঠার দলা।

লুক বিকেকে: #লাল শার্ট নিজেদের জয়ী ঘোষণা করছে? তারা পাতায়া ছেড়েছে এবং বিকেকেতে মাথা দিয়ে রেখেছে। তারা সে রকম উষ্ণ সর্ম্বধনা পায়নি ।

কেউরিয়াস: সম্মিলন অনুষ্ঠান বানচাল রোধে পাতায়ায় ঘন্টাখানিক আগে কার্ফিউ দেওয়া উচিত ছিল ।

কেইকোকানেওয়া: ভালো কাজ করেছ হে লাল শার্ট-এর দল। তোমরা গর্বিতভাবে থাইল্যান্ডকে চালাচ্ছ। আমি মুগ্ধ ।

***ডিক্সিচিক***: লাল শার্টধারীরা আসলে চালাক। তারা চায় জনগণ তাদের সাথে যোগ দিক। কিন্তু তারা পাতায়ায় এসে উন্মাদনা তৈরী করেছে যা আমাদের – পাতায়াবাসীদের উন্মাদ করেছে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .