জর্ডান: আর নয় সন্মান রক্ষার্থে হত্যা

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জর্ডানের ব্লগাররা আবার নতুন করে অনার কিলিং বা “সন্মান রক্ষার্থে” হত্যা বন্ধের আহবান জানায়। জর্ডানের এক আদালতে এক হত্যাকারী বাবা আর দুই সন্তানের স্বীকারোক্তির পর তারা এ আবেদন জানিয়েছে। আদালতে এই পিতা স্বীকার করে যে সে তার কন্যাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, এ কাজে তার দুই ছেলেও তাকে সাহায্য করেছে। মেয়েটি “পুরোমাত্রায় সেজেগুজে বাইরে গিয়েছিল”, এটাই ছিল নাকি তার অপরাধ।

জর্ডানের ব্লগস্ফিয়ারে এই ঘটনা প্রচন্ড এক ধাক্কা দেয়। অনেক মুলধারার সংবাদপত্র থেকে জানা যায়, এ বছরে এটি হলো এ রকম সাত নম্বার খুনের ঘটনা। এই ধরনের ঘটনায় পরিবারের সন্মান রক্ষার্থে মেয়েরা তার আত্মীয়র হাতে নির্মমভাবে খুন হয়। মেয়েদের এ ভাবে মেরে ফেলার কারন তাদের প্রতি সন্দেহ যে মেয়েটি “ব্যাভিচারমূলক” কোন কাজ (কারো সাথে মেলামেশা, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন) করেছে।

কিনজি প্রথম ব্লগার যিনি জর্ডানের পুরুষ ব্লগারদের এই বিষয়ে নিরবতা ভেঙ্গে ফেলার আহ্বান জানান

যখন গাজায় হত্যার ঘটনা ঘটে তখন সবাই ভালোভাবে জেগে ওঠে। শয়তান তোমাদের ভুমিতেই বাস করছে, তোমাদের নিজেদের আইনের দ্বারা সে স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে এবং জর্ডানিদের রক্ত রঞ্জিত হচ্ছে জর্ডানিদের হাতে। তোমরা কি তোমাদের মহিলা নাগরিকদের প্রতি যত্নবান হবে না, যেমন তোমরা কিনা ফিলিস্তিনের গাজায় বাস করা মহিলাদের জন্য হও।

আরব অবজারভার পত্রিকাটি এর উত্তরে একটি লেখা পোস্ট করেছে। সেখানে পত্রিকাটি লিখছে এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে তারা একটি উদ্যোগ নিয়েছে । সন্মানজনক হত্যার বিরুদ্ধে পত্রিকাটি এক ই-মেইল প্রচারনা চলাবে।

“আমাদের স্থানীয় প্রচার মাধ্যম তা ছাপানো সংবাদপত্র বা অনলাইন পত্রিকা যাই হোক না কেন, সবাই জর্দানের নাগরিকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব নিয়ে উঠে দাড়াক। এখনই সময়, তোমরা সকলে তোমাদের কন্ঠ তুলে ধর, এ ধরনের নির্বোধ আইন বাতিলের জন্য চেষ্টা কর। এটি আমাদের নিজেদের জন্য বিপদজনক। এই আইন আমাদের মা, কন্যা এবং স্ত্রীদের জন্য আতঙ্কস্বরুপ। আমরা তাদের অবশ্য মর্যাদা, সাম্য এবং নিরাপত্তার সাথে রাখবো। জর্দানের কোন নারী, তার পুরুষ আত্মীয়র বিচারে ভীত হবে না। কোন পুরুষ সন্মানের নামে হত্যা করে পার পেতে পারবে না “।

জর্দানের আইন সন্মান রক্ষার্থে হত্যাকে একটি চুক্তি হিসেবে দেখে। জর্দানের কোন নাগরিক তার স্ত্রী বা আত্মীয় যদি “ব্যাভিচারমূলক” কাজের সাথে যুক্ত হয় তবে তাকে হত্যা করে কিংবা পিটিয়ে আহত করে। বিষয়টিকে জর্দানের আইন ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা হিসেবে দেখে। জর্দানি আইনের ৩৪০ নাম্বার আর্টিকেল এবং ৯৮ পেনাল কোডের ধারা অনুসারে ঘাতক আত্মীয়রা অনেক কম শাস্তি ভোগ করে। জর্দানের সংসদে রক্ষণশীল উপজাতি এবং ইসলামপন্থী সদস্যরাই সংখ্যাগরিষ্ট। ২০০৩ সালে দুই বার এই আইনকে পাল্টে ফেলার বা সংশোধন করার চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে। এ বছর এ পর্যন্ত সন্মান রক্ষার্থে সাতটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে ।

অন্য ব্লগারদের সাথে মিলিত হয়ে কিউদার সন্মান রাক্ষার্থে হত্যা বন্ধের জন্য লিখছেন। তিনি লিখছেন, বিষয়টি যে ইসলামী আইন বা শিক্ষার সাথে জড়িত, এমন কোন প্রমাণ নেই।

অনেকে মনে করেন সন্মান রক্ষায় হত্যা ইসলামী শরীয়া আইনের সাথে জড়িত। পরিস্কারভাবে বলা যায়, এর কোন সত্যতা নেই। বাস্তবে ইসলাম প্রাপ্তবয়স্ক অবৈধ কোন কাজের ক্ষেত্রেও, কোন প্রমান ছাড়া মানুষের জীবন নেয় না… ইসলামে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে চারজন স্বাক্ষীর দরকার হয়, যারা ঘটনাটি চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করেছে … এ ক্ষেত্রে অপরাধী কোন অবিবাহিত (পুরুষ বা মহিলা)- হলো তাকে দোরারা বা লাঠি দিয়ে পেটানো বা চাবুক মেরে শাস্তি দেওয়া হয় (অথবা তার আধুনিক শাস্তি)।

তিনি তার সহযোগী ব্লগারদের নিয়ে এক প্রচারণা শুরুর কথা বলেন। “এই প্রচারণা এক অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে এবং এই ধরনের হত্যা যা অনেক বড় অসন্মানের কাজ তা থামানোর জন্য”। একে আইনের মাধ্যমেই বন্ধ করতে হবে।

সিরিয়ার ব্লগোস্ফিয়ারও একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্লগার বামবাম এর মতে, জর্দান ও সিরিয়ার ব্লগারদের মধ্যে সামান্যই যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এই প্রচারণা সিরিয়ার ব্লগারদের সমর্থন লাভ করছে। এটি জানা যাচ্ছে আবু ফারেস রাজানের লেখায়।

সবশেষে আমরা কেজে এর কথায় আসি। কেজে গল্প লেখেন। তিনি একটি কাহিনী লিখেছেন, কেন আমি আমার বোনকে হত্যা করলাম?

বাম বাম বলছে এখন সময়, কঠিন সব প্রশ্ন করার:

“সন্মানরক্ষার্থে অপরাধ কি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নাকি অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টি যা তাদের এই অপরাধের দিকে তাদের নিয়ে যায়? কতদিন পর পর এ ধরনের ঘটনা ঘটে? যদি আমি ব্যাভিচারমুলক ঘটনার পরিমান কমিয়ে আনি তাহলে কি আমি সন্মান রক্ষার জন্য যে অপরাধ সংগঠিত হয় তার পরিমান কমিয়ে আনতে পারবো? কেন লোকজন সন্মান রক্ষার মতো অপরাধ করে ? এর কারন কি? ধর্ম, নাকি সামাজিক সন্মান রক্ষা, অথবা অন্য কোন কারন”?

একজন ব্লগার হিসেবে সে এইসব বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। অন্য অরেকটি ঘটনায় জানা গেছে যে এক ১৯ বছর বয়স্ক ভাই তার ২১ বছরের বোনকে আঘাতের মাধ্যমে হত্যা করে। মেয়েটি এর আগে গর্ভণরের নিরাপত্তায় ছিল। যখনই তাকে গর্ভণরের নিরাপত্তা থেকে মুক্ত করা হয়, তখনই তাকে তার ভাই হত্যা করে। ছেলেটি খুনের কথা স্বীকার করেছে। সে খুন করেছে কারন তার বোন, প্রায়শ:ই বাড়ী থেকে বের হয়ে কোন আজানা স্থানে চলে যেত ।

ব্লগার কিনজি তার শাস্তির উপর মন্তব্য করেছে যে, “ছয়মাস হাতে বেত্রাঘাত করার চেয়ে এই শাস্তি আইনের উন্নতি”। এই ছেলেটিকে সাড়ে সাত বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। এই ব্লগার আরো জানান যে ২০০৭ সালে যখন এই ঘটনা ঘটে তখন ব্লগার নাসিম তারাওনাহ এই হত্যাকান্ড সমন্ধে লিখেছিলেন। সে সময় নাসিম লেখেন হত্যাকান্ডের শিকার মেয়েটি আরো অনেক ঘটনার মতো, কোন ধরনের যৌনকান্ডের সাথে জড়িত ছিল না ।

এই টেলিভিশনের রিপোর্ট অনুসারে ধারনা করা হয় জর্ডানে গড়ে প্রতিবছর ১৮টি থেকে ২০টি সন্মান রক্ষার্থে হত্যাকান্ড ঘটে থাকে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .