ভারতের নির্বাচনে তারকাদের প্রভাব


বলিউডের সুপার স্টার সালমান খান (মাঝে), কংগ্রেস দলের প্রার্থী মিলিন্দ দেওরার পক্ষে মুম্বাইএর একটা সমাবেশে প্রচারণা করছেন। ছবি আল জাজিরা ইংলিশের সৌজন্যে

ভারতে চলচিত্র শিল্পী আর চলচিত্র নির্মাতারা অনেক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন আর এই জিনিষটাই নাটকীয়ভাবে ড্যানি বয়েল তার স্লামডগ মিলিওনেয়ার চলচিত্র তুলে ধরেছিলেন (সূত্রঃ টয়লেটের দৃশ্য)। মজার ব্যাপার হলো ভারতের রাজনীতিতে বিনোদনের এই শিল্পের (বিশেষ করে বলিউড বা মুম্বাই এ অবস্থিত হিন্দি চলচিত্র শিল্প) সম্পৃক্ততা এতকাল বেশ কম ছিল। মাত্র কয়েকজন অভিনেতা আর চলচ্চিত্র নির্মাতাকে বিগত নির্বাচনে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল শুধু দক্ষিণের রাজ্য তামিল নাড়ু, যেটা পৃথিবীর প্রথম রাজ্য যারা সফলভাবে সক্ষম হয়েছে ১৯৪০ এর দশক থেকে তামিল চলচিত্র শিল্পকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যবহার করতে। ১৯৬০ সালের শেষের দিকে রাজনীতিবিদ আর তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের মধ্যেকার বন্ধন ভালো লাভ এনে দিয়েছিল দ্রাভিড়া মুন্নেত্রা কাজাগাম ( ডিএমকে) পার্টির জন্য এবং ফলে রাজ্যে প্রথম কংগ্রেস পার্টি ব্যাতিরেকে সরকার গঠিত হয়। তারপর থেকে তামিল নাড়ুতে ডিএমকের বিভিন্ন গোত্র ক্ষমতায় আছে। ১৯৮০ সালের মধ্যে রাজণীতিতে তারকাদের প্রভাব প্রায় পোক্ত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলভাবে প্রতিযোগিতা করে সরকার গঠন করেছে (যেমন এনটিআর আর তার তেলেগু দেসাম দল অন্ধ্র প্রদেশে) বা ভারতীয় সংসদে নির্বাচিত/ প্রার্থী হয়েছেন।

২০০৯ সালে দেখা যাচ্ছে যে নির্বাচনী প্রচারনায় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রেখেছে মুম্বাই এ অবস্থিত বলিউডের তারকারা (বা মূল হিন্দী চলচ্চিত্র শিল্প) আর তামিল ও তেলেগু চলচ্চিত্র শিল্প। তেলেগু অভিনেতা চিরঞ্জীবি অন্ধ্র প্রদেশে নতুন একটা রাজনৈতিক দল শুরু করেছেন, আর বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন ১৯৯৩ এর মুম্বাই বিষ্ফোরণের ক্রিমিনাল রেকর্ডের জন্য। তামিল নাড়ুতে ভূতপূর্ব অভিনেত্রী আর মূখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা আবার অংশগ্রহন করছেন আগের নির্বাচনে হারার পরে। কিন্তু বলিউডের তারকাদের সম্পৃক্ততা মানুষকে প্রভাবিত করেছে।

বলিউড অভিনেতা আর ব্লগার অমিতাভ বচ্চন ভারতের নির্বাচনের ব্যাপারে তার চিন্তার এক ঝলক দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন:

“নির্বাচন আমাদের উপরে এসে পড়েছে। বিশ্বের সব থেকে বড় আর সমৃদ্ধ গণতন্ত্রিক নির্বাচন। টিভিতে অন্য কিছু নেই শুধু নির্বাচন চিত্র আমাদের সামনে উন্মুক্ত করা ছাড়া। জনমত যাচাই আর ব্যাখ্যা চারিদিকে – কে কোথা থেকে জিতবে আর কে কাকে কি আর কেন বলেছে। মিডিয়ার যেসব প্রশ্ন আমাদের কাছে আসছে তাও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্নে ভরা। বন্ধু শত্রু আর শত্রু বন্ধু হয়েছে। সব দল খেলা আর ছলচাতুরীর ব্যবহার করছে ক্ষমতায় আসার জন্য। নির্বাচনে জিতে পরের ৫ বছরের জন্য সরকারে থাকা মূল লক্ষ্য। রাজনীতি তাদের জন্য কাম-উদ্দীপক, মহৌষধ, যা তাদেরকে বাধ্য করে কাজ করতে।”

বচ্চনের স্ত্রী জয়া বচ্চন রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় আছেন বেশ কয়েক বছর ধরে।

কি কারন হতে পারে যা বলিউড শিল্পীদের উস্কিয়েছে তাদের আরামের বলয় ছেড়ে ভারতের নির্বাচনের প্রচারণে নামতে? ইন্ডিয়া ইলেকশনস ২০০৯ এর গৌরব শুক্লা এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো বের করতে পেরেছেন। তিনি লিখেছেন:

“প্রসিদ্ধ ব্যক্তি যারা রাজনীতি থেকে একহাত দূরে থাকতেন তারা এবার আশ্চর্যজনকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ভোট দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে। শিল্পের বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে গত বছর নভেম্বরে মুম্বাইএ যে সন্ত্রাসী হামলা হয় তা এই পরিবর্তনের কারন হতে পারে… অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, জন আব্রাহাম, কামাল হাসান, রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা, অনুরাগ কাশ্যাপ, শ্রিয়া শারান, শ্রুতি হাসান আর সুস্মিতা সেন অনেকের সাথে আছেন যারা এই দলে যোগ দিয়েছেন।”

বলিউড অভিনেতা আমির খান ডেমোক্রাটিক রিফর্ম এসোশিয়েশনের জন্য একটি ভোটার জাগ্রত করার প্রচারণা শুরু করতে সাহায্য করেন যার মূল বক্তব্য ছিল: ”সত্যকে নির্বাচিত করুন, ভালোকে নির্বাচিত করুন”। নিজে ভোটার জাগ্রত করার প্রচারণার ছাড়াও, খান আর এক ধাপ এগিয়ে ভিডিও আর অডিওগুলো প্রযোজনাও করেছেন। আমিরখান ব্লগ লিখেছে:

“এই অভিনেতার প্রযোজনা সংস্থা ‘আমির খান প্রডাকশনস’ থেকে বিজ্ঞাপনটি তৈরি করা হয়েছে বিনামূল্যে। বলিউডের ‘এ’ লিস্টের কলাকুশলীর সমষ্টি এই প্রচারণা তৈরি করেছে। ক্রিয়েটিভ প্রধান হচ্ছে ম্যাকেইন এরিকশনের প্রসুন জোশি, রাকেশ মেহেরা পরিচালক, আভিনাশ গোয়ারিকার স্থির চিত্রগ্রাহক, লোডস্টার মিডিয়ার শশি সিনহা প্রচারণার মিডিয়া প্লানার। সবাই প্রচারণার জন্য বিনামূল্যে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপনটির প্রচারনা হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, তামিল, তেলেগু, কান্নাডা, মালায়ালাম, বাংলা, আসামি আর উরিয়া ভাষাতে প্রচারিত হচ্ছে যাতে সবার কাছে পৌঁছাতে পারে।

আমির খান যিনি একজন ব্লগারও ভারতীয় ভোটারদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তারা যেন জেনে শুনে ভোট দেন। তার ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন:

সকল ভারতীয়কে বলছি, ভোট দেবেন মনে করে, আর জেনে পছন্দ করবেন। মানে, আপনার এলাকার সব প্রাথী সম্পর্কে জেনে সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে ভোট দেবেন।

খান মন্টানাতে ছুটি কাটাচ্ছেন, কিন্তু মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে এপ্রিলের ৩০ তারিখে মুম্বাইএ ফিরে এসে ভোট দেবেন, যেদিন ভারতের বানিজ্যিক আর মনোরঞ্জনের শহরটিতে ভোট চলবে।

খান ছাড়াও, বলিউডের অনেক অভিনেতা আর নির্মাতা তাদের সময় দিয়েছেন বিভিন্ন নির্বাচন প্রচারণা আর সচেতনতা অনুষ্ঠানের জন্য। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হয়তবা ‘জাগো রে’ নামে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে (যার মানে জেগে ওঠা) তারকাদের সম্পৃক্ততা।এই এনজিও জোরালো বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত ভিডিও ক্লিপ তৈরি করেছে এটার মতো যেখানে বলিউড অভিনেত্রী সোনাম কাপুর দেখিয়েছেন যে একজন ভারতীয়র গড় বয়স ২৩ বছর, আর ফেডারেল সরকারে একজন কেবিনেট মন্ত্রীর গড় বয়স ৬২ বছর।

অথবা বলিউডের চিত্র নির্মাতা রাকেশ ওম প্রকাশের এই ভিডিও ক্লিপ দেখেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে রাজস্থান রাজ্যে একজন রাজনীতিবিদ একটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন:

এই পোস্টটি ভারতের নির্বাচন (২০০৯) নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস বিশেষ কাভারেজ পাতার একটি অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .