আমেরিকা: জেল থেকে ব্লগিং

ভূতপূর্ব কয়েদী স্যাম স্ট্যানফিল্ড ইজিন আর্টিকেলস জেলের জীবনের সাথে অভ্যস্ত হওয়ার কিছু উপায় জানিয়েছেন যেমন বই পড়া, কার্ড খেলা বা নতুন কোন কাজ শেখা। তবে এখন আমেরিকা জুড়ে যেসব পূর্ণবয়স্ক কয়েদী আছে তাদের ১০০ জন মধ্যে ১ জন ব্লগিং করেও এখন সময় কাটাতে পারবেন – অন্তত বাইরে কম্পিউটার আছে এমন একজনের মাধ্যমে।

জেল থেকে ব্লগিং ক্রমেই প্রচলিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।

শন এটউড

শন এটউড

ভূতপূর্ব কয়েদী শন এটউড এখন জনস জেল জার্নাল নামে একটি ব্লগ চালাচ্ছেন যেখানে তিনি জেলে থাকা আমেরিকানদের চিঠি পোস্ট করেন।

গত বছর শেষের দিকে, তিনি একটি চিঠি পান ‘যাবজ্জীবন’ কারাদন্ড প্রাপ্ত রেনের কাছ থেকে। তরুণী বয়স থেকে তিনি আরিজোনার একটা জেলে ৬০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। রেনে লিখেছেন যে তিনি কাজ করেন আর স্কুলে যান, আর অন্যান্য জেলের ঘটনাও ব্যাখ্যা করেন।

“আপনি জিজ্ঞাসা করেছেন আমি চৌমিন (খাবার) এর ব্যাপারে কি ভাবি। এটা আমাকে হাঁসিয়েছে। আমি রান্না ঘরে খেতে পারিনা। আমি দেখেছি তারা সুপ থেকে তেলাপোকা বের করে ফেলে দিয়ে তাই আবার পরিবেশন করছে। আমি দেখেছি ট্রেগুলো উঠানে পড়ে থাকে আর পায়রারা তা থেকে খায়। কাঁচা মুরগি খোলা পড়ে আছে। আমি এতে মুষড়ে পরি।”

শ্যানন পার্ক

শ্যানন পার্ক

আরিজোনা থেকে একজন লেখক ও মানবাধিকার কর্মী শ্যানোন পার্ক তার পার্সিভিয়ারিং প্রিজন পেজেস ব্লগে লিখেছেন যে আরিজোনার জেলে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব।

“আরিজোনার সাংসদ আর কর প্রদানকারীদের দেয়া সাধারণ বিশ্বাস আর তথ্যের বৈপরীত্যে এডিওসিতে সিও২ পদের কমতি আছে। এত কম যে একটা ইউনিটকে চালানোর মতো সংখ্যক প্রহরী রাখতে অন্য ইউনিট থেকে প্রহরী আনতে হয়। আর সাংসদরা বর্তমানে কাজ করছেন এডিওসির সিও২ এর সংখ্যা কমিয়ে ৬১৪ করাতে। বেশী ভীড়ের মধ্যে কর্মীর সংখ্যা কম থাকা ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে এমন জায়গায় যেখানে মাদক, হতাশা, ক্ষুদা ও হিংস্রতা বিদ্যমান আর আসক্তরা বিশ্বাস করে যে তাদের হারানোর কিছু নেই।”

পার্ক অন্য কিছু সেলের সদস্যদের কাজের বর্ণনা করেছেন যার মধ্যে হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকের ব্যবহার আছে। তিনি বলেছেন কর্মীর অভাবে কয়েদীদের উপর নজর রাখা ও দেখাশোনা ঠিকমত হচ্ছে না।

ফ্রেন্ডস অফ প্রিজনার্স ব্লগে সাম্প্রতিক একটা পোস্ট পাঠকদের কাছে আবেদন করেছে চারজন মানসিকভাবে অসুস্থ বন্দীর সাথে পেন ফ্রেন্ড (চিঠির মাধ্যমে বন্ধু) হওয়ার। এই চারজনের একজন উইস্কন্সিনের জেমস স্মাইশার যিনি লিখেছেন তাকে আলাদা করে রাখা হয়েছে:

“যারা খেয়াল করেন, ভালোবাসেন আর অন্যকে বোঝেন তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমার বর্তমান অবস্থার কারনে আমি এই মুহুর্তে অনেক চাপে আছি। সপ্তাহে তিনদিন ২৪ ঘন্টা আর সপ্তাহে ৪ দিন ২৩ ঘন্টা একা থাকি আমি। আমার কোন পারিবারিক অবলম্বন, মানসিক অবলম্বন, বন্ধুত্বের অবলম্বন ইত্যাদি নেই। অনেক লোকের মতো আমি ভুল করেছি আর তার জন্য আমি আর আমার বাচ্চারা ভুগেছি আর আমি আসলে জানিনা কি করতে হবে। শয়তান সজাগভাবে আমার জীবনের সব কিছু ধ্বংস করছে।এর মধ্যে আমার ভালো মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টা, আমার পিঠ আসলেই দেয়ালে ঠেকে গেছে আর আমি মানসিক, মনস্তাত্বিক আর শারীরিকভাবে কষ্ট পাচ্ছি।”

জেলের ভেতরেও কার্যক্রম চলছে শাক৭ নামে একটা দল দ্বারা, যাদেরকে জেলে দেওয়া হয়েছে কুখ্যাত পশু পরীক্ষার ল্যাব, হান্টিংডন লাইফ সাইন্সেস বন্ধের প্রচারণা করার জন্য।

দলের এক সদস্য, জশ হার্পারের নিজ নামে একটা ব্লগ আছে। তার সাম্প্রতিক পোস্টে তিনি লিখেছেন যে তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, আর অস্বীকার করেছেন জেলকে তার বাড়ী হিসাবে মেনে নিতে।

“আজ পর্যন্ত দেশ আমার জীবন থেকে দুই বছর চুরি করেছে। ২০০৬ এর ১৬ই নভেম্বর আমি ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারে এসেছিলাম। একটা পশুর ল্যাব বন্ধের বিতর্কিত পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রচারণা করায় আমাকে উলঙ করে একটা জাম্পসুট দেয়া হয় আর একটা সেলে ফেলে দেয়া হয়।

প্রথম যেসব বন্দীর সাথে আমার দেখা হয় তারা কিছু পরামর্শ দেয়- ভুলে যেতে চেষ্টা করো যে তুমি এখানে। সময়ের কথা চিন্তা করবে না। খুব চেষ্টা কর বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে চিন্তা না করতে। কি ভয়ঙ্কর পরামর্শ! যদিও আমার জীবন কঠিন হতে পারে, আমি আশ্বস্ত যে আমি আমার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থাতেও ফুঁসছি। আমি কখনই একজন গৃহপালিত লোক হতে চাইনা যে ক্রমে গরাদ আর কাটাতার দেখা বন্ধ করে এই জায়গাকে নিজের বাড়ি ভাবতে শুরু করে। আমি সমস্ত অনুভূতি দিয়ে জেলকে ঘৃণা করি। এই ঘৃণা আমাকে জানায় যে আমি এখনো পাগল হইনি।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .