ইরানী ব্লগারদের খোঁজে একজন ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক

রাউল জাস্ত লোরেস একজন ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক আর ফোলহা দো সাও পাওলোর বেইজিং ব্যুরোর প্রধান। তিনি সম্প্রতি তেহরানে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি দেখা করেছেন আর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেশ কয়েকজন ইরানী ব্লগার আর সুধী সমাজের ব্যক্তিত্বের যেমন নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্ত শিরিন এবাদি।

কেন ব্রাজিলিয়ান সংবাদপত্রের বেইজিংএর ব্যুরো প্রধান ইরানী ব্লগারদের ব্যাপারে আগ্রহী?

আসলে আমি এশিয়া দেখি, কিন্তু মধ্য প্রাচ্য না। ইজরায়েলের নির্বাচনের কারনে একজন সহকর্মী ওখানে ছিল আর আমার সংবাদপত্র চাচ্ছিল তেহরানে ইসলামী বিপ্লবের ৩০তম বাষির্কী ধারণ করার জন্য আর একজনকে যেতে। এটা দারুন একটা সুযোগ ছিল যা আমি সাথে সাথে গ্রহণ করি।

যে কোন দেশে, ব্লগাররা আপনাকে সজীব ধারনা দেবে যে সেখানে তরুণরা কি চিন্তা করছে- আর ইরানে, যেখানে জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগকে তরুণ ধরা যায়, ব্লগোস্ফিয়ার অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

আপনি ইরানে বেশ কয়েকজন ব্লগারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাদের সামাজিক/রাজনৈতিক পটভূমি কি? তাদের চিন্তা, আশা আর উদ্যোগগুলো কি?

তেহরানে বেশীরভাগ মধ্যবিত্ত। দুভাগ্যবশত: আমি গ্রামের দিকে যেতে পারিনি যদিও চ্যাটের মাধ্যমে আমি অন্য শহরের দুই একজন ব্লগারের সাথে কথা বলেছি। তবে তারা শহরের, মধ্যবিত্ত আর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে যেখানে ইন্টারনেট তাদের স্বাধীনতার এলাকা, বা অন্তত অন্য মাধ্যমের চেয়ে বেশী স্বাধীনতা দেয়। আমি একজন কট্টর ব্লগারেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছি। এটা দেখার মতো ছিল যে তাদের ধর্মীয় গোঁড়ারাও একই প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে।

খুব ভালো হতো যদি আমি অন্যান্য দলের কাছ থেকে ব্লগারদের সম্বন্ধে জানতে পারতাম। আমি যা দেখেছি তা একটা ছোট অংশ। বেশীরভাগকে দেখলে অন্য যে কোন জায়গার মতো তরুণ মনে হয়: নীতিবান, বিভিন্ন উদ্যোগে ভরা, ওয়েব-আসক্ত, স্বপ্নবিলাসী। কিন্তু ইরানে এরা আরো বেশী রাজনীতি ঘেষা আর বিশ্বের সংবাদের ব্যাপারে আগ্রহী। তারা তাদের নিজেদের পথ তৈরি করেছে এতোগুলো এম্বার্গো (নিষেধাজ্ঞা) আর স্যাঙ্কশনের (বাধা) পরে একাকীত্ম থেকে বের হওয়ার।

ইরানী সমাজে নাগরিক মিডিয়ার প্রভাব আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

প্রভাব খুব বড়। যে দেশে সব মিডিয়া ব্লগের মালিক, বা অন্তত কঠোরভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্লগ খুব গুরুত্বপূর্ণ অন্য মাধ্যম হতে পারে সংবাদ বিতরণ, বিভিন্ন উৎসকে তুলে ধরা, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী আর সমালোচনাকে প্রকাশ করার জন্য। অনেক ব্লগ বেশী জোর দেয় মজা বা কৌতুকের এর উপরে রাজনৈতিক বা বুদ্ধিভিত্তিক ব্যাপার বাদ দিয়ে, কিন্তু এটা একই রকম সব জায়গায়।

যে ইরানের চিত্র আপনার মনে ছিল তার সাথে যে ইরান আপনি আবিষ্কার করেছেন তার মিল কতো?

বাতাসে যে উদ্বেগ ছড়িয়ে ছিল তা আমি যেমন চিন্তা করেছি তার সাথে অনেক মিল। এতজন মহিলাকে লম্বা, কালো চাদরে মোড়া অবস্থায় দেখা… প্রকৃতি কতো রঙ্গে ভরপুর, তাই নয় কি? এই ধারণা যে কাউকে জেলে দেয়া যায় খুব স্বাভাবিক কিছু একটা করার জন্য যা বিশ্বে অন্য সবাই করছে। তাছাড়া সমাজটা খুব বেশী রক্ষণশীল, যৌনবৈষম্য আর পুরুষ ও নারীর মধ্যে অধিকারের বিভেদ খুব বেশী আর ধর্মীয় আইনের অনেক বাইরে তা যায়, এমনকি তথাকথিত আধুনিক ও মুক্তমনারাও অবশ্যই রক্ষণশীল।

অন্যদিকে, ইরানের তরুণরা যতোদূর সম্ভব ভালো থাকার চেষ্টা করছে, তাই কোনভাবে তারা হয়তো অনেক আইন ভাংছে, তারা তাদের স্থানের জন্য যুদ্ধ করছে এতো বাধা সত্ত্বেও। এক কথায় অন্য দেশের তরুণদের তুলনায় এরা অনেক কম সুবিধা ভোগ করে। অন্যরা যেসনব জিনিষ স্বাভাবিকভাবেই পায় এদেরকে তার জন্য লড়তে হয়।

কিভাবে আপনি তুলনা করেন ইরানী ব্লগস্ফিয়ারকে ব্রাজিলিয়ান আর/বা চাইনিজগুলোর সাথে?

ব্রাজিলের থেকে এদের বড় রাজনৈতিক ভূমিকা আছে, কারন ইরানে আপনাদের অতো স্পষ্টভাষী লোক নেই সূধী সমাজে যা আমার দেশে আছে (মুক্ত প্রেস, শক্তিশালী এনজিও, অনেক রাজনৈতিক দল ইত্যাদি)। ইরানী ব্লগ কাজ করতে পারে ভালো মতামতের পোল, বা থার্মোমিটার হিসাবে যে শহুরে ইরানের একটা ভালো অংশ কি ভাবছে তা হিসেবে। এইভাবে তারা চীনা ব্লগস্ফিয়ার এর কাছাকাছি, তারা অফিসিয়াল মিডিয়ার নিয়মকে মানে না, তারা সংবাদ ছড়ায় যা সরকার মনে করে তারা আটকাতে পারে। তারা অনেক বেশী প্রসারিত, সমাজের উপর থেকে নিচে পর্যন্ত। অবশ্যই দুই দেশের নেতারা আসলেই সজাগ আর খেয়াল করেন যে ব্লগে কি আলোচিত হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .