পাকিস্তান: সন্ত্রাসীরা আঘাত করেছে ক্রিকেটকে

আজ (৩রা মার্চ) সকালে ১২ জনের মত বন্দুকধারী লাহোরে শ্রীলংকার ক্রিকেটদলের উপর আক্রমণ করে যারা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাথে খেলার জন্যে স্টেডিয়ামে যাচ্ছিল। এই রক্তক্ষয়ী আক্রমণে পাঁচজন পুলিশ সহ মোট ৭ জন নিহত হয়েছে এবং আহতদের মধ্যে ছয়জন শ্রীলংকান খেলোয়াড়ও রয়েছেন। সন্ত্রাসীরা হাত বোমা, রকেট লঞ্চার, রাইফেল ইত্যাদি আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল। ভাগ্যক্রমে শ্রীলংকান কোন খেলোয়াড় নিহত হননি এবং (এখন) তারা নিজেদের দেশে ফেরার পথে আছে।

আমি যখন ঐ গুলির প্রচন্ড আওয়াজ শুনি তখন ছিলাম শ্রেণীকক্ষে। আমরা কৌতূহলী হয়ে উঠি এবং আসলে কি ঘটেছে সে বিষয়ে নানান জল্পনা কল্পনা শুরু করে দেই এবং আমাদের এক বন্ধু একটি কৌতুকও করে বসে। কিন্তু আমি ধারণা করছিলাম অবশ্যই কিছু একটা ঘটেছে এবং ভয়ংকর কিছু হয়েছে। মাত্র পাঁচ মিনিট পরে আমি এক বন্ধুর কাছ থেকে একটা এসএমএস পাই এবং আক্রমণের বিষয়টি বিষয়টি অবহিত হই।

আমাদের শিক্ষক সহ সকলেই বেশ তটস্থ হয়ে ওঠেন এবং তিনি আমাদের চলে যাওয়ার অনুমতি প্রদানে সদয় হন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়টি লিবার্টি চক, আক্রমণ স্থানের সন্নিকটে অবস্থিত। আমরা ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রাস্তায় জানজট এবং ভীতসন্ত্রস্থ অবস্থা প্রত্যক্ষ করছিলাম। এই আক্রমণে ব্যাপক প্রাণহানী হয়েছে এই রকম নানা গুজব চারদিক দিকে আসছিল, কেউ কেউ বলছিল শ্রীলংকানরাও তার মধ্যে রয়েছে।

আমি দ্রুত ইন্টারনেট ল্যাবে দৌড়ে যাই আসলে কি ঘটেছে সে সম্পর্কে টিভির সরাসরি খবর দেখার আশায়। সামা টিভি আক্রমণের ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচার করছিল এবং সন্ত্রাসী এবং পুলিশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ দেখে আমি খুবই ব্যথিত হই। শ্রীলংকানরা নিরাপদে আছে জেনে আমি ভার মুক্ত হই এবং স্থানীয় পুলিশদের প্রাণহানীর খবরে খুব কষ্ট পাই।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিস্তারিত শুনতে অনুগ্রহ করে চলে যান আমার নিজস্ব ব্লগ এ।

আলজাজিরা ইংরেজী ইউটিউবে আক্রমনের নিচের ভিডিও ফুটেজটি আপলোড করেছে:

নাঈম সিধু নিচের কথাগুলো বলে চমক দিয়েছেন:

মঙ্গলবার সকালে আমাদের সম্মানিত শ্রীলংকার ক্রিকেটাররা লাহোরে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যা পুরো জাতিকে লজ্জায় এবং কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে এবং আমরা অবিশ্বাসে স্তম্ভিত হয়ে গেছি। কলম্বো সরকারের অনুমোদনক্রমে শ্রীলংকা দল নিরাপত্তা ভীতি থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানে খেলতে রাজী হয়েছিল এবং তারা সাহসিকতার সাথে অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের উপদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। শ্রীলংকার এই আগমনের বিপক্ষে জোড়ালো কণ্ঠস্বর ছিল ভারতের। নিরাপত্তা জনিত দুর্বলতার কারনে সংঘটিত মঙ্গলবারের গোলাগুলি তাদের সেইসব বক্তব্য আরও স্বীকৃত হলো এবং আগামী অনেক বছরের জন্য পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দরজা বন্ধ হবার মত ফলাফল নিয়ে এসেছে। এই খেলাটির জন্যে এটি ইতিহাসে সবচেয়ে নেক্কারজনক এক ঘটনা।

ইয়াসির ইমরান বর্তমান সরকারকে জেগে ওঠার চেষ্টা করতে বলে বলেছেন:

یہ ایک انتہائی افسوس ناک واقع ہے، جو یقیننا پاکستانی کرکٹ کے لیے بہت خطرناک ثابت ہوسکتا ہے ، مگر حکومت وقت کی کچھ توجہ اس خطرے کو کم کر سکتی ہے، پاکستان پیپلز پارٹی کو اپنے مفادات سے کچھ ہٹ کر اس قوم کے لیے بھی کچھ وقت نکالنا چاہیے کیونکہ بھٹو کے بعد سےپیپلز پارٹی کا کوئی بھی دور حکومت پاکستان کے لیے اچھا ثابت نہں ہوا، پیپلز پارٹی کے تمام ادوار میں مہنگائی میں اضافہ ہوا کرپشن بڑھی
“এটা অবশ্যই একটি চরম হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা কিনা পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য শংকাজনক প্রমানিত হতে পারে। কিন্তু এই বিপদে বর্তমান সরকারের মনযোগ খবুই কম। পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে অবশ্যই তাদের নিজের সুবিধার চিন্তা হতে উর্ধ্বে ওঠা উচিৎ, কিছু সময় রাষ্ট্রের জন্য ব্যয় করা উচিৎ কারন ভূট্টোর নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনায় পিপলস পার্টির কোন সরকারই রাষ্ট্রের জন্য সুবিধাজনক প্রমাণিত হয়নি। তাদের সকল সরাকারের সময়ই মূল্যস্ফীতি এবং দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।”

পাকিস্তানি হাউজওয়াইভস ব্লগ হতাশা প্রকাশ করেছে:

আমাদের বসবাসের এই পৃথিবীতে কি হচ্ছে? এইসব উন্মত্ততার কি কোন শেষ নেই? সারাবিশ্বের অবস্থাই প্রায় এক রকম এবং বিশেষত পাকিস্তানে এটা দিনে দিনে চরমভাবে খারাপ হচ্ছে। এগুলো সেই সব পথ যেখানে আমরা হাঁটি, সেই সব রাস্তা যেখানে আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে গাড়ী চালাই কিন্তু কোনকিছুই একই রকম মনে হয়না। আমি মনে করি এই সন্ত্রাসী আক্রমন কিছু লোকের প্রাণ নিয়েছে কিন্তু ভীত সন্ত্রস্ত করেছে আমাদের শত শত, হাজার হাজার বিবেবকে। তারা আমাদের বিমুঢ় করে দেয়, বাঁচার ইচ্ছে নষ্ট করে ফেলে এবং আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় সুন্দর ভবিষ্যদের স্বপ্ন, এইসব ভয়াবহ সময়ে।

টিথ মায়েস্ট্রো বলে:

এটা সুনিশ্চিত যে এই মর্মান্তি ঘটনা পাকিস্তানে কিছুসময় ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাবার নির্দেশ করে, ভারতের সাথে দোষ চাপানোর খেলা ইতিমধ্যে ভীতিকর পরিস্তিতির সম্মুখীন। জিও টিভির কামরান খানের মত বিশ্লেষক এবং হামিদ গুল ইতিমধ্যে ভারতের দিকে আঙ্গুল নির্দেশও করে ফেলেছে। অবশ্যই খেয়াল করতে হবে যে এই আক্রমণ অনেকটাই মুম্বাই আক্রমনের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ কিন্তু যুক্তিপূর্ণভাবে বুঝতে হবে যে এটা খুব ভালভাবেই ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একটা বাক যুদ্ধের সূচণা করবে। আমাদের রাজনীতিবীদ, গোয়েন্দা বাহিনী, এবং মিডিয়া রক্ত পিপাসায় ছিল ভারতকে মুম্বাই ঘটনার জন্য একটা মোক্ষম জবাব ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগের এবং লাহোরের আজকের ঘটনা তাদের সেই সুযোগ এনে দিতে পারে।

ক্রিকেটইনফোতে কামরান আব্বাসী বলেন:

এই দুর্ঘটনার সবচেয়ে খারাপ ফল হলো যারা পাকিস্তানে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলা নিয়মিত অনুষ্ঠানের পক্ষে ওকালতি করেছে- আমি সহ- তারা ভুল প্রমানিত হয়েছে। কোন আন্তর্জাতিক দল পাকিস্তানে আসবেনা, এবং পাকিস্তানী ক্রিকেট বোর্ড এর স্বপ্রণোদিত হয়ে উচিৎ ভবিষ্যতের সকল খেলাগুলো নিরপেক্ষ স্থানে সংঘটনের ব্যবস্থা করা, আগামী বছরের জন্য কিংবা আরও বেশী সময়ের জন্য। পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে এটা সবচেয়ে কালো দিন এবং এটা সংঘটিত হয়েছে লাহোরের উল্লাসময় বসতি এলাকায়, যা কিনা একদা ছিল বাগান আর শান্তির এক মহান শহর।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .