লেবানন: মোবাইল ফোনের কল রেট কমানো হবে

সম্প্রতি লেবানন সরকার ঘোষণা দেয় যে মোবাইল ফোনের কল রেট কমানো হবে। লেবাননের ব্লগস্ফেয়ারের বাসিন্দারারা তাতে অবশ্য তেমন আশাব্যঞ্জক সাড়া দেয়নি।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জিবরান বাসিল মোবাইল অপারেটর ওরাসকম ও জঈন এর সাথে নতুন স্বল্পমেয়াদী চুক্তির বিষয় উন্মোচণ করেন। এই চুক্তির শুরু হবে এ বছর মার্চ মাসে, যদিও সরকার বারবার আশ্বাস দিচ্ছিল যে সরকার নিয়ন্ত্রিত নেটওয়ার্ক ব্যাক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেবে এবং তৃতীয় একটি মোবাইল অপারেটরকে লেবাননে ব্যবসা করার সুযোগ দেবে।

বাসিল আশা করছেন, সামনের মাস থেকে কলরেট আরো শতকরা দশভাগ কমে যাবে। ওরাসকম এবং জঈন এ বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা আরো ৪ লাখ বাড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।

লেবাননে মোবাইল ফোনের কলরেট এর পরিমান এই মুহুর্তে বিশ্বে সবচেয়ে বেশী। এই রেট অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক জটিলতা এবং সামাজিক অসন্তোষ তৈরী করে রেখেছে। একই ধারায় লেবাননে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। চল্লিশ লাখ লোক সংখ্যার এই দেশে মাত্র ১৩ লাখ লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।

লিলিয়ান খুব সর্তকভাবে এই নতুন চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তার সাথে সে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে নতুন কোন মোবাইল প্রযুক্তি দেশটিতে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বিশ্বাস করেন, যে নতুন চুক্তি হয়েছে তা এখনও সবার আশার চেয়ে অনেক কম:

এটি আশাব্যাঞ্জক নয় এবং নতুন কোন সার্ভিস এতে যোগ হয়নি (যেমন থ্রিজি প্রযুক্তি)। কিন্তু আমাদের বর্তমানে যা রয়েছে তার চেয়ে অন্তত নতুন চুক্তিটি ভালো।

আমি আশা করি তারা মোবাইল ফোনে বিল চার্জ প্রক্রিয়া নিয়েও কিছু একটা করবে। ফোন কোম্পানীগুলো মিনিটের বদলে প্রতি সেকেন্ডে বিল চার্জ করবে (উদাহরন হিসেবে বলা যায় কেউ যদি এখানে এক মিনিট দশ সেকেন্ড কথা বলে তাহলে তাকে দুই মিনিটের বিল দিতে হয়)। এই রকম কথা বলার চেয়ে বেশী বিল দেবার পদ্ধতি এক সময় পাল্টাবে, হয়তো পরবর্তী দশকে।

রামি এই চুক্তিটির কঠিন সমালোচনা করেছেন। তিনি টেলিযোগাযোগ সেক্টরের কাজে আস্থা পাচ্ছেন না। তিনি বিশ্বাস করেন যে লেবানীজরা এ সব কোম্পানীর দ্বারা শোষিত হচ্ছে। কলরেটে -এর ক্ষেত্রে তারা কোন ছাড় পাচ্ছে না।

ঠিক আছে আমাকে বলতে দিন মি: বাসিল, আমাদের এখানে মোবাইল টেলিফোন সেক্টরে যা রয়েছে তা হলো দুই কারবারীর একচেটিয়া দাপট। আসলে তা উভয়ের একচেটিয়া বাজার দখল ব্যবস্থার নামান্তর, বিশেষ করে যখন দুটি মাত্র অপারেটর এদেশে মোবাইল ব্যবসা করছে এবং এরা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারপরেও ধরা যাক এই ব্যবস্থা দুইজন নিয়ন্ত্রন করছে। আপনারা কি ধারণা করতে পারেন এই ক্ষেত্রে তারা কি কি ভাবে কলের রেট নির্ধারন করে? যে কোন কিছুর মধ্যে বিলের দাম নিয়ে মুল্যযুদ্ধ!

সত্যিকার অর্থে,আসুন গভীরভাবেই বিষয়টি নিয়ে ভাবি! তাদের উভয়ের কলের রেট প্রায় সমান, এবং তাদের গ্রাহক সংখ্যাও প্রায় সমান। তাহলে কেন তারা কলরেট নিয়ে যুদ্ধে নামবে এবং নিজেদের লাভের হার কমিয়ে দেবে? যদি দাম কমানোর মতো কোন বিষয় এসে দাড়ায় তাহলে তারা উভয়ে তাতে একসাথে সম্মত হবে। কোন বিপনন প্রতিষ্ঠানই তার নিজের ফার্মের ক্ষতির জন্য কাজ করবে না। আমি সন্দেহ করি যে একটা বিশেষ মাত্রায় কলরেট কমবে। আমরা উদাহরণ হিসেবে মিশর বা অন্য আরব দেশগুলোর মতো মোবাইল বিলের দামের মতো দাম নির্ধারন করতে পারবো না।

কাজেই মি: বাসিল আপনি অন্যসব মন্ত্রীদের মতোই (যদি না সময় তা মিথ্যা প্রমাণিত করে)। আপনি আমাদের কাছে আকাশের তারা দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন কিন্ত এখন পর্যন্ত কিছুই দেননি। আমাদের শোষন করা হচ্ছে এবং সবসময় শোষন করা হবে।

ইয়াথ্রিনে বলছেন (এর মানে) মনে হচ্ছে আমরা ধর্ষিত হচ্ছি এবং যেন তা পছন্দ করছি। অন্যথায় আমাদের কোন ফোন লাইন থাকবে না।

ইতিমধ্যে জামালস প্রোপাগান্ডা দেখাচ্ছে যে দেশটির টেলিকম সেক্টর রাজনৈতিক এক ভাগ্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে যা এক ঘটনাক্রম/ভন্ডামি। তিনি মিশর ভিত্তিক মোবাইল টেলিফোন অপারেটর ওরাসকম এর সাথে চুক্তির মাধ্যমে তাকে পুরস্কৃত করার কারনে এই কথাগুলো উল্লেখ করেন। ওরাসকমের প্রধান শেয়ার হোল্ডার বা অংশিদারিত্ব মালিকানা রয়েছে নাগিব সাউইরিস এর হাতে। তারা ইজরায়েলে সবচেয়ে বড় আরব বিনিয়োগকারী। লেবাননের টেলিযোগযাযোগ মন্ত্রী জিবরান বাসিল ফ্রি প্যাট্রয়টিক মুভমেন্ট নামের এক আন্দোলনের সাথে জড়িত। এই আন্দোলনের অন্যতম মিত্র হচ্ছে লেবাননেরর হেজবুল্লাহ নামের গেরিলা দল।

১) হেজবুল্লাহ ফ্রি প্যাট্রিয়টিক মুভমেন্ট বা এফপিএম-এর সাথে সংযুক্ত।
২) এফপিএম, জিবরান বাসিলকে তাদের একজন উর্ধ্বতন সদস্য মনে করে
৩) জিবরান বাসিল লেবাননেরর উন্মাদ বা বিকারগ্রস্ত জাতীয় ঐক্য সরকারের টেলিফোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।
৪) লেবাননের টেলিকম মন্ত্রণালয় মিশরীয় একটি কোম্পানী ওরাসকমকে এখানে কার্যক্রম চালানোর পুরস্কার দিয়েছে।
৫) ওরাসকমের বেশীর ভাগ শেয়ারের মালিক নাগিব সাউইরিস
৬) নাগিব সাউইরিস, ওরাসকমের মাধ্যমে আরব রাষ্ট্রগুলোরে মধ্যে থেকে ইজারায়েলে অন্যতম বিনিয়োগকারী।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই টেলিকম চুক্তিটিতে প্রতিরোধী -এর স্বপক্ষ এবং বিপক্ষ উভয় দল সই করেছেন এবং চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় গাজা হত্যাকান্ডের সময়।

অক্সফোর্ড বিজনেস গ্রুপের রিপোর্ট অনুসারে ফ্রাইডে লাঞ্চ ক্লাব একটি বিষয় তুলে ধরেছে সেটি হলো নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাসিল এক নতুন দাবী যোগ করেছেন, যে কোন নতুন প্রস্তাবিত ব্যাক্তিগত বিনিয়োগ-এর সময় লেবাননের সিংহভাগ শেয়ারের নিশ্চিয়তা প্রদান করতে হবে:

এই দুই মোবাইল অপারেটর বা নেটওর্য়াক কোম্পানীকে ব্যাক্তিখাতে দেবার কিছু বিরোধিতা হচ্ছে। সামালোচকরা বলছেন, কেন রাষ্ট্রের এই দুই লাভজনক সম্পদ ব্যাক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে হবে। গত বছর জাতীয় সরকার-এ যোগ দেবার আগে ইসলামিক দল হেজবুল্লাহ এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাক্তিগত খাতে ছেড়ে দেবার বিরোধীতা করেছে এই কারনে যে, এতে রাষ্ট্রের প্রাপ্য আয় অনেক কমে যাবে। আবার কৌশলগত কারনে অনেক সম্পদ লেবাননের হাতছাড়া হয়ে যাবে। বেশীরভাগ মালিকানা স্থানীদের হাতে রেখে এই সব বিরোধীতার হয়ত নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .