ফিলিস্তিন: গাজার ভূমিতে কি ঘটছে

ইজরায়েল কর্তুক গাজায় লাগাতার আক্রমণের পরেও, আর অনেক জায়গায় বিদ্যুতের অভাব থাকলেও, গাজার কিছু ব্লগার আছেন যারা লিখছেন যে ওখানে কি ঘটছে। এর সাথে গাজা স্ট্রীপে কিছু বিদেশী মানবাধিকার কর্মী আছেন যারা চাক্ষুস যা দেখেছেন তার বর্ণনা দিচ্ছেন।

আমরা একজন গাজার ব্লগারকে দিয়ে শুরু করছি যিনি আসলে এই মুহূর্তে আমেরিকায় আছেন। লায়লা এল-হাদ্দাদ, যিনি ব্লগ করেন রেইজিং ইউসুফ এন্ড নুর এ, লিখেছেন তার বাবা মার কি অভিজ্ঞতা হচ্ছে:

আমার বাবা মা শহরের কেন্দ্রে থাকেন, আর ইজরায়েইলী যুদ্ধ বিমান তাদের চারপাশের মানুষ আর এলাকায় হামলা করেছে। ৬০টি যুদ্ধ বিমান দ্বারা ৫০টার বেশী ‘নিশানা'য় বোমা ফেলা হয়েছে আর হারেটজ পত্রিকায় তা শিরোনাম হয়েছিল। দিনের বেলায় ২০০ জনের বেশী নিহত হয়েছে, স্কুল শেষের সময়ে। চলচ্চিত্রের উক্তির মতো। বা কোন খেলার মতো। বেশ কয়েকবার বললে এটা সত্যি বলে মনে হয়না: ৫০টি নিশানা, ৬০টি যুদ্ধ বিমান, ২০০ লোক, ১ দিন।

সব খুব পরিচ্ছন্ন। খুব মসৃন। ভালোভাবে প্যাকেট করা: উপহার বাক্সে যুদ্ধ।

“প্রতি মিনিটে একটা করে লাশ জানাজার জন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেহের স্তুপ হচ্ছে।” গাজার বাতাস পোড়ানো মাংসের গন্ধে ভরে গেছে। ভীতি আছে যেমন কেউ ধারণা করবে কুকুররা ভীত হয় বেশী ভরে থাকা খাঁচায় যখন তাদের মধ্য থেকেই বেশ কয়েকটাকে হঠাৎ, হিংস্রভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু খাঁচার মধ্যে মরা কুকুর, তারপরেও, চিৎকার করবে।

আন্তর্জাতিক সংহতি আন্দোলন (আইএসএম) এর সাথে যুক্ত একজন কানাডীয় কর্মী, ইভা বার্টলেট, ইন গাজা ব্লগে লিখেন, আর একটা আক্রমণের পরের অবস্থা তিনি বর্ণনা করেছেন:

জনসাধারণ যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে আছেন জাবালিয়ায় আমার ভালো বন্ধুদের মা। প্রত্যেকটি মৃত্যু নৃশংস, কিন্তু এটা আরো বেশী মর্মভেদী যখন আপনি এটা দেখেন বা মৃতকে চেনেন। সে একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী আর গতকাল রাত তার পরিবারের সাথে আমি কাটিয়েছি, না ঘুমিয়ে। একটা ঠান্ডা মাটির নীচের কামরায় যা জানালা খুলে রাখার কারনে আরো ঠান্ডা হয়েছিল, এই আশায় যে এগুলো ভেঙ্গে যাবে না যখন অবশ্যম্ভাবী বোমাহামলা শুরু হবে। আসলেই সামনের জানালা যা রাস্তার সব থেকে কাছে ছিল সেটি ভেঙ্গে যায় কয়েক ঘন্টা পরে শেলিং হবার পরে।

এই পরিবার দুশ্চিন্তা করছিল যে ইজরায়েলী সৈন্যরা আক্রমন করে তাদের বাড়ী দখল করবে, যেমন তারা মার্চ ২০০৮ এ করেছিল, আর তাই আমরা তাদের সাথে ছিলাম, তাদের সমর্থনে যদিও তারা অবশ্যই শক্ত আর এমন আরো খারাপ দিন একা অতিবাহিত করেছে। বিশেষ করে নারী আর শিশু, আমরা অস্বস্তি নিয়ে ছিলাম, গাজার অন্যান্য এলাকায় যারা আছে তাদেরকে ফোন করে আর টেক্সট করে প্রত্যেক নতুন বিস্ফোরনের সাথে, যখন বিস্ফোরন চলতে লাগলো রাত ১১টা থেকে সারা রাত। এপাচে হেলিকপ্টার সারা রাত মাথার উপর ঘুরছিল, আর একটা ইজরায়েলী ড্রোনের আওয়াজ লাগাতার শোনা যাচ্ছিল। রাত ১০:১০ এ আর একজন আন্তর্জাতিক [কর্মী] রাফাহ থেকে একটা টেক্সট বার্তা পাঠায়:” ইজরায়েলীরা এখুনি ল্যান্ড লাইনে ফোন করেছিল জানাতে যে অস্ত্রসহ প্রত্যেক বাড়ি নিশানা হবে।” ইজরায়েলীরা কিভাবে জানে কোন বাড়িতে অস্ত্র আছে সেটা আর একটা প্রশ্ন, আর ইজরায়েলকে কে অধিকার দিয়েছে জনসাধারণের এলাকায় লাগামহীন বোমা হামলার সেটাই বড় প্রশ্ন। আমাদের বাড়িতে ১৩ জন নারী, ৩ জন পুরুষ (একজন বৃদ্ধ) আর ৬টা বাচ্চা ৩ বছরের কম বয়সের, একটা মেয়ে ১৪ বছরের। ইজরায়েল যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা জানে এই বাড়িতে অস্ত্র আছে, তাহলে ২৩ জন সাধারণ লোক প্রাণ হারালো। আমি আরো আপডেট করবো সময় আর বিদ্যুত যখন সুযোগ দেবে। এখন আমার যে বন্ধুদের মা মারা গেছে আমি তাদের বাড়িতে যেতে চাই, আমি আমার সম্মান জানিয়ে তাদের সাথে কাঁদতে চাই, কারন তিনি আমার মার মতো নম্র মহিলা ছিলেন।

আর একটা পোস্টে, ইভা বার্টলেট গাজা শহরের শিফা হাসপাতালের কথা লিখেছেন (দয়া করে সর্তক হবেন কারন বেশ কিছু ছবি বিভৎস লাগতে পারে)।

গাজা শহরে একজন ব্লগার আর সাংবাদিক সামেহ আ হাবিব হাসপাতালের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন:

গাজার হাসপাতাল আহতদের নেয়ার ব্যাপারে অপারগতা জানায় ডাক্তারী জিনিষ আর যন্ত্রের অভাবে। ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ বারান্দায়, রুমে আর হাসপাতালের ইউনিটে পড়ে ছিল। এরই মধ্যে ২-৩ জন আহত ব্যক্তি একই বিছানা ভাগ করে নিচ্ছিলেন ডাক্তারী সরঞ্জামের অভাবে। এই অভাব ইজরায়েলী অবরোধের কারনে যা ২ বছর আগে দেয়া হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাসিম নাইম জানিয়েছেন যে গাজার চিকিৎসা খাতে ১০ ধরনের ডাক্তারী সরঞ্জাম আর যন্ত্র লাগবে। ৭০ জন আহতকে মিশরীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সানশাইন ব্লগে লেখেন ফিদা কিশ্তা, যিনি দক্ষিণ গাজা স্ট্রিপের রাফায় বসবাস কারী একজন ফিলিস্তিনী আইএসএম কর্মী:

স্থানীয় সময় সকাল ৭টার একটু আগে আর একটা ইজরায়েলী মিসাইল হামলা হয় দক্ষিন গাজার রাফাহ শহরের বসবাসকারী এলাকা হি আলিজনিনাতে। এইবার একটা ঔষধের দোকানকে নিশানা করা হয়। বাড়িটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে আর আশেপাশের বাড়ীতে অনেক ক্ষতি করে। বিদ্যুত লাইন বিষ্ফোরনের সময় ছিঁড়ে যায় আর রাস্তা ভরে যায় ছড়ানো ঔষধে… বিস্মিত এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে আসে, অনেকে পায়জামা পরেই।

লেবানন, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, কানাডা, স্পেন, ইটালি আর অস্ট্রেলিয়া থেকে সম্প্রতি গাজাতে অনেক মানবাধিকার কর্মী গেছেন, অনেকে ফ্রি গাজা মুভমেন্টের সাথে এসেছে। সবার ব্লগ নেই, কিন্তু তাদের নিজের চোখে দেখা গাজার ঘটনার বর্ণনা আপনারা পড়তে পারেন ফ্রি গাজা ওয়েবসাইটে আর আন্তর্জাতিক সংহতি আন্দোলনের ওয়েবসাইটেরাফাহ টুডেতে রাফায় আক্রমণের পরের চিত্র এখানে (আবার সাবধান হবেন কারন বেশ কিছু ছবি বিভৎস লাগতে পারে)।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .