কেনিয়া: প্রচার মাধ্যম যোগাযোগ বিলের প্রতিবাদ করেছে

ডিসেম্বরের ১২ তারিখে কেনিয়ার ৪৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কালে, মিডিয়া সরকারকে ব্যস্ত রেখেছিল কেনিয়ার যোগাযোগ সংক্রান্ত সংশোধিত বিল নিয়ে প্রতিবাদ আর রাস্তায় বিক্ষোভের খবর প্রচার করে। এই আইন পাশ হলে সরকার অধিকার পাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত বিষয়বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে। যদিও এই ধরণের নিয়ন্ত্রন অন্যান্য দেশে আছে, কেনিয়ার প্রচার মাধ্যমগুলো এই বিলের ব্যাপারে বিক্ষোভ করেছে আর সরকার মিডিয়াকে দোষারোপ করেছে পুজিবাদী স্বার্থ সংরক্ষনের দায়ে আর এই আইন প্রনয়ণের আগে গতানুগতিক সংস্লিষ্টদের সাথে শলা পরামর্শের নিয়মকে এড়ানোর জন্য।

কয়েক দিন ধরে দোষারোপ আর পালটা দোষারোপ চলছে, আর কেনিয়ার ব্লগগুলো তাদের মনোভাব তুলে ধরেছে, যেটা ঠিকমত প্রধান ধারার প্রচার মাধ্যমে আসে নি।
Kenya
স্বাধীনতা দিবসে নাইরোবীর লাঙ্গাতা পুলিশ ফাঁড়িতে গ্রেফতারকৃত প্রতিবাদকারীদের দেখা যাচ্ছে যাদের আটক করা হয়েছে টিশার্টে প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা চেয়ে স্লোগান থাকার কারনে এবং এমপিদের ট্যাক্স দেয়ার আহ্বান করার কারনে (ছবি তুলেছে মেন্টাল এক্রোবাটিকস)

সুকুমা কেনিয়া সেইসব সাংবাদিক আর জনগণের গ্রেপ্তারের কথা লিখেছেন যারা বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছিল বা গন্ডোগলে পড়ে গিয়েছিল:

কিস এফএমের ক্যারোলিন মুতোকো আর মার্স গ্রুপ কেনিয়ার মুয়ালিমু মাটি অন্যান্যদের মধ্যে আজকে সকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন নাইরোবির নিয়ায়ো জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে। এদের দুইজনকে লাঙ্গাতা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িগুলোতে আরো ৬০ জন কেনিয়ানকে ঢোকানো হয়েছে গাদাগাদি করে আর মনে হচ্ছে পরিকল্পনা করা হয়েছে গ্রেপ্তারকৃতদের শহরের বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে ভাগ করে দেয়া হবে।

এই ৬২ জন কেনিয়ান এক বিশাল দলের অংশ যারা নিয়ায়ো জাতীয় স্টেডিয়ামে গিয়েছিল স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য। আমরা জামহুরি দিবস সেখানে পালন করছি আর এই ক্ষেত্রটা ব্যবহার করছি আমাদের নেতাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য, যাতে কেনিয়ার নাগরিকদের কষ্টের কথা শোনা যায়।

তারা সবাই “এমপিদের জন্য কোন কর না থাকলে আমাদের জন্যেও কোন কর থাকবে না” স্লোগান লেখা কালো রঙ্গের গেঞ্জী পরে ছিল যেটা এই প্রচারের অংশ। এমপিদের কর না দেয়ার প্রতিবাদে গঠিত এই প্রতিবাদী দল সচেতন কেনিয়াবাসী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত।

কেনিয়ান পন্ডিত সুকুমা কেনিয়াকে উদ্ধৃত করে প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তার নিয়ে বেশ কিছু আপডেট দিয়েছেন যেমন এটা:

গারিসায় চারজন সহকর্মী আটক আছেন শুধুমাত্র প্রাদেশিক কমিশনারকে একটা স্মারকলিপি দিতে চাওয়ার অপরাধে।

কুমেকুচা মনে করে যে আইন প্রনেতারা প্রচার মাধ্যমকে একটা ‘শিক্ষা’ দিচ্ছে সেই খবর ফাঁস করে দেয়ার জন্যে যে এমপিদের কাছ থেকে কর চাওয়া হবে এমন একটা সংসদের বিলের বিপক্ষে এমপিরা ভোট দেবেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন:

দশম সংসদ প্রচার মাধ্যমের বিরুদ্ধে মিষ্টি শিতল একটা প্রতিশোধ নিয়েছে যা কেনিয়ার যোগাযোগ (সংশোধিত) বিল দিয়ে জারক দেয়া। আর কেনিয়ার প্রচার মাধ্যম নিশ্চয় বুঝেছে যে এরকম প্রতিক্রিয়া হবে বিশেষ করে এমপিদের লোভ আর বেতনে কর বসানোর বিরুদ্ধে বিরোধীতাকে প্রকাশ ধরার পরে। কেনিয়ার রাজনীতি আর জীবনের ধরণে স্বাগতম যেখানে জাতীয় ভালো ততদূর পর্যন্ত যায় যতোদূর ব্যক্তিগত লাভ হয়।

দ্যা এক্সপোজার ভাবছে যে আলোচনা সমাপ্ত হওয়ার আগে এই বিলকে কেন সংসদে তাড়াতাড়ি আনা হলো:

এখন এটা পরিষ্কার কেন কেনিয়ার আইন প্রয়োগকারীরা ঠিকমত বিশ্লেষন না করে তাড়াতাড়ি মিডিয়া বিলকে পাশ করার জন্য সচেষ্ট হয়েছে… এই জাতীর কাজের ধরণ যদি প্রতিশোধ হয়, তাহলে মানবিক নীতির কি হবে? কত বিল প্রতিশোধের কারনে পাশ করা হয়েছে???

কেনিয়ান অন্ত্রপ্রেনর সাম্প্রতিক সমস্যাকে দেখিয়েছে জোট সরকারের তরফ থেকে খারাপ নেতৃত্বের নিদর্শন হিসাবে। এই জোট বছরের প্রথমে নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষের ফলে ক্ষমতায় এসেছে:

আমি আগেও বলেছি যে কিবাকির উচিৎ একনায়কের মতো শাসন করা, কিন্ত তার মানে প্রেসের স্বাধীনতা কমানো না, যার উপর জনগণ ভরসা করতে শিখেছে। আমি বলতে চাচ্ছি যে ওনার উচিত গোড়ার পরিবর্তনগুলো জোর দিয়ে করা (সংসদের একমতের জন্য বসে না থেকে)- কিন্তু পরিবর্তন যা দেশের উপর দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল রাখবে। এমন জিনিষ যেমন কেআরএ কে জোর করা এমপিদের বেতনের উপরে কর বসানো আর এমপিদের আপনার বিরুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করা বা যেসব মানুষ রাস্তায় প্রস্রাব করে, ময়লা ফেলে বা থুথু ফেলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা ইত্যাদি ইত্যাদি… তাহলে এটা একনায়কতন্ত্র হবে, হ্যা, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে, এটা দেশের জন্য ভালো হবে। এটাই লি কুয়ান ইউ মডেল: জোরালো, ধণাত্মক, পরিবর্তন।

কুমেকুচা এই বিল আসলে কি অর্জন করতে চায় সে ব্যাপারে আরো জানিয়েছেন:

মিডিয়া হাউজে পুলিশের রেইড আইনানুগ করা রাজনৈতিক ব্যাভিচারের চারায় পানি দেয়ার সমান যেখানে সরকার ভাব ধরবে সংসদে নিজের উপর পুলিশী আচরন করতে। রাজনীতিবিদরা হিংসাপরায়ন হয়ে যে বিছানা করেছে সেখানে শোয়ার অভ্যাস তাদের করতে হবে নীচের সব কাঁটা উচু থাকা অবস্থায়। মিডিয়াকে দায়িত্বশীল রাখার জন্য পৃথিবীব্যাপী স্বনিয়ন্ত্রণ স্বাধীন মধ্যস্ততাকারীর মাধ্যমে হয়ে থাকে, কিন্তু কেনিয়াতে তা না।

সব কিছু বলা আর করার পরে, কেনিয়া ইমাজিনের ক্যাপ্টেন কলিন্স ওয়ান্দেরা মুনিয়িরি মিডিয়াকে দোষ দিয়েছেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায়:

কিন্তু মিডিয়া কি পুরোপুরি দোষমুক্ত? এরা সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে উৎসব করেছে যখন মাননীয় ‘মুতাহি কাগোয়ে’ তখনকার তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী, একই বিল সংসদ থেকে তুলে নেন আরো আলোচনার কথা বলে, আর সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রনের জন্য আরো কথা যুক্ত করার প্রযোজনীয়তার কথা বলে আর তার সাথে অপ্টিকাল ফাইবার কেবলকে নিরাপত্তা দিতে। এই বিলের ব্যাপারে আমার মন্তব্য বিজনেস ডেইলিতে সেপ্টেম্বর ২০০৭ এ প্রকাশিত হয়েছিল। বিলটা তুলে নেওয়ার ফলে সুযোগের যে জানালা খুলেছিল এর দুর্বলতাকে তুলে ধরার জন্য আর অপমানজনক কথা সরিয়ে ফেলার জন্য, তার উপর জোর না দিয়ে মিডিয়া রাজনৈতিক পাশের সব খেলায় মনোযোগ দিয়েছিল।

বহু বছর ধরে, পূর্ব আফ্রিকার সাংবাদিকরা স্বনিয়ন্ত্রণের কোন কার্যকর পন্থা কায়েম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলাফল দুর্যোগপূর্ণ হয়েছে। কেনিয়াতে কিছু সাংবাদিক রাজনীতিবিদদের দেবতা তুল্য করে ফেলেছে পক্ষপাতপূর্ণ লেখার মাধ্যমে। অবশ্যই রাজনৈতিক লেখা ইলেক্ট্রনিক আর ছাপা মিডিয়ার সম্পাদকীয়তে বেশীরভাগ স্থান দখল করে। মিডিয়াতে আমার বন্ধুরা খোলাখুলি স্বীকার করে যে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা মিডিয়াকে সাথে নিয়ে ঘোরে কারন তারা মুক্তহস্তে টিপস দেয় (পড়ুন ঘুষ) সাংবাদিকদের ভালো প্রতিবেদনের জন্য।

এটা কি কোন বিস্ময় তাহলে যে পূর্ব আফ্রিকার যে কোন মিডিয়া হাউস ধারাবাহিকভাবে যেসব কর্মকতা আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদেরকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে তাদেরকে অবজ্ঞা করে?

এই লেখা মিডিয়াকে আরো দোষারোপ করেছে আইন প্রয়োগকারীরা যে চরিত্র এখন দেখাচ্ছে তাদেরকে লালন করার জন্য:

পুর্ব আফ্রিকার মিডিয়া রাজনীতিকে যে গুরুত্ব দেয় তার থেকেই এমপিদের মধ্যে তুলনাতীত ঔদ্ধত্য সৃষ্টি হয়েছে, তাদের মধ্যে অজেয়তার ভাব এনে দিয়েছে। এমপি, যারা প্রায় সাংবাদিকদের ঘুষ দেন, বিশ্বাস করেন তারা তাদের আর অন্য যে কারো উপর খারাপ ব্যবহার করতে পারে। আমি জানি রাজনীতিবিদরা সাংবাদিকদের টাকা দেয় ভালো প্রতিবেদনের জন্য আর পুরো কেনিয়ার মিডিয়া হাউসের কয়েকজন সাংবাদিকের নাম আমার কাছে আছে, কেউ কেউ এটা লুকায় ও না, বরং গর্ব করে বলে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .