ওবামা ও ভারত

বারাক ওবামার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন ভারতে গভীর মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষন করা হয়েছিল। ভারতের অনেক ব্লগারের কাছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামা পছন্দনীয় ছিল। ওবামার এই ঐতিহাসিক বিজয় নিয়ে ভারতের বেশ কয়েকজন ব্লগারের প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হলো। কৌতুহলজনকভাবে একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্লগে লেখা পোস্ট করা হয়েছে যে কেন ভারতে একজন ওবামার মতো নেতা প্রয়োজন এবং কখন তা বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবর্তন কেবল আমেরিকাতে নয় ভারতেও প্রয়োজন, ব্লগারা যেন সেই বার্তাই তাদের লেখায় পৌঁছে দিচ্ছে।


কাকিসিজ ওয়ার্ল্ড
ব্লগে বারাক ওবামা আমেরিকার ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় যে আবেগপূর্ণ ইতিহাস তৈরী হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। এই ব্লগার লিখছেন কেন ভারতেও ওবামার মতো একজন নেতা প্রয়োজন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা মানব ইতিহাসের সামনের দিকে এগিযে যাবার এক সামান্য পদক্ষেপ, আর আমেরিকার জন্য তা এক বিশাল অগ্রগতি। পৃথিবীর সকল জাতি আমেরিকার নির্বাচনকে ঘিরে তাদের কৌতুহল প্রকাশ করেছে। আমেরিকার জন্য এটা কেবল দেশের ব্যাপার নয়, একটা চিন্তা আর একটা স্বপ্ন। কেবল যে দেশটি এই স্বপ্নকে ছুঁতে পারে তা হলো ভারত। আর ভারতের চিন্তা আরো অনেক বেশী উচুঁতে সমস্ত লোকেরা যা কল্পনা করে ।

রনদ্বীপ রমেশ তার এশিয়ান মিউজিং -এ লিখছেন ভারতে ওবামার জাতীয়তা সম্পর্কে। রমেশ বলছেন:

অন্যসব দেশের মতো ভারত সেদিন সকালে ওবামার জয়ের সাথে জেগে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া উপলক্ষ্যে দেওয়া তার ভাষণ সরাসরি সকলের কাছে পৌঁছে দিয়েছে প্রায় এক ডজন আঞ্চলিক সংবাদ টিভি চ্যানেল। এর জন্য তারা বাদ দিয়েছিল তাদের প্রতিদিনের অপরাধ, স্টক মাকের্ট অথবা ক্রিকেট সমন্ধে উপস্থাপন করা পরিসংখ্যানগুলো।

রনদ্বীপ আমেরিকা ও ভারতের গণতন্ত্রের মধ্যে তুলনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন আমেরিকান গণতন্ত্র ভারতের চেয়ে অনেক আলাদা। তিনি যোগ করেন:

সবার একটা ধারণা রয়েছে গণতন্ত্র বুঝি একই কাঠামোয় তৈরী বা সকল দেশের গণতন্ত্র বুঝি একই রকম- ভারতে বিষয়টি সত্য নয়। ভারতের জনগণ এখনও জাত-পাত আর লিঙ্গবিভাজন রেখা ভেঙ্গে ফেলতে পারেনি। জনগণের একটা বিশাল অংশ এখনও নিজের জন্য পছন্দমতো জীবন বেছে নিতে পারেনি। বাস্তবতা হলো তাদের পরিচয়- জাত, শ্রেণী, বর্ণ বা ধর্মে- এটাই আসলে ভারতের সাধারন লোকের জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে। এটা আসলেই ভারতের জন্য মূল ব্যাপার, কোথা থেকে তুমি এসেছ? তোমার পিতা কে ছিল? এগুলোই ভারতে জন্য বাস্তব। এটা এমন একটা ভাবনা যা আমেরিকানদের কাছে একটা অদ্ভুত মনে হতে পারে।

ভারতের গণতন্ত্র ওবামার মতো প্রেসিডেন্ট তৈরী করার মতো শক্ত হয়ে ওঠেনি। যদিও ভারতে একজন মুসলিম পরমানু বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্ট, একজন শিখ অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী এবং একজন রোমান ক্যাথলিক মহিলা দেশটির সবচেয়ে বড় পার্টির প্রধানের পদ অলংকৃত করেছেন। এগুলো আসলে সামান্য কিছু ব্যতিক্রম মাত্র।

ইয়ুথ কারির রষ্মি বনসাল একটা বিশেষ লেখা লিখেছেন। তিনি ওবামার জয় এর মানে বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং কখন ভারত তাদের ওবামাকে পাবে সে সমন্ধে একটা মজার লেখা লিখেছেন।

“এখন এই ভারতে বিষ্ময়য়ের সাথে অপেক্ষায় থাকতে হয় কখন ভারতের ওবামার দেখা পাওয়া যাবে যে আমাদের সকল পার্থক্যকে ভুলিয়ে সকল কিছুর ঊর্ধে উঠে দাড়াবে, এবং আমরা যে পরিবর্তনে বিশ্বাসী সেই পরিবর্তনের পথে নিয়ে যাবে—-

এটি অবশ্যই ২০০৯ সালে নয়—- কিন্তু কোন একদিন নিশ্চয়।”

ডেইলি কেওস-এর একজন আমেরিকান লেখক আপপোপট এখন ভারতে এবং তিনি ওবামা জ্বরে আক্রান্ত। তিনি ভারত সমন্ধে তার ভাবনা আমাদেরকে জানিয়েছেন এবং ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে আমেরিকার নির্বাচনের পরে দেশে ফিরে যাবেন:

“ওবামার ভাষনের সময় আমার চোখে পানি চলে এসেছিল…… আমি ম্যাককেইনের ভাষনের সময়ও আমি আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ি। দুজনেই আমাকে এই উপলব্ধি দেয় যে যখন আমি সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াই বা তাদের দেখি, আমি আসলেই আমেরিকাকে ভালোবাসি। এবং কিছু সময় পরে আমি আমার পুরোন বসকে মেইল করতে আগ্রহ প্রকাশ করি, এই জন্য যে তারা কি আবার আমাকে দেশে ফিরিয়ে নেবে কিনা?”

ডেমেক্রেটস এব্রড যারা ব্যাঙ্গালোরে আমেরিকা বিষয়ে বিশেষ ফোরাম গঠন করেছে, তারা নির্বাচন নিয়ে সকালে নাস্তার টেবিলে এক মিটিং-এর আয়োজন করেছিল (এর কারন ছিল আমেরিকা এবং ভারতের সময়ের পার্থক্য)। এই মিটিং এর উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পর্যবেক্ষন করা। বিটস ফ্রম ব্যাঙ্গলোর এর রবিন কিং সে সমন্ধে কিছু লেখা এবং ছবি পোস্ট করেছে:

এখানে ভারত আউটসোর্সিং বা বাইরে থেকে কাজ করে নেবার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা তৈরীর ব্যাপারে চিন্তিত, কিন্তু তারপরেও তারা আশা করছে এবং ভাবছে যে আমেরিকা সারা বিশ্বের প্রতি কম মাস্তানী সুলভ ভূমিকা পালন করবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .