আর্মেনিয়া: নারীদের প্রতি অত্যাচার

পৃথিবীর সব থেকে পুরানো খ্রীষ্টান জাতি আর্মেনিয়ার অনেক কিছু আছে গর্বিত হওয়ার, কিন্তু নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ভূতপূর্ব সোভিয়েত ব্লকের এই দেশ সম্ভবত নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে আছে। এটার সব থেকে খারাপ প্রকাশ ঘটে আর্মেনিয়ায় নারীদের প্রতি অত্যাচার অথবা মানুষ পাচারের ঘটনা পৃথিবীতে সবচেয়ে কলন্কজনক উদাহরণ। সাম্প্রতিক অ্যামনেস্টি ইন্টারনেশনালের একটি রিপোর্টে আর্মেনিয়ায় গৃহ নির্যাতন আর সরকারের ব্যবস্থা নিতে অপারগতা সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। এই রিপোর্ট কি পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন আনতে পারবে?

ব্লগাররা নারীদের প্রতি অত্যাচার নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আর একজন সেই প্রতিবেদন নিয়ে উপহাসও করেছেন কারন তিনি বলেছেন যে আর্মেনিয়ায় সঠিক অবস্থা এখানে প্রতিফলিত হয়নি। ব্লগিয়ানে আমার নিজের পোস্ট আর্মেনিয়ার গৃহ নির্যাতনের পেছনের চিত্র সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করছে:

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ৮ পাতার একটা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে আর্মেনিয়ায় মহিলাদের উপর সচরাচর ব্যাপক যৌন আর গৃহ নির্যাতন হয়। সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, আর্মেনিয়ার চার জনের মধ্যে একজন মহিলা তার পরিবারের সদস্য দ্বারা নির্যাতিত হয় আর অনেক বেশী জন মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়।

সব থেকে খারাপ জিনিষ হলো, আর্মেনিয়ায় মহিলাদের উপর নির্যাতন নিয়ে কথা বলা যেন নিষিদ্ধ একটা ব্যাপার যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সরকারের এজেন্সীরা ‘ব্যক্তিগত ব্যাপারে’ তদন্ত করতে খুব উৎসাহী না আর মহিলারা নির্যাতনের কথা জানাতেই চায়না। তাছাড়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে আর্মেনিয়ার অনেক মহিলা এই নির্যাতনকে স্বাভাবিকভাবে ধরে নিয়ে একে চিরস্থায়ী করতে সাহায্য করে। অ্যামনেস্টি একটা কুখ্যাত আর্মেনীয় প্রবাদ ভাষান্তর করে বলেছে, “নারী হচ্ছে পশমের মতো, যতো পেটাবেন ততো নরম হবে।”

ইংল্যান্ডভিত্তিক আর্মেনিয়ার ব্লগ আনজিপড: গে আর্মেনিয়া তে অ্যামনেস্টি প্রতিবেদনটি পোস্ট করা হয়েছে, যার সাথে যুক্ত হয়েছে ইয়েরিভানে অনুষ্ঠিতব্য সাম্প্রতিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের তথ্য

আর্মেনিয়ায় উইমেন রিসোর্স সেন্টার ২৫ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মহিলাদের প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে মিছিলের আয়োজন করছে।

নভেম্বরের ২৭ তারিখে আর্মেনিয়ায় নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের উপর একটা গোল টেবিল আলোচনা হবে। এছাড়াও আমেরিকান দূতাবাস আর অন্যান্য সংগঠনকে ধন্যবাদ কারন তাদের উদ্যোগ আর সহযোগিতায়, আর্মেনিয়ার প্রথম ওয়াকাথন অনুষ্ঠিত হবে আর্মেনিয়ায় গৃহ নির্যাতন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য। নারীর নির্যাতন বিহীন ভবিষ্যতের জন্য এই ওয়াকাথন হবে রবিবার নভেম্বর ৩০, ২০০৮ তারিখে। এটি ‘১৬ দিন ব্যাপী নারীদের প্রতি অত্যাচারের বিরুদ্ধে কর্মশালা’ সাথে সংশ্লিষ্ট যা ২৫ নভেম্বর নারীর প্রতি অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত চলবে।

ইংল্যান্ডে থাকা আরেকজন আর্মেনিয়ার ব্লগার মার্ক গ্রিগোরিয়ান রিপোর্টটির রাশিয়ান সংস্করণ পোস্ট করেছেন তাদের আর তা নিয়ে একটা প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে সেখানে। রাশিয়ায় থেকে ব্লগার বেসিওনিয়া গ্রিগোরিয়ানের পোস্টে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আর একটা মন্তব্য রেখেছেন যেখানে তিনি নিজের পরিবারের দু:খজনক ঘটনা তুলে ধরেছেন:

আমার খালাকে তার স্বামী মারতো, যখন তার বাবা (আমার নানা) হস্তক্ষেপ করেন তখন সেই স্বামী তাকেও মারে। এর ফলে নানা সেই স্বামীকে হত্যা করে, আত্মক্ষার্থে। এখন সেই নানাও নেই এবং আমি সম্প্রতি বাড়ী গিয়ে দেখলাম মহিলারা এখনো পুরুষরা যা করে সব সহ্য করে। তারা (নারীরা) আমাকে চুপ করাতে চেয়েছিল যখন আমি একজন মাতাল পুরুষ আত্মীয়কে দরজা দিয়ে বের করে দেই।

আমেরিকায় থাকা আর একজন আর্মেনিয়ান ব্লগার আরেগজান গ্রিগোরিয়ানের পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন:

Мою тетю избивал муж, когда за нее заступился отец (мой дед), то муж полез и на отца. В итоге дедушка убил этого мужа, это была самозащита. Сейчас уже нет и дедушки, но когда я приезжала домой, то там до сих пор женщины терпят от мужчин всё, пытались шикать на меня, когда я некоего пьянствующего родственника отправила выпроводила за двери.

নারীদের প্রতি অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দরকার। আমাকে যা সব থেকে বেশী বিচলিত করে তা হলো লোকে যখন ‘পরম্পরা’ আর ‘যুথবদ্ধ পরিবার’ [এই ধরনের পরিস্থিতিতে] এর কথা বলে (অপুর্ব পরিবার আমি নিশ্চিত যখন বাচ্চারা বড় হয় দেখে দেখে যে তাদের বাবা তাদের মাকে প্রতিদিন মারে)।

এই ব্লগার পরে সবাইকে মনে করাতে চেয়েছে যাতে তারা আর্মেনিয়ার নির্যাতনের সংস্কৃতি (যেমন বলা হয় তরুণরা মারামারি করলে সেটা চিন্তার কোন ব্যাপার না) সংক্রান্ত পুরো বিষয়টা ভুলে না যায়।

আর্মেনিয়ায় থাকা ব্লগার পিঘ অবশ্য তিরষ্কারমূলকভাবে বলেছেন যে তিনি প্রতি চতুর্থ মহিলাকে মারবেন অ্যামনেস্টি ইন্টারনেশানালের দাবিকে সমর্থনের জন্য যে আর্মেনিয়ায় প্রতি চতুর্থজন নারী শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়।

আমার ব্লগিয়ানে এই বছরের শুরুর দিকে আমি আজক ডেইলির জন্য লেখা আমার কলামের কিছু অংশ ভাষান্তর করেছিলাম। সেখানে আর্মেনিয়ায় নারীদের উপর নির্যাতনের আরো বিস্তৃত বিষয় যেমন মানুষ পাচার নিয়ে কথা বলেছি, আর তার সাথে নির্যাতনের কথা না মানার বিষয়টাও।

নারীর উপর নির্যাতন যে বাস্তবতা এটি না মানার পিছনে কিছু গর্ব কাজ করে। কারন যদি না মানা হয়, তাহলে [পুরুষরা] জানে যে তারা ভুল। যখন বেশ কিছু এনজিও জানতে পারে যে আর্মেনিয়ার অর্ধেকের মতো নারী শারীরিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে গত বছরে, তখন ৯৫% পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সংসদের একজন সদস্য বলেছিলেন যে এই সব অলাভজনক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র গ্রান্ট খোঁজে আর তাদের পকেটে পুরার জন্য আর্মেনিয়ার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে। “তাদের উচিত আর্মেনিয়াকে এমন কোন আফ্রিকার গোত্রের মতো তুলে না ধরা যারা একে অপরকে খেয়ে থাকে।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .