ভুটানে নতুন রাজার রাজ্যাভিষেক: শরণার্থীদের স্মরণ করা হয়নি

নভেম্বরের ৬ তারিখে, হিমালয়ের রাজ্য ভুটান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নতুন রাজার রাজ্যাভিষেক করেছে, যার নিয়োগ হয়েছিল প্রায় দুই বছর আগে। ২৮ বছর বয়সী পঞ্চম ড্রাগন রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াঞ্চুক হচ্ছেন অক্সফোর্ডে শিক্ষিত আর ভুটানের চতুর্থ ড্রাগন রাজা জিগমে সিংহে ওয়াঞ্চুকের বড় ছেলে। তার রাজ্যাভিষেকে পার্শবতী দেশ থেকে গণ্যমান্যরা এসেছিলেন – যার মধ্যে ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল আর বলিউডের নাম করা তারকারা।

Bhutan King
মহামান্য রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াঞ্চুক: ছবি গ্রাসভ্যালীব্রেন্ট এর সৌজন্যে এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত

ভুটান যখন রাজ্যভিষেকের উৎসব করছিল, দেশ আর রাজা ওয়াঞ্চুক প্রায় মনেই রাখেননি নেপালে শরণার্থী হিসাবে থাকা প্রায় এক লাখ জাতিগত নেপালী ভূটানীদের কথা যাদেরকে তার বাবা ১৯৯০ এর দিকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। সিংহাসনে আসীন হওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে নতুন রাজা কথা দিয়েছেন দেশকে ‘বাইরের প্রভাব’ থেকে রক্ষা করার, কিন্তু শরণার্থীদের কথা উল্লেখ করেননি।

আঞ্চলিক মিডিয়া এই দৃশ্যমান বর্জনের ব্যাপারে দ্রুত সোচ্চার হয়ে ওঠে। তাইপেই টাইমস, ভারতের দ্যা স্টেটসম্যান ইত্যাদি পত্রিকা শরণার্থীদের ব্যাপারটা তাদের রাজ্যাভিষেকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। ব্লগাররাও নেপালে থাকা ভুটানী শরণার্থী নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত।

একটা নির্দলীয় ব্লগ ভুটান নিউজ রাজ্যাভিষেকের কয়েকদিন আগে জানায় যে ‘শরণার্থীরা সংকটে আছে'। ব্লগার নারায়ন শর্মা শরর্ণাথীদের দেশে নিরাপদে ফেরার পরিবেশ তৈরি করার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা প্রচেষ্টা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন আর ভুটানের শাসকদের দায়ী করেছেন এই বিলম্বের জন্য।

“'শরণার্থীদের’ ফেরার আশা এখন কমে গেছে যেহেতু ড্রুক শাসকদের নতুন চাল, যে জনগণের প্রতিনিধিরা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে, এর ফলে সম্ভাবনা আছে বিষয়টা আরো দীর্ঘায়িত করার।”

সাংবাদিকতার ছাত্র বিবেক ভান্ডারী, রাজ্যাভিষেক আর শরণার্থীদের বিষয় নিয়ে লিখেছেন সাজাফোরামে, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ভুটানে জাতিগত নেপালীদের কথা আর এই সত্য যে তারা খুব নতুন দেশত্যাগী না।

“দক্ষিণপূর্ব নেপালের বেশ কিছু শরণার্থী শিবিরে ১৯৯০ থেকে আবদ্ধ আছে ১০৩,০০০ ভুটানী লোটশাম্পাস, নেপালীদের বংশধর যারা উনিশ শতকে ভুটানের দক্ষিণের নিম্নভূমিতে এসেছিল। ১৯৯০ এর প্রথম দিকে ভূতপুর্ব রাজা তাদেরকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয় একটা প্রচারণা চালিয়ে বাধ্যতামূলক জাতীয় পোষাক আর নেপালী ভাষার উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে।”

কিছু ব্লগার যারা এই বিষয়টাও আলোচনা করছেন সাম্প্রতিক ওই সিদ্ধান্তের উপর যে এই শরণার্থীদের তৃতীয় কোন দেশে বসতি স্থাপন করালে তাতে কিছু উপকার হবে কিনা আর আরো একটা বিদেশী রাষ্ট্রে যাওয়ার প্রভাব তাদের উপর কেমন হবে।

৫১০ রিপোর্টে এডেলাইডে চেন ভুটানী শরণার্থী যারা ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে বসবাস করছে আর সেখানে আমেরিকায় তাদের নতুন জীবনের সাথে খাপ খাওয়াতে চাচ্ছে শিক্ষিত হয়ে আর ইংরেজী শিখে, তাদের সম্পর্কে লিখেছেন।

“ভুটানের সাতজন ছাত্রদের মধ্যে আছে খারেল আর তার বোন যারা সপ্তাহে কয়েক রাত জিইডী ক্লাসে আসে। সে আরো কয়েকজন শরণার্থীকে চেনে, কারন তারা একই ক্যাম্পে ১৭ বছর ধরে ছিল। ভুটানে থাকা শরণার্থীদের মধ্যে তারা আমেরিকায় আসার প্রস্তাব গ্রহন করেছিল, তাদের মধ্যে খুব কম জনই বিশ্বাস করে তারা তাদের দেশে ফিরতে পারবে।”

মওরিন সিহ ও একটা নতুন দেশে খাপ খাওয়ানোতে শরণার্থীদের সমস্যার কথা বলেছেন। এবার সেইসব ভুটানীদের নিয়ে তিনি বলছেন যারা নিউ ইয়র্কের সিরাকুসে থাকতে এসেছে।

“হরি অধিকারী একটা শরণার্থী শিবিরে নেতা ছিলেন। এখন তিনি ক্যাথলিক চ্যারিটিদের সাহায্য করছেন শরণার্থী শিবিরের সহকর্মীদেরকে স্থায়ীভাবে এখানে বসবাস করাতে… তিনি লোকদের জিজ্ঞাসা করেন তাদের অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে কোন অসুবিধা আছে কিনা, বাজেট বা অন্য কোন চিন্তা যা তাদের আছে সে সম্পর্কে। তিনি তাদেরকে জানান যে এখানে এজেন্সী আছে তাদের সাহায্যের জন্য, কিন্তু তাদের নিজেদের চাকরি খুঁজে নিতে হবে।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .