কিউবা, যুক্তরাষ্ট্র: নিষেধাজ্ঞার উপরে ভোট গ্রহণ


জাতিসংঘের সদরদপ্তরে (নিউইয়র্কে) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কক্ষ। ছবি তুলেছেন: লিউক রেডমন্ড এবং ক্রিয়েটিভ কমনস লাইনসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত। লিউকের ফ্লিকর ফটোস্ট্রিম দেখুন

কিউবার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের (অর্থনৈতিক) নিষেধাজ্ঞাকে নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গতকাল একটা প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। গত ১৭ বৎসরের মত এবারও, কিউবার পৃষ্ঠপোষকতায় উত্থাপিত প্রস্তাব ভোটে জয়ী হয়েছে এবং দেশত্যাগী ও কিউবার অভ্যন্তরের ব্লগারদের এ বিষয়ে অনেক বক্তব্য রয়েছে:

দি কিউবান ট্রায়াঙ্গাল সরাসরি প্রসঙ্গটি অবতারণা করেছেন:

এই ঘটনায় বিশেষ দৃষ্টি না প্রদানের হয়ত আপনার হাজারো কারণ থাকতে পারে। কিন্তু কিউবার কুটনৈতিক পরিমন্ডলে এটি একটি তুমুম আলোচিত ঘটনা। নিষেধাজ্ঞার কারণে কিউবার অর্থনৈতিক বিপর্যয় প্রসঙ্গে কিউবার বক্তব্য বিতর্কে বেশ লক্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনা করা হয় (২০০৭ সালে ৩.৭৭ বিলিয়ন ইউ এস ডলার), যার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব না এবং এর পাশাপাশি কিউবার নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রভাব কিন্তু আমলে নেয়া হয় নি। প্রস্তাবটির না আছে কোন কার্যকরী ক্ষমতা, আর জাতিসংঘের না আছে এটি বাস্তবায়নের কোন ক্ষমতা। প্রস্তাবটিতে উল্লেখ করা হয় যে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাটি আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে যেন অন্য একটা দেশের সাথে বাণিজ্যে বিরত থাকার অধিকার নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এই বিতর্ক কিউবার পক্ষে জোরালোভাবে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে ‘গণহত্যা’ আলঙ্করিকভাবে বলা হচ্ছে না, আন্তর্জাতিক আইনও তাই বলছে এমনই বোঝানো হচ্ছে।

চাইল্ড অব দ্যা রেভল্যুশন একমত যে এর জন্যে ভোট “শর্তযুক্ত নয় এবং যার ফলে এর বাস্তবায়নের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না”। তবে এই ব্লগার কিন্তু অনুমোদন করেছেন:

এটা ক্যাস্ট্রো ভ্রাতৃদ্বয়ের আরেকটি প্রোপাগান্ডা বিজয় তুলে ধরে।

হাভানা টাইমসকে আশাবাদী মনে হচ্ছে এই সম্ভাবনা নিয়ে যে ভোট হয়তো কোন পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসতে পারে, বিশেষত: এই সত্যের আলোকে যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন একটা প্রশাসন সরকারের পরিচালনায় আসছে ২০০৯ সালে:

যদিও ভোট শর্তহীন, জানুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের একটা সুযোগ থাকবে বৈশ্বিক মনযোগের দিকে দৃষ্টি দিতে অথবা প্রতিবেশী কিউবার সাথে এর অর্ধশতাব্দী ব্যাপী বৈরিতা বজায় রাখতে।

দি কিউবান ট্রায়াংগল এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে ভোট মানুষজনকে কিছু বিষয় মনে করিয়ে দিয়েছে:

প্রথমত: কিউবা জানে কিভাবে বহুমুখী কুটনীতি চালাতে হয়।

দ্বিতীয়ত: যখন অনেক সরকারই কিউবার মানবধিকার চর্চা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার সাথে একমত, দৃশ্যত: সবাই একমত, রেজল্যুশনের মতানুযায়ী, যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কিউবার মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রভাবের সৃষ্টি করছে। এবং মোটামুটি সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্য আবেদন করতে ভোট দিতে আগ্রহী।

তৃতীয়ত: যদি নতুন একটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় এটা যে কিউবা ইস্যুতে তার মিত্রদের এবং অন্যান্যদের সাথে আন্তরিকভাবে কাজ করতে চায় তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং তৃতীয় দেশের ব্যাংক ও কোম্পানীর বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি পদক্ষেপ একটা প্রতিবন্ধকতা।

ইতোমধ্যে, এল ক্যাফে কুবানো মনযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করেছেন তিনি যা ভাবছেন তাকেই প্রধান কারণ উল্লেখ করে:

এটা বিশেষ ঘটনা নয় যে “জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বুধবার স্বত:স্ফূর্ত ভোট দিয়েছে ৪৬ বৎসর যাবত সমাজতান্ত্রিক দেশ কিউবার উপরে আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্য”? ঠিক আছে তাহলে মুক্ত নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের কি হবে?

পরিশেষে, হাভানা ভিত্তিক জেনারেশন ওয়াই একটা মজার অভিমত তুলে ধরেছেন:

ভোটের ফলাফল ভেবে, আমি প্রতিদিন আরোপিত অন্য একটা প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করতে চাই। এই প্রতিবন্ধক আমাকে বাধা দেয় আমার দেশে প্রবেশ ও বের হওয়া থেকে, মুক্তভাবে একটা ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়া অথবা ছোট্ট পারিবারিক ব্যবসা করার জন্য। সরকার কর্তৃক একটা অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা কিউবানদের হাজারো জাগতিক ও মানষিক ক্ষতি করেছে। আমি গ্রানমা পত্রিকার জন্য খবর সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিলাম – যার জন্য অনেক খাটা দরকার – জাতিসংঘে আজকের বিতর্কের ফলাফল বের করার চেষ্টা করলাম। আমি সড়কে নামলাম এবং সেখানে শুধু সেই নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতাই দৃশ্যমান যা আমাদের উপরে আরোপ করে যাচ্ছে আমাদের নেতারা – এমন একটা দেয়াল যারা বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কেউ আজ ভোট দিতে যাবে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .