ব্লগ এ্যাকশন ডে'তে দারিদ্র নিয়ে আফ্রিকার ব্লগ

ব্লগ এ্যাকশন ডে এমন একটা দিবস যেদিন বিশ্বের নানা প্রান্তের ব্লগাররা একটা নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে তাদের ব্লগে আলোচনা করে থাকে। ২০০৮ এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে দারিদ্র। এই আন্তর্জাতিক দিবস আলোচনা, ক্যাম্পেইন ও বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করতে মানুষজনকে উদ্বুদ্ধ করে।

ডিপিফিনি লিখেছেন:

যখন কেউ খুব স্বাচ্ছন্দে বাস করে সে খুব সহজে পাঁচ টাকার একটা নোট কোন চ্যারিটিতে দান করে মনটাকে সতেজ করতে পারে কিন্তু দরিদ্রদের জন্য কার্যকর কিছু করতে হলে এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান এবং লক্ষণগুলো চিন্থিত করার সত্যিকারের প্রতিজ্ঞা ও ত্যাগ দরকার।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লগার এবং সাংবাদিক ডামারিয়া সেননে একটা পরিবর্তনের জন্য পথ-নির্দেশিকা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন:

তরুণদের অনুপ্রানিত করার জন্য আপনার অঞ্চলে আপনি একজন রোল মডেল হতে পারেন। তারা বুঝবে যে তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যেও কেউ সফল হতে পারে। একজন উদীয়মান লেখক হিসাবে আমি সবসময় একজন মোটসোয়ানা অথবা একজন কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান লেখকের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইতাম। ঠিক তেমনটি হলেই আমার স্বপ্ন একদম বাস্তব হতে পারতো। যদি একজন লেখক হিসাবে তারা উপার্জন করতে পারে তার মানে আমার পক্ষেও আয় করা সম্ভব।

সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট আমাদের উপরেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন নাইম। তিনি কৌতুহল প্রকাশ করেছেন দারিদ্র এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট ইসলামী অর্থনৈতিক পদ্ধতির মাধ্যমে সমাধান যোগ্য কিনা।

পুঁজিবাদ বা সমাজতন্ত্রের চেয়ে ইসলাম পুরোপুরি ভিন্ন দৃষ্টিকোনে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো দেখে থাকে। ইসলামে কেবল উৎপাদন বন্টন নয়, সম্পদ বন্টনের কথাও বলা হয়ে থাকে। দরিদ্রতার সমস্যা কেবল ধনীদের ভোগের জন্য বেশী উৎপাদন করলেই সমাধান করা সম্ভব হবে না বরঞ্চ প্রত্যেকটা মানুষের মৌলিক চাহিদা পরিপূর্ণ করার মাধ্যমেই এর সমাধান হতে পারে। পৃথিবীতে পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে যা দিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা যায়।

সি-কাল্ট্রা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দারিদ্রকে অদ্ভুতভাবে বিশ্লেষন করেছেন এবং এর পেছনের কারণ তুলে ধরেছেন:

একেবারে হাতে-কলমে যে সত্য জানা গেছে তা হলো বণ্টন আসলে তেমন ক্রিয়াশীল নয়। জি-এইট দেশগুলো নিয়ে বিড়ম্বনা হচ্ছে যে তারাই সমস্যার একটা অংশ; অন্যায্য বাণিজ্য আইন অনুমোদন করার পরে বিতর্ক করে সাহায্যের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। যার ফলে ঋণ বেশী সুদের হারে আরো অঙ্গাঙ্গীভাবে জরিয়ে যায়; প্রায়শ:ই লাভজনক শকুনের তহবিলে পরিনত হয়; যেমন বলা যায় জাম্বিয়ার কথা। কারো দিকে বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি দিয়ে বুকে জড়িয়ে দেবার ছলে পেছন দিয়ে পাজরের একট নরম জায়গায় ছুঁরি চালিয়ে দেবার মত।

পুমেলেলা একিলেনগা তরুনদের সজাগ হতে এবং দরিদ্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে আহবান জানিয়েছেন:

আমরা অপরের তরে অবশ্যই উঠে দাড়াবো এবং বিশ্বকে দেখিয়ে দেব আমাদের পূর্বপুরুষরা উবুন্টু বলতে আসলে কি বোঝাতেন। আমি তরুনদের, আমার নিজের প্রজন্মকে আহবান জানাই – আমাদেরও শক্তি আছে পাল্টে ফেলার যেভাবে আমাদের পিতামাতারা সোয়াটো পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। ইতিহাস বইকে সমৃদ্ধ করতে আমাদের জন্যও একটা পৃষ্ঠা বরাদ্দ আছে; একটা পরিচ্ছেদে লেখা থাকবে এই প্রজন্মের কথা যারা সমতার জন্য দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। একটা পরিবর্তনের জন্য উঠে দাড়াবার আহ্বান জানাই।

ওপেন টেকনলিজস্ট দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করার আহবান জানিয়েছে:

দি মিফোস ইনিসিয়েটিভ প্রকল্প একটা সেবার মডেল তৈরী করার জন্য ওপেন সোর্স সফটওয়ার ব্যবহার করছে। এটা ক্ষুদ্র ঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে বিশ্বের দরিদ্রদের কাছে আরে বেশী করে পৌঁছার সুযোগ করে দেবে। পল্লী ফোন প্রকল্পের মত ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু ও পরিচালানোর জন্য এই প্রকল্প দরিদ্র মানুষদের অল্প পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসাবে প্রদান করে থাকে (২০০ ডলারের কম)।

নাইজেরিয়ান ব্লগার লই ওকজি দারিদ্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তি ও সামাজিক প্রচারমাধ্যম ব্যবহারের উপায় দেখিয়েছেন:

সাম্প্রতিককালের ওয়েব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা একতাবদ্ধ হতে পারি নিদেনপক্ষে আফ্রিকায় এবং সমস্ত বিশ্বে। নতুন ওয়েব স্পেস বিশাল সুযোগ দেয় দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য। দারিদ্রের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে ব্যবহৃত হতে পারে এমন কিছু নতুন প্রযুক্তি দেখাচ্ছি আপনাদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ-টাউন থেকে ইগানটিয়াস নোথানগেল লিখেছেন কিভাবে একজন দরিদ্র বৃদ্ধা যার কাছে কেবলমাত্র দুধ ও রুটি কেনার অর্থ ছিল তাকে একটা স্টোর থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয়া হয়েছে:

আমি হা হয়ে গেলাম। তার কি হয়েছে? ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছে? কিছুক্ষণ মনে হলো ধাঁধায় ছিলাম, তাও আমাদের সবচেয়ে নিম্নশ্রেণীর শপিং মার্কেট থেকে?” এই সময়ে মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মুহূর্তে অপ্রীতিকর দৃশ্যে পরিণত হওয়া ঘটনাটিকে এখন আমার এড়িয়ে যাবার ভান করতে হবে।

কেরি-এন্নি দক্ষিণ আফ্রিকার দরিদ্রতা সম্বন্ধে লিখেছেন:

দারিদ্রের সীমার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা ১৯৯৫ সালের ৫৩% থেকে ২০০৫ সালে ৪৮% এসে ঠেকেছে। দক্ষিণ আফ্রিকান মুদ্রার ৩২২ সমপরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে দারিদ্রের সীমারেখা হিসাবে। যা এখানে দুজন মানুষের রেস্টুরেন্টে এক বেলার খাবার খরচের সমান। আরেকবার পড়ে দেখুন। আমরা প্রতিদিন একটা ডিনারে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করি এই দেশের অর্ধেক মানুষ সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে একটা মাস নির্বাহ করে। তারা বেশ সংযমী, তাই না?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .